ইরাবতী উৎসব সংখ্যা উপন্যাস : ক্লিক ক্লিক। তপশ্রী পাল
রবিবারের বিকেল। অনেকদিন বাদে বাড়ির বাইরে পা দিলো মধুরিমা। গত একবছর লকডাউনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে কেটেছে আর অফিস খোলার পর অফিস আর বাড়ি। অফিসের গাড়িতেই যাতায়াত। সেদিন যখন কুন্তল ফোন করলো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেনি মধুরিমা! রবিবার মিলেনিয়াম পার্ক যাওয়ার প্রস্তাব! কুন্তলের ডাক উপেক্ষা করতে পারেনি। আরো সুন্দর হয়েছে কুন্তল! কী সুন্দর একটা টি–শার্ট পরেছে! মধুরিমাকে দেখে বললো “আমাকে ভুলে গেলে মধু?” মধুরিমা বললো “তাহলে কি আসতাম তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে?” একসাথে আলুকাবলি, আইসক্রিম খাওয়ার পর বেশ কটা সেলফি তুললো কুন্তল, মধুরিমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে। মধুরিমা প্রতি মূহূর্তে আশা করতে লাগলো এবার কুন্তল কিছু বলবে! হঠাত কুন্তল বললো “মোবাইলে ভালো ছবি হয় না। আমি ডি এস এল আর ক্যামেরা নিয়ে এসেছি। দাঁড়াও! একটা ভালো ছবি তুলে দিই!” বলে দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরা ধরিয়ে দিলো একজনের হাতে। আশ্চর্য! কুন্তল নিজেই তো তুলতে পারতো! কুন্তল চেঁচিয়ে বললো “হ্যাঁ, মধু, আরেকটু বাঁ দিকে ফেরো – তোমার বাঁ প্রোফাইলটা ফাটাফাটি!”
২
মাস দুয়েক পর প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি জিভাগোর দমদম অফিসে বসেছিলেন অনিকেত মল্লিক। হঠাত দশটা নাগাদ লালবাজার থেকে গোয়েন্দা পুলিশের ডিজি মিঃ পাকড়াশীর ফোন পেয়ে বুঝলেন গুরুতর কিছু হবে।
অনিকেত, কূল কিনারা পাচ্ছি না। তোমার হেল্প ছাড়া এ কেস আর সল্ভ হবে না।
কী হলো বলবেন তো!
সেই মিলেনিয়াম পার্কের খুনের কেসটা –
সে নিয়ে তো রোজই নানা গল্প পড়ছি। না আছে খুনের মোটিভ, না খুনীর দেখা!
সেটাই তো! আমরা হেরে গেলুম। দেখো তুমি যদি পারো। তোমার ফি পুরো পেয়ে যাবে। এমন হোপলেস কেস সল্ভ করতে পারলে পুরস্কারও জুটে যেতে পারে!
বেশ, আসছি। কেসের পুরো ব্রিফিং চাই কিন্তু
আমি ইনভেস্টিগেটিং অফিসার সুজয় ঘোষকে বলে দিচ্ছি!
৩
সুজয় ছেলেটি স্মার্ট চটপটে। লালবাজারে মিঃ পাকড়াশী অডিও–ভিশুয়াল রুমে বসিয়েছেন অনিকেতকে। পুলিশ একটা ভিডিও বানিয়েছে কেসটার ঘটনা–পরম্পরা নিয়ে। সেটা দেখাবে। গরম সিঙ্গারা সহযোগে চা খেয়ে কেস ব্রিফিং–এ মন দেন অনিকেত। সুজয় বলে –
দু মাস আগের কথা। সেদিন ছিলো থার্ড জানুয়ারী, রবিবার। মিলেনিয়াম পার্কে বিকেলের দিকে বেশ ভীড়। বেঞ্চগুলো প্রায় সব ভর্তি। কিছু লোক গঙ্গার রূপ দেখতে ব্যস্ত। ফুড জয়েন্টগুলোতেও ব্যাপক ভীড়। পার্কস্ট্রীট পুলিশ ফোন পায় সন্ধ্যা ছটা নাগাদ। একটি গাছের নীচে এক তরুনীর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে যতক্ষণে পুলিশ পৌঁছোয় ততক্ষণে বেড়াতে আসা মানুষজন ভয়ে পালিয়েছে বেশীরভাগ। প্রচুর কৌতুহলী জনতা ভীড় করেছে। মিডিয়া, ক্যামেরায় চারিদিক ছয়লাপ!
তরুণীর দেহ কী অবস্থায় পড়ে ছিলো?
চিৎ হয়ে পড়েছিলো। চোখদুটি বিস্ফারিত! হঠাত শক পেলে বা অবিশ্বাস্য কিছু ঘটলে যেমন হয়! হাত দুপাশে ছড়ানো। আপনি ভিডিওটা দেখলে ভালো বুঝতে পারবেন। বুকে সরাসরি গুলি লাগে। রক্তে, নীল শাড়ি, ব্লাউজের বাঁ দিকের অংশ ভিজে গিয়েছিলো। বডি পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি?
করেছিলো। কেউই প্রায় কিছু বলতে পারেনি। ঘটনার সময় যারা ছিলো, তারা প্রায় সবাই ঘটনা দেখে ভয়ে পালিয়ে গেছিলো।
পুলিশে ফোন কে করেছিলো?
এক ফুচকাওয়ালা মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে ফোন করে।
একটি ভীড়ে ভর্তি জায়গায় একটি মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলো আর কেউ দেখলো না! আশ্চর্য! গুলির আওয়াজ হলে তো সবাই ফিরে তাকাবে! খুনীকেও তো কেউ পালাতে দেখবে! পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলে?
রিপোর্ট বলছে গুলিতেই তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। একটিই গুলি লাগে। মেয়েটিকে যখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, রাইগর মর্টিস তখনো সেট ইন করেনি। অর্থাৎ মৃত্যু বেশীক্ষণ হয়নি। হত্যার সময় আন্দাজ বিকেল পাঁচটা।
বডি আইডেনটিফায়েড হয়েছে?
দিন দুয়েক কেউ এগিয়ে আসেনি। তারপর সমস্ত থানায় মিসিং পারসন ডায়রি খোঁজা হয় এবং দমদম থানায় একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়, যেখানে এক তরুণীর মিসিং ডায়রী করা হয়েছিলো। সেই ভদ্রলোককে ডেকে মর্গে বডি দেখানোর পর তিনি তাঁর মেয়ে বলে আইডেন্টিফাই করেন। কিন্তু মিলেনিয়াম পার্কের খবর তার দুদিন আগে থেকে টিভিতে সব চ্যানেলে দেখানো হয়, তখন মেয়েটির বাবা খোঁজ করেননি। তিনি বলেন যে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি তাঁর মেয়ে মিলেনিয়াম পার্কে যেতে পারে এবং এভাবে খুন হতে পারে! মৃতদেহের ছবি নানা কারণে টিভিতে দেখানো হয়নি।
আচ্ছা কোন সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট বা ফিজিক্যাল ভায়োলেন্সের কোন চিহ্ণ ছিলো বডিতে?
নাঃ
মেয়েটির বাবা কিছু মিসিং পেয়েছেন মেয়ের? গয়নাগাটি, পয়সাকড়ি –?
না। বাবা বলেছেন তাঁর মেয়ে খুব সিম্পল ছিলো। গয়না বা সাজগোজ তেমন পছন্দ করতো না।
হুম, চলো ভিডিওটা দেখে নিই।
ভিডিওতে পুলিশ ঘটনাটা রিকন্সট্রাকট করার চেষ্টা করেছে সাক্ষীদের সাথে কথাবার্তার ভিত্তিতে। দেখা যাচ্ছে বিকেল পাঁচটা নাগাদ পার্কে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে জোড়ায় জোড়ায় ঘুরছে। কিছু বেঞ্চে বসে আছে, কিছু খাবারের স্টলের সামনে, কিছু মানুষ গঙ্গার ঘাটের দিকে উন্মুখ দৃষ্টিতে তকিয়ে আছেন। দেখা গেলো একটি মেয়ে হঠাত একটি বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো অসহিষ্ণু ভাবে ঘড়ি দেখে। তারপর সামনের দিকে এগোতে লাগলো। গাছের তলায় এসে আবার ঘড়ি দেখতে লাগলো এবং কারো জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। এমন সময় উল্টোদিক থেকে একজন বেড়াতে বেড়াতে এগিয়ে এসে হঠাত মেয়েটিকে লক্ষ্য করে গুলি করলো এবং মেয়েটি পড়ে যেতে আবার আস্তে আস্তে ভীড়ে মিশে চলে গেলো।
ভিডিও দেখতে দেখতে অনিকেতের ভুরু কুঁচকে রইলো বেশ খানিকক্ষণ । তারপর বললেন “বন্ধ করুন! আমার বেশ গন্ডগোল লাগছে! ঘটনাক্রম এরকম হতে পারে না। অনেকগুলো খটকা।“
আসলে খুব কম আই উইটনেস পাওয়া গেছে।
তোমরা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওনি মিলেনিয়াম পার্কের?
পার্কের মধ্যে ঠিক যেখানে ঘটনা ঘটে সেইখানটায় কোন কভারেজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাকী এদিক ওদিকের কভারেজ আছে।
তার মানে খুনী বেশ আঁটঘাট বেঁধেই এগিয়েছে। সে জানতো ঠিক ঐ জায়গাটায় কভারেজ নেই! মেয়েটি একা ছিলো, না সঙ্গে কেউ ছিলো সেটা জানা গেছে?
এটাতেই পুলিশ ধন্দে পড়ে আছে। আই উইটনেস প্রায় কেউই নেই সেরকম। দু একজনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তারা বলেছে খেয়াল করেনি অথবা বলেছে মেয়েটি একাই ছিলো। অথচ পার্কের এক সিকিউরিটি বলেছে যে সে মেয়েটিকে একটি লোকের সঙ্গে ঢুকতে দেখেছিলো। লোকটি সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো পার্ক কটা অবধি খোলা থাকে।
এটাই স্বাভাবিক সুজয়। রবিবার দিন হঠাত একটি মেয়ে একা একা পার্কে বেড়াতে আসবে কেন। হয় সে পরিবারের সঙ্গে আসবে অথবা কোন বন্ধুর সঙ্গে। এই সিকিউরিটিকে তোমরা লোকটির চেহারাপত্র জিজ্ঞাসা করোনি?
করা হয়েছিলো স্যার। কিন্তু সে যা বর্ণনা দিচ্ছে তেমন লোক গাদা গাদা চারিদিকে। মাঝারি রঙ, মাঝারি হাইট, চোখে চশমা, শার্ট প্যান্ট পরা।
স্কেচ করার চেষ্টা করা হয়েছে?
কোন ডিটেল পাওয়া যায়নি, আঁকার মতো।
তাহলে যা বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটি সম্ভবতঃ কোন একটি লোকের সঙ্গে, যে অবশ্যই তার পরিচিত, পার্কে আসে বিকেলে। এসে তারা একটি বেঞ্চে বসে। হয়তো কিছুক্ষণ গল্পসল্প করে। কিন্তু তারপর কী হয়েছিলো? মেয়েটিকে খুন করলো কে? লোকটিই বা গেলো কোথায়? ভেবে দেখো অমন ভীড়ের মধ্যে কেউ কারোর দিকে গুলি চালালে গুলির আওয়াজ হবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়নি। তার মানে নির্ঘাত রিভলবারে সাইলেন্সার লাগানো ছিলো! মেয়েটি সামনের দিকে এগোচ্ছিলো এবং তারপর গাছতলায় কারো জন্য অপেক্ষা করছিলো? সঙ্গে একজন রয়েছে তাও আর কারো অপেক্ষা – উঁহু, কেমন অস্বাভাবিক লাগছে। নাকি সে অন্য কোন কারণে দাঁড়িয়েছিলো? সঙ্গের লোকটি কী করছিলো? তৃতীয় কেউও কি ছিলো সিনে?
স্যার খুব জটিল কেস
সবই জটিল থাকে সুজয়। একটা একটা করে সুতো ছাড়াতে হবে। আমি কাল মেয়েটির মা বাবার সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি।
৪
অনিকেত আর তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট আকাশ, মধুরিমাদের বাড়ির বেল বাজালো। এক ভদ্রমহিলা, যার সঙ্গে মৃতের ছবির যথেষ্ট মিল, দরজা খুললেন। অনিকেত নিজেদের পরিচয় দিতে বিরক্তি ফুটে উঠলো মহিলার মুখে। বললেন “আপনারা এক একদিন এক একজন আসেন কেন? এই জন্য কেসটা এতোটুকু এগোচ্ছে না। নানা থানা থেকে আসে আর একই প্রশ্ন করে। তার ওপরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা পাগল! এখন আবার আপনি – প্রাইভেট গোয়েন্দা! দেখুন মেয়েকে হারিয়ে এমনিতেই আমাদের মনের অবস্থা খুব খারাপ।“
অনিকেত তাড়াতাড়ি বললেন “আপনি এবং আপনার স্বামী যদি একসঙ্গে বসেন, আমরা দু একটা প্রশ্ন করে ছেড়ে দেব। বেশীরভাগ ফিডব্যাক তো পুলিশের কাছে পেয়েইছি।
মহিলা বললেন তাঁর নাম আরুণিমা, স্বামীর নাম প্রমথেশ। মহিলা অনিকেত আর আকাশকে বসার ঘরে বসালেন। একটু পরে দুজনে প্রবেশ করলেন। অনিকেত জিজ্ঞাসা করলো –
আপনাদের কটি ছেলেমেয়ে?
এক ছেলে এক মেয়ে
ছেলে কোথায়?
ছেলে দুবাইতে এখন। চাকরী করে।
তাকে বলেছেন মেয়ের মৃত্যুর কথা?
না, ওকে আর ডিসটার্ব করে কী হবে?
আপনার মেয়ে কী করতেন?
ও লাইফলং জেনারেল ইন্সিয়োরেন্স বলে একটা প্রাইভেট ইন্সিয়োরেন্স কোম্পানীতে কাজ করতো। ডালহাউসিতে অফিস।
কতদিন চাকরী করছিলেন?
তা বছর দুয়েক হলো।
মেয়ের কোন বন্ধু বা বান্ধবী ছিলো?
না না, মেয়ে তেমন কোথাও বেরোতো না। বলা যায় আমরাই ওকে বেরোতে দিতাম না। আমরা চাইনি ও কোনভাবে বিপদে পড়ুক।
বিপদে পড়ার কোন সম্ভাবনা ছিলো কি?
না, তবে দিনকাল তো ভালো নয়। তাছাড়া গত বছর লকডাউনে বাড়ি থেকেই কাজ করেছে। এখন সপ্তাহে তিনদিন অফিসে যাচ্ছিলো, তাও অফিসের গাড়িতে। সোজা বাড়ি থেকে অফিস যেতো আর ফিরতো
মেয়ের বয়স কতো হয়েছিলো?
বছর পঁচিশেক
বিয়ের চেষ্টা করেননি?
ও বলেছিলো এখনি বিয়ে করতে চায় না
কেন?
না মানে, ও আমাদের একা রেখে এখনি বিয়ে করে চলে যেতে চায়নি ।
আপনারাও চাননি?
না না তা কেন? ভালো পাত্র পেলে –
যা কথা হচ্ছিলো আকাশ সব রেকর্ড করে নিচ্ছিলো ফোনে, যেটা প্রমথেশ বা অরুণিমা টের পাননি।
আচ্ছা যেদিন ও খুন হয়, সেদিন ও কোথায় কার সঙ্গে গেছিলো?
আমরা কিছুই জানতাম না, বিশ্বাস করুন! তাহলে ওকে যেতে দিতাম না।
উনি আপনাদের কী বলে গিয়েছিলেন? সেদিন তো রবিবার ছিলো
ও বলেছিলো এক কলেজের বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছে, কাছাকাছি। আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে।
তার মানে উনি ভালই জানতেন যে সত্যিটা জানলে আপনারা ওকে যেতে দেবেন না। কারো সঙ্গেই উনি মিলানিয়াম পার্কে গেছিলেন এটা নিশ্চিত এবং সে প্ল্যান করেই ওনাকে ডেকেছিলো। কিন্তু কে এবং কেন? আর উনিই বা বিনা বাক্য ব্যয়ে গেলেন কেন?
বলতে পারছি না ।
আপনার ছেলের কোন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কি মধুরিমা মেলামেশা করতেন?
বললাম তো ওর তেমন কোন বন্ধু ছিলো না।
অথচ সেদিন উনি বন্ধুর বাড়ি গেলেন। আপনারা জিজ্ঞাসা করেননি কার বাড়ি, কোথায়?
বলেছিলো কলেজের বান্ধবী, বিদিশা, অনেকদিন পরে কলকাতা এসেছে, তাই ডেকেছে। কাছাকাছি বলে আমরা আর বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করিনি –
ঠিক আছে। আজ আর কিছু জিজ্ঞাসা করছি না। তবে আপনারা যদি কিছু জেনেও গোপন করে থাকেন তবে কিন্তু আপনার মেয়ের খুনীকে ধরা সম্ভব হবে না। হয়তো শীগগিরি আসতে হবে আবার।
৫
জিভাগোর অফিসে বসে কেসের ব্রিফ নিয়ে কথা বলছিলেন অনিকেত ও আকাশ। আকাশ বললো –
মনে হলো ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা মন খুলে কথা বললেন না। যেন কিছু আড়াল করতে চাইছেন।
আমারো তাই মনে হলো। মেয়ে খুন হলো কিন্তু তার ভাইকে খবর দেওয়া হলো না! তারপর, মেয়ের কোন বন্ধু নেই। কোন কারণে মেয়েটি বাবা মায়ের সঙ্গে সব শেয়ার করতো না। নাঃ, আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে মেয়েটির এই বান্ধবীটি, যার বাড়ি যাবে বলে মেয়েটি বেরিয়েছিলো। আর খুনের মোটিভ! একটি মেয়ে যে কোথাও বেরোতো না, কারো সাতে পাঁচে নেই, না তার কোন সম্পত্তি আছে, তাকে হঠাত কেউ খুন করবে কেন? আরো একটা গভীর সন্দেহ –
কী স্যার?
মৃত্যুর হাতিয়ার! গুলি করে জনবহুল পার্কে খুন হলো কিন্তু কেউ বুঝতেও পারলো না!
মেয়েটির সেলফোনটা কি পাওয়া গেছে?
হ্যাঁ, সেটা প্রথমেই সংগ্রহ করেছিলাম লালবাজার থেকে। পাসওয়ার্ড দেওয়া ছিলো। ওরা খুলেছিলো। তাতে ওর কিছু ছবি আছে। ফেসবুকেও ছিলো মেয়েটি। সেখানে কিছু ফেসবুক ফ্রেন্ড, যেমন সবার থাকে। কারো সঙ্গে বেশী ছবি, মাখামাখি, চ্যাটিং কিছুই দেখতে পেলাম না। সবচেয়ে বড়ো কথা, খুনের দিন কারো ফোনে ফোন নেই, কেউ ওকে ফোনও করেনি। তার মানে, আগে থেকেই মিটিং ফিক্স ছিলো! এবং সেই অনুযায়ী মেয়েটি মিলেনিয়াম পার্কে আসে!
কিন্তু খুনের দু চারদিন আগেও তো কোন কল এসে থাকতে পারে –
খুনের পনেরো দিন আগে থেকে যে যে নম্বরে কল গেছে বা এসেছে সব চেক করেছি। বেশীরভাগই ওর বাবা মার কল। কয়েকটি অফিসের কল। আর কিছুই পাইনি! তার মানে দুটি। এক, খুনী হয়তো ওর মোবাইল নম্বর জানতো না অথবা ইচ্ছে করেই মোবাইলে ফোন করেনি। দুই, তাহলে সে কোথায় ফোন করেছিলো?
ওর অফিসের ল্যান্ডলাইনে করে থাকতে পারে স্যার!
চমকে তাকালেন অনিকেত
– ঠিক বলেছো আকাশ! এই জন্যই তোমার ওপর আমি এতো ভরসা করি! নিশ্চিতভাবে তাই! যাতে সহজে ধরা না যায়। এ ক্ষেত্রে আমি ধরে নিচ্ছি কয়েকটি জিনিস। এক, হয়তো লোকটির সঙ্গে মেয়েটির, আমি লোকই ধরছি, কোন এক সময় ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিলো, কিন্তু বহুদিন কোন কারণে যোগাযোগ ছিলো না। অতএব মোবাইল নম্বর জানা ছিলো না। লোকটি যে করে হোক, জানতে পারে যে মেয়েটি ঐ অফিসে চাকরী করে। কিন্তু অফিসের এক্সটেনশন তো সে জানবে না! তাই ফোনটি অবশ্যই অপারেটরের হেল্প নিয়ে করা হয়েছিলো! তুমি একবার লাইফলং ইন্সিউরেন্স এর অফিসে ঘুরে এসো দেখি! আর, তুমি আর টিনা মেয়েটির ভাইয়ের সম্বন্ধে একটু খোঁজখবর নাও। এসে আমাকে জানাও।
৬
লালবাজারে মিস্টার পাকড়াশীকে ফোন করলেন অনিকেত –
কী ব্যাপার অনিকেত? কেস এগিয়ে গেছে বুঝি?
এগোচ্ছে স্যার, কিন্তু শম্বুক গতিতে! আচ্ছা, একটা কথা বলুন। মেয়েটির ভাইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো?
নিশ্চই! ওরা তো এক ভাই এক বোন! ছেলেটি কলকাতার বাইরে চাকরী করে। কিন্তু খুনের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?
ছেলে দুবাইতে। সে বোনের মৃত্যুর খবরই পায়নি! দুবাইতে ছেলেটি কোন কোম্পানীতে কাজ করে একটু ভালো করে খোঁজ নিন । আমি আকাশকে বলেছি পাড়ায় খোঁজখবর করতে।
বেশ
আমার খুনের অস্ত্রটি নিয়েও খুব ডাউট হচ্ছে!
কেন? গুলি করে মারা হয়েছে! রিভলবারে সাইলেন্সার লাগানো ছিলো বলে আওয়াজ হয়নি তেমন
উঁহু, যদি সাইলেন্সরও লাগানো থাকে, তবুও একটি লোককে রিভলবার বার করতে দেখলে অবশ্যই মেয়েটি চিৎকার করে উঠতো এবং আসপাশের লোক দেখতো ও এগিয়ে আসতো! কিন্তু মেয়েটি পড়ে যাওয়ার আগের মূহূর্ত পর্যন্ত কেউ কিছু দেখেনি বা সন্দেহ করেনি এবং মেয়েটিও কোন চিৎকার করেনি অথবা পালাতে যায়নি, এমনকি নড়াচড়াই করেনি! অথচ গুলি বেরোলো এবং ঠিক বুকে গিয়ে লাগলো! নাঃ, এটা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে। আমি পার্কের সেই সিকিউরিটির সঙ্গে একবার কথা বলতে চাই, যিনি ওদের দুজনকে পার্কে ঢুকতে দেখেছিলেন।
বেশ তো, আমি সুজয়কে বলে ব্যবস্থা করছি তাকে লালবাজারে ডাকার
৭
সন্ধ্যাবেলা বেশ হন্তদন্ত হয়ে ফিরলো আকাশ। অনিকেত বললেন
বোসো, একটু জিরিয়ে নাও।
প্রথমে মেয়েটির অফিসে গেছিলাম। অপারেটর এক অ্যাংলো মহিলা। নাম লিজা। প্রথমে বললেন এতো কল আসে, তিনি কারো কল আলাদা করে বলতে পারবেন না। তারপর মধুরিমার মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করছি বলাতে অনেক ভেবেচিন্তে বললেন যে তাঁকে যেন এতে না জড়ানো হয়। মধুরিমার, যে রবিবার মৃত্যু হয়, তার আগের বৃহস্পতিবার ল্যান্ডলাইনে একটি কল আসে মধুরিমাকে চেয়ে। যেহেতু মধুরিমার কাছে বাড়ির লোক ছাড়া প্রায় কারো কল আসতো না, সেই জন্যই কলটা মনে আছে তাঁর।
ছেলে গলা না মেয়ে?
ছেলে। উনি নাম জিজ্ঞাসা করাতে বলে কুন্তল। উনি বলেন যে মধুরিমা পারমিশন দিলে উনি কানেক্ট করবেন। মধুরিমাকে বলাতে প্রথমে সে চিনতে পারেনি। কিন্তু লোকটি নাছোড়বান্দা। সে ‘ডায়মন্ডহারবার’ কথাটা বলতে বলে, তাহলেই নাকি চিনতে পারবে। সত্যিই সে কথা বলার পর ম্যাজিকের মতো ফল হয় এবং মধুরিমা কথা বলতে রাজী হয়।
উনি কি কিছু শুনেছিলেন লাইনে ওরা কী নিয়ে কথা বলেছিলো?
উনি অন্যের ফোন শোনেননি
ধরে নাও এই সেই ফোন যেটি পেয়ে মধুরিমা এক কথায় মিলেনিয়াম পার্ক যেতে রাজী হয়।
মেয়েটির সঙ্গে অনেক আগে পরিচয় থাকলেও রিসেন্ট যোগাযোগ তো ছিলো না। তাও মেয়েটি –
ঐখানেই তো খেলা। মেয়েটি লোকটির গভীর প্রেমে পড়েছিলো কোন একসময় এবং নিশ্চই ঘনিষ্ঠ কিছু মূহূর্ত কাটায় তার সঙ্গে, যদি ভুল না করে থাকি, তবে হয়তো ডায়মন্ডহারবারে। ভালোবাসতো কুন্তলকে এবং তার ডাকে সাড়া না দিয়ে উপায়ও ছিলো না। ছেলেটি তাহলে ব্ল্যাকমেল করতো তাকে। কিন্তু কেন এতোদিন পরে জেগে উঠলো কুন্তল? কেনই বা হাতছানি দিলো মধুরিমাকে? খুনটাই বা করলো কে?
এবার মেয়েটির ভাইয়ের ব্যাপারে কী জানলাম বলি
বলো!
মেয়েটির ভাইয়ের নাম অজিতেশ। সবাই অজিত বলেই ডাকতো। পাড়ার লোকে বলে যে ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি ছিলো খুব দুষ্টু। বাবা মা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনাতে খুব একটা মন ছিলো না। কোনক্রমে বিএ পাশ করে হঠাত প্রচুর পয়সা রোজগার করতে শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যেই ঐ বাড়িটি, যেখানে ওরা থাকে, সেটি বানায় এবং একটি গাড়িও কিনে ফেলে। বাবা প্রমথেশ স্কুলে টিচার ছিলেন, মা গৃহবধূ। ওদের এই হঠাত উন্নতি পাড়ার সবার চোখে পড়ে। আগে ওরা ঐ পাড়াতেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতো। ছেলেটির বন্ধুবান্ধবেরও বাড়িতে যাতায়াত ছিলো। পাড়ার লোকে জিজ্ঞাসা করায় প্রমথেশবাবু বলেছিলেন যে ছেলে প্রাইভেট কোম্পানীতে ভালো চাকরী পেয়েছে। এর কিছুদিন পরে ছেলেটি পাড়া ছেড়ে চলে যায় বাইরে পোস্টিং পেয়ে। প্রায়ই প্রমথেশবাবু নাকি বলতেন ছেলের পদোন্নতির কথা। হঠাত দু বছর আগে ছেলেটির খোঁজে পুলিশ পাড়ায় আসে। ড্রাগ পাচারের একটি কেসে নাকি ছেলেটিকে পুলিশ খুঁজছে। তার বাবা বা পাড়ার লোক কিছু বলতে পারেনি।
আশ্চর্য! পুলিশ যদি ওদের বাড়িতে খোঁজখবর করে থাকে তবে তো পুলিশের কাছে রেকর্ড থাকবে! নাঃ আবার মিস্টার পাকড়াশীর শরণাপন্ন হতে হচ্ছে! আমার কেবলি কেন যেন মনে হচ্ছে এই গল্পের এখানেই শেষ নয়।
৮
মিস্টার পাকড়াশী বললেন ব্যাপারটা লালবাজারের ডিটেকটিভ সেলের কাছে আসেনি। সম্ভবতঃ নারকোটিক কন্ট্রোল সেল খোঁজখবর করে কিন্তু কোন প্রমান পায়নি। যেহেতু কলকাতায় অজিতেশের কোন ক্রিমিন্যাল রেকর্ড ছিলো না, তাই মিস্টার পাকড়াশী সে ব্যাপারে কিছু জানতে পারেননি। অনিকেত বললো –
খুব দুঃখের ব্যাপার। ডান হাতের খবর বাঁ হাত রাখে না!
ঠিকই বলেছো অনিকেত। সরকারী ব্যবস্থার গলদ। আমি আজই খবরাখবর নিচ্ছি। তোমাকে জানাচ্ছি। আমাদের রেকর্ডও আপডেট করার ব্যবস্থা করছি।
আপনি কি সেই সিকিউরিটিকে ডেকেছেন?
হ্যাঁ, সে তো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে।
সিকিউরিটির নাম সুবোধ। অনিকেত তাকে জিজ্ঞাসা করলেন –
তুমি সেদিন মিলেনিয়াম পার্কে কটা থেকে কটা ডিউটিতে ছিলে?
বেলা বারোটা থেকে নটা
রবিবার কিরকম ভীড় ছিলো?
বেশ ভীড় ছিলো স্যার। বেশীরভাগই টিনেজার ছেলেমেয়ে। এ ছাড়া ফ্যামিলি বাচ্চাকাচ্চা –
যে মেয়েটি মারা যায়, তার সঙ্গে কে ছিলো তুমি নাকি দেখেছিলে –
হ্যাঁ, কারণ আমাকে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে পার্ক কটা অবধি খোলা থাকবে। মেয়েটির মুখ হুবহু মনে আছে স্যার! আর লোকটাকেও!
খুব ভালো। এবার বলো তো লোকটা কেমন দেখতে ছিলো। একদম ডিটেলে বলবে যতটা মনে আছে। কিচ্ছু বাদ দেবে না।
লোকটা মাঝারি লম্বা গড়ন। রঙ মাঝারি। চোখে চশমা।
চোখগুলো বড়ো না ছোট?
মাঝারি। মানে বেশী বড় না।
গোঁফ দাঁড়ি?
ছিলো না। একদম কামানো। মাথার চুল পাশে সিঁথি করে আঁচড়ানো।
গলার আওয়াজ?
নীচু গলায় কথা বলছিলো –
দেখো সুবোধ, মনে করে এমন কিছু বলো যা দিয়ে লোকটিকে চেনা যাবে। কোন দাগ বা চিহ্ণ, কোন আংটি, ট্যাটু, আর কিছু –
হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পড়েছে স্যার! গলায় একটা বড় ক্যামেরা ঝুলছিলো! বেশ চোখে পড়েছিলো, কারণ ক্যামেরার সামনের লেন্সটা খুব বড়ো লম্বা ছিলো! দামী ক্যামেরা!
আর কিছু?
এখন মনে পড়লো স্যার! লোকটি হাত উঁচু করে মাথার চুল সরাচ্ছিলো, তখন দেখলাম হাতে একটা আংটি। তাতে লেখা “K”!
খুব ভালো লক্ষ্য করেছো ঐটুকু সময়ে! আচ্ছা সুবোধ, গেট দিয়ে এই লোকটিকে বেরোতে দেখেছিলে?
আমি বোধহয় তখন চা খেতে গেছিলাম একটু। অন্য কেউ গেটে ছিলো।
আচ্ছা, কাছাকাছি সময়ে গেট দিয়ে অন্য কোন লোককে ক্যামেরা হাতে বেরোতে দেখেছিলে?
বললাম তো, আমি চা খেতে গেছিলাম।
তাহলে গেটে যে ছিলো তার সঙ্গে তুমি কি আমায় কথা বলিয়ে দিতে পারবে?
দেখছি যদি ফোনে পাই
সুবোধ অনেক চেষ্টা করেও অন্য সিকিউরিটিকে মোবাইলে পেলো না। মিস্টার পাকড়াশীকে অনিকেত আবার বললেন সিকিউরিটির সাহায্যে কুন্তলের একটি ছবি আঁকানোর চেষ্টা করতে। ছবি খুব দরকার লোকটিকে খুঁজে বার করার জন্য!
৯
পরদিন সকালে অনিকেতের ঘুম ভাঙলো মিস্টার পাকড়াশীর ফোনে। এতো সকালে মানে কিছু নিশ্চই ঘটেছে। তড়িঘড়ি ফোন কানে গুঁজলেন অনিকেত। মিস্টার পাকড়াশীর প্রচন্ড উত্তেজিত গলা –
অনিকেত! আবার খুন!
কোথায়? কে খুন হলো আবার!
মনে হচ্ছে ঐ কুন্তল ছেলেটিই খুন হয়েছে! বাইপাসের ধারে একটা নয়নজুলিতে বডি পড়ে আছে! মনে হচ্ছে অন্য কোথাও খুন করে বডি ওখানে ফেলা হয়েছে!
কিভাবে খুন হলো?
গুলি লেগেছে মাথার ডানদিকের রগে! শহরটা তো গুন্ডামির আখড়া হয়ে উঠলো দেখছি!
“কুন্তল” বুঝলেন কী করে?
দুয়ে দুয়ে চার করা। হাতে K লেখা আংটি, মাঝারি চেহারা!
তেমন তো আরো কতোজন আছে!
না না, সেই সিকিউরিটিকে ডাকিয়েছিলাম! সে আইডেনটিফাই করে গেছে।
তবে তো কথা নেই। কিন্তু কেন খুন? সেই মোটিভ–এর কথা এসেই যাচ্ছে! কুন্তল থাকতেন কোথায়? করতেনই বা কী?
তুমি এসো। তারপর এ নিয়ে এগোতে হবে।
ঠিক আছে, যাচ্ছি। যা ভেবেছিলুম। একটি খুনে থামবে না – তাই হলো। মনে হচ্ছে শঠে শাঠ্যং!
অনিকেত লালবাজারে এসে কাগজে একটি ছবি দেওয়ার বন্দোবস্তো করলেন মৃতদেহের। যদি কেউ এগিয়ে আসে ছবি দেখে – তারপর মিস্টার পাকড়াশীর মুখোমুখি বসলেন। বললেন –
এই কেসের অনেক জটিল জটের মধ্যে একটি হচ্ছে প্রথম খুনের ধরণ। খুন হলো, কিন্তু ভিক্টিম এবং চারদিকে কেউ বুঝতে পারলো না! অথচ গুলি চালানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ছোট কোন রিভলবার এমনভাবে কেমোফ্লাজ করে রাখা ছিলো যে বাইরে থেকে তা দেখা যায়নি!
কীভাবে অনিকেত?
আমিও প্রথমটা একেবারেই বুঝতে পারিনি। তারপর গতকাল সিকিউরিটির কথা শুনে মাথায় হঠাত স্ট্রাইক করে – কুন্তলবাবু সেদিন মিলেনিয়াম পার্কে এসেছিলেন গলায় একটি বড় ক্যামেরা ঝুলিয়ে। ক্যামেরার সামনের লেন্সটি ছিলো খুব লম্বা এবং বড়!
তবে কি ক্যামেরার মধ্যেই লুকানো ছিলো রিভলবার?
খানিকটা তেমনি কিছু। ক্যামেরাটি ইম্প্রোভাইস করা হয়। ওপরের বোতামে চাপ দিলেই ছবি ওঠার বদলে গুলি বেরিয়ে আসবে নির্ভুল লক্ষ্যে!
সাংঘাতিক প্ল্যান! কেউ সন্দেহ করবে না! ভিক্টিমও কিছু বুঝতে পারবে না। কিন্তু ক্যামেরাটি গেলো কোথায়? জানো অনিকেত, সেদিন মিলেনিয়ামের গেটের অন্য সিকিউরিটি যে নাকি সুবোধের জায়গায় পাহাড়া দিচ্ছিলো, তুমি চলে যাওয়ার পর তাকে ফোনে পাওয়া যায়। সে খুব অদ্ভুত কথা বললো! সে নাকি অন্য একজনকে অমন এক ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে! প্রায় টিনেজার একটি ছেলে! মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ! রঙচঙে টিশার্ট পরা। সে আর তার গার্ল ফ্রেন্ড বেশ ভয় পেয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। তারপরেই সিকিউরিটি খবর পায় গাছতলায় মেয়েটির মৃতদেহ পড়ে আছে। ব্যস্ততার মধ্যে ছেলেটির দৌড়ে পালানোর কথা আর ওর হাতে বড়ো ক্যামেরার কথা কারো খেয়াল ছিলো না।
যাক, জিগস পাজলের আর একটি টুকরো মিলে গেলো!
মিললো কোথায়! এ তো আরো গুলিয়ে গেলো! ক্যামেরা তো ছিলো কুন্তলের কাছে!
কুন্তল কি কম প্ল্যান করে কাজটি করেছিলো? সে মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তুলবে বলে সামনে যায় এবং শেষ মূহূর্তে নিজের হাতে খুনটি করবে না বলে একটি টিনেজার ছেলের হাতে ক্যামেরাটি ধরিয়ে একটি সুন্দর ছবি তুলে দিতে বলে। ঐ বয়সের ছেলেরা এইসব করতে খুব ভালোবাসে। ছেলেটি শ্যুট করে! গুলি বেরোয়, মধুরিমা মাটিতে পড়ে যায়! ছেলেটি বুঝতে পারে যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে! সে ভয় পেয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কুন্তলকে খোঁজে, কিন্তু তিনি ততক্ষণে হাওয়া। এবার ছেলেটি বোঝে যে পুলিশ তাকেই খুনী বলে ধরবে এবং সে চম্পট দেয়। কিন্তু এতো করেও শেষরক্ষা হলো না কুন্তলবাবুর! আজই একটা ঘোষণা করুন রেডিও, টিভিতে এবং কাগজে। যদি কেউ অচেনা লোকের কাছ থেকে ক্যামেরা জাতীয় কিছু পেয়ে থাকে এক্ষুণি নির্ভয়ে লালবাজারে জমা দিতে। জমা দিলে কোন ভয় নেই, কিন্তু জমা না দিলে পুলিশ তাকে সন্দেহ করতে পারে।
আরিব্বাস! তোমার জুড়ি নেই অনিকেত! আমি এক্ষুণি ব্যবস্থা করছি। এবার কুন্তল হত্যা রহস্যটার কিছু করো তাহলেই শান্তি পাই!
দাঁড়ান প্রথম খুনের মোটিভ এখনো বোঝা যায়নি আর সম্ভবতঃ সেই মোটিভের সঙ্গেই জুড়ে আছে দ্বিতীয় খুন।
১০
পরেরদিন একটি ছেলে খুব ভয়ে ভয়ে লালবাজারে এলো । মিস্টার পাকড়াশী তাকে দুটো প্রশ্ন করতেই সে কেঁদে ফেলে আর কি! বললো –
বাবা যদি জানতে পারে আমি গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে মিলেনিয়াম গেছিলাম, আমাকে মেরেই ফেলবে! আমি খুন করিনি! আমি বন্দুক চালাতেই জানি না! এই ক্যামেরার মধ্যে থেকে কী করে গুলি বেরিয়ে এলো জানি না!! ভীষণ ফেঁসে গেছি স্যার! আমাকে বাঁচান!
তোমার কোন ভয় নেই। বলো দেখি এই ক্যামেরাটা কীভাবে পেলে?
সেদিন আমি আর প্রিয়ঙ্কা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা লোক এসে আমাকে বললো “ভাই, এই ক্যামেরা দিয়ে সামনে ঐ যে গাছের তলায় যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে, ওর একটা ছবি তুলে দাও না!” আমি বললাম “আপনি তুলছেন না কেন?” লোকটি বললো “আমার হাত ভীষণ কাঁপে ইদানিং।“ আমার বড়ো ডি এস এল আর দিয়ে ছবি তোলার খুব শখ! তাই আমি রাজী হয়ে গেলাম! মেয়েটির দিকে তাক করে বোতাম টিপতেই ক্লিক করে একটা আওয়াজ হলো আর মেয়েটা মাটিতে পড়ে গেলো! চারিদিকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো! আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে সেই লোকটাকে খুঁজতে লাগলাম! কোথাও দেখতে পেলাম না! ইতিমধ্যে মেয়েটাকে ঘিরে লোক জমতে শুরু করেছে! আমাকে কেউ লক্ষ্য করার আগেই প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে দৌড়ে পার্ক থেকে পালালাম! প্রিয়ঙ্কাই এতোদিন লুকিয়ে রেখেছিলো এটা! কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না কী করে এটা ফেরত দেবো! সেই লোকটাকেও চিনি না – ভাগ্যিস আপনারা টিভিতে দিলেন, তাই –“
বুঝলাম। দেখো তো এই ছবিটা – এই লোকটাই তোমাকে বলেছিলো তো? কুন্তলের মৃতদেহের ছবিটা দেখে ছেলেটা প্রায় লাফিয়ে উঠলো “কী কান্ড! এই লোকটাই তো!”
শোন, তুমি কাউকে কিচ্ছু বলবে না এটা নিয়ে। প্রিয়ঙ্কাকেও নয়! যদি অন্যথা হয়, তুমিই সবার আগে ফাঁসবে জেনে রেখো! পরে দরকার মতো পুলিশ সাক্ষী দেওয়ার জন্য তোমাকে ডাকতে পারে। যদি ডাকা হয় আমরাই তোমার বাবা মাকে বুঝিয়ে বলবো। প্রিয়ঙ্কার কথা কেউ জানবে না, চিন্তা নেই।
অনিকেত আর আকাশ মধুরিমার মোবাইলের ছবিগুলো দেখছিলো। দেখতে দেখতে হঠাত একটা পুরোনো ছবিতে চোখ আটকে গেলো। ছবিটা প্রায় বছর পাঁচেক আগের। পিছনে বিশাল নদী দেখা যাচ্ছে। মধুরিমা আর একটি ছেলের ঘনিষ্ঠ ছবি! ছেলেটির মোটা গোঁফ, রোগা চেহারা, চোখে চশমা নেই। অনেকক্ষণ ছবিটা একমনে দেখলেন অনিকেত। তারপর আকাশকে বললেন
কুন্তলের ছবিটা নিয়ে এসো তো! না না, মৃতদেহের নয়। পুলিশ যেটা এঁকেছে সেটা। বেশ এবার এই যুগলের ছবিতে গোঁফ উড়িয়ে, চশমা বসিয়ে দাও দেখি আকাশ! এখনকার ছবির মতো ক্লিন শেভন আর চশমা বসিয়ে দিতেই হুবহু মিলে গেলো। অনিকেত বললেন, ইউরেকা! বুঝলে আকাশ, আর কোন সন্দেহ নেই যে এই সেই মেঘনাদ!। দেখো, আমার ধারণা, এক সময় মধুরিমার সঙ্গে কুন্তলের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো এবং দুজনে একসাথে বেড়াতেও গেছিলো ডায়মন্ডহারবার। কিন্তু স্যার তাহলে কুন্তল মধুরিমাকে খুন করলো কেন? তাও আবার এতো প্ল্যান করে?
এইটাই সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন আকাশ এবং তারপর তাকেই বা কে এবং কেন খুন করলো! নাঃ আর একবার মধুরিমার বাড়ি না গেলেই নয়। আর ওর বাবা মায়ের কথায় ভরসা করা যাবে না। ওয়ারেন্ট বার করে বাড়ি থরো সার্চ করতে হবে!
পরদিন মিস্টার পাকড়াশী নিজেই ফোন করলেন। ক্যামেরাটি উদ্ধার হয়েছে সেটা বললেন এবং সত্যিই সেটা একটা ইম্প্রোভাইজড বন্দুকে পরিণত হয়েছে। সেটা দেখে সুজয় এবং সবাই খুবই অবাক হয়েছে। মিস্টার পাকড়াশী বললেন – যে জন্য ফোনটা করলাম সেটা হলো, মুম্বই পুলিশে খবর করে জানলাম, রিসেন্টলি নারকোটিক্সের একটি বিশাল কন্সাইনমেন্ট দুবাই যাচ্ছিলো এবং ধরা পড়েছে। সঙ্গে যারা ধরা পড়েছে তাতে অজিত বলে একটি নাম আছে। অজিতেশের শর্টনেমও তো অজিত ছিলো!
এই প্রথম পুলিশ তাকে পাকড়াতে পেরেছে। অজিতই যে অজিতেশ তার কোন প্রমাণ এখনো নেই। কারণ অজিত কলকাতার যে ঠিকানা বলেছিলো তা সম্পূর্ন নকল। হাজার মারধোর করেও তার কাছ থেকে আসল ঠিকানা বার করা যায়নি এখনো। সে যে সব আই ডি প্রুফ দিয়েছিলো সবই এই ফেক অ্যাড্রেসে এবং ফেক ডকুমেন্ট। মিস্টার পাকড়াশী আপনাকে একটা ওয়ারেন্ট বার করতে হবে আজকের মধ্যে, মধুরিমাদের বাড়ির পুরো তল্লাশীর জন্য! ওদের কোন সময় দেওয়া যাবে না। তাহলে কিছু সরিয়ে ফেলতে পারে।
আই সি! বেশ আমি বার করাচ্ছি!
আজ রাতেই আমি তল্লাশি করতে চাই।
১১
মধুরিমাদের বাড়ি যখন সুজয় এবং টিম, সঙ্গে অনিকেত ও আকাশ পৌঁছলেন তখন সময় প্রায় রাত সাড়ে আটটা! এতো রাতে পুলিশ দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলেন প্রমথেশ। বললেন –
আপনারা এতো রাতে?
আমাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে। আপনার বাড়ির তল্লাশি নেবো।
আমরা আবার কী করলুম!
আপনি সার্চ করতে দিন। সব চাবি আমাদের জিম্মায় করুন!
বেশ কড়া স্বরে বললো সুজয়। সার্চ করে মধুরিমার ঘরে আলমারীর মধ্যে পুরোনো অ্যালবাম পাওয়া গেলো, পাওয়া গেলো মধুরিমা ও অজিতেশের সব আই ডি কার্ড। একটি ঘরে নকল ফাঁপা ইলেকট্রিক বোর্ড পাওয়া গেলো! তার গর্তের মধ্য থেকে প্রায় এক কেজি মাদক আবিষ্কার হলো। সমস্ত ঘরের চাদর, তোষক কেটে দেখা হলো। মধুরিমার ঘরের তোষকের মধ্যেও মাদকের প্যাকেট আবিষ্কার হলো। সব নিয়ে প্রমথেশবাবুকে চ্যালেঞ্জ করতেই তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। বললেন
“আমি জানতাম বাবা, অজিত বিপথে যাচ্ছে। কিন্তু কী করছে কোনদিন বুঝতে পারিনি। এ সব যে আমাদের বাড়িতে রয়েছে কিছুই বুঝিনি বাবা! বিশ্বাস করো!” অনিকেত পুরোনো অ্যালবাম দেখছিলেন বেশ মন দিয়ে। বেশ কটি ছবিতে বন্ধুদের গ্রুপে অজিতেশের সঙ্গে কুন্তলের ছবি রয়েছে। অনিকেত জিজ্ঞাসা করলেন
প্রমথেশবাবু, এই ছেলেটি কে?
ও তো কুন্তল! প্রায়ই আসতো অজিতের কাছে!
আপনি জানেন ওর বাড়ি কোথায়? ইনি সম্প্রতি খুন হয়েছেন। শুধু তাই নয়, সম্ভবতঃ আপনার মেয়ের খুনের সঙ্গেও জড়িত।
বলো কী বাবা! ও তো অনেকদিন এ বাড়িতে আসেনি! আমি জানি না ওর বাড়ি কোথায়।
আপনার মেয়ের সঙ্গে কি ওর পরিচয় ছিলো?
এবার অরুণিমা বলে উঠলেন –
দেখুন গোপন করে আর কোন লাভ নেই। মধু এই ছেলেটির কথা আমাকে বলেছিলো। ওদের মধ্যে ভাব ভালোবাসা হয়। অজিতও জানতো সেটা। কিন্তু অজিত চলে যাওয়ার আগে কী একটা গন্ডগোল হয় অজিত আর কুন্তলের মধ্যে – তারপর থেকে ও আর কোনদিন আসেনি এখানে। কী নিয়ে গন্ডগোল আমি কিছু জানি না। একদিন ও এসে অজিতের সঙ্গে খুব চ্যাঁচামেচি করে। তারপরই অজিতও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়!
বুঝলাম। এবার একটাই জট ছাড়ানো বাকি। যা কিছু পেলাম নিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের কিন্তু কোত্থাও যাওয়া চলবে না। বাড়িতে পুলিশ পাহারা থাকবে যতক্ষণ না কেসের মীমাংসা হয়।
পরদিন সকালের ফ্লাইটে অনিকেত ও মিস্টার পাকড়াশী মুম্বই চললেন। কেসের এতো বড় একটা খোলা সুতো মুম্বইতে যে সেখানে না গেলে এর শেষ পাওয়া যাবে না।
মুম্বই পুলিশ সেই সেলে নিয়ে গেলো যেখানে অজিতকে রাখা হয়েছে। প্রমথেশবাবুর সঙ্গে মুখের প্রচুর মিল। দেখলেই চেনা যায়। খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ, নোংরা চেহারা, দেখলে মনে হয় অনেককাল স্নান করেনি। অনিকেত জানেন ড্রাগ পেডলাররা কীরকম দুঃসাহসী ও বেপরোয়া হয়। সহজে কিছু উদ্ধার করা যাবে না। তবু এগোতে তো হবে। অনিকেত বললেন –
আপনি অজিতেশ বাবু তো?
আমি অজিত!
হ্যাঁ ওই একই হলো।
হামি জানে না অজিতেশ কে আছে। ম্যায় অজিত।
বেশ দেখো তো এই আধার কার্ড তোমার কি না!
ইয়ে সব ফেক হ্যায়। মেরা নহী।
আভি পতা চল যায়েগা। আপনা পাঁচ উংগলি কা নিশান ডালো ইধর! হম আধার সার্ভার মে চেক কর লেঙ্গে!
নহী দেঙ্গে! ক্যা কর লোগে?
এবার বেশ কজন পুলিশ বহু কষ্টে চেপে ধরে অজিতেশের আঙ্গুলের ছাপ নিলো এবং সেটা চেকিং–এ পাঠানো হলো। পরদিন চেক হয়ে এলো যে আধার কার্ড ফেক নয়। পরদিন আবার অজিতের সেলে এলেন অনিকেত, সুজয় ও মুম্বই পুলিশ।
এই আধার কার্ড আপনার! চেক করা হয়ে গেছে।
তাতে কী প্রমাণ হলো?
যে আপনিই কলকাতার অজিতেশ। প্রমথেশবাবুর ছেলে।
যদি হই তাতেই বা কী?
আপনার বোন খুন হয়েছে, জানেন?
না, আমি দুবাইতে ছিলাম।
কুন্তল কে?
এই নামে কাউকে চিনি না।
এই ছবিগুলো দেখুন, চিনে যাবেন।
হ্যাঁ, অনেকদিন আগে আমার সঙ্গে কলেজে পড়তো, মনে পড়েছে।
আর?
আবার কী?
তবে আমিই বলি। কলকাতায় থাকতেই আপনি ড্রাগ পাচারের কাজ শুরু করেন। প্রচুর পয়সার মুখ দেখেন খুব অল্প সময়ে। এই সময় কুন্তলকেও আপনার দলে নিয়েছিলেন, কারণ ওর অবস্থা সম্ভবতঃ ভালো ছিলো, এবং আপনার ইনভেস্ট করার জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হয়েছিলো। আপনি নিজেই এই ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন। ঠিক কি ভুল?
আপনার যা ইচ্ছা বলে যান। আমি কিছুই বলবো না।
আমরা কিন্তু আপনার বাড়ি তল্লাসী করে এমন অনেক সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি যে আপনি কোন মতেই বাঁচবেন না। তাই লুকিয়ে লাভ নেই। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে অজিতেশ। ঘাড় ঝুলে পড়ে তার। প্রায় পরাজিত মানুষের মতো বলে –
হ্যাঁ কুন্তল আমার সঙ্গে কাজ করতো। ওর কাছ থেকে দশ লাখ টাকা ধার করি। শোধ দিতে পারিনি। কলকাতায় আমার পিছনে তখন ফেউ লেগে গেছে। আর ওখানে থাকলে ধরা পড়তাম। তাই পাত্তারি গুটিয়ে যেদিন মুম্বই চলে আসবো, সেদিন হঠাত ও বাড়িতে আসে। ওর সঙ্গে আমার প্রচন্ড ঝগড়া হয়। ও বলেছিলো যে এর প্রতিশোধ ও নেবে।
এরপর দু বছর আপনার কোন খোঁজ ও হাজার চেষ্টা করেও পায়নি।
এখনো পেতো না। যদি না শালা, আমি দুবাই থেকে ব্যাক করে আসতাম!
ব্যাক করে এলেন কেন?
আমার এজেন্টরা বাড়ির খবর রাখতো নিয়মিত। হঠাত তারা খবর দেয় যে বোন খুন হয়েছে, খুনীকে পুলিশ ধরতে পারেনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি যে এই কাজ ও ছাড়া আর কারো হতে পারে না। আর কারো কথাতেই মধু ও ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখা করতে রাজী হতো না। মধু কুন্তলকে সত্যি ভালোবাসতো। তখন আমি কুন্তলকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করি। এরপর ও হয়তো বাবা মাকেও আক্রমণ করতো! ও ধারণা করেছিলো বাড়িতে কোথাও ড্রাগের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে, যা বিক্রি করলে ওর টাকা উদ্ধার হয়।
কীভাবে খুন করলেন কুন্তলবাবুকে?
সুপারি দিয়েছিলাম এজেন্টকে। সেই সব ব্যবস্থা করে আমাকে খবর দেয়। কিন্তু মাঝখান থেকে হঠাত শালা মুম্বই পুলিশ আমার ঠিকানা পেয়ে গেলো আর আপনারাও এসে হাজির হলেন। বাবা মাকে আমার প্রণাম দেবেন। আর কখনো দেখা হবে কি না জানি না। আমি আমার প্রায়শ্চিত্ত করবো। অজিতেশের বয়ান সম্পূর্ণ রেকর্ড করে নিয়েছিলো আকাশ। কলকাতায় এসে এই কঠিন কেস সলভ করার জন্য স্পেশাল পুলিশ মেডেল ও প্রাইজ মানি পেলেন অনিকেত আকাশ ও টিম জিভাগো!