| 8 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা’২০২১

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা খেলা: ধূমকেতুর ল্যাজ । সৌরাংশু

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

এটা ঠিক সিনেমার রিভিউ না কোনও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখছি সেটা লেখাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। কারণ আমি নিজেই জানি না।

আদতে আমার দাবা খেলার গোড়ার গল্পে মনে পড়ে দিব্যেন্দু বড়ুয়ার কথা। দিব্যেন্দু বড়ুয়া তখন লন্ডনের কী যেন একটা টুর্নামেন্টে বিশ্বের দুই নম্বর ভিক্টর কর্শনয়কে হারিয়েছেন। কর্শনয়আনাতোলি কারপভের কাছে পরপর দুবার বিশ্ব দাবার ফাইনালে হেরেছেন।

কারপভ তখন একছত্র সম্রাট দাবাবিশ্বের। রবার্ট জেমস ফিশারের কথা তখনও শুনিনি। শুনলাম আরও বছর দুই পরে। একুশ বছরের গ্যারি কাসপরভ যখন দাবামঞ্চে উল্কার বেগে ফেটে পড়লেন। অতটা তো বুঝতাম নাতখন সবে বোড়ের দু ঘরঘোড়ার আড়াই চালক্যাসলিংকুইনস ক্যাসলিং শুনেছি। গ্যারি কাসপরভের কথা শুনতে গিয়ে শুনলাম ফিশারের কথা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


রবার্ট জেমস ফিশার বা ববি। সোভিয়েত আধিপত্যের দিনগুলিতে এক অন্য ধুমকেতুর মতো আগমন তাঁর। বরিস স্প্যাসকির সঙ্গে ১৯৭২এর ফাইনাল নাকি ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি ছিল। আর তার ষষ্ঠ গেমটি হল গেম অব দ্য সেঞ্চুরি। এটি অবশ্য আগে শুনিনি। শুধু শুনেছিলাম ফিশার ছিলেন এক খ্যাপাটে একলষেঁড়েইহুদী বিদ্বেষীপ্যারানয়েড পারসোনালিটি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার দু বছর পরে আনাতোলি কারপভের বিরুদ্ধে তিনি নাকি ওয়াকওভার দিয়েছিলেন। আর দাবা বিশ্ব থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। সহসা উদয় হলেন ১৯৯২-তে বেলগ্রেডে। সেই স্প্যাসকির সঙ্গে তথাকথিত বা ফিশার কথিত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে।

এইই…। বড়ুয়াকারপভকাসপরভআনন্দক্রামনিকশর্টকামস্কিকার্লসনদের পৃথিবীতে ফিশার হলেন বিগত দিনের আরশির মুখপোড়ো গির্জাডুবো পুকুরের বুদবুদ। ১৯৭২একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারপর পালিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কেই বা মনে রাখে। কিন্তু ফিশার নয়। ফিশার পালিয়ে গিয়েছিলেনফিশার হারিয়ে গিয়েছিলেন। তবু শতাব্দীর পারে এসে সমগ্র দাবাবিশ্ব সর্বকালের সর্বাধিক প্রতিভাবান ফ্রিক হিসাবে মনে রেখে দিয়েছে ববি ফিশারকে। মানসিক সমস্যা ছিলছেলেবেলা থেকেই। একা মায়ের কাছে বড় হবার মুহূর্তে দেখেছেন নগ্ন দুনিয়ার জলছবি। ভাসতে চাননিপারেননি তিনি। ডুব দিয়েছেন ওই চৌষট্টি খোপের সমুদ্রে। প্যারানইয়াস্কিতজোফ্রেনিয়াঅসামাজিক আচরণমেলামেশার অনুপযুক্তক্যামেরা থেকে দূরে থাকা ববি ফিশার সারা জীবন ওই সাদা কালো চৌষট্টি চৌকো কুণ্ডেই খুঁজে পেয়েছিলেন অমৃতের আস্বাদ।

উল্কার গতিতে উত্থান। ১৯৫১য় মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম এক স্কটিশ ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারের বিরুদ্ধে খেলার সময় ব্রুকলিনের এক দাবা শিক্ষক কারমাইন নিগ্রোর নজরে আসেন। তাঁরই তত্ত্বাবধানে ববির শিক্ষা চলে। ৫৬য় ইউএস জুনিয়র দাবা জিতে সে বছরই মাত্র তেরো বছর বয়সে একটি আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ডোনাল্ড বায়ার্নের বিরুদ্ধে মন্ত্রীকে বিসর্জন দিয়ে এক অবিসংবাদিত আক্রমণের নজির রাখেন। দাবার ঐতিহাসিকরা এই গেমটিকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গেম অ্যাখ্যান দেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে এতটা প্রতিভার স্বাক্ষর বোধহয় এর আগে বা পরে কেউ কখনই রাখেননি।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
অল্প বয়সেই বড় বড় দাবাড়ুদের হারিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন ববি ফিশার; Image Source: nydailynews.com

এভাবেই উত্থান। স্যামুয়েল রেসেভস্কি তখন অ্যামেরিকার এক নম্বর দাবাড়ু। কিন্তু তাঁকেও পিছনে ফেলে দিয়ে ৫৭/৫৮ থেকে পরপর আটবার অ্যামেরিকার সেরা ফিশার।

আসলে ফিশারের গল্পটাই পুরো প্রতিভার বিচ্ছুরণ আর সামাজিক নিয়মকানুনের চূড়ান্ত অবমাননার মধ্যে দোলাচল খেলে। অলিম্পিয়াডে ইউ এস দলে সুযোগ পেয়েও তিনি ফার্স্ট বোর্ড দেওয়া হয়নি বলে ছেড়ে চলে এলেন ১৯৫৮য়। আবার ১৯৬২র ক্যান্ডিডেট দাবায় সোভিয়েত দাবাড়ুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন যে তাঁরা যোগসাজশ করে দ্রুত নিজেদের মধ্যে ড্র করে শক্তি সঞ্চয় করছে যাতে ফিশারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু এ তো শুধুমাত্র এক প্যারানয়েড ব্যক্তিত্বের কষ্ট-কল্পনা ছিল না। বহুদিন ধরেই এই অভিযোগ ছিল সোভিয়েত দাবাড়ুদের বিরুদ্ধে। এই প্রথম সামনাসামনি অভিযোগ পেয়ে ফিডে অর্থাৎ ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দে ইচেস অর্থাৎ আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন ক্যান্ডিডেট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের চ্যালেঞ্জার নির্ধারণ বন্ধ করে দিয়ে নকআউটের মাধ্যমে শুরু করল। আর একের বিরুদ্ধে এক দাবায় ফিশার তো জিনিয়াস, কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ বিশ্বস্তরীয় টুর্ণামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সাধারণ স্থানীয় কম্পিটিশন খেলছেন। কী বলবেনইঁদুর দৌড়ে নেই তিনিভালোবেসে ফেলবেন এই একলা চলা আধপাগলা মুখের উপর যা মনে হয় সোজা বলে দেওয়া লোকটাকেনাকি দূরে সরিয়ে দেবেন অসামাজিকঅশিষ্টঅসুস্থ মানসিকতার এই জিনিয়াসকে?


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
১৩ বছর বয়সী ববির একই সাথে ২১টি ম্যাচ খেলার একটি দৃশ্য; Image Source: allthatisinteresting.com

ষাটের অ্যামেরিকাসত্তরের শুরুর অ্যামেরিকা এভাবেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে শৈত্যলড়াইয়ের মধ্যগগনে এক অদ্ভুত প্রতিভার সোভিয়েত বিচরণভূমিতে দাপিয়ে তারা ও স্ট্রাইপ্সের জয়গান গাওয়াঅপরদিকে ভরসার অভাবমিডিয়া থেকে দূরে থাকা এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দার ন্যায় আচরণ।

বাহাত্তরের মনসুনের কথাই ধরি। একদিকে বরিস স্প্যাসকির শীতল পেশাদারিত্বভদ্রতাঅপরদিকে চরম ঔদ্ধত্বচূড়ান্ত দিকভ্রান্তিকতার ববি ফিশার। মেজুন ধরে যখন স্প্যাসকি সরকারি সহায়তায় এবং সেকেন্ডসদের সঙ্গে (চূড়ান্ত ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি হিসাবে কোনও এক বা একাধিক গ্র্যাণ্ডমাস্টারের সহায়তা নেওয়া হয়। এরাই সেকেণ্ডস। এর স্বীয় ক্ষমতাবলেই দাবাবিশ্বে যথেষ্ট গুরুত্বের অধিকারী হননিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন ফিশার লড়ে চলেছেন ফিডের সঙ্গে পুরষ্কার মূল্য বাড়াবার জন্য অথবা সুযোগ সুবিধা বাড়াবার জন্য। এমন কি ফাইনালের জায়গা নিয়েও। ফিশারের পছন্দ বেলগ্রেডবরিস চেয়েছেন রিকইয়াভিক।

শেষে ফিডে রিকইয়াভিকই বেছে নিলপুরষ্কারমূল্যও বাড়াল। কিন্তু তাও ফাইনাল শুরুর আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ফিশার এলেন না। অভূতপূর্বঅপমানজনক। এমনও নয় যে এর আগে বরিস স্প্যাসকিকে হারিয়েছেন তিনি। তবুও ঔদ্ধত্ব সীমাবিহীন। অথবা মিডিয়ার সামনে অসহায়তাঅন্দরকে আগলে রাখার অপারগতা।

শুরু হল ফাইনাল। তার আগে ক্যান্ডিডেটস নকআউটে কোয়ার্টারফাইনাল থেকে টানা কুড়িটা গেম জিতে রেকর্ড করা ফিশারের। প্রথম চাল দিলেন স্প্যাসকি প্রথম গেমের। মন্ত্রীর ঘরের বোড়েকে দু ঘর এগিয়ে। ফিশারের দেখা নেই। ন’মিনিট চলে যাবার পর ফিশার প্রবেশ করলেন লগারডেলশোল এরিনার মঞ্চে। ঠাণ্ডা মাথায় করমর্দন করে সাধারণ একটা চাল দিলেন। সাধারণভাবে এগোচ্ছে খেলা। কিন্তু ড্র বা স্টেলমেট ঘোরতর নাপসন্দ ফিশারেরতাই যেন ৩৯ এবং ৪০তম চালে অদ্ভুত চাল দিয়ে গেম তুলে দিলেন স্প্যাসকির হাতে। স্প্যাসকি প্রথম গেম জিতে এগিয়ে গেলেন আর ফিশার গেলেন লড়াই করতে ফিডের সঙ্গে।

লগারডেলশোলে খুব বেশি আওয়াজখুব বেশি দোলাচল হচ্ছে। যাতে ফিশার নাকি মনসংযোগ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। প্রস্তাব দিলেন নিচের বেসমেন্টে টেবিল টেনিস রুমে খেলতে হবে।

যাঃ তা হয় নাকিএরকম অদ্ভূত প্রস্তাবে ফিডে কেনফিশারের গার্লফ্রেন্ডও রাজি হতেন না। অবশ্য গার্লফ্রেণ্ড নিয়ে কখনই মাথা ঘামাননি তিনি। সে যাই হোকফলস্বরূপ পরের দিন দ্বিতীয় গেমের সময় হোটেল ঘর থেকেই বেরোলেন না। ফ্যাক্স্ টেলিগ্রাম ফোন আসছে শয়ে শয়ে। ইউএসের রাস্ট্র সচিব হেনরি কিসিঙ্গার ফোন করলেন। তবু ফিশার অনড়। দ্বিতীয় গেমে খেলতে গেলেনই না। ২০ স্প্যাসকি। কিন্তু এভাবে হয় নাকি!


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
বোরিস স্প্যাসকির বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে হেরে যান ববি ফিশার; Image Source: allthatisinteresting.com

এবারে মাঠে নামলেন স্প্যাসকি। আসলে এসব গল্পে কোনও একজন হিরো বা অ্যান্টি হিরো হয় বটে কিন্তু তার একজন স্নেহশীল দাদাকাকা বা পাড়ার ফেল্টু দা থাকেন। স্প্যাসকি বললেনএভাবে জিততে তিনি চান না। সোভিয়েতের ভদ্রসমাজ থেকে উঠে আসা স্প্যাসকিখেলোয়াড়োচিত মনোভাব দেখিয়ে রাজি হয়ে গেলেন বেসমেন্টে খেলতে। একমাত্র একটি ক্যামেরা এবং ফিডের প্রতিনিধি ছাড়া কেউ রইল না সেখানে। তৃতীয় গেমএ আসল ফিশার বেরিয়ে এল। রাজার দিকের বোড়ের কাঠামো বিসর্জন দিলেন একাদশ চালেকিন্তু বোর্ডের সমঝদারিতে মেরে দিলেন বাজি। উল্টোদিকের পাল্লা ভারি করে তার পরেরদিন মুলতুবি রাখা তৃতীয় গেম জিতে বোর্ডে প্রথম পয়েন্ট তুললেন ফিশার।

চারপাঁচ ড্র হল। ফিশার ধীরে ধীরে ডানা মেলছেন। এক অদ্ভুত খেঁকুড়েঘরকুনোউচ্ছৃঙ্খলকেউ না ভালোবাসার যুবকসোভিয়েত গ্রিজলির সামনে ডানা মেলে ঈগল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।

ছ’নম্বর গেম। স্প্যাসকি তাঁর নিজের কালো ঘুঁটি নিয়ে তারতাকাওয়ার ডিফেন্সএ শুরু করলেনফিশারের কুইন্স গ্যাম্বিটের বিরুদ্ধে। কুইন্স গ্যামবিটমন্ত্রীর সামনের বোড়েকে দু ঘর আর কালোঘরের হাতির সামনের বোড়েকে দু ঘর খেলে মন্ত্রীর হাত পা ছড়ানোর জায়গা করে দেওয়া। এর বিরুদ্ধে ক্লাসিকাল মুভ হল তারতাকাওয়ার ডিফেন্স। মন্ত্রীর সামনের বোড়ের দু ঘর আর রাজার সামনের বোড়ের এক ঘর চালে রাজার দিকের ঘোড়া থেকে এক কোণাকুণি বোড়ের পজিশনিং। কিন্তু ফিশার দমার পাত্র নন। সাদা ঘরের হাতির পজিশনিং নিখুঁত করে অবিশ্রাম আক্রমণ চালালেন বোড়ের লাইনের উপর। কুড়িতম চালে গিয়ে স্প্যাসকি ভুল করলেনদেখতে সামান্য হলেও ভুল। আর ফিশারের বোর্ড অ্যাওয়ারনেস কিংবদন্তী পর্যায়ের। একে একে পেঁয়াজের খোসার মতো পরত খুলতে শুরু করলেন স্প্যাসকির কালো ঘুঁটির। একচল্লিশ চাল পর্যন্ত নিরন্তর আক্রমণের অক্ষম মোকাবিলা করে স্প্যাসকি উঠে দাঁড়ালেন। মেজাজী অথচ প্রতিভাবান প্রতিদ্বন্দীর কাছে হার মেনেও হাততালিতে ভরিয়ে দিলেন তিনি। এমন প্রতিভাএমন বিস্ময়এমন আগ্রাসনের মুখোমুখি তিনি হয়েছেন কিন্তু তার সম্পূর্ণ বিকাশ দেখেননি আগে। এবারে দেখলেন আর এক সত্যিকারের খেলোয়াড়ের মতো নত হয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ফিশারকে। হলভর্তি হতচকিত মানুষদের সম্মিলিত হাততালির সামনে ফিশার কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলেন।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
টুর্নামেন্টে তাদের মধ্যে চলমান ষষ্ঠ রাউন্ডকে দাবার ইতিহাসের সেরা ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ; Image Source: nydailynews.com

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সেটা ছাড়াও যা পেলেন ফিশার তা হল স্প্যাসকির আজীবন বন্ধুত্ব। ফিশারকে বুঝতে পারার লোক খুবই কম। দিদি হয়তো বুঝতেনতাঁর ম্যানেজার কাম আইনজ্ঞ পল মার্শাল বোঝার চেষ্টা করতেনআর ফাদার বিল। ফাদার বিল লম্বার্ডি ধর্মাযাজক ছিলেনছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টারওফিশারের তথাকথিত প্র্যাকটিস পার্টনারও ছিলেনআর ছিলেন ফিশারের বন্ধু।

কিন্তু সবাই ধরে কয়েও ফিশারকে ৭৪এ চ্যালেঞ্জার আনাতোলি কারপভের বিরুদ্ধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে নামানো গেল না ফিশারকে। ফিশার গোঁ ধরলেনপয়েন্ট সিস্টেম পাল্টাতে হবে। জিতলে শুধু পয়েন্ট পাওয়া যাবে এবং প্রথম দশ পয়েন্ট যিনি পাবেন তিনি জিতে যাবেন। কিন্তু ৯৯ হয়ে গেলে ফিশারই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন থেকে যাবেনযদিও পুরষ্কার মূল্য ৫০৫০ ভাগ হয়ে যাবে। ফিডে শুধু জিতলে পয়েন্ট পাওয়া যাবে মতটি মেনে নিতে রাজি হল। ফল?

বিশ্ব দাবার মঞ্চ থেকে চিরতরে স্বেচ্ছা অবসর নিলেন ফিশার। অবশ্যই কাউকে না জানিয়ে। তারপরতারপরের ইতিহাস অসংলগ্ন বক্তব্যের চিরবন্ধু স্প্যাসকির সঙ্গে বেলগ্রেডে ৭২এর পূনরাবৃত্তি করে অ্যামেরিকা সরকারের বিরাগভাজন হওয়া। যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে তখন রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞাফলস্বরূপ জেল। এর মাঝে ফিলিপিন্স রেডিওতে দেওয়া মাঝে সাঝে বর্ণবিদ্বেষীইহুদী বিদ্বেষীঅ্যামেরিকা বিদ্বেষী সাক্ষাৎকার২০০৫এ ভুয়ো পাসপোর্টে জাপানে জেল খাটাতার পরে পরেই আইসল্যাণ্ডের সাম্মানিক নাগরিকত্ব গ্রহণ। ২০০৭এ মৃত্যু।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
শেষ বয়সে ববি ফিশার; Image Source: listen.sdpb.org

শুরুতে বলেছিলাম এটি সিনেমার রিভিউ কি না। রিভিউ নয়রিভিউ হলে তো অভিনয়ক্যামেরাশিল্প নির্দেশনানির্দেশনা নিয়ে মন্তব্য থাকত। কিন্তু সিনেমা যদি জীবনের প্রতিচ্ছবি হয় তাহলেই তো সফল।

পন স্যাক্রিফাইস। সিনেমাটির নামসিনেমাটি শেষ হয়েছে ৭২এই। কিন্তু ফিশারের গল্প তো আরো একটু ছিলই। নাকি ছিল না। নিরন্তর সোভিয়েত আধিপত্যের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক অদ্ভূত মানুষের জয়ের গল্প। এখানেই তো শেষ হয়ে যাবার কথা। ফিশারের আগে পরে প্রচুর গ্রেটরা রয়েছেনসেই ষোড়শ শতাব্দীর রুই লোপেজ থেকে শুরু করে মিখায়েল তাল, আলেকজান্দার আলেখিনবটভিনিককাপাব্লাঙ্কা। কিন্তু তবুও ফিশারকে কেন বলা হয়ওই যে স্বীয় ক্ষমতাবলে সোভিয়েত সাম্রাজ্যে ফাটল ধরানোআধুনিক দাবার আক্রমণত্মক খেলা শুরু করা এবং সামগ্রিক দাবা বোর্ডের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকা। প্রস্তুতি নয়সহজাত ক্ষমতাতেই এই কাজটা করে ফেলেছিলেন তিনি।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
ববি ফিশারের চরিত্রে প্রশংসাজনক অভিনয় করেছেন স্পাইডার ম্যান ট্রিলজির টবি ম্যাগুইয়ার ; Image Source: wall.alphacoders.com

সিনেমাটির নাম পন স্যাক্রিফাইসআদতে ফিশার নিজেকে বলিদান দিয়েছিলেন দাবাখেলার ঈশ্বরের কাছে। প্রমাণ করার কিছুই ছিল নাতবু কোনও খেলাই যে মানুষের ঊর্ধ্বে নয়মানুষই তার মস্তিস্ক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার ভবিষ্য এরই যেন এক জ্বলন্ত প্রমাণ দিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন ফিশার। রবার্ট জেমস ফিশারআধুনিক দাবার উজ্জ্বলতম উল্কার নামধূমকেতুর ল্যাজের মতো আছড়ে পড়েছিলেন যিনি নশ্বর দাবাখেলার পৃথিবীর উপর।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত