Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,puja 2021 kids special Mityl Chakravarty

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা শিশু: ছোট্ট ছোট্ট পায়ে । মিতিল চক্রবর্তী

Reading Time: 2 minutes
একটি পরিবারে শিশু নিয়ে আসে অপ্রত্যাশিত আনন্দ। শিশু দেখলেও হৃদয়ে দোলা লাগে না এমন মানুষ বিরল। শিশুর থেকেই শিখি সারল্য। শিশু নিষ্পাপ তাই তার দুষ্টুমিও সওয়া যায়। কিন্তু বড়দের কিছু অপছন্দ হলে শিশু তা সব সময় প্রকাশ করতে পারে না। সমাজের এ যেন এক অলিখিত নিয়ম, বড়দের ভুল ধরতে নেই। এ কারণেই গৃহশিক্ষকের প্রহার সহ্য করেও শিশু নীরব থাকে। শিশুর গ্রুমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব বাবা,মায়েরা শিশুকে আয়ার কাছে রেখে কর্মক্ষেত্রে যান তাঁদের অবশ্যই সি.সি.টি.ভির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে অফিস থেকেও শিশু ও আয়ার ওপর নজরদারি করা যাবে মোবাইল থেকেই। আর শিশুকে স্কুল বাসে তুলে দেওয়ার পর app থেকে ট্র‍্যাক করার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। 
                             
শিশুকে বড় করার ক্ষেত্রে আজকাল অধিকাংশ বাবা,মায়ের হাতেই সময় খুবই অপ্রতুল। যাঁরা আই.টি. সেক্টরে কাজ করেন তাঁরা তো আকাশের চাঁদের মতই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আগে দাদু,ঠাকুমা, কাকু, কাকিমার কোলে শিশুরা বড় হতো। এখন যৌথ পরিবারই বিরল। হিতোপদেশ,ঠাকুরমার ঝুলি তার কাছে কে উন্মুক্ত করবে? নীতি শিক্ষার জন্য শিশুর গল্প শোনা খুবই জরুরি কারণ ছোটবেলায় শোনা গল্প মনের মধ্যে গাঁথা থাকে আজীবন। শিশু যেন একাকিত্বে না ভোগে সেই আশ্বাস তাকে দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। শিশুর অপরাধ আর বড়দের অপরাধ কখনোই সমগোত্রীয় নয়। তাই শিশু দোষ করলে তাকে বোঝাতে হবে। শারীরিক নিগ্রহ একেবারেই অনুচিত। অতিরিক্ত মার খেয়ে অনেক শিশু বড্ড জেদি হয়ে যায়। ‘কান ধরে ওঠ বস করো’ বললে শিশুর আত্মসম্মানবোধ বিকশিত হয় না। 
                                 
ক্ষুদ্র ভেবে শিশুকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই সজাগ। সে আকারে ক্ষুদ্র হলেও এক বিরাট শক্তির আধার। সেই শক্তির স্ফূরণ কীভাবে ঘটবে তা নির্ভর করে বড়দেরই ওপর। শিশুকে অযথা মিথ্যে কথা বলা উচিত নয়। বড়রা মিথ্যে কথা বলে ভুলে গেলেও শিশু কিন্তু মনে রাখে। এভাবেই তাকে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে না দিলে সেও মিথ্যে কথা বলতে শেখে। শিশুকে অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করে খাটো করলে সে হীনমন্যতায় ভুগবে। প্রতিটি শিশুর যে বিশেষত্ব তা তো বড়দেরই আবিষ্কার করতে হবে।
                                 
 শিশু যেন আনন্দে পড়া শেখে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় ‘স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারি আমরা কি আর বইতে পারি? এও কী একটা শাস্তি নয়? কষ্ট হয়,কষ্ট হয়।’ আমরা বড়রাই যখন কোন কাজ যেমন রান্নাবান্না খুব আনন্দ নিয়ে করি তার স্বাদ হয় স্বর্গীয় আর মানসিক চাপ নিয়ে ওই একই কাজ করলে তা নিজেরা কোনক্রমে গলাধঃকরণ করতে পারলেও অতিথিকে দেওয়া যায় না। 
                                     
শিশু যাতে বিপথে না যায় তার জন্য প্রতি মুহূর্তে বড়দের বিপুল ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে এমন চাপ দেওয়া উচিত নয়। তবে সে যেন ভাল মানুষ হতে পারে,পাশের বন্ধু টিফিন আনতে ভুলে গেলে তার সঙ্গে টিফিন আনন্দে ভাগ করে খেতে পারে তা অনেক বেশি জরুরি।এভাবেই সে তার বড় হওয়ার জন্য একটা মজবুত ভিত তৈরি করতে পারবে। এ ছাড়া শিশুর ভাষা শিক্ষা তৈরি হয় পরিবার থেকেই। গালিগালাজ শুনে বড় হলে তারাও মানে না বুঝেই গাল দিতে শিখবে। বাড়ির বড়রা সকলকে সম্মান দেয়,ভালবাসে দেখলে শিশুরাও সম্মান দিতে, ভালবাসতে শিখবে। ভাঙা পরিবার কিংবা কলহপ্রবণ পরিবার শিশুর বড় হওয়ার ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিবন্ধক। তাই নিরুপায় না হলে পরিবার বাঁচিয়ে রাখা খুবই প্রয়োজন। 
             
কোন শিশু তার ইচ্ছেয় ভূমিষ্ঠ হয় না। তাই শিশুকে পৃথিবীতে আনার আগে বাবা, মায়ের নিজেদের মধ্যে সেতু তৈরি করায় মন দিলেই মঙ্গল যে মেলবন্ধন দুর্নিবার ঝঞ্ঝাকেও সামলে নেবে। তবেই তো শিশু ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবে। 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>