| 28 মার্চ 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা’২০২১

উৎসব সংখ্যা মুখোমুখি: ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ও নির্মাল্য বিশ্বাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

ইরাবতী উৎসব সংখ্যার জন্য পান্ডব গোয়েন্দার স্রষ্টা সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নির্মাল্য বিশ্বাস।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


* লেখার জগতে কিভাবে এলেন? ছোট থেকেই কি লেখালেখি করতেন? নাকি হঠাৎ করেই আসা?

– আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দৈনিক বসুমতীতে। ওখানে ছোটদের একটা বিভাগ ছিল। নাম ছিল ‘ডাকঘর। সেখানে লিখেছিলাম ‘কামাখ্যা ভ্রমণ।’ তখন আমার সতের বছর বয়স। এরপর ১৯৬১ সালে আনন্দবাজারে লেখা পাঠালাম। তখন বিখ্যাত সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী সম্পাদক ছিলেন। ওখানে ‘মহাকবি অশ্বঘোষ’, ‘মহাকবি অমরু’ সহ অনেক লেখাই পরপর প্রকাশিত হয়। এরপর চীন ভারত যুদ্ধের জন্য এই সাহিত্য বিভাগটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৬২ সালে শুকতারায় নিয়মিত গল্প কবিতা দিতাম। আমার সব লেখাই মনোনীত হত। বেশ কিছু সংখ্যায় লেখার পর একদিন সম্পাদক ক্ষিরোদ চন্দ্র মজুমদার ডেকে বললেন, তোমার লেখায় বেশ গভীরতা আছে। তুমি গোয়েন্দা গল্প লেখা শুরু কর। সেসময় এডভেঞ্চার কাহিনীকার হেমেন্দ্র কুমার রায় মারা গেছেন। তাই একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। উনি উৎসাহ দিয়ে বললেন আমি পারব। ওনার উৎসাহেই শুরু করি ‘পান্ডব গোয়েন্দা’।

* শুকতারায় লেখার সময়ই কি বই আকারে প্রকাশিত হয় ‘পান্ডব গোয়েন্দা’?

– ক্ষিরোদ চন্দ্র মজুমদার মারা যাবার পর ওনার ছেলে প্রবীর মজুমদার শুকতারার সম্পাদক হলেন। ইতিমধ্যেই আমি শুকতারায় নিয়মিত লিখে ফেলেছি। প্রবীর বাবু প্রস্তাব দিলেন বেশ কয়েকটা গল্প নিয়ে বই আকারে ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ প্রকাশ করার। প্রকাশনা বিভাগ New Bengal Press থেকে বই আকারে ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ প্রকাশিত হল। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রথম সংস্করণ বিক্রি হয়ে গেল। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর আনন্দ পাবলিশার্স থেকে ‘পান্ডব গোয়েন্দার’ সব সংস্করণ প্রকাশিত হতে থাকে।

* ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ কাহিনী লেখার ভাবনাটা কি ভাবে এলো?

– ছোট থেকেই আমাদের দশ বারো জন বন্ধুদের একটা গ্রুপ ছিল। সবাই একসঙ্গে ঘুরতাম, আড্ডা মারতাম। রেল লাইনের ধার থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন চষে বেড়াতাম। আর একজন সদস্যও আমাদের সঙ্গ দিত। সে হল একটা কুকুর, নাম পঞ্চু বা কানা পঞ্চু। তবে কাহিনীতে এতগুলো চরিত্র তো রাখা যায় না। তাই সেখান থেকে পাঁচজনকে বেছে নিলাম। সঙ্গে রইল কানা পঞ্চু। সৃষ্টি হল ‘পান্ডব গোয়েন্দা’।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


* ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ ছাড়া আপনার অন্যান্য বইয়ের নামগুলো যদি বলেন?

– ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ ছাড়া লিখেছি ‘সেরা গোয়েন্দা গল্প’, ‘সেরা রহস্য পঁচিশ’। ‘মিত্র ও ঘোষ’ থেকে অনেকগুলো ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। ‘হিমালয়ের তীর্থ ভ্রমণ’, ‘রাজস্থান ভ্রমণ’, ‘যশোমাতৃকা তীর্থ’, ‘দ্বাদশ তীর্থ ভ্রমণ’ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আনন্দ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘পঞ্চাশটি ভূতের গল্প’, ‘আরো পঞ্চাশটি ভূতের গল্প’।

* আপনার পছন্দের এডভেঞ্চার গল্পের চরিত্রগুলো কি?

– সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী, হেমেন্দ্র কুমার রায়ের কুমার-বিমল, নীহার রঞ্জন গুপ্তের কিরীটি রায় আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু।

* বিদেশীদের মধ্যে প্রিয় লেখক কে?

– জেমস হ্যাডলি চেজ।

* ভিডিও গেম, ইন্টারনেট বর্তমান প্রজন্মকে কি বই বিমুখ করে তুলছে?

– বই বিমুখ করে তুলেছে একথা মানতে পারব না। হয়তো একটা অংশ সরে গেছে। কিন্তু যারা আছে সেটাও খুব কম নয়। ‘মিত্র ও ঘোষ’ থেকে প্রকাশিত ‘ভানগর রহস্য’ প্রতিদিন ১৫০-২০০ কপি বিক্রি হয়েছে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ না থাকলে এত বই বিক্রি হয় কি করে?

* বইমেলা আপনাকে কতটা টানে?
– বইমেলা আমার প্রাণ। আমি এই বয়সেও প্রতিদিন বইমেলায় যাই। একটা সময় গিল্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেই বইমেলার উদ্যোক্তা ছিলাম। তখন ময়দানে বইমেলা হত। বেশ মনে আছে অফিস থেকে দুটোর সময় বেরিয়ে বইমেলায় চলে যেতাম। পরবর্তীকালে কাজের চাপের জন্য বইমেলার দায়িত্ব থেকে সরে আসি। কিন্তু নিয়ম করে এখনো প্রতিদিন বইমেলায় যাই।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


* লিটিল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব সাহিত্য জগতে কতটা?

– লিটিল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব আগেও ছিল, এখনও আছে। একজন লেখক সে যতই প্রতিভাবান হোক না কেন লিটিল ম্যাগাজিনে লিখেই তাঁকে পরিচিতি লাভ করতে হয়। নামী দামী বানিজ্যিক পত্রিকাগুলোতে তো লেখালিখির জন্য নিজস্ব বেতনভূক কর্মচারীই থাকে। তাঁদের লেখা প্রকাশ করার পর অন্যদের জন্য লেখার জায়গা খুব কমই থাকে। তাই লিটল ম্যাগে লিখেই আগে নতুন লেখকদের পরিচিতি লাভ করতে হয়। কারোর মধ্যে যদি প্রতিভা থাকে তাহলে কেউ তাকে আটকে রাখতে পারবে না, সে উঠবেই। আর বাকিটা ভাগ্যের সহায়তা কিছু তো লাগেই।

* সাহিত্য ছাড়া আপনার ভালোলাগা কি?

– গান-বাজনা ভালো লাগে। বিশেষ করে ক্লাসিকাল মিউজিকের ওপর টানটা বেশী। ওস্তাদ কেরামৎতুল্লা খানের কাছে বেশ কয়েক বছর তবলায় তালিমও নিয়েছিলাম।

* চাকরি থেকে অবসর নেবার
পর এখন কিভাবে সময় কাটান?

– লেখালিখি নিয়েই থাকি সারাদিন আর সুযোগ পেলেই ঘুরতে চলে যাই। দু- তিনমাস অন্তর কোথাও ঘুরতে যাবই। পুরী, হরিদ্বার, রুদ্রপ্রয়াগ আর হিমালয় ভীষণ প্রিয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত