| 20 এপ্রিল 2024
Categories
প্রবন্ধ রান্নাঘর সাহিত্য

ফিচার: রবিগদ্যপুরে খ্যাঁটন । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

প্রথম পর্বে লিখেছি রবীন্দ্রনাথের ছড়ায়, পদ্যে, প্রতি ছত্রে ছত্রে খাওয়ার অনুষঙ্গের কথা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে লিখেছি তাঁদের স্বনামধন্য জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের এই রন্ধনশিল্পের প্রতি অনুরাগ এবং তা থেকে জন্ম নেওয়া অনবদ্য সব রন্ধন পদ্ধতি। যার অংশীদার আমাদের রবিঠাকুরও ছিলেন বৈকি। তাঁর পছন্দের খাওয়াদাওয়ায় নিজের গ্যাস্ট্রোনমিক ফুর্তি এবং খাইতুড়কেপনা নিয়ে এই দুই পর্ব। চতুর্থ পর্বে ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রন্ধনবিলাসিতা রয়েছে।পঞ্চম পর্বে রবীন্দ্রনাথের গদ্যপুরে পাড়ি দিলাম। সেখানে বিভিন্ন স্থানে কিভাবে উঠে এসেছে খাওয়াদাওয়া প্রসঙ্গ।  

তাঁর ছোটোগল্প, উপন্যাসে ভোজন অনুষঙ্গ যেভাবে উঠে এসেছে তা দেখে মনে হয় বাঙালির জীবনে জীবনধারণের অন্যতম প্রধান কাজগুলির মধ্যে রাঁধাবাড়া ও খাওয়া জড়িয়ে আছে আষ্টেপিষ্টে। গল্পের চরিত্রদের চলন, বলনে উঠে এসেছে আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি, সামাজিক রীতিনীতি, খাদ্যাভ্যাস। তখন সে যুগের অন্তঃপুরবাসিনী মেয়েদের “রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা” কিম্বা জীবন যাপনের একঘেয়েমির করুণ মুহূর্তে “থোড়বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়” বলে উঠতে শোনা গেলেও একজন পুরুষ হিসেবে রবিঠাকুরের গদ্যে কিন্তু খাদ্যানুষঙ্গ পড়তে পড়তে অবাক হই। তখনই মনে হয় বাংলাসাহিত্যের ছোটগল্পকার হিসেবে সার্থক তিনি।

যেমন ধরা যাক “রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা” গল্পে গুরুচরণের মৃত্যুকালে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বরদাসুন্দরী কাঁচা তেঁতুল, কাঁচা লংকা দিয়ে চিংড়ি মাছের ঝাল চচ্চড়ি দিয়ে পান্তাভাত খেতে ব্যস্ত ছিল। এই সময় তার ডাক পড়ায় তার মুখে চরম বিরক্তির প্রকাশ ঘটেছে। ” দুটো পান্তাভাত যে মুখে দেব তারও সময় পাওয়া যায় না”। এই প্রসঙ্গে আবারও বলি লেখকের নিজস্ব জীবনের প্রভাব তাঁর রচনায় পড়বেই। রবিঠাকুর নিজেই যে পান্তাভাত আর চিংড়ি মেখে খেতে ভালোবাসতেন। কাদম্বরী বৌঠান নিজের হাতে রেখে দিতেন তাঁর সাত বছরের দেওরের জন্য।
আবার “জীবিতমৃত” গল্পের নায়িকা সুরবালার সংসারে দুধে ধোঁয়া গন্ধ হয় বলে তার স্বামী তাকে তিরস্কার করে। “স্বর্ণমৃগ” গল্পে দেখি বৈদ্যনাথের অভাবের সংসারে গোয়ালার দুধ বন্ধ করলে অভিমানী  স্ত্রীয়ের মুখে চরম আক্ষেপের সুর। দুধ বন্ধ করলে ছেলেপুলে খাবে কি? পরক্ষণেই তাদের আমানি খাইয়ে রাখার কথা বলছে সে।
আবার এই গল্পেই প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় মানকচু, নারকেল, কুমড়ো এইসব এনেছে।
গল্পগুচ্ছের অন্যতম গল্প “সমাপ্তি” তে দেখি আচমকা অপূর্বের আগমনে তার মায়ের শশব্যস্ত হয়ে পড়া। তাও সেই খাবারের জন্যই।
“অকস্মাৎ পুত্রের আগমনে তাহার বিধবা মাতা পুলকিত হইয়া উঠিলেন। তৎক্ষণাৎ ক্ষীর-দধি-রুইমাছের সন্ধানে দূরে নিকটে লোক দৌড়িল এবং পাড়াপ্রতিবেশীর মধ্যেও একটা আন্দোলন উপস্থিত হইল”
এরপর অপূর্বর সঙ্গে মৃন্ময়ীর বিয়ের পরে তার দরিদ্র পিতার ঘরে গমনে ঈশানের টিনের চালে সে কি শান্তির বার্তা!
“তাহার মেয়ে এবং জামাই যেন সাম্রাজ্যের যুবরাজ এবং যুবরাজমহিষী; এই সমস্ত পাটের বস্তার মধ্যে তাহাদের উপযুক্ত সিংহাসন কেমন করিয়া নির্মিত হইতে পারে ইহাই যেন তাহার দিশাহারা বুদ্ধি ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না।
তাহার পর আহারের ব্যাপার— সেও এক চিন্তা। দরিদ্র কেরানি নিজ হস্তে ডাল ভাতে ভাত পাক করিয়া খায়— আজ এই এমন আনন্দের দিনে সে কী করিবে, কী খাওয়াইবে। মৃন্ময়ী কহিল, “বাবা, আজ আমরা সকলে মিলিয়া রাঁধিব।”

 “শাস্তি” গল্পে সামান্য ভাত কে কেন্দ্র করে কি পরিণাম!

“কাবুলিওয়ালা” গল্পে রহমানের ঝুলি থেকে মিনির জন্য নিয়মিত ড্রাইফ্রুটস বেরিয়ে আসার কথা আমরা দেখেছি। মুঠোমুঠো পেস্তা, আখরোট, খোবানি দিয়ে মিনির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে রহমান। ছোটো শিশুকে সন্তান স্নেহে নিয়মিত তার পছন্দের খাবার দিয়ে বাগে আনায় রহমানের বাৎসল্যের অভিনব প্রকাশ দেখেছি আমরা।
আবার মিনির বিয়ের দিন রহমান এসেছে আগের বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে। কোনও বন্ধুর কাছ থেকে চেয়েচিন্তে একবাক্স আঙুর আর কাগজে মোড়া কিছু কিসমিস নিয়ে।
“মেঘ ও রৌদ্র” গল্পে গিরিবালার সঙ্গে শশিভূষণের রসায়ন ঘনীভূত হতে থাকে গল্পের শুরু থেকেই আর তা খাদ্যদ্রব্যকে কেন্দ্র করেই। গিরিবালার নিবিষ্ট মনে কালোজাম খেতে খেতে শশিভূষণের প্রতি ঔদাসীন্যের প্রকাশেই বোঝা যায়। এই শশিভূষণের জন্যই গিরিবালা আবার চুপিচুপি ভাণ্ডার থেকে নিয়ে আসে আমসত্ত্ব, কেয়াখয়ের আর জারক লেবু। গিরিবালার অন্যত্র বিয়ের ঠিক হতেই আবারও পাঠকমনের হাহাকার  সেইসব পূর্বতন খাদ্যদ্রব্যের নামে… “আমসত্ত্ব কেয়াখয়ের এবং জারকনেবু ভাণ্ডারের যথাস্থানে ফিরিয়া গেল। বৃষ্টি পড়িতে লাগিল, বকুলফুল ঝরিতে লাগিল, গাছ ভরিয়া পেয়ারা পাকিয়া উঠিল এবং শাখাস্খলিত পক্ষীচঞ্চুক্ষত সুপক্ক কালোজামে তরুতল প্রতিদিন সমাচ্ছন্ন হইতে লাগিল।”
আবার “অতিথি” গল্পে জমিদার মতিলালবাবু সপরিবারে নৌকা ভ্রমণে ব্রাহ্মণ বালক তারাপদ’র নৌকায় রান্নার কাজে সাহায্য করা? সেখানে তার মাছ কাটার সুনিপুণ আয়োজন? মতিলালবাবুর মাছ কোটায় অপটু হিন্দুস্থানি ভৃত্যকে সেই বালক অনায়াসে গোল দিয়ে দেয়। তারাপদর ওপর মায়া পড়ে যায় মতিলালবাবুর স্ত্রী অন্নপূর্ণার।
“অন্নপূর্ণা চাকরদের ডাকিয়া গ্রাম হইতে দুধ মিষ্টান্ন প্রভৃতি ক্রয় করিয়া আনিবার জন্য ধুমধাম বাধাইয়া দিলেন। তারাপদ যথাপরিমাণে আহার করিল, কিন্তু দুধ খাইল না।”  
“রাজটিকা” গল্পে লুচিভাজার পদ্ধতির উপমায় গল্পের চরিত্রগুলির মেজাজ এ অপূর্ব চিত্রায়ন। যেন লুচিভাজার পালা পড়িল; নবেন্দু যেটা জলে ও ঘিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা নরম নরম করিয়া এবং চাপিয়া যথাসাধ্য চেপটা করিয়া বেলিয়া দেয় তাঁহার দুই সহকারী তৎক্ষণাৎ সেটাকে ভাজিয়া কড়া ও গরম করিয়া ফুলাইয়া ফুলাইয়া তোলে। লেখকের শয়নে স্বপ্নে জাগরণে ভোজনরস থাকলেই বুঝি এমন লেখা হয়।

আবার “মণিহারা” গল্পে দেখি স্ত্রী চরিত্রের পছন্দের প্রসঙ্গে অকপটে লিখেছেন এইরকম। ” স্ত্রী জাতি কাঁচা আম, ঝাল লংকা, এবং কড়া স্বামীই ভালবাসে”

ইশকুলে পড়া “যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ” তে যজ্ঞেশ্বরের কন্যার বিয়ের পাকাকথা, যজ্ঞের  ঠিক হলে পাত্রপক্ষ মহানন্দে ক্ষীরের ছাঁচ, নারকোলের মিষ্টি, নাটোরের কাঁচাগোল্লা খেয়ে যায়। বিয়ের ভোজন পর্ব এই গল্পকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়।
গল্পগুচ্ছের অন্যতম গল্প “নষ্টনীড়” এ দেখি ধনী গৃহে নিঃসঙ্গ  চারুলতা কে ভূপতির জন্য ডিমের কচুরি ভাজতে আবার “পয়লানম্বর” গল্পে মাছের কচুরি আর বিলাতি আমড়ার চাট্‌নি রান্নার তোড়জোড়।  
“রবিবার” গল্পের নায়ক অভীককুমার নিজের ইচ্ছেয় ত্যাগ স্বীকার করে আর কারখানায় কাজ নেয় এবং রবিঠাকুরের লেখায় “মুসলমান খালাসিদের দলে মিশে চার পয়সার পরোটা আর তার চেয়ে কম দামের শাস্ত্রনিষিদ্ধ পশুমাংস খেয়ে ওর দিন কেটেছে সস্তায়।” লোকে অপবাদ দেয় অভীক মুসলমান হয়েছে বলে।
“শেষকথা”য় বিপদাপন্ন অচিরা নবীনের বিলিতী খাদ্যাভ্যাসের কথা ভেবে ফিরপি, ভেটকিমাছ, ভেড়ার মাংস জোগাড় করার কথা ভাবে। নবীন আবার জঙ্গল ভ্রমণকারী হিসেবে তার নিজের সঙ্গে খাবারের জোগাড়ের পরিচয় দেয়। সে বলে “সঙ্গে রাখি থলে ভরে চিঁড়ে, ছড়া কয়েক কলা, বিলিতি বেগুণ, কাঁচা ছোলার শাক, চীনেবাদামও থাকে কখনও”

এবার আসি তাঁর উপন্যাসের ভোজন অনুষঙ্গে।

তাঁর নৌকাডুবি উপন্যাসে শহুরে কলকাতার মানুষের বারেবারে চা পানের প্রসঙ্গ যেমন এসে পড়েছে তেমনই কলকাতার বাইরে অন্য আরেক চিত্র। ক্ষেমংকরীর সংসারে কমলার রাঁধাবাড়ার গোছ দেখে পাঠকের চোখ জুড়োতে বাধ্য। কমলা সরল। কমলা মূর্খ কিন্তু তার রন্ধনশালে পারিপাট্য দেখবার মত। এরপর স্টিমার যাত্রায় কমলা এবং রমেশের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনে বেশ পরিপাটি।ষ্টীমারে ওঠার আগে রমেশ জোগাড় রাখে চালডাল, দুধ, কলা জাতীয় কিছু খাবারের। প্রথম দিনেই কমলা রেঁধে ফেলে খিচুড়ি। সহকারী উমেশের আগমনে সে ময়দা আনিয়ে লুচি বানায়। উমেশ নিয়ে আসে কাঁচকলার কাঁদি, শাকপাতা, কুমড়োফুল, বেগুণ। কমলার কাছে সে সর্ষে বাটা দিয়ে পিড়িংশাকের চচ্চড়ি খাবার ইচ্ছে প্রকাশ করে। গ্রাম্য বালক উমেশের না হয় সাধ জাগে। আমাদের ঔপন্যাসিক রবিঠাকুরও জানেন সর্ষে বাটা দিয়ে বাঙালির শাক চচ্চড়ির মর্ম। তাই বুঝি উপন্যাসেও তার ঠাই হয়। ষ্টীমারের আরেক সহযাত্রী ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী কমলার হাতের ঘণ্ট রান্নার প্রশংসা করেন।উমেশ খুঁজেপেতে জোগাড় করে আনে খালাসিদের জালে ধরা মাছ। রুইমাছ বা রোহিত মৎস্যের উত্তমাঙ্গ বা মুড়ো দেখে মাছ প্রিয় বাঙালির আহ্লাদে আটখানি হওয়াও সেই প্রেক্ষাপটে বিচিত্র নয়। স্টিমার যাত্রায় রান্নার উপকরণের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঠিক ঘরকন্নার মতোই তা উঠে এসেছে বারেবারে।

“গোরা” উপন্যাসের শুরুতেই কলকাতার বর্ষার মেঘমুক্ত এক সকালে শহুরে ব্যস্ততায় ফেরিওয়ালার বাসায় বাসায় মাছ-তরকারির চুপড়ি নিয়ে অবিরত হেঁকে যাওয়া এবং ঘরে ঘরে রান্নাঘরে উনুন জ্বালার ধোঁয়ার প্রসঙ্গ। মুখ্য চরিত্র আচারনিষ্ঠ হিন্দু গোরা বারেবারে নিজেকে গড়েপিঠে নেয় নতুন করে। বদলে যায় তার ধর্মীয় ভাবাবেগ। আর সেখানে মুখ্য ভূমিকা তার বদলে যাওয়া খাদ্যাভ্যাস। নিম্ন বর্গের মানুষের সঙ্গে তামাক সেবনের অভ্যেস, নাপিতের ঘরে গিয়ে স্বপাকে আহার। রবীন্দ্রনাথ বড় আধুনিকতার পরিচয় সেখানে। বিনয়ের মধ্যে সঞ্চার করেছেন এক অপূর্ব জীবনবোধ, যেখানে রান্না প্রসঙ্গ এসে পড়ে
“দেশের মেয়েদের কেবল তাদের রান্নাবান্না বাটনা-বাটার মধ্যে আবদ্ধ করে দেখছি বলেই মেয়েদের মেয়েমানুষ বলে অত্যন্ত খাটো করে দেখি— এতে করে আমাদের সমস্ত দেশই খাটো হয়ে গেছে।”

বিখ্যাত উপন্যাস “চোখের বালি” সত্যিই মনে হয়েছে তাঁর কথাতেই “মনের সংসারের কারখানাঘর”ই বটে। সেখানে জলখাবার পরিবেশনের শৌখিনতা এবং আভিজাত্য যুগপৎ অনায়াসে হেঁটে চলে দৃশ্যকল্পের মধ্যে।
বিহারীর জন্য আশা কে পাত্রী হিসেবে দেখতে যাওয়ার সময়ে দেখি রেকাবিতে ফুল মিষ্টান্ন ও বরফ পূর্ণ রূপোর জলের গ্লাসের সুচারু আয়োজন। আবার পরবর্তী কালে বিনোদিনীর আগমনে চরিত্রদের মানসিক টানাপোড়েন যখন তুঙ্গে তখনই চড়ুইভাতির আয়োজনে বিহারীর সাংসারিক সত্ত্বার প্রকাশ।
“বিহারী তাহার প্যাকবাক্স খুলিয়া একটি কেরোসিন-চুলা বাহির করিয়া জল গরম করিতেছে।সকলে আসিবামাত্র আতিথ্য করিয়া বাঁধা বেদির উপর বসাইয়া এক এক পেয়ালা গরম চা এবং ছোটো রেকাবিতে দুই একটি মিষ্টান্ন ধরিয়া দিল।”  

পরক্ষণেই দেখি সে তার বাক্স থেকে রন্ধন সামগ্রী স্বরূপ চাল, ডাল, তরি-তরকারি এবং ছোটো ছোটো বোতলে পেষা মশলা বের করে। তা দেখে বিনোদিনী বলে ওঠে ““বিহারীবাবু, আপনি যে আমাদেরও ছাড়াইয়াছেন। ঘরে তো গৃহিনী নাই, তবে শিখিলেন কোথা হইতে।”
আবার কাশী যাবার পরে মহেন্দ্রর মন উচাটন বিনোদিনীর জন্য। ঠিক তখনই দাসী এসে বরফ দেওয়া আনারসের শরবত। এই সুপরিবেশনের মূলে যে বিনোদিনীর হাত তা বুঝতে বাকী থাকেনা মহেন্দ্রর। আবার সেইসঙ্গে হাতে আসে কেয়াখয়ের সহযোগে সুগন্ধি পান।
আবারও বিনোদিনীর পরিবেশন ভঙ্গীর নিপুণতা পরিলক্ষিত হয় যখন সে আচমকা মহেন্দ্রর নিকট আসে এভাবে…
“মোরাদাবাদি খুঞ্চের উপর থালায় ফল ও সন্দেশ এবং রেকাবে বরফচিনি সংযুক্ত  সুগন্ধি দলিত খরমুজা লইয়া বিনোদিনী ঘরে প্রবেশ করিল এবং মহেন্দ্রের সম্মুখে রাখিয়া কহিল, “কী করিতেছ, ঠাকুরপো। তোমার হইল কী। পাঁচটা বাজিয়া গেছে, এখনো হাতমুখ-ধোয়া কাপড়-ছাড়া হইল না?”
এসব খাদ্য অনুষঙ্গ জড়িত ছোটোখাটো ঘটনা প্রেমের অনুঘটক হয়ে ওঠে বারেবারে। বিনোদিনীর উপস্থিতিতে মহেন্দ্রর খাদ্যগ্রহণের মুহূর্তগুলো যারপরনাই পাঠকমনকে তরতর করে পরের ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত