রাজন্য রুহানির কবিতাগুচ্ছ
আজ ০২ নভেম্বর কবি রাজন্য রুহানির জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
খাদ্য আর খাদকের হাটে
বৃত্তের উঠোন জুড়ে পেট ধরে রাখে দা ও কুমড়ার নীতি।
খাদ্য আর খাদকের হাটে
জন্মান্ধ স্তুতিপাঠক, সেও জানে—
তেলের এতটা গুণ, মর্দনের সাথে সাথে নুয়ে যায় শির।
বন্দনা মূলত ওই তেলবাজির নমুনাবিন্দু
যাকে কেন্দ্র করে বাড়ে
বৃত্তের পরিধি
স্বার্থের আকাশে তুমি-আমি চিল, ছুঁ মারার বিদ্যা।
মূল্যমান এক
তবু টসের মুদ্রায় ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’।
বাতাস তাড়িত শোক
চলে যাও বীর্যের পুরুষ, নিজের ছায়াটা কুটে মাছভাজা খাও, পথে যেতে যেতে এমন ভাবের গান গাও যেন তুমি আলাভোলা লোক, আলুর মতন।
সুনসান নীরবতা মেখে ঘুমদেশে যাও বুদ্ধিবেশ্যাজীবী, গোপন লেজটা দিয়ে কোমর বেঁধেছ এই জেনে, প্রদীপ্ত রক্তবিনাশী চণ্ডালের কেনা ফলটিই তুমি পাবে।
ছাগলের তৃতীয় ছানার মতো লাফালাফি করা নপুংসক, যাদের ঘৃণাও নেই হৃদয়ের খাপে, বাতাস তাড়িত শোকে যারা শ্লেটে মুছে চিলকাল, পথান্ধ কূটনীতির তারাই আগাছা!
সাতকলা বাদুড়ের পেটে যেতে যেতে ষোলকলা শেষ হয় মিনারের।
হেমন্ত ও বর্ণচোর খিদে
হেমন্তের ধান উড়ে, ঝাঁকের শালিক
কৃষাণির পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করে
খোঁটে ঋতুর কবিতা, পেটের চিন্তায়
গরিবেরা ঢাকা যায়, পিছনে দালাল।
হাইহিলের সবিতা গড়ে তোলে পুঁজি।
যে পরিবার পিছলে গেছে ঢালুপথে
হাওড়ের জোঁকেরা খায় সম্ভ্রম তাদের।
যত সাধ নিয়ে ওড়ে সংখ্যালঘু জামা,
লুটেরার হাতে ঘোরে সর্বনাশা দড়ি।
ভূগোলে জন্মের দায়ে ক্ষুধাতুরা ঝুলে।
হেমন্তের ধানক্ষেতে প্রচুর ইঁদুর,
পালানের ছাগলেরা সুযোগেই থাকে।
পাখির কনসার্টেও হাঁটে বর্গাচাষী
চঞ্চুর ঠোকরে শোনে সুখের বিবাদ।
ঘোড়দৌড়ে ভরে ওঠে মোড়লসিন্দুক।
প্রেমের অম্বর
তোমার নামের ঘরে চাতকের পীড়া।
বহুপথ হেঁটে এসে ক্লান্ত মুসাফির
জলনাচা নদে আঁকে ডাহুকের ক্রীড়া,
যে-মন স্মৃতির ফাঁদে একান্ত সুধীর
তার কাছে জমা আছে ভাঙা এক নীড়।
জপতপে মশগুল পাগলের শিরা
লোহিত কণিকা যার চলনে অস্থির,
পড়শি দেখার সাধে অমন সুফিরা।
ঘরহীন ঘর এক সুগন্ধী বাগান
তোমার ভেতর তার নামের আকর।
লৌকিক বাসনা ছেড়ে যে আত্মসন্ধান,
আসলে সে তুমিময়, নারী কিংবা নর।
পাখিদের বুলি শোনে যারা ভাবে গান,
তাদের নজরঘেরা প্রেমের অম্বর।
প্রতিভাব
ধরো, আমি অমানিশা-রাতি
জোনাক আলোতে মিশে থাকা
আত্মার আহার
জানি, তুমি বিকর্ষ হেলেন
অভিকর্ষ চোখে
জন্মান্তরের পাতাবাহার
ঘড়ি নষ্ট হলে
বাগান জঙ্গল মনে হয় মুকুটহীন রাজার
পেইন্টিং
নাকফুল আঁকতে আঁকতে ক্রমশ একটা মুখ জন্ম নিতে থাকে চেতনার দক্ষিণ পাঁজরে, বাঁ-পাঁজরে লেখা তার জীবন বৃত্তান্ত,সাদা পৃষ্ঠা আর কিছু দাগ আস্ত মানবী হওয়ার পর মৃতের নদীরা আড়মোড়া দেয়, আমারও জেগে ওঠে ডানা, হলফ তোমার,কস্মিনকালেও আর কারো ডানা ছিল না এই কমিউনে।
আকৃতি গ্রহণ কালে রেডিয়েশনের ভার দিয়ে মুছে গেছে পথগুলো, পায়ের তলায় সঞ্চিত গোপন আকাশের বোধি ছুঁতে পারলেই শিরদাঁড়া ইথারের ফুল, তালা দেওয়া সদর দরজা খুলে বের হয়ে আসেন তখন ইলোহিমপুত্র আর তার
বিষদৃষ্টি জমে যদি ঢিপি হয় তাতে তুমি-আমি উইপোঁকা মাত্রা বদলের আগে কারাবন্দী কুহকের।
কৃষ্ণবিবর
ভুলের পেয়ালা হতে বাষ্প হচ্ছে বর্ণীল আসক্তি
কেওকাটা রোদে,
মহর্ষি বেদনাবৃক্ষ ছায়া দিচ্ছে যার হলুদ পাখির রঙ;
ভুল নেই তার, আছে পাপ
শতচোরা ঘোরে।
বৃক্ষটার কাছে গেলে সকলেই ছায়া হয়ে যায়
হলুদ পাখির রঙে
প্রস্বেদনে লেগে থাকে তারপর শোষিত বকুল।
তারপর বস্ত্র পরিধানের ভূগোলে
রঙকরা নাম,
জানু পেতে বসা; রূপকথা সব, চক্রের ওপাশে।
গোলক
পিতৃজন্ম থেকেই গোলক। নিষেধ অমান্য করে যে হারমোনিয়ামটা বাজছিল তার সুরে পৃথিবীর জন্ম। গোল গোল চোখের মতন ফুলেরাও গোল জন্মের ইশারা। গোলক গড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় তিনমহলা বাড়ি। নর্তকীও নাচতে নাচতে গোল হয়ে ঘুরতেই থাকে যাতে দশর্কের পঞ্চভুজ কাম গোলাকার হয়। মগজের ভিতরে যে বড়িটা ক্রিয়াশীল তার দ্রবণও গোল। দিন ও রাতের গোলপথেই মিলন ও বিরহ। বলো কলম্বাস, ফলেরাও কী কারণে গোল হয় আর আমাদের চিন্তা? গোল ছিল কী গন্ধমটাও!
কর্মকার, আংটির ভিতরে যে ফাঁক রাখা তা এক ঘূর্ণায়মান প্রহর, গোলকীয় বাগদান। অবশ্য নদীই জানে গোলক-মহিমা। নয়তো বৃষ্টিকে ঠাঁই দেওয়া কেন বুকের পাঁজরে, সমস্ত বন্ধন ভেঙে একদিন যার পরিচয় বদলে গেছিলো অনায়াসে।
আপনি কি জানেন জালুয়া, হেঁটে দৌড়ে বসে বোনা জাল আসলে ফাঁদের শিল্পগিরি?
