| 25 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

সারায়েভো থেকে রক্তাক্ত জুলাই

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

।।জিলান হাসান।।

১৯১৪ সালের ১৪ই জুন বর্তমান বসনিয়া-হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভোতে খুন হন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফার্দিন্যান্দ। এই হত্যাকাণ্ডই রূপ নেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। কেন ঘটেছিল এই হত্যাকাণ্ড? কেনইবা একটা হত্যাকাণ্ড বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়?
.
১৮৬৭ সালে অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরি মিলিত হয়ে নতুন রাষ্ট্র অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য গঠন করে। অন্যদিকে সে সময় বসনিয়া ছিল মূলত অটোমান সাম্রাজের (তুর্কি সাম্রাজ্য বা বর্তমান তুরস্ক) অংশ। অটোমানরা ১৮৭৭ সালে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফল স্বরূপ ১৮৭৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্যকে রাশিয়ার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয় । তবে ইউরোপের অন্য পরাশক্তির প্রভাবে, নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির প্রভাবে অটোমান শাসনাধীন স্বায়ত্তশাসিত সার্বিয়া, রোমানিয়া এবং মন্টিনিগ্রো পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। অন্যদিকে বুলগেরিয়া স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। চুক্তির সময় রাশিয়া বসনিয়ার স্বায়ত্তশাসন প্রস্তাব করে, কিন্তু অন্য পরাশক্তিগুলোর আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এর পরিবর্তে বসনিয়ায় অস্ট্রো-হাঙ্গেরির সেনা অবস্থানের সুযোগ পায়। চুক্তির এই সুযোগে অস্ট্রো হাঙ্গেরি পুরো বসনিয়া দখল করে, যদিও লিখিতভাবে তা অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
.
সার্বিয়া প্রাথমিকভাবে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সাথে ভাল সম্পর্ক রাখলেও ধীরে ধীরে তা খারাপ হতে থাকে। ১৯০৮ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি পাকাপাকিভাবে বসনিয়াকে তাদের সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে, যা সার্বিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো খারাপ করে। অন্যদিকে বসনিয়ায় বসবাসকারী সার্বরা সার্ব জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি থেকে বসনিয়াকে মুক্তির চেষ্টা চালাতে থাকে। এর অংশ হিসেবে বসনিয়ায় অস্ট্রো-হাঙ্গেরির বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ কর্মকর্তাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। সার্ব জাতীয়তাবাদীরা সবথেকে বড় সুযোগ পায় ১৯১৪ সালের ২৮ জুন , কারণ সেদিন অস্ট্রো-হাঙ্গেরির ভবিষ্যত সম্রাট যুবরাজ ফার্দিন্যান্দ সরকারি সফরে বসনিয়ায় আসেন।
.
তীব্র নিরাপত্তার মধ্যেও ফার্দিন্যান্দের গাড়ীবহরে বোমা হামলা করা হয়। এতে কিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার গাড়িচালক ভুল দিকে মোড় নেয়। এতে সুযোগ পেয়ে এক সার্ব হত্যাকারী ফার্দিন্যান্দ ও তার স্ত্রীকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যান।
.
এই হত্যায় অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য সার্বিয়াকে দায়ী করে, ফলে দু’দেশের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। জার্মানী অস্ট্রো-হাঙ্গেরিকে যেকোন ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেয়। অন্যদিকে রাশিয়া এবং ফ্রান্স সার্বিয়াকে সহায়তায় একমত হয়। ২৩ জুলাই অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার উপর কিছু শর্ত আরোপ করে। সার্বিয়া সকল শর্তে রাজি না হওয়ায় ২৮ জুলাই অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার উপর যুদ্ধ ঘোষনা করে। রাশিয়া অস্ট্রো-হাঙ্গেরি বিরুদ্ধে সৈন্য মোতায়েন শুরু করে। ফলে জার্মানী ১লা আগস্ট রাশিয়া ও ৩রা আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নিরপেক্ষ দেশ বেলজিয়াম আক্রমণ করায় ব্রিটেন জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধ, যাতে প্রায় ২ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
.

তথ্যসূত্রঃ

১ . World war 1: Definitive Visual Story – DK Publishing
২. https://en.wikipedia.org/wiki/Causes_of_World_War_I
৩. https://en.wikipedia.org/wiki/Assassination_of_Archduke_Franz_Ferdinand
৪. https://en.wikipedia.org/wiki/Austro-Hungarian_rule_in_Bosnia_and_Herzegovina

.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত