রঞ্জন মৈত্র’র গুচ্ছ কবিতা
আজ ৩০ জুন কবি রঞ্জন মৈত্র’র জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
এই শুভদিনে কবির কিছু কবিতা ইরাবতীর পাঠকদের জন্য ভাস্বতী গোস্বামীর গ্রন্থনায় পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
ডাকো
এই ধ্বনি শুকনো পাতার
একটা জরুরী পা
কত অপমান পেরিয়ে
প্রায় দুপুর পেরিয়ে
ঝরঝরে ভাতের ধ্বনি
কানগুলি মোর
ওহ মোড় নিয়ে এত কী নছল্লা
এতো আঠামতো পৌণপুনিক
এই ধ্বনি শুকনোর
খাম খুলে চিঠিটির পাশে বসা পা
#
যে আবার ডাকো
কাকে নেবো
টান এক পুনঃ আর ছায়া সর্বনাম
কাকে বলব সবুজ ট্রেকিং
কেন মানচিত্র নেই
তুলনামূলক ক্লাসে উপস্থিতি নেই
এই কষ্ট নৃপেনের , শম্পার, খোকা নমিনির
তোভাত তোভাত ক’রে
বর্ষণ ধর্ষণ পেরিয়ে
প্রায় হেমন্ত পেরিয়ে
নওল কড়াইশুঁটি ও তার
হরকত ভেসে আছে
ধরতি টর্তি বললে চলবে তো
যতদূর চোখ পায়
স্বরলিপি
তারও পরে তারও আরও পরে
পা দিয়ে লহড়া ঢুকছে
ক্লাস ও ফ্লাসের মধ্যে এই পাললিক রেখা
গ্লোবাল নলখ্খা বললে
ও’ গোপেন কাজ চলবে তো
#
যত দূর চোখ পায়
চিঠি এক
যতদূর কান পায়
খামের অপর ওই টুং টাং অযোনিসম্ভব
কি মেরিন কি মেরিন
ড্রাইভ ছাড়াই
বঙ্গাব্দ খ্রিস্টাব্দ খুলে সেবা দেয়
পাতার তেষ্টায় ।
ভাঙানো যাচ্ছে না
বহির্ভূত শব্দটি দাঁড়িয়ে রয়েছে
ফলে কাক যায়
মুখুজ্জের গান থেকে হেমন্তের মাঠ
যেতে যেতে কেড়ে নেয় চৈনিক বাদাম
অনেকদিনের পরে যেন মেঘ এলো
যেন শব্দটির কোনো ফোঁটা নেই
আবহমান শব্দটির বৃষ্টি নেই একফোঁটা
একটি লোহার গেট পিঙ্কিকে বাগিচা করেছে
বহির ও ভূত ভয়ে ভোর ভয়ো ফ্রিজশট
সিঁড়িতে সকাল ছিল
তার শব্দ
বীজতলা সমেত নুয়ে আছে চষা মাঠে
ফলন তোমার জন্য ডাকনাম হাতে
নোটারীমেদুর রোদে
কাউন্টার থেকে এক চরম বাইরে
দীর্ঘ বাদাম সারি
বেঅকুফ হেমন্ত শরৎ
জানে না তো
কত সার্ফিং-এর শেষে
পিঙ্কির খুচরো পাওয়া যাবে
ছোট লোকের গল্প
কতখানি ছোট ক’রে ভাবা যায়
কতটুকু ক’রে
ডাকের পিছনে ঢাকা পড়ে যায় পাখি
ক্রমশ আদ্যন্ত আকাশ
ভেঙে যাবার পর জুড়তে ভুলে গেছে
যে দ্যাখে ব’লে দাঁড়িয়ে থাকে
ফ্রেমটা পাবার চেষ্টা করে আপ্রাণ
দুই সাদা পাতার মাঝে দিগন্ত বসেছে
লেখা মাথায় আরো ছোট লেখা হাত
একটা চেয়ার বসে আছে
একটা সমুদ্র ঢুকে পড়েছে
তার ছোট ছোট শব্দ
হলুদ হয়ে আসা সেলোটেপের দাগ
কথা ছোট হতে হতে ওই তো প্রান্তিক স্টেশন
এরপর মহাশূন্য
ময়দান ও তার ছোট্ট সাদা পাখি
সে হেঁটে যাবে
সে ছায়াকে বলবে, “আইয়ুড নট প্রেফার টু”
রিকাদের উঠোন
এতদিনের রেখা চলে গেল হাত ছাড়িয়ে
গঞ্জ বাজার হয়ে উঠছে
উঠোনে দাঁড়ানো বাস থেকে কয়েকটি হাত
মুক্তি চাইয়ের দেওয়াল ঘেঁষে
যুদ্ধ চাইয়ের ফ্লেক্সি হাওয়ায়
খুঁজছে তাপা দিন, ফোটা রাত
আর মর্মর অভিধান ক্ষেত
রোজের আনাজ রং
বিষয়হারানো কোন মুভি মুভিটোন
চোখ আর আকাশ কে কাকে দেখবে
মেঘডমরু পেঁজাশরৎ বসন্তপঞ্চম
কার আঙুল চলে যায় সপ্তকের কিনারে
সপ্তক আহিরীটোলায়
নীহারিকাকে ভালোবাসব ব’লে
রিকা নামে ডাকব ব’লে
ফেসবুকে লাইক দেব ব’লে
বাসে আর বাসে উঠছি নামছি
আনাজের লতা খুঁজছি আনখা পাড়ায়
হাত নড়ল কিনা
গঞ্জ নাকি আকাশ কার দিকে
ফেরির ভোরগীতি কার দিকে যায়, চলে যায়।
প্রেমের কবিতা
সন্ধের মুখে
সুমিকে তুমি বলার ঠিক আগে
মুখের সন্ধ্যা ফুটে উঠল মাত্র প্রদীপে
পথকে পথের মতো
বাতির আদলে
সুমির পা ফেলা ধরনে ভেবে ওঠায়
একফোঁটা তারিখ পড়ল
দু’ফোঁটা বৃষ্টি
যখন ঋতু পেরিয়ে
সাঁঝোয়া মুলুক পেরিয়ে
থমকে আছি শেষ শিলায়
প্রদীপের বুক জ্বলছে
ফুঁ দাও সুমি
বারিষ দাও
জেব্রা-ক্রশিং সিগন্যাল তুমি চলে যাচ্ছ বিজয়ওয়াড়া
আমি যাই
মেঘ মাসানু-১
ডাউনে দাঁড়িয়ে আছি
কবে সবুজ বলবে
কবে লাইন ছেড়ে
আলো আসছে আলোর দিকে
মেঘ মেঘের দিকে যেতে যেতে
ঝলকে আমার জোড়াফুল নড়ে ওঠে
নির্ঘাৎ তৃণমূল এই শব্দে বাজ পড়ল
পোস্টার পড়েছিল
এখন একলা
বৃদ্ধাশ্রমের জানলা থেকে
খুঁজছে ঝোড়ো মনসুন
বর্ষাতি তো নেই
নির্দলও নেই
শুধু দিলখুশ টিকিট রয়েছে
আপও সবুজ বললে
ঘর চলবে রিমঝিম ঝমঝম
মেঘ মাসানু-২
গাছগুলো কালো হোল
যখন আবহাওয়া অফিস ঘুরে
এইমাত্র মেঘ আসে
জানলা যতটা পারে
পর্দা সরতে সরতে যতদূর
দুই বিজলিপ্রভার মধ্যে শাখাগুলো
এত এত ছিলদের আবোদানা আশিয়ানা
দুঃখের পল্লব বেয়ে হাওয়ার মিঠাস
ঘামে যামে
ও’ সোনা ইন্তেজাম
তুমি গাছ তুমি মেঘ
দফতর রফতার জগার দোকান
বাকি সব করে রব
বাড়াবাড়ি করে ফেলে
আমাদের গ্রীলকলা বার্জার প্রতিভা
মেঘ মাসানু-৩
ঝলসি উঠিছে লিখে মনে হ’ল
ফটোশপ নয় তো
মেক আপ ভ্যান
জানলার ত্রিসপ্তক থেকে
ঝড় এসেছিল
শিক্ষা নাকি অভিজ্ঞতা
নাকি স্রেফ টের পাওয়া
ঝড় আসিয়াছে
এবং পরে পরে
টের-পাওয়া-ঝড়
আসিয়াছে
খাপ থাকে
বাপ থাকে
যেমন যেমন থেকে বেরিয়েছে অসি রবিশশী
রক্তের দিকে ছুট
সোনার হরিণের দিকে
ওহো তোর ক্ষুৎ-রাগারাগি
যেমন চেনাটি
যেমন আর্তনাদে পড়ে থাকা কানমন
ফটোশপে মনে হ’ল বিদ্যুৎই নয় তো
সেনগুপ্ত সহ গত হয়ে গেল সাতাশ বছর
তারও পরে
তারও বহু পরে
এক অসামান্য ঝলসে
আমার অন্তর্জাল বহির্জাল ইনভার্টার ছিঁড়ে গিয়েছিল ।
টিকিট
পাশ দিয়ে ওমনিবাস চলে যায়
ট্রেন ভ্যান নৌকো থেকে
মারুতির দরজা থেকে
ফেলে আসা নথি
হেঁতালে গরাণে নেই
শব্দভেদী বারান্দাটি
বালিভেদী রহস্য তমস
আসো নাই
কন্ডাক্টর চলে যায় চারপাশ দিয়ে
লাল কারা
গুপ্ত নগরী ফুঁড়ে
যুগ ফুঁড়ে
ছোটাছুটি করে কিছু আমি ও ছায়াটি
হাসি হয় ছোট ছোট অস্তের গায়ে
রোদ গায়ে
আদুল দুলিয়াজান হাত রাখে
হর্ন দেয় সামান্য টিকিট
কোথাও রওনা রেখা
কোহরা দ্রোহরা
বারান্দা চেয়ার গাঁদা
নবীন বুদবুদ হয়ে আছে
দূরবিন্দু
অ্যাপ-এ যে ছবি করো
রাতের বিন্দুগুলি
হৃৎশব্দ বড় হচ্ছে ছোট হচ্ছে
বৃষ্টি
করাতের এপার ওপার
দেখা যায়
ভ্যানরিকশা চেপে ঢেউ বেড়াতে চলেছে
দেখা যায়
বিছানা পাতা রইল শিমুলে
গাছ রইল
দূর হয়ে জল দিচ্ছ
সূর্য দিচ্ছ না লেখা চিঠিতে
চশমা
চিনি যেসব যাব না
এপিক হারা সোমবার
ফোটোকপি কুয়াশায় মাঘে
জানলার গায়ে এক আসমা এসেছে
তারাপাখি অস্তর সুর্মাই চোখ
ওড়ে যেসব যাব না
দূরের চশমা ট্রলি একজিট রেখা
আলোদের পোল ছিল
সুকুমার ছিল ও খনন অরোরা
মেনুমাখা গ্রীল ফুল আশিক সেক্টর
বাঁধানো পদক্ষেপ পুলিনে এসেছে
তারপুলিন তারপুলিন
হাতদুটো রোদ লেখে
যেসব এসেছি স্কেচ করে
আয়না
আলো তুমি কালিন্দীতে বসে ছিলে একদিন
লাগোয়া শ্মশানে একদিন
এইকথা মনে হোল বনহুগলী স্টপে
ফাঁসিতলা মোড়ে বাস ঘুরলে তখনও
বরানগর হাওড়া
মাঝে যতেক উড়াল ফুল
লোয়া লোয়া চিৎকারে বাবড়ি উড়ছে
থেমে ভাবি
থেমে আয়নার টুকরোগুলি ফিক্স করি যথার্থ কুইক
ফলে সূর্য কমে যায়
রজনীও
বঙ্কিম সেতুর মাঝে ঢেউ করে খরস্রোত হাওয়ায়
চোখ চাই
বসে আছ দিনরাত্রি দেউলিয়া করে
জামাকাপড়ের গপ্পে পিউ আসে মেজদি পাপিয়া
বসে আছ একদিন
জন্মদিন
ডিপোর তো চাক্কা নেই
পুষ্করিণী
গুল্লা ভেঙে গেলে তুমি কোন রাগে কেঁদেছিলে
উতার চড়াও জানা নেই