অধ্যাপিকা
দর্শন বিভাগ
ফকির চাঁদ কলেজ
যেখানে পিতা দয়াময়,
সেখানে আবার কিসের ভয়।
যেখানে আছ তুমি পিতা,
সেখানে আবার ভয়ে ভীতা।
যেখানে তোমার নাম সম্বল,
সেখানে কিসের অমঙ্গল।
যেখানে তোমার নামের ধ্বনি,
সেখানে কি ভূত পেতিনী।
যেখানে তোমার নামামৃত,
সেখানে সব হয় অমৃত।। (রাসসুন্দরী দেবী, আমার জীবন)
‘আমার জীবন’ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম আত্মজীবনী। ঊনবিংশ শতকের (জন্ম ১৮১০ সালে) এক গৃহবধূ রাসসুন্দরী দেবীর প্রথম ও একমাত্র রচনা ‘আমার জীবন’। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় এবং শ্বশুড় গৃহে সকলের অজ্ঞাতসারে বহু কষ্ট ও সাধনার দ্বারা ২৫ বছর বয়সে পড়তে, আনুমানিক ৫৪ বছর বয়সে লিখতে শিখেছিলেন। এখন প্রশ্ন হল ৫৪ বছর বয়সে লিখতে শিখে তিনি কেন হঠাৎ আত্মজীবনী রচনা করতে গেলেন? তিনি বাংলা ভাষাতে প্রথম আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন, তাই দৃষ্টান্তস্বরূপ তাঁর সামনে অন্য কোন আত্মজীবনীও ছিল না – যা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হবে। তবে কি উদ্দেশ্যে, কেন এই আত্মজীবনী রচনা? পরিবার, স্বামী, সন্তানদের বিষয় বর্ণনার জন্য? পারিপার্শ্বিক পরিবেশের বর্ণনা? নাকি সারা জীবন ধরে আঁকড়ে থাকা ধর্মের বর্ণনা? স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনিদের[i] কথা থাকলেও তাঁদের চরিত্র বর্ণনা যে তাঁর আত্মজীবনী রচনার উদ্দেশ্য নয় তা পরিষ্কার বোঝা যায়। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উল্লেখ তেমন নেই বললেই চলে। আর ধর্ম তাঁর লেখার মধ্যে থাকলেও সেখানে পূজা-পার্বণ, উপবাস, তীর্থ-দর্শন প্রমুখ বর্ণনামূলক বিষয় তাঁর লেখায় কখনই পাওয়া যায় না। তবে কি উদ্দেশ্যে ছোটবেলা থেকে ভীরু এক গ্রাম্য গৃহবধূ ৫৬ বছর বয়সে লিখতে শিখে ৬০ বছর বয়সে আত্মজীবনী রচনা করলেন[ii]? ‘আমার জীবন’ এ সোচ্চার ভাবে কোন প্রতিবাদ দেখতে পাওয়া যায় না, সরাসরি কোন অভিযোগও দেখতে পাওয়া যায় না। আবার শুধুমাত্র একজন গ্রাম্য আদর্শ রমনীর করুণ ছবিও এটি নয়। ‘আমার জীবন’ হল ঊনবিংশ শতকের সমাজে নারীর লেখা পড়া শেখার সংগ্রাম ও অন্যান্য বঞ্চনার চিত্র যেখানে দেখা যায় প্রকাশ্য লড়াই, প্রতিবাদ, যুদ্ধ, অশান্তি না করেও মনের ইচ্ছাগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করা যায় এবং ধর্ম এক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে।
তৎকালীন সমাজে একজন নারীর পড়া ও লেখা শেখা হল সমাজলঙ্ঘণকারী কাজ। কারণ “প্রাচীনাদের অনেকের বদ্ধমূল সংস্কার ছিল, যে মেয়ে লেখাপড়া করে সে ‘রাঁড়’ (বিধবা) হয়”।১ সাম্প্রতিককালের একটি গবেষণা পত্রে দেখা যায় যে, রাসসুন্দরীদেবী তৎকালীন সমাজে ৩টি সমাজলঙ্ঘণকারী কাজ করেছিলেন, “So there are three major “transgressions” that Rassundari Devi commits according to patriarchy : reading, writing and entering the public spere”.২ লেখা পড়া শেখার সঙ্গে সঙ্গে ঊনি আত্মজীবনী প্রকাশের যে কাজ করেছেন তাও এক সমাজ লঙ্ঘণকারী কাজ। কারণ যখন কোন লেখা প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে তখন সেটি আর ব্যক্তিগত স্তরে থাকে না। তা তখন সার্বজনীন স্তরে উপনীত হয়, যেখানে বিষয়টি উন্মুক্ত হয়ে যায় পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও বিভিন্ন প্রশ্নের জন্য[iii]। এখন প্রশ্ন হল একজন গ্রাম্য ভীড়ু গৃহবধূ এই সমাজলঙ্ঘণকারী কাজ করার জন্য মনের শক্তি কোথায় পেলেন? এক্ষেত্রে একটাই উত্তর ‘দয়ামাধব’, তাঁর ধর্মই তাঁকে এই শক্তি জুগিয়েছে। শৈশবেই তাঁর এই চেতনার বোধ হয়েছিল যে, “পরমেশ্বরকে মনে মনে ডাকিলেও তিনি শুনেন, তবে আর কিসের ভয়, এখন যদি আমার ভয় করে, তবে আমি মনে মনে পরমেশ্বর বলিয়া ডাকিব।”(আমার জীবন, পৃ ১৪) এখন প্রশ্ন হল রাসসুন্দরী দেবী কিভাবে ধর্মকে আশ্রয় করে পরিবারের সকল কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন করে তৎকালীন সমাজের দৃষ্টিতে এই সমাজলঙ্ঘণকারী কাজগুলি করেছিলেন? তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’-এ বেশ কিছু অলৌলিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, তাহলে তিনি ধর্মকে অবলম্বন করে কি কোন অলৌলিক শক্তির অধিকারী হয়েছিলেন? উক্ত প্রবন্ধে রাসসুন্দরী দেবী ধর্ম চিন্তা নিরিখে এই সকল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
ধর্মের লক্ষ্মণ :
‘ধর্ম’ শব্দটি নানার্থক। ইংরেজিতে Religion এর বাংলা প্রতিশব্দ ধর্ম হলেও তা সংকীর্ণ অর্থ মাত্র। ভারতীয় শাস্ত্রে ধর্ম বলতে ইহলোক ও পরলোকের স্থিতির অনুকূল আচরণকে বোঝানো হয়ে থাকে। মহাভারতে ‘ধর্ম’ শব্দের বুৎপত্তিগত দুটি অর্থের উল্লেখ পাওয়া যায়।
“(ক) ‘ধন’ পূর্ব্বক ‘ঋ’ ধাতুর উত্তর ‘মক’ প্রত্যয় যোগ করিলে ধর্ম্ম শব্দটি সিদ্ধ হয়। তাহার অর্থ – যাহা হইতে ধন প্রাপ্তি ঘটে। ধন শব্দে পার্থিব এবং অপার্থিব সকল প্রকারের ধনকেই বুঝিতে হইবে।
(খ) দ্বিতীয় ধর্ম্ম শব্দটি ধারণার্থক ‘ধৃঞ্’ ধাতুর সহিত ‘মন্’ প্রত্যয় যোগ করায় নিষ্পন্ন হইয়াছে। তাহার অর্থ – যাহা সকলকে ধারণ করে; অর্থাৎ লোকস্থিতি যাহার উপর নির্ভরশীল।”৩ উল্লেখিত যেকোন একটি অর্থে ‘ধর্ম্ম’ শব্দটির অর্থ গ্রহণ করলেই দেখতে পাওয়া যায় যে, স্থিতিশীল ব্যক্তি ও সমাজ জীবন চালনার ধারক হল ধর্ম। ধর্ম মানস বস্তু, আর বাহ্যিক আচরণগুলি হল ধর্ম লাভের উপায়। বাহ্যিক আচার আচরণ সমাজ ও কাল ভেদে পরিবর্তিত হয়। বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা মনের সদ্বৃত্তিগুলির সম্প্রসারণই ধর্ম্ম।
মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে –
“অদত্তস্যানুপাদানং দানমধ্যয়নং তপঃ।
অহিংসা সত্যমক্রোধ ইজ্যা ধর্ম্মস্য লক্ষণম্।।” শান্তি পর্ব, ৩৬/১০
এর অর্থ চৌর্য্য না করা, দান, অধ্যয়ন, তপস্যা, হিংসা না করা, সত্য ব্যবহার ও ক্রোধ বর্জন – এইগুলি ধর্ম্মের লক্ষণ।
মনুসংহিতায় সাধারণ ধর্মের উল্লেখ করতে গিয়ে একই রকমভাবে বলা হয়েছে –
“অহিংসা সত্যমস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
এতং সামাসিকং ধর্মং চাতুর্বণ্যেহব্রবীন্মনুঃ।।” ১০/৬৩
সুতরাং ধর্ম কোন বাহ্যিক বিষয় নয়, ধর্ম অন্তরের বিষয়। মালদহে শ্রীরামকৃষ্ণ উৎসব উপলক্ষে স্বামী প্রেমানন্দ বলেন, “যার ভিতরে উপলব্ধি আছে, তারই ধর্ম হয়”।৪ মনের সদ্গুণগুলির বিকাশই ধর্ম। মন যখন সৎ চিন্তার দ্বারা বিকশিত হয় তখন মনের শক্তিও বিকাশ লাভ করে। ‘ধর্ম বলতে ব্যক্তির অন্তরে অবস্থিত শক্তিকে বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ মনের স্বচ্ছতার দ্বারা এই শক্তি লাভ হয়। তাই বলা হয় “আমরা যে ‘ধর্ম’ বলি, ধর্মের আসল কথা হচ্ছে ভিতরের দিব্য শক্তিটাকে বের করে নিয়ে আসা”।৫ মন অচেতন, আত্মাই একমাত্র সচেতন। আত্মা বা পুরুষের ধর্মই মনে প্রতিফলিত হয়। সুতরাং আত্মশক্তিই মনের শক্তি রূপে প্রতিভাত হয়। আর এখানেই ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা অভিন্ন হয়ে যায়।
রাসসুন্দরী দেবীর ধর্মচিন্তা
রাসসুন্দরী দেবী ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে পাবনা জেলার পোতাসিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৪ বছর বয়সে পিতাকে হারান, ফলত পিতার কোন কথাই তাঁর মনে নেই। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন মা ও পরিবারের অন্যদের আদরে লালিত পালিত স্বভাবত ভীরু প্রকৃতির এক বালিকা। তাঁর ভয়কে দূর করার জন্যই মা ছোটবেলাতেই (আনুমানিক ৮ বছর বয়সে) ধর্মের প্রথম পাঠ দেন। এ প্রসঙ্গে দুটি কথা বলা প্রয়োজন – রাসসুন্দরী দেবী ছোটবেলাতে যে ভয় পেতেন তা অন্যদের কথা ভেবে। ঐ ছোট্ট ৮ বছরের শিশুটি শুনেছিলেন “যে সকল ছেলে দুষ্টামি করে এবং ছেলেপিলেকে মারে, ঐ সকল ছেলেকে ছেলে-ধরায় লইয়া যায়।”(আমার জীবন, পৃ ৩) এবারে তাঁকে কেউ মারলেই তাঁর মনে হতো যে এই দুষ্টুমির জন্য ঐ ছেলেটি বা মেয়েটিকে ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে; এই কথা ভেবেই রাসসুন্দরী দেবী ছোটবেলাতে কাঁদতেন এবং মারের কথা কাউকে বলতেনও না। ছোটবেলা থেকে তিনি এইভাবে অন্যদের দুঃখে কাতর হয়ে পড়তেন। আর একটি ঘটনা দেখতে পাওয়া যায় – বাড়ির কাছেই জ্ঞাতির মধ্যে এক খুড়িমার দুঃখ দেখে কাউকে না জানিয়ে তার সকল কাজ করে দিতেন(মনে রাখার বিষয় এই সময়ে তাঁর বয়স মাত্র ৮ থেকে ১০ বছর এবং ঐ বয়সে সে বাড়িতে কোন কাজই করতেন না। তাই খুড়ীমার কাছ থেকে শিখেই খুড়ীমার সব কাজ করে দিতেন।)। শৈশব থেকে তাঁর আরও একটি স্বভাব দেখতে পাওয়া যায় যে, কোন ঘটনা সকলের কাছে প্রকাশ করার উচ্ছ্বাস তাঁর ছিল না। একটি শিশু সাধারণত কারো কাছে মার খেলে বা কোন নতুন কিছু কাজ করলে বাড়িতে এসে বেশ উচ্ছ্বাস সহকারে সবাইকে বলে থাকে, বিশেষ করে মাকে অবশ্যই বলে থাকে। কিন্তু রাসসুন্দরী ছোটবেলা থেকেই নালিশ করার বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য বিষয় ব্যক্ত করার স্বভাব ছিল না। তাই জন্য কেউ মারলে যেমন বলতেন না, তেমন খুড়ীমার বাড়িতে কাজ বা প্রথম অক্ষর জ্ঞান হওয়া কোনকিছুই তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেননি। এই স্বভাব তার চিরকাল বজায় ছিল। ধর্ম যেহেতু মনের সদ্গুণের বিকাশ তাই রাসসুন্দরী দেবী ধর্মচিন্তা জানতে হলে তাঁর এই সদ্গুণ গুলি জানা অত্যন্ত আবশ্যক।
শৈশবে রাসসুন্দরী দেবীর ভীরু প্রকৃতির জন্য তাঁর মা, তাঁকে প্রথম ধর্মের পাঠ পড়ান। তিনি দালানের ঠাকুর দয়ামাধবকে দেখিয়ে বলেছিলেন, “পরমেশ্বর আমাদিগের সকলকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাঁহাকে যে যেখানে থাকিয়া ডাকে, তাহাই তিনি শুনেন। বড় করিয়া ডাকিলেও তিনি শুনেন, ছোট করিয়া ডাকিলেও শুনেন, মনে মনে ডাকিলেও শুনিয়া থাকেন। এজন্য তিনি মানুষ নহেন, পরমেশ্বর।”(আমার জীবন, পৃ ১৪) লক্ষ্যনীয় বিষয় হল রাসসুন্দরী দেবীর মা যেভাবে পরমেশ্বরের বর্ণনা করলেন তাতে ধর্ম সম্পর্কে এক উদার চিত্র রাসসুন্দরী দেবীর মনে চিরস্থায়ী হয়। শ্রীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আমার জীবন’-এর ভূমিকাতে লিখেছেন, “আমাদের দেশে ঈশ্বরের নামে যে বিগ্রহ স্থাপন করা হয়, তাহাকে ঠিক পৌত্তলিকতা বলা যায় না; তাহা ঈশ্বরের স্মারক চিহ্ন মাত্র। তাহাতে পৌত্তলিকতার সঙ্কীর্ণ ভাব নাই।” রাসসুন্দরী দেবীর মা তাঁকে শৈশবে ধর্মের যে পাঠ দিয়েছিলেন তা পৌত্তলিকতা ও সঙ্কীর্ণ আচার অনুষ্ঠান মুক্ত। মাত্র ১২ বছর বয়সে সুদূর রামদিয়া গ্রামের সীতানাথ সরকারের সঙ্গে বিয়ে করে যাওয়ার সময় মায়ের কাছে জানতে চায়, পরমেশ্বর কি আমার সঙ্গে যাবে? মা বলেন, “হ্যাঁ যাবেন বৈ কি, তিনি সঙ্গেই যাবেন, তিনি তোমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকিবেন।” বিয়ের পর মা, আত্মীয় পরিজনকে ছেড়ে শ্বশুড় বাড়িতে নিজের অবস্থা ব্যক্ত করতে বলেছেন, “লোকে আমোদ করিয়া পাখী পিঞ্জরে বদ্ধ করিয়া রাখিয়া থাকে, আমার যেন সেই দশা ঘটিয়াছে। আমি ঐ পিঞ্জরে এ জন্মের মত বন্দী হিলাম, আমার জীবদ্দশাতে আর মুক্তি নাই।” এইরূপ মনের অবস্থায় তাঁর একমাত্র সঙ্গী যিনি সব সময় তাঁর সঙ্গে আছেন, তিনি হলেন পরমেশ্বর দয়ামাধব। তাই সৃষ্টিকর্তা দয়ামাধবের কাছেই ব্যক্ত করেন বিবাহ সম্পর্কিত অভিযোগের সুর – “আহা! জগদীশ্বর! তোমার কি আশ্চর্য্য ঘটনা। তোমার নিয়মের শত শত ধন্যবাদ দিই। আত্মাধিক জননী এবং স্নেহপূর্ণ পরিবারগণ এ সকলকে ত্যাগ করাইয়া কোথা হইতে কোথায় আনিয়াছ।” এইরূপে তাঁর অন্তরে অবস্থিত পরমেশ্বর দয়ামাধবই হয়ে উঠে সকল অভিমান, আবদার, ব্যাকুলতা প্রকাশ করার স্থল। এইভাবেই এক সময় রাসসুন্দরী দেবী অন্তরের জগদ্বীশ্বরের কাছে তাঁর লেখাপড়া শেখার ইচ্ছাটি তুলে ধরেন, “তুমি আমাকে লেখাপড়া শিখাও, আমি লেখাপড়া শিখিয়া পুঁথি পড়িব। হে দীননাথ।” পূর্বেই বলা হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে মেয়েদের পড়তে ও লিখতে শেখা এক প্রকার সমাজলঙ্ঘণকারী কাজ বলে বিবেচিত হতো। তাই তিনি পরিবারের সকলের অজ্ঞাতে পরিবারের সকল কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন করে অতি কষ্ট সহ্য করে পড়ালেখা শিখেছেন। তবে ঘরের সকল কাজ তিনি পরমেশ্বরের দেওয়া কাজ ভেবে আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “সংসারের কাজ আমার নিকট তৃণবৎ বোধ হইত। আমি মনের আনন্দেই প্রায় সকল দিবস থাকিতাম। এই সকল আহ্লাদে আমার মন সততই মগ্ন থাকিত। বিষয়ের দুঃখের ধার বড় ধারিতাম না পরমেশ্বরের ইচ্ছায় প্রেমানন্দই পরিতুষ্ট ছিলাম”। (আমার জীবন, পৃ ৫৭) রাসসুন্দরী দেবী জীবনের দুঃখ একাধিকবার একাধিক রূপে এসেছে। সব থেকে বড় বিষয় হল তিনি একাধিকবার পুত্রশোক পেয়েছিলেন, তাঁর ১২টি সন্তানের মধ্যে মধ্যম পুত্র পুলিনবিহারী অন্নপ্রাশনের সময় মৃত্যু হয়, প্যারীলাল ২১ বছর বয়সে, রাধানাথ ১৩ বছর বয়সে – এইভাবে ৬টি পুত্র, ১টি কন্যা, এছাড়া পৌত্রের মৃত্যুও তিনি দেখেছেন। এপ্রসঙ্গে তাঁর উপলব্ধি মানুষের কাছে শিক্ষণীয়। “পুত্রশোক প্রবল যন্ত্রণা যদিও আমার অন্তরে ধক্ ধক্ করিয়া জ্বলিতেছে, তথাপি এককালে পাতিত করিতে পারে নাই। আমার বুদ্ধির চালনাশক্তি না হইতেই আমার মা আমাকে মহামন্ত্র দয়াময় নামটি বলিয়া দিয়াছেন। সেই মহৌষধ আমার অস্থি ভেদী হইয়া রহিয়াছে। আমার শরীর মন যখন বিষয়ের হলাহল এককালে আচ্ছন্ন ও অবশ হইয়া পড়ে, তখন আমার সেই অস্থিভেদী বিশল্যকরণী প্রবল হইয়া আমার শরীরের সমুদয় ব্যাধি শান্তি করিয়া, আনন্দ রসে মনকে পরিতোষ করে। ……………… আহা! কি আশ্চর্য্য! আমাদিগের মনের কি এত ভ্রম। সেই ঔষধের বীজ যে আমাদিগের চিত্তক্ষেত্রে রোপিত হইয়াছে আমরা তাঁহার কিছুই জানি না, ইহা নিতান্ত আক্ষেপের বিষয়। আমরা তদ্বিষয়ে যত্নবান না হইয়া নানা প্রকার দুঃখার্ণবে মগ্ন হই। একি আমাদের সাধারণ দুরদৃষ্টের কর্ম্ম! আমাদের হৃদয় প্রকোষ্ট এমন রত্নপূর্ণ রহিয়াছে যে তাহা আমরা খুলিয়া না দেখিয়া দীনদরিদ্রের মত হাহাকার করিয়া দিবারাত্র কাঁদিয়া বেড়াই, একি সামান্য দু:খের বিষয়! ……… আমার যদি মাতৃদত্ত এই মহামন্ত্র ধন না থাকত, তাহা হইলে আমার যে কি পর্য্যন্ত দুর্দ্দশা ঘটিত, তাহা বলা যায় না। যাহা হউক, কৃপাময়ের কৃপাতে আমার মন সতত প্রেমানন্দেই পরিপূর্ণ আছে।” (আমার জীবন, পৃ ৬১)
রাসসুন্দরী দেবীর ধর্ম্মচিন্তা সম্বন্ধে বলাই যায় যে, তার ধর্ম্ম বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ সামাজিক লৌকিকতা পূরণের জন্য নয়, তিনি কখনই পূজার বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান, রীতি নীতি নিয়ে কোন কথা বলেননি। শ্রীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আমার জীবন’-এর ভূমিকায় বলেছেন, “ইঁহার ধর্ম্ম বাহ্যিক অনুষ্ঠান আড়ম্বরে পর্য্যবসিত নহে, ইঁহার ধর্ম্ম জীবন্ত আধ্যাত্মিক ধর্ম্ম। জীবনের প্রত্যেক ঘটনায় ইনি ঈশ্বরের হস্ত দেখিতে পান, তাঁহার উপর একান্ত নির্ভর করিয়া থাকেন; এককথায় তিনি ঈশ্বরেতেই তন্ময়।” সুতপা ভট্টাচার্যের রাসসুন্দরী দেবীর ধর্মচিন্তা সম্পর্কে বলেছেন “ধর্ম যেখানে ভুবনের ব্যাপার, সেখানে তাঁর কত না রীতিনীতি, কত না পুরোহিত-তর্জন, কত না আমরা-তারা ভেদ-বিভেদ, দন্ডদাপটা। কিন্তু ধর্ম যেখানে ভবনের ধন, সেখানে তার আর কিছুরই দরকার করে না, সেখানে তার কোনও চিহ্ন নেই, পোশাক নেই। সেখানে আছে শুধু বিশ্বাস, শুধু নির্ভরতা, শুধু বিভাময়তা। কিন্তু সেই ভবন, সেই নিজ নিকেতন থাকে ক’জন মেয়ের? সংসারের চাহিদা মেয়েরা মা হবে, স্ত্রী হবে, পুরুষের মনোরঞ্জিকা হবে, কিন্তু কদাপি তারা যেন ‘আমি’ না হয়। সংসারের চাপ সবটুকু মেনে না নিয়ে যার উপায় নেই, অথচ যে ‘আমি’ বিষয়েও প্রখরভাবে সচেতন, তাকে বিকল্প আমি হিসেবে ঈশ্বরকেই আঁকড়ে ধরতে হয়, তার নিজের ঈশ্বরকে, রীতি-রেওয়াজের বাইরের ঈশ্বরকে। এরই এক নজির রয়েছে রাসসুন্দরীর ‘আমার জীবন’-এ”।৬ ‘ভবন’ হল নিজস্ব আত্মপরিসর। রাসসুন্দরী দেবীর কাছে পরমেশ্বর সত্যই তাঁর ভবনের ধন, একান্ত আপন ছিলেন।
কিছু অলৌকিক ঘটনা :
রাসসুন্দরী দেবীর জীবনে বহুবার বহুরকমের আশ্চর্য্য ঘটনা ঘটেছে, নিজের পুত্র প্যারীলালের মৃত্যু স্বপ্নে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, অবিকল সেই রকম ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছে[iv]। বিপিনবিহারীর ক্ষেত্রেও এইরূপ একটি ঘটনা দেখতে পাওয়ায়া যায়। “বিপিন যে প্রকারে ঘোড়ার উপর হইতে পড়িয়াছিল, যে প্রকারে ঐ গ্রামের লোক বিপিনের বিপদ দেখিয়া হাহাকার শব্দে চতুর্দ্দিকে ঘিরিয়া সুস্থ করিবার চেষ্টা পাইয়াছিল, যে প্রকারে থানার ভিতরে লইয়া গিয়া একটি ছোট ঘরে শোয়াইয়া রাখিয়াছিল, সেই সকল ব্যাপার আমি যেরূপ দেখিয়াছিলাম, বিপিনও তাহাই বলিল। ফলতঃ আমি সমস্ত দিবস মনের মধ্যে যে সকল কান্ড দেখিয়াছিলাম, সেই প্রকার সমুদয় কান্ড ঘটিয়াছে, প্রত্যক্ষে শুনিলাম। এই ব্যাপারে আমি মনের মধ্যে স্পষ্টরূপে দেখিয়াছি, কি আশ্চর্য্য! এই কথাটি মনে ভাবিয়া আনন্দ রসে আমার চক্ষের জল ঝর্ ঝর্ করিয়া পড়িতে লাগিল।” (আমার জীবন, পৃ ৮২) ধর্ম ছিল তাঁর অন্তরের শক্তি, আর এই শক্তি ও বিশ্বাসের জোরেই ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি এক একটি সমস্যা অতিক্রম করে সুস্থভাবে জীবিত ছিলেন। তাঁর নাতনি সরলাবালা সরকারের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৩০৪ সালে শান্তিপুরে গঙ্গার ঘাটে স্নানের সময় রাসসুন্দরী পড়ে গিয়ে পায়ে এমন চোট পেলেন যে পায়ের হাড় ভেঙে গেল। তখন তাঁহার বয়স ৯০ বৎসরের কাছাকাছি, ডাক্তার বলিলেন – ‘এ বয়সে হাড় জোড়া লাগার আশা নাই, জখম বেশ গুরুতর হইয়াছে’। পরমেশ্বরের উপর তাঁর ভয়ানক রাগ হল। সরলাবালা দেবী বর্ণনা করেছেন, “ঠাকুরমা মদনগোপালকে জব্দ করিবার জন্য অনশন সত্যাগ্রহ অবলম্বন করিলেন, সমস্ত দিন তিনি কিছু খাইলেন না; পিসিমা বেচারিও ‘মা খান নাই’ এজন্য উপবাস করিয়া রহিলেন, এইভাবে সমস্ত দিন গেল। আমি ও আমার জ্যাঠতুতো বোন শৈলবালা ঠাকুরমার কাছেই আছি, দেখিলাম তিনি ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন; এক ঘন্টা ঘুমাইবার পর হঠাৎ তিনি চোখ মেলিয়া হাতের সঙ্কেতে আমাকে ডাকিলেন, আমি কাছে আসিলে আমার কানের কাছে মুখ নিয়া মৃদুস্বরে বলিলেন, হ্যাঁরে, দেবনাথ এসেছে নাকি? দেবনাথ অর্থাৎ দেবনাথ রায় মহাশয়। আমি বলিলাম, কই তাঁর আসার কথা তো কিছু জানি না? ঠাকুরমা বলিলেন, বাইরে একবার খবর নিয়ে দ্যাখ দেখি সে এসেছে কি না? বাইরে খবর নিয়া যখন জানিলাম তিনি আসেন নাই, ঠাকুরমা শুনিয়া একটু হাসিলেন, বলিলেন পা ভাঙাই বা কেন, আর খোশামোদ করতে আসাই বা কেন? আমি বলিলাম, আমরা তো ঘরেই আছে, কে খোশামোদ করিতে আসিল, কাহাকেও তো এ ঘরে আসিতে দেখি নাই!
তখন ঠাকুরমা সমস্ত রহস্য খুলিয়া বলিলেন, বলিলেন একটু তন্দ্রা আসিয়াছিল, তিনি দেখিলেন যেন দেবনাথ রায় মহাশয় ঘরের ভিতর আসিয়া হাসিমুখে তাঁহার শিয়রের কাছে দাঁড়াইলেন এবং হাসিতে হাসিতে বলিলেন, ‘জেঠি কেমন আছেন?’ ঠাকুরমা বলিলেন, এই প্রশ্ন শুনিয়া ও তাঁহার হাসি দেখিয়া তাঁহার ভয়ানক রাগ হইল। দেখতেই পাচ্ছে যে পা ভেঙে শয্যাগত হয়ে আছি, আবার হাসতে হাসতে জিগ্যেস করা হচ্ছে যে, কেমন আছেন? ঠাকুরমা কোন উত্তরই দিলেন না, তখন দেবনাথ রায় বলিলেন ‘এত রাগ কেন? পা ভেঙেছে, ভাল হয়ে যাবে। তবে দেখছিলাম হাত পার উপর এখনও কতটা মমতা?’ ঠাকুরমা আমাদের বলিলেন ‘কান্ড দেখলি’? দেবনাথ সেজে এসে আমাকে কত কথা শুনিয়ে গেল, আবার পা ভাল হয়ে যাবে সে কথাও জানিয়ে যাওয়া হল।
ঠাকুরমার দৃঢ় বিশ্বাস হইল যে পা ভাল হইয়া যাইবে, আমি পিসিমার কথামত অনবরত পায়ের উপর তেঁতুল পোড়ার কাই ও বিট নুনের প্রলেপ লাগাইতে লাগিলাম, ঠাকুরমার পা কয়েকদিনের ভিতরই অনেকটা ভাল হইল, ক্রমশ তিনি লাঠি ধরিয়া উঠিয়া দাঁড়াইতে পারিলেন, ইতিমধ্যে বাবা কবিরাজ দ্বারকানাথ সেনের একটি মালিশের তেল পাঠাইয়া দিলেন। ঠাকুরমা ইহাতে খুবই খুশি হইলেন, বলিলেন কিশোরী অন্ধি সন্ধি জানে, দেখ তো কেমন ভাল মালিশের তেলটি পাঠিয়ে দিয়েছে।
তেল মালিশের বা প্রলেপের গুণেই হউক অথবা দৈব প্রভাবেই হউক, ঠাকুরমার পা আরাম হইয়া গেল, ঠাকুরমা আবার স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটতে পারিলেন”।৭ বৃদ্ধ বয়সে মনের এইরূপ শক্তি ও বিশ্বাস দৃষ্টান্ত পাওয়া সত্যই এক বিরল ঘটনা। ৮৭ বছর বয়সে ভাঙা পা ঠিক হওয়া বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার এতো উন্নতি সত্ত্বেও খুব স্বাভাবিক বিষয় নয়। আধ্যাত্মিক শক্তি বা মনের বিশ্বাসের দ্বারাই যে তা সম্ভব হয়েছে তা পরিষ্কার বোঝা যায়।
উপসংহার :
সুতরাং বলা যায় যে, ধর্ম কোন বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, ভেদাভেদা করার মতো সংকীর্ণ নয়; ধর্ম ধারক, যা পশু থেকে মনুষ্যে উত্তীর্ণ করে, আবার মানুষকে দেবত্বে উত্তীর্ণ করে। ধর্ম একটা আধার, একটা শক্তি, একটা আশ্রয়, যা মানুষকে সৎ পথে বেঁধে রাখতে সাহায্য করে। ধর্ম যথার্থভাবে পালিত হলে মন শুদ্ধ হয়, মনের শক্তি বা আত্মশক্তির উন্মেষ ঘটে থাকে। স্বামীজির বিখ্যাত উক্তি –
“All power is within you,
You can do anything and everything
Believe that you
……..
You can do anything and everything
Without even the guidance of anyone
Sand up and express
The divinity within you”.
আত্মা পরমেশ্বরের অংশ, তাই মনের শক্তি বা আত্মশক্তি সবই পরমেশ্বরের শক্তি, যা অসীম। এই কারণেই স্বামীজির বলেছেন, ‘মানুষের ভিতরে যে দেবত্ব আগে থেকেই আছে তার প্রকাশ সাধনের নাম ধর্ম।’ রাসসুন্দরি দেবীর জীবনে শৈশব থেকে যে সরলতা, পরার্থপরতা, সহনশীলতা, সন্তোষ, এছাড়া ঈশ্বরের প্রতি যে তন্ময়তা দেখতে পাওয়া যায় তাতে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া অলৌলিক ঘটনাগুলিকে মনের শক্তি বা আত্মশক্তির প্রকাশ বলতে কোন দ্বিধা থাকার কথা নয়। ফলত রাসসুন্দরী দেবীর ধর্মচিন্তায় এই আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষই প্রকাশ পায়।
[i] এখানে উল্লেখযোগ্য যে রাসসুন্দরী দেবীর সন্তানদের মধ্যে অনেকেই সেই সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, নাতি বিখ্যাত ডাক্তার সরসীলাল সরকার (সাহিত্য জগতেও তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন), নাতনি সরলাবালা সরকার(বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক)।
[ii] গোলাম মুরশিদ ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারীপ্রগতির একশ বছর’ গ্রন্থে রাসসুন্দরী দেবীর লেখা শেখার সময়কাল নির্ণয় করে বলেছেন, “কিশোরীলালের বয়স যদি কুড়ি বছর হয়, তা হলে ঘটনাটা ১৮৬৪ সালের। কারণ কিশোরীলাল জন্মগ্রহণ করেন যখন তাঁর মায়ের বয়স ৩৪। আর তাঁর মায়ের জন্ম ১৮১০ সালে”। ১৮৬৯ সালে রাসসুন্দরী দেবীর স্বামী মারা যান[ii], সুতরাং তখন তাঁর বয়স ৫৯। খুব আশ্চর্যের বিষয় এই সময় বা এর পরই তিনি আত্মজীবনীটি রচনা শুরু করেন। কারণ তিনি নিজেই বলেছেন, “আমার যখন ৬০ বৎসর বয়ঃক্রম সেই সময় আমার জীবন বৃত্তান্ত যৎকিঞ্চিৎ লেখা হইয়াছিল”। এর থেকে বোঝা যায় ১৮৭০ সালে (৬০ বৎসর বয়স) তাঁর লেখার কাজ চলছিল।
[iii] “Not only did she learn to read, but she also decided to record the events and details of her everyday domestic life in a book and got it published. She had the audacity to disclose her life in print. By doing this, she entered the public sphere which was strictly forbidden to upper class Hindu women. A published work no longer remains a private act of writing but enters the public domain where it is open and available for perusal and interrogation by anyone”. Hira Naaz,, ‘The Caged Bird Who Sang : The Life and Writing of Rassundari Devi’
[iv] “আমি স্বপ্নে প্যারীলালের মৃত্যুর বিষয়টি যে প্রকার দেখিয়াছিলাম, অবিকল সেই প্রকার সমুদয় ব্যাপার ঘটিয়াছে” পৃ ৭৯
তথ্যসূত্র
১) বঙ্গসাহিত্যে নারী, শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, কলিকাতা, ১৩৫৭, পৃ ১
২) Hira Naaz, ‘The Caged Bird Who Sang : The Life and Writing of Rassundari Devi’, March, 2017, Feminism in India
৩) মহাভারতে সমাজ, সুখময় ভট্টাচার্য্য, পৃ ২২১
৪) রামকৃষ্ণ মিশন ১২৫, সম্পাদনা স্বামী কৃষ্ণানাথানন্দ, উদ্বোধন, কলকাতা ৩, ২০২৪, পৃ ২২৭
৫) স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ, ধর্মের শিক্ষা, শারদীয়া উদ্বোধন পত্রিকা, ১৪২৮, পৃ ১২৮
৬) মেয়েদের স্মৃতিকথা, সুতপা ভট্টাচার্য, সিগরেট প্রেস, ২০১৮, পৃ ৪
৭) রচনা সংগ্রহ সরলাবালা সরকার, প্রথম খন্ড, চিত্রা দেব সম্পাদিত, ১৯৮৯, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ৯, পৃ ৭৪৪