: ঘোড়া না। বিজলি হল ঘোড়ী।
হাসে রহিম।
আমরা দাঁড়িয়ে অছি ভিক্টোরিয়ার সামনে। আমরা বলতে শ্যামলীদির সোশ্যাল অর্গানাইজেশন, নাম সবুজছায়া। তাদের দলবল। মাস্ক পরে, গ্লাভস পরে এসেছি ঘোড়াদের খাবার নিয়ে।
আইডিয়া তিমিরবরণের। শ্যামলীদির স্বামী প্লাস সাংবাদিক। করোনার শুরু থেকেই সবুজছায়া প্রচুর কাজ করছে। এখন এই ঘোড়াদের ছোলারবস্তা সাপ্লাই করাও তাদের কাজ। এরকম একটা মহানকাজে আমার মত অলস ভ্যাবাগন্ডকে সঙ্গে নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। আমি রাতুল। বয়স সাতাশ। স্টেটাস বেকার। ফেসবুকে ভুলেও কবিতা লিখি না। ফাটা জিনস বা কাঁধে ঝোলা কোনটাই নেই। তিতির নামক একখান জম্পেশ ঝগড়ুটে বান্ধবী
আছে। ইয়া বড়লোক। তার পয়সায় দিব্য আছি। আমি কোনায় দাঁড়িয়ে ঘাসছেঁড়া পাবলিক একথা জেনেও শ্যামলিদি আমায় সঙ্গে যাওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করতে লাগল। যেন আমি না গেলে এই মহৎকাজ একেবারে গোল্লায় যাবে। শ্যামলীদি খুব নরমমনের। এই যে আমি বেকার, কেউ তেমন পাত্তা দেয়না, এটায় উনি কষ্ট পান। চোখ বড় করে, চুল ঝাপটে আদর মাখা স্বরে বলল, ওরে রাতুল, এখন কেউ যেতেই চাইছে না। তুই সঙ্গে থাক ভাই। তোর বাইক করে চলে আয়।
আমরা চারজন দুটো গাড়ি করে যাচ্ছি।
তিমির বরণ চওড়া হেসে বলল: দুটো পরপর শুক্কুরবার। ভেবে দেখো, যাবে না কি?
তিতির শুনেই বলল, দূরে থাকবে সকলের থেকে। হাঁদারামের মত ঘাড়ের উপর পড়ে যেওনা।
এই হল প্রেমিকা! সবসময় কটকট করেই চলেছে। যেন রাতুল একটা অবলাজীব। তিতিরের পক্ষছায়ায় না থাকলে কুটিল পৃথিবী তাকে গিলে খাবে। পাগলি আর কাকে বলে! তবে, আদর
করার সময় গলতে থাকে নরম ননীর মত! শালা! কতদিন ছুঁতে পারিনি গালদুটো। কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে তিতিরের বাড়ি হানা দিলে কেমন হয়?
আমি যথারীতি ঘাস চিবোনোর প্ল্যান করছিলাম, এই সময় মিলে গেল রহিমচাচা। উনি এখানকার প্রবীণতম সহিস। ছোকরারা কাজ করছে তাই উনি বসে আছেন। চুপসে যাওয়া মুখ। মেহেন্দি রঙ করা কালো সাদা চুল দাড়ি, বয়স?
ষাট-ফাট হবে। হলুদদাঁতে ঝিলিক তুলে বললে, বাবুজী, বসেন। পঁচিশবছর গাড়ি চালাচ্ছি , এমুন খারাপ সময় দেখি নাই।
:পঁচিশ বছর? এই টাঙা?
ছাতি টান করে রহিমচাচা বলে, কিঁউ নেহি বাবুজী? দুই বার ভিক্টোরিয়া ঘুমাও, পাঁচশ মিলে যায়। তার উপর শাদি আছে, পূজা আছে। শীতকাল এলে সাহেব মেম আছে। গুজরা হয়ে যেত। এখুন তো আল্লা জানে। জানোয়ার গুলান বে -জুবান। নিজের পেট ভরছেনা,
ওর খাওয়া কোথা হতে দেব বলতে পারেন?
রহিম বলে: মেটিয়াবুরুজ জানেন বাবুজী? একসময় খানদানি এলাকা ছিল। ওখানে তিন চার পুরুষ কি তারও বেশি সময় ধরে আছি। আমরা এসেছিলাম লখ্নৌ থেকেই। নবাবের সঙ্গে। উনার পসন্দের সহিসদের মধ্যে আমাদের বংশের লোক ছিল। তাঁরা এসে ডেরা বাঁধল।
বলে কি রে লোকটা? আমি নড়ে চড়ে বসলাম। আজ শুক্কুরবার। সকাল এগারোটা বাজে। দিনটা
মনে হচ্ছে বেশ ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে।
: নবাবের সঙ্গে চলে এলে? সাংঘাতিক ব্যাপার!
: সে তো সবাইকে নিয়ে এসেছিলেন নবাব। নিজের পরিবার, পছন্দের খাসনামা, রাখেবদার নফুস – সবাইকে। নতুনকরে বসত বানিয়ে নিলেন। ঝলক তুলে দিলেন মেটিয়াবুরুজে। কেবল আপনা দিল? ওটা রেখে এলেন লখ্নৌ। আর নবাব মারা গেলেন তো মেটিয়াবুরুজ খতম হয়ে গেল।
: চাচা। তুমি তো হেব্বি গল্প বলো।
তুমি কার কথা বলছ জানো? ওয়াজেদ আলি শা।
: আমরা লিখাপড়া করে তো শিখি নাই। ই সব খানদানি গল্প।
রহিম বানিয়ে বলছে? টাইমপাস? নবাব ওয়াজেদআলি শা এই নামটা মনের মধ্যে কেমন ছলকে ওঠে। নারী, কবিতা,গান, নাচ নিয়ে একটা মানুষ স্বপ্নদুনিয়া তৈরি করে ফেলেছিল মেটিয়াবুরুজ ঘিরে। তখন পাশেই গড়ে উঠছে নব্য কলকাতা। কত কি ঘটছে সেখানে। বাংলায় নবজাগরণের ঢেউ উঠছে। নবাবের কোনো
আগ্রহ নেই। তিনি আছেন তাঁর মত। অম্বুরি তামাকের সুবাস। বিরিয়ানির খুশবু। রাজকীয় জৌলুস আর বিলাস। বাগবাগিচা। চিড়িয়াখানা। রমণীপ্রেম। প্রেমিক মনের নবাব। দরবার জুড়ে কথ্থকের বোল। ঘুংঘুরের শব্দ। ঝলমল হাজার বাতির আলোর নিচে বাঈজির নাচ। তবলা লহরা আর ঠুমরির তালে তালে নেচে উঠছেন নবাব।শায়েরি লিখছেন। সুরবাহারের সুর ভেসে যাচ্ছে গঙ্গার জলের উপর দিয়ে। সন্ধ্যা হলেই, গাইয়ে বাজিয়ে নাচিয়ের সঙ্গে
প্রাসাদে জ্বলে উঠত অগুন্তি ছোট ছোট রঙিন বাতি।
বেশ উদাস উদাস ভাব খেলে উঠল আমার মনের ভিতর।
জব ছোড় চলে লখ্নৌ নগরী/ কহে হাল কে হামপর কেয়া গুজরী।
নবাব ওয়াজেদআলি শা থেকে গেলেন বটে কলকাত্তা কিন্তু গালিবের ভাষায় বলা যায়,
সিনে কা দাগ হ্যায় ও নালা কি লবতক না গ্যায়া।
খাক কা রিয়ক হ্যায় ও কাতরা কি দরিয়া না হুয়া।।
যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না, সে
বুকে দাগ কেটে বসে।
যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছালো না ,তাকে মাটি শুষে নেয়।
একসময় হেব্বি অনুবাদ করতাম উর্দু শায়েরি। কলেজের মেয়েগুলো বাংলাকবিতার চাইতে উর্দুভাষার প্রেমের কবিতা পছন্দ করত বেশি। আমিও টকাটক ছেড়ে দিতাম। ওরে তিতির রে, দ্যাখ, আস্ত একটা গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়ছি। রহিম নজর করছিল আমার পাল্টে যাওয়া চোখ। বলল, বাবুজী গুস্তাখি মাফ। একটা কথা। ভালবাসেন কাউকে? তবে, একদিন
চাঁদনীরাতে তাকে নিয়ে টাঙ্গায ঘুরবেন। এই ভিক্টোরিয়ার পাশ থেকে। হলফ করে বলতে পারি, আপনার জিন্দেগীর সেরা রাত পাবেন আপনি।
উত্তর দিলাম না। টাঙ্গায চড়ে তিতিরের সঙ্গে পূর্ণিমার রাতে? থাক বাবা। ঘোড়া কখনো সিংহিকে সওয়ারী করেছে বলে শুনিনি!
রহিম বলে:বাবুজী, টাঙ্গা ঘিরে ভালোবাসার যত গল্প তৈরি হয়, আর কোনো গাড়ি আপনাকে ইয়ে মেহ্সুস করাতে পারবে না।
বলতে বলতে উত্তেজিত রহিম।
:জানেন, বাবুজী। আমার মা হিন্দু? ছেচল্লিশের দাঙ্গায় তিনবাঙালী জেনানার জান আর ইজ্জত বাঁচায় আমার আব্বা। কলকাতা জ্বলছে। চারদিক জুড়ে লাশের পাহাড়। নাঙ্গা হচ্ছে ঔরৎ। এই বাঙালী পরিবারের সঙ্গে দোস্তি ছিল আব্বাজানের। মেটিয়াবুরুজ তখন আগুন। আব্বা আর দেরি করেন নি। বুরখা পরিয়ে নিয়ে চলে এসেছিলেন তিনমেয়েকে। তখন বাবার ঘোড়ার নাম ছিল বাদশা। ছোটবেটির সঙ্গে মুহব্বৎ হয়েছিল।
এই দাঙ্গার পরে শাদী করেন তারা।
বাহ! খুন খারাপি আগুনের মাঝখান দিয়ে ছুটছে টাঙ্গা। সম্প্রদায় তুচ্ছ। ধর্ম তুচ্ছ। এমনকি প্রাণ ও তুচ্ছ। সত্য শুধু ভালোবাসা। বাহ।
গল্প জমে উঠছে। এইসময় শ্যামলী দি এসে বলল,
: আজকের মত কাজ শেষ। আমরা আবার পরের শুক্রবার আসব। কি রে রাতুল? চল।
:প্রশ্নই নেই। তোমরা যাও। আমি এখন নড়ছি না।
: পাগলা। সাবধানে থাকিস।
রহিম মাথা নেড়ে বললে, গল্প টানে বাবুজী। আপনার মত কুসুমকুমারীও গল্প শুনতে খুব ভালবাসত। আমার সঙ্গে যত কথা তার চেয়ে অনেক বেশি কথা বলত বিজলির সঙ্গে।
- :বিজলি?
: আমার ঘোড়ী। হুই সফেদরঙ সুন্দরী।
: আরি ব্বস। দারুণ দেখতে তো! গলায় লালমালা। পায়ে ঘুংঘুর। কেয়াবাত।
- হে হে করে তৃপ্তির হাসি হাসল রহিম:
- :ঘোড়া পঁচিশ তিরিশ বছর বাঁচে বাবুজী। বিজলির আগে ছিল তুফানি।
- চোখের উপর হাত রেখে বসে রহিম বলে:
- : বড্ড মায়া পড়ে যায় বাবুজী। খিদে পেলে বলতে পারে না।
- : কত খোরাকি লাগে?
- : একটা ঘোড়ার জন্য দিনে দেড়শ থেকে দুশো টাকা। তারপর আরো আছে ডাক্তার। দলাই মালাই।
- :কি খাবার দাও?
- : ছোলা দুধ ঘাস গুড়।
- :অনেক খরচ তো!
- :বাজার ভালো ছিল বাবুজী।
- শীতকালে তো ঘুরবে ই লোগ। তারপর ধরুন, জলুস নিকলতে হলে, এখুনো ঘোড়ার মত শান কেউ দিতে পারবে না। তখন আরো বেশি। সব ঠিক ছিল। তারউপর, আমার বরাতে ছিল কুসুমকুমারী। চলে আসবে ফি শনিবার। অনেক টাকা দিত। বিজলি তো ওকে দেখলেই মাথা দুলিয়ে পা ঠুকে একদম হল্লা শুরু করে দেবে। ও মেয়েও তেমনি। বিজলির গলা জড়িয়ে চুম দেবে। হাতে করে
মিঠাই খাওয়াবে। সঙ্গে বাবু থাকে। টাঙ্গায চেপে ঘুরতে ঘুরতে গল্প শুনতে চাইবে।
- : এ আবার কেমন কথা গো? কেন? আজব তো!
- মলিন হাসে রহিম:
- : কষ্টে ছিল মেয়েটা। যত আবদার সব আমার কাছে।
- : যাক গে। ছাড়ো। তো, কিসের গল্প করতে? আমিও শুনি।
- কথার আলাদা আলো আছে। সত্যিমিথ্যে কল্পনা মিশিয়ে নিজেদের পুরনো দিনের কথা বলতে ভালোলাগে মানুষের। ফেলে
আসা ধুলোপথ জুড়ে জেগে ওঠে আশ্বাসের সঙ্গীত। কিছুই মিথ্যে নয় আসলে। নিজের ভিতর নিজে কান পেতে শুনলে শিকড়ে শিকড়ে বেজে উঠবে চেনা সুর।
- রহিম বলে চলে সেই বাবুয়ানির সময়ের কথা। উত্তেজিত রহিমের চোখ চকচক। বলে চলে,” সে অলগ কিসিম কা শান থা। আজ দুটো পয়সা হল কি না হল, লোগ নিজেকে হিরো ভাবে। তখন মালিক খুশ হলে নকর পেত হীরেরআংটি। ইসব কহানি মেটিয়াবুরুজ জুড়ে
ঘুরে বেড়ায় বাবুজী।
- মাথা নেড়ে একটু জ্ঞান ঝেড়ে দিলাম:
- : হ্যাঁ চাচা, সে ছিল বাবুদের কলকাতা। কলকাতা তখন রূপে রঙে আভিজত্যে শৌখিনতায় ঝলমল করছে। টাকা উড়ছে। আর চলছে টক্কর দেওয়া। কে কত বড় ধনী, কে কত বড় শৌখিন!
- আমাকে থামিয়ে দিয়ে রহিম বলে উঠল:
- : শৌখিন বাবুদের মেজাজ ধরে রাখত বাঈজি গণিকা। আপনা মেয়েমানুষ মুঠঠিতে রাখার জন্য
লাশ নেমে যেত।
- ভিক্টোরিয়ার সামনে বসে রহিম গল্প শোনায়। ঘোড়াকে ছোলা খাওয়াতে এসে বাবু কালচারে ঢুকে পড়ছি! জমে ক্ষীর একেবারে।
- ” জানেন বাবুজী, আমার পরিবারের গল্পে আছে, বাবুদের কত্তরকমের গাড়ি আর ঘোড়া থাকত। দেখভাল করত সহিস। আর লাগাম ধরে চালাত কোচওযান। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকত বাবুর খাস নোকর।
- : সহিস আর কোচওয়ান আলাদা?
- : একদম আলাদা। ইজ্জত ভি
আলাদা। জুড়িগাড়ির পালিশ আয়নার মত। চকাচক। দুটোঘোড়া এমুন তেজী, এমুন রোখ, সারা শরীর চকচক করছে। পা ঠুকছে যেন পঙ্ক্ষীরাজ।
:জানি। সামন্ততান্ত্রি আভিজাত্য!
:সে আপনি যাই বলেন। সে কলকাত্তা অলগ ছিল। মসলিন ধোতি রেশম কুর্তা সোনা বাঁধানো ছড়ি আতরের খুশবু ছড়িয়ে মালিক উঠে আসত গাড়িতে। তখন রাত। শহরে জ্বলে উঠেছে গ্যাসের বাতি। রাস্তা ধরে ছুটত ঘোড়া। উড়ত কেশর। রেশমপুছ দুলত
তালে তালে। টক টক টক টক।
স্বপ্ন দেখা চোখে বলে যায় রহিম :
:জানবাজারে কোঠির সামনে দাঁড়াত গাড়ি। বাবু ঢুকে যেতেন ভিতরে। খানাপিনা মোচ্ছব চলত। মশার কামড় খেতে খেতে ঘুমঘুম চোখে আমাদের দাদার দাদা পর দাদা শুনতে পেত ঘুংঘুরের আওয়াজ। খিলখিল হাসি। মনে পড়ত রাজবাড়ির বহুরানী আজ উপোস। প্রায়ই এমন থাকেন। পানিটুকু খাবেন না।
- : ও চাচা। এসব আমরা জানি। ও
ই শালা বাবুগুলো রাত্তিরে বৌদের মুখ দেখত না। মাখন সুন্দরী বৌগুলো একলা পড়ে থাকত। বাবু হতে গেলে কুকুরের বিয়েতে লাখটাকা খরচ করতে হয়। রক্ষিতাদের দালান কোঠা করে দিতে হয়। কিস্যু কাজ না করেও প্রচুর মাল খাওয়া যায়। উফফ। সময় ছিল বটে একটা।
- রহিম হাত বোলায় নিজের শুকনো মুখে। চোখ নাচিয়ে বলে,” আফশোস হচ্ছে? শুনে লিন পুরা কহানি। তারপর বলুন।
- গল্পের মধ্যে দিয়ে কি রকম করে উঠে আসছে ইতিহাস।
- কেন জানিনা, সেই না দেখা বহুরানীর জন্য মনটা উদাস হল একটু। কেমন ছিল দুধেআলতা সুন্দরী কন্যাটি? বিশাল পালঙ্কে শুয়ে কেমন করে কাটত বিনিদ্র রাত? শরীরের জ্বালা মেটাতে কি করত সে? ইস!
- মুখে বললাম,” ছাড়ো চাচা। কুসুমকুমারীর গল্প বলো। তোমার দেরি হয়ে যাবে।
- : দেরি কিসের? কাম তো কিছুই
নেই। আপনার দেরি হলে চলে যান। আবার তো আসবেন তখন শুনবেন।
- : সে তো আসব। আজ শুনি যতটুকু হয়।
- মাস্ক ভেদ করে হাসল চাচা।
- ভিক্টোরিয়ার সামনে অপার নির্জন পরিবেশ। এখানে পুরনো দিনের গল্প বেশ মানিয়ে যায়।
- রহিম বলে চলে:
- :যে কোঠিতে কোচওয়ান যেত তার বাবুকে নিয়ে, সেখানে ছিল হীরাবাঈ। সে সময় কলকাতায় হীরাবাঈ সেরা রূপসী। তেমনি নাচ।
তেমনি গান। কোমরের এক লচকের দাম দশলাখ। শরাবীআঁখে গুলাবিঠোঁট। সব রইস বাবুলোগ পাগল হয়ে গেছিল। যে কোনো উপায়ে হীরাকে হাতিয়ে নেবার ধান্দা করত। গোপনে সোনারমোহর, সোনারগয়না দিয়ে লোক পাঠাত তার কাছে। যদি সে রাজি হয়! মালিক সারাদিন চব্বিশঘন্টা নজরে রাখেন। বন্দুকধারী সিপাহী পাহারা দেয়। হীরার জন্য জান কবুল। ইজ্জৎ বেড়ে গেছিল সমাজে। ইয়ে দেখো দেখো, খাঁচায় আছে হীরাবুলবুল।
- রহিম বলে। চকচক করে চোখ। মানুষটার মধ্যে একটা কথক মন লুকিয়ে আছে। অথবা, আমার মত বেকার শ্রোতা পেয়েছে। রহিম বলে চলে,” বুঝলেন বাবুজী! এত পাহারা, এত প্রাণের ভয়,
- তার মধ্যেও হীরাবুলবুল গোপনে আশনাই করে ফেলল সারেঙ্গি ছোকরার সঙ্গে। সাদি করবে। কত স্বপ্ন। এমন বেয়াদপী বরদাস্ত করবে কেউ? কুনোদিন দেখেছেন, নর্তকী প্রেম করছে আর রাজা মেনে নিচ্ছে?
- ঘাড় নাড়লাম আমি। নাহ!
করেনি। কেউ করেনি। আনারকলি, ফৈজি–রাজার অহঙ্কারে ঘা দিয়ে কেউ রেহাই পায়নি। বলো চাচা। তারপর?
- : মালিকের বন্দুকের এক গুলি ফুঁড়ে দিল হীরাবাঈকে। সংসার নসিব হল না কারো। বাঈজির হল না। রানীর ও হল না।
দুজনেই চুপ করে রইলাম। মনটা কেমন হু হু করে উঠল। কেমন মায়াবী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। রহিম বলে কেউ আছে এখানে? ঝাঁকুনি দিয়ে ফিরে এলাম বাস্তবে।
: চাচা। পুরনো দিনের গল্প থাক।
কুসুমকুমারীর কথা বলো।
:বলব বাবুজী। ছেচল্লিশ সালের দাঙ্গার কথা বললাম আপনাকে? আব্বার ঘোড়া বাদশা সেদিন ঝড়ের মত তেজের সঙ্গে ছুটেছিল বলেই জান বেঁচে গেল মায়ের। কিন্তু, আমি আর বিজলি বাঁচাতে পারিনি কুসুমকুমারীকে।
:খুব জানতে ইচ্ছে করছে কেমন সেই মেয়ে?
- :পাহাড় ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা ঝর্ণা দেখেছেন কুনোদিন? একদম পাগলা করে দেবে। কুসুমকুমারীর রূপ দেখলে পুরুষের মন মাতাল
হয়ে যায়। বাইশ বছরের টগবগ জওয়ানী। তবে, আমি ওর মুখে খুঁজে পেতাম মায়া। নজর করে কোনোদিন ঘোড়ার চোখ দেখবেন। সে চোখে কত দরদ। কত মায়া। ও মেয়ের টানা টানা বড় বড় চোখের মধ্যে চালাকি ছিল না, বাবুজী। ছিল ভালোবাসা। একদম হামার বিজলির মত। যে মা ওকে বিক্কিরি করে দিল, যে বাবাকে ও চেনে না- তার জন্য ওর মায়া। মায়ামমতা থাকে না সক্কলের ভিতর। যার ভিতর থাকে সে ফারিস্তা। মানে জানেন তো? দেবদূত। পরী। ইয়ে
দেখেন পার্কস্ট্রিট? ইখানে হোটেলে নাচনেওয়ালি ছিল সে। ভাবুন একবার। পরীর মত মেয়ে হোটেলে নেচে যাচ্ছে। হায় নসিব। হায় আল্লা!
- রহিম হাহাকার করে উঠল।
- আমি বললাম,” তাই যদি বলো চাচা, তবে তোমার পরী নাচে কেন? ইয়ংমেয়ে। অন্য কাজ করত?
- রহিমের চোখে কি এক ভাব ঝলসে ওঠে। রাগ না অনুকম্পা? সে বলে,” আপনি কলকাতার কতটুকু দেখেছেন বাবুজী? ইয়ে জো ইলাকা হ্যায় না? ইয়ে অভি ভি
পুরানা জমানার কলকাতা। কুসুমেরমা , তার মা সব নাচনেওয়ালি ছিল। আর, না হলেই বা কি? এখানে একবার ঢুকে গেলে, নিজের ইচ্ছায় ছাড়া পাবে না।
- :ওক্কে বাবা। সরি। তারপর?
- রহিম হাসে। আজ থাক। নমাজের সময় হল। আসছেন তো আবার?
কুসুমকুমারী আর আমার মাঝখানে সাত সাতটা দিন। তিতিরকে ফোনে বলতেই হিংসুটে গলায় বলে উঠল:
: তুই কিন্তু গল্পে ঢুকে যাচ্ছিস রাতুল। তারপর দেখবি কুসুম তোর স্বপ্নে আসছে।
বাপরে। পারেও মেয়েরা। একদম ঠিক বলেছে। পরপর দুটোরাত। কুসুম আর আমি উদ্দাম সফর করলাম বিজলির সঙ্গে। সাদা ঘোড়ী, গলায় ঝুমঝুম মালা, বিয়ারের বোতল হাতে খিলখিল হাসির সুন্দরী। ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। চোখ খুললেই তো এই বেকার জীবন!
- বলো চাচা। এসে গেছি। তারপর
কি হল?
- :ফি শনিবার রাত আটটার পরে কুসুম চলে আসবে বিজলির কাছে। আসবেই। হোটেলের মালিকের হুকুমেই বড় কাস্টমারের সঙ্গে ইস্পেশাল সময় কাটাতে হত। রইস আদমি। পসন্দ করত টাঙাতে করে বেশ কিছুক্ষণ কাটাতে। কুসুমের শরীর হাতের মুঠোয় আর টাঙ্গা সফর,মাথার উপর খুলা আসমান, পাগল হয়ে যেত পুরুষ। অনেক বেশি ভাড়া দিত আমায়। এটাই চাইত কুসুম। আমি টাকা বেশি পাই। তাই ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানেই
নিয়ে চলে আসত। দেরি হলে ফোন করত:
- : চাচা। আছো?
- –আছি বেটি।
- –আসছি।
- ঠিক আসবে। একদম তুফানমাফিক। লাল হলুদ নীল রঙিন পোশাক। টাইট। রেশম কালো চুল। তারপর রানীর মত উঠবে টাঙ্গায়। সঙ্গে নতুনবাবু।
- :ফি শনিবার নতুন বাবু?
- :হা বাবু। কভি দেশি। কভি বিদেশি। কভি ছোকরা। কভি বুঢ়া।
- :খুশিতেই তো ছিল। তবে আর
এত কথা কেন?
- : আমি জানি, এটাই ওর কাজ। হোটেলের নাচনেওয়ালি। মালিক জবরদস্ত গুন্ডা। কুসুম আর ওর মা থাকে একটা ফ্ল্যাটে। শরীর বিক্কিরি করতে হবেই বাবুজী। খুন হয়ে যাবে না হলে। খুশি ছিল কি না জানি না, তবে নেশা করে চুর থাকত। এই ইলাকা তো পয়সাওয়ালা বাবুদের জমিন্দারি আছে। হোটেলে গিয়ে ফুর্তি করবে, মেয়ে তুলে আনবে, মস্তি করবে- দুশো বছর আগে আর এখন বদলেছে কিছু? মদ মেয়েমানুষ ফুর্তি – কিছু বদলায়
নি। বাবুয়ানি আছে। গুন্ডা গারদি আছে, কেবল ঘোড়াগাড়ির বদলে মোটর গাড়ি চলে এলো।
রহিম বলে:
:কুসুম আমার পরিবারের হিস্যা হয়ে উঠেছিল। তাই দুখ হত বইকি। কিন্তু কি করব বলুন? এই ই ওর জিন্দেগি! বুঝি, কুসুমের ভালো লাগেনা। ওতো সেজেগুজেও চোখের নিচে ঘনকালি। মুখে রক্ত নেই। এ চেহারা তখন হয় বাবুজী, যখন মন ভালো থাকেনা। ওর মন ভালো থাকতনা। একদিন বলল,
- :চাচা, তুমি বিজ্লিকে মুক্তি
দেবে? ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে?
- :কি করে বেটি? ওকে কিনতে একলাখ রুপেয়া লাগল। তারপর ও ই তো আমাকে খাওয়ায়।
- :আর বুঢ়া হলে?
- :ঘোড়া বাঁচে অনেকদিন কিন্তু দশবছরের বেশি কাজ করতে পারে না। তারপর, বেচে দিতে হয়। বিজলি হয়ে যাবে বাচ্চা পয়দা করার মেশিন। এহি জিন্দেগী বেটি।
- :তুমি বেচে দেবে বিজলিকে? দিও না গো। ও জানোয়ার হলে কি হবে? সব বোঝে।
- কুসুমের চোখ ছলছল।বুকে
গিয়ে বিঁধে গেছে কথাটা। গতর না থাকলে কার আর কী দাম আছে সংসারে?
- বলতে বলতে উত্তেজিত রহিম বলে ওঠে:
- : এরপর এক আজব কান্ড হল বাবুজী। যেন জাদু ঘটে গেল। ম্যাজিক। কুসুম ইবার একদিন করে বেশি আসতে শুরু করল। বুধবার।
- ****
- একটু থেমে মাস্কের নিচে থেকে কাগজের গ্লাসের চায়ে চুমুক মারে। শ্যামলী দিদিরা ফটাফট ছবি তুলছে। একবার এসে আমার ফটো
তুলল একখান। আমি পাত্তা দিলাম না। মন অস্থির। ম্যাজিক কি ঘটল?
- : ফি বুধবার কুসুমকুমারী একটাই বাবু নিয়ে আসতে লাগল। রোগা পাতলা চেহারা। মুখে নরমদাড়ি। চোখদুটো ভাসাভাসা। পোশাকে কোনো চেকনাই নেই। কুর্তা পাজামা আর ঝোলাকাঁধে। এরকম চেহারার লোককে বাবু বলি না আমরা, বলি ছোকরা। ঘন্টায় পাঁচশরূপেয়া দিয়ে বিজলির সওয়ারী হতেই পারবেনা। কুসুমের জেল্লার কাছে একদম ফাঁকাবাবু। গড়িতে উঠে সিগারেট ফুঁকবে আর
কবিতা বলবে। বললে বিশ্বাস করবেন না বাবুজী, কুসুমের মুখে আপনাদের দুর্গামাঈয়ের ছায়া পড়তে লাগল। খুশি খুব খুশি সে। ভিক্টোরিয়ার সামনে, গাড়ির মধ্যে বসে থাকত তারা। দু তিন ঘন্টা। হাত খুলে বকশিস দিত কুসুম। এক এক দিন ছোকরার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলত। ভয় করত আমার। হোটেলের কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। মালিক খারাপ লোক। টের পেলে খুন করে ফেলবে।
- –তুমি বুঝিয়ে বলো নি?
- –বলেছি। আমি বলেছি। আমার
বিবি বুঝিয়েছে। জান প্যায়রি হ্যায় তো ছোড় দে গরীববাবু কো।
- –কি বলত উত্তরে?
- –নিজের মাকে গালি দিত। সেও ছিল নাচনেওয়ালি। বাবা ছিল কি না, জানত না কুসুম। মা নাকি ওকে বেচে দিয়েছে। কুসুমের টাকায় আরাম করছে মা।
- বলতে বলতে চোখ নিচু করে রহিম। আমিও ঝুম মেরে থাকি। চোখে পড়ে ভিক্টোরিয়া। মাথার উপর পরী আর ঘোরেনা। এক সময় বাতাস বইত কলকাতায়। পরী ঘুরত। কেউ কেউ শুনত বাঁশির
সুর। বাতাস যেন অনেকটা ভালোবাসার মত। যেমন , কুসুমের জীবনে এলো সুকুমার চক্রবর্তী। অসম্ভব বেমানান একটা নামের মতই লোকটা অতিসাধারণ। শহরতলীর ছোকরা কবি। সে কি করে পার্কস্ট্রিটের আলো ঝলমল হোটেলে গিয়ে পড়ল সে খোঁজে দরকার নেই। প্রেমেরদেবতা কখন কার দিকে পুষ্পধনু তাক করবেন, সে খবর কেউ রাখে না।
কুসুম পাগলের মত ভালবাসত। গয়না টাকা নিয়ে সুকুমারের একতলা ছোট্ট বাড়িতে কিছু কিছু
রেখে আসত। ব্যবসা করবে সুকুমার। সংসার করবে তারা। নাচ ছেড়ে দেবে কুসুম। দুজনে হাত ধরে ভিক্টোরিয়ায় ঘুরত। রহিম আর বিজলি অপেক্ষা করত। ভয় করত। ভীষণ ভয়। ধনীমালিক জানতে পারলে …! কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে, দুদিকে গভীর খাদ। অথচ, কুসুমের মুখে বিন্দাস হাসি। সন্ধ্যারাতে জোছনা পড়ে সে হাসি আরো অলৌকিক। মোহময়। মনে হত, প্রাসাদের চূড়ার উপর থেকে নেমে এসেছে পরী।
- রোদ্দুর কমে বিকেল নেমে আসছে। ডুবন্তসূর্য রক্তিম আদর ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদায়কালে। শ্বেতমর্মর প্রাসাদ, সবুজ ঘাস, অপেক্ষামান ঘোড়া সব মিলিয়ে যেন ছবি। বলো চাচা, কি হল তারপর?
- বিষণ্ণ চোখ তুলে রহিম বলে: :
- :যা হবার তাই ই হল। সেদিনও বুধবারের রাত। টাঙ্গায ওরা দুজন। সুকুমার আর কুসুমকুমারী। ঘুরপাক খাচ্ছি ওদের নিয়ে। টুকরো টুকরো কথা, হাসি কানে আসছে।
কোথায় ঘুরতে যাবে, কি করবে, বাচ্চা পয়দা করবে- একদম বিভোর হয়ে আছে দুজনে। এমন সময় ওরা এলো। হায়নার মত গন্ধ শুঁকে শুঁকে ঠিক এসে দাঁড়ালো আমার টাঙ্গার সামনে। কালোগাড়ি। কলোপোশাক। চার আদমি। মুখে একটাও কথা নেই। নেমেই আমাকে মারল জোরে। রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। বিজলি জোরে জোরে পা ঠুক ছিল। দু একজন নিজের লোক এগিয়ে এলো কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না।
- হাহাকার করে ওঠে রহিম:
- :বাবুজী, ওরা একদম পেশাদার গুন্ডা। গাড়ির ভিতর বসে ছিল মালিক। এক সেকেন্ডের মধ্যে কুসুম আর সুকুমারকে গাড়িতে তুলে ফেলল।
- –তারপর?
- –আজ তক খবর নাই। করোনা এলো। আমফান ঝড় এলো। আমরা গরীবলোগ। একদম শেষ হয়ে গেলাম। ফোন করেছিলাম তবু। বন্ধ ফোন।
- চিকচিক করে এলো চোখ। দোয়া করি বাবুজী। রোজ করি। গরীব
আদমি। দোয়া করতে পারে কেবল। বিশ্বাস করি, মন দিয়ে ডাকলে আলোর মত নেমে আসেন ফরিস্তা। ঠিক আসবেন , দেখবেন বাবুজী। খালি হাতে কেউ ফিরে যাবে না দুনিয়া থেকে। খোদা মেহেরবান।
- সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কাজ শেষ আমাদের। দূরত্ব বজায় রেখে যে যার গাড়িতে উঠছে। আমিও তো যাব। কি মনে হতে, তাকালাম পরীর দিকে। কলকাতার বুকের সেই সর্বনাশা ঝড়ের তাণ্ডবের রাতে না কি ঘুরে উঠেছিল পরী? আবার
আগের মত উজ্জ্বল হয়ে মেলে ধরেছিল নিজেকে? শুনেছিলাম এরকম কিছু। বিজলি পক্ষীরাজ নয়, সুকুমার রাজপুত্র নয়। জীবন রূপকথা নয়। তবু, কে বলতে পারে ম্যাজিক ঘটবে কি না? ভিক্টোরিয়ার পাশ দিয়ে কুসুমকুমারী আবার বিজলির সঙ্গে ঘুরে বেড়াবে কিনা? হতেই হবে। না হলে নতুন গল্পের জন্ম হবে কেমন করে?
- খোদা মেহেরবান।
জন্ম কলকাতায় হলেও কাজের সূত্রে ঘুরে বেড়াতে হয় দেশ বিদেশে। কখনো আমেরিকা তো কখনো থাইল্যান্ড কিংবা লন্ডন। আদতে নিজেকে ভ্রামণিক বলতেই ভালবাসেন। মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করা যদি পেশা হয় তাহলে নেশা হলো নানান বিষয়ে লেখালেখি। গল্প,প্রবন্ধ ও পৌরাণিক চরিত্র কথনের আঙিনায় অবাধে বিচরণ করেন তিনি। রামায়ণ ও মহাভারতের চরিত্র বিশ্লেষণে বিশেষ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অল্প সময়েই। পেশার চাপ সামলেও কলকাতার বহু নামী পত্রিকায় লেখেন নিয়মিত। এছাড়াও লেখেন নানান ওয়েব পত্রিকায়। প্রকাশিত বই “সুপ্রভাত বন্ধুরা”, “ব্রহ্মকমল”, “দ্রৌপদী” ও “ছয় নারী যুগান্তকারী”। শেষোক্ত বইটি ২০১৯ এর বইমেলায় পত্রভারতীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়ে অল্পদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশ পত্রিকার অনুগল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম দশজনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। টার্মিনাসের তরফে পেয়েছেন পুরস্কার। আমন্ত্রিত অতিথিরূপে সম্মাননা পেয়েছেন ত্রিপুরায় দুই বাংলার সাহিত্য শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন স্কুলে মহাভারত নিয়ে বক্তব্য রাখার ডাক পড়ে মাঝে মাঝেই।
কাজ করেন মূলত মানুষের মন নিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জীবনের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অনুপ্রেরণা দেয় প্রতিনিয়ত।