এই দিনে: অজিত রায় ভজনের একগুচ্ছ ছড়া
আজ ৩০ এপ্রিল ছড়াকার অজিত রায় ভজনের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
মায়ের ছেলে
যুদ্ধে যাবো বিজয় পাবো
এমনি করে পণ,
স্বাধীন দেশে গর্বে হেসে
কেটেই যাবে ক্ষণ।
মায়ের ছেলে সবটা ফেলে
অস্ত্র তুলে হাতে,
যুদ্ধে চলে ‘জয় মা’ বলে
আঁধার কালো রাতে।
ন’মাস শেষে সূর্য হেসে
আলোক দিয়ে কয়,
বাংলাদেশে বীরের বেশে
আসলো প্রিয় জয়।
যুদ্ধ গেলো বিজয় এলো
মায়ের ছেলে কই?
দু’চোখ বুজে ছেলের খুঁজে
অশ্রু ঝরে ওই।
স্বাধীনতার গান
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে
মুক্ত করে দেশ
নীল আকাশে কেতন খানি
উড়ছে দেখো বেশ।
মা’র ললাটে সিঁদুর যেনো
সবুজ মাঠে হাসে,
স্বাধীন এদেশ তাইতো সবে
যায় রে ভালোবেসে।
দেশের লাগি এমন করে
মায়ের ছেলে সবে
যুদ্ধ করে চলছে আজো
এমনি তাঁরা ররে।
দেশ পাহারা দেয় তো তাঁরা
রাখবে তারই মান
আনন্দে আজ গায়রে সবে
স্বাধীনতার গান।
পৃথিবী হাসবে আবার
পৃথিবী হাসবে আবার, নতুন ভোরে,
ভাঙ্গবে জানি রে ঘুম, পাখিদের সুরে।
সূর্য হাসবে ঠিক, রক্তিম রঙে,
আলো-টাও নাচবে রে, আপন ঢং-এ।
সোনালী ধানের ক্ষেতে, লাগবে দোলা,
হাওয়াতে উড়বে কত, শিমুলের তুলা।
নদীতে পানসী যাবে, রঙিন পালে,
গাইবে ভাঠিয়ালী, মাঝি সুরে তালে।
আবার হাসবে চাঁদ, তারাদের সনে,
ডাকবে ঝিঁঝি পোকা, বাঁশেরই বনে।
আসবে আবার ঠিক, হাসি মাখা দিন,
দুঃখটা হারা হবে, ব্যথা হবে লীন।
আবার খেলতে যাবো, সকলেই মাঠে,
আনাগোনা ফের হবে, গেরামের হাটে।
জীবাণু-রা হেরে গেলে, সব হবে ঠিক,
পৃথিবীটা জেগে উঠে, শুধু হাসি দিক।
ঈদ
উৎসবে আজ পড়ল ভাটা
মনে,
হয় না দেখা প্রিয় স্বজন
সনে।
কাউকে দেখি নিচ্ছে না কেউ
বুকে,
আনন্দটা ভরল এবার
দুখে।
পুত্র থেকে বাবা অনেক
দূরে,
বুকের মাঝে রইল ব্যথা
জুড়ে।
মাকে ছাড়া করবে এবার
ঈদ,
এই কথাটি কাটছে বুকে
সিঁধ।
শুভেচ্ছাটা দিচ্ছে সবাই
ফোনে,
দুঃখ জমা রইল বুকের
কোণে।
আবার কবে আসবে ফিরে
দিন,
বাজবে কবে মিলন দিনে
বীণ?
লঙ্ঘিত মানবতা
দিল্লিতে হচ্ছে কি?
মানবতা লঙ্ঘিত,
গান্ধী-র দেশে আজ
হিংসে-যে সঙ্গী-তো।
মানুষেরা খুনে লাল
রাজপথ রঞ্জিত,
বলি ছেড়ে ওসব-রে
মানবের মন জিত।
মানুষের পরিচয়
সত্য-রে কর্মে,
বিভাজন কেন তবে?
আজ করো ধর্মে ?
জয়গান গাও সবে
মানবতা ঊর্ধ্বে
সবে মিলে শান্তির
নতুন এক ভোর-দে
শীতের ফুটপাত
ফুটপাতে মা ঘুমিয়ে আছে
জড়িয়ে ছালা গায়
দুধের শিশু মায়ের বুকের
উমটা নিতে চায়।
দিনের আলো কোথায় গেলো
কই লুকালো রবি?
কুয়াশারই চাদর যে গায়
এইতো শীতের ছবি।
মায়ের বুকে ঘুমায় খোকা
শান্ত যেন শীতে
গরম কাঁথা নেইতো কাছে
আসবে কে-বা দিতে!
কেমন থাকে গরিব দুখি
দেখতে হলে আয়
ফেলনা গরম জামা তোরই
দিস রে তুলে গায়।
পৌষের পিঠে
কলি পলি রুমা ঝুমা
আয় ছুটে সবে
পৌষের সকালেতে
পিঠে ভোজ হবে।
কাল রাতে দিদি ও মা
কুটেছিলো চাল
নারিকেল কুরায়ে যে
ভরেছিলো থাল।
ছাকা তেলে ভাজা হবে
লুচি আর পুরি
আনন্দে মুখে দেবে
সুমা সুমি নূরী।
আয় না রে তোরা সবে
হাসি গানে রই
এই শীতে মজা হবে
বন্ধুরা কই!
দেখবি যদি আয়
শরৎ এলো মন রাঙাতে
রূপের ছবি গাঁয়
নীল সাদারই চাদরখানি
গায় জড়াবি আয়।
বাংলা মায়ের মিষ্টি হাসি
রোদের লুকোচুরি
দু’চোখ ভরে দেখবি ওরে
ইচ্ছে মতো ঘুরি।
সবুজ মাঠে হেমন্তেই
আসছে ভেসে সুর
মনযে তোরই হারিয়ে যাবে
ভাবের সমুদ্দুর।
এমন দিনে আসছে রে মা
দেখবি যদি আয়
অঞ্জলীতে ভরিয়ে দিবি
সময় চলে যায়।
মাগো
অসুর বিনাশী মাগো
তুমি দশভূজা
বিল্বপত্র ফুলে
করি যশ পূজা।
দূর হোক অনাচার
আগমনী সুরে
শান্তির বারিধারা
থাক মন জুড়ে।
দুখিজনা হাসে যেন
মাকে পেয়ে তাই
তোমার মহিমা আজ
সবে মিলে গাই।
মাগো তুমি ধরা ধামে
এসো বারে বার,
বুকে নিও টেনে তারে
সুখ নাই যার।
পূজোর স্মৃতি
সেই সে দিনে কখনও যে
যায়না ফেরা আর
সোহাগ মাখা বাবার বকুন
আদর খানি মার।
একই রঙের কাপড় জামা
জড়িয়ে দিয়ে গায়
মণ্ডপেতে ঘুরে ফিরে
সময় যেতো হায়।
চুলের ফিতা পায়ের জুতা
এক যে হওয়া চাই
হারিয়ে গেলো সেদিন কোথা
আরকি ফিরে পাই!
পূজো এলে স্মৃতির ঘরে
মনটা চলে যায়
ভুলতে আমি চাই না যে তা
থাক সে মনের ছায়।
দুর্গাপূজো
অসুর যতো আনন্দে আজ
হাসছে রে
বৈরী হাওয়ায় কেমন করে
ভাসছে রে।
আজ আকাশে মেঘ জমেছে
বড্ড কালো
দাও জ্বালিয়ে মাগো তুমি
সকল আলো।
অনাচারি দমন করো
খড়গ হাতে
যাকনা চলে ভয় ও ভীতি
আঁধার রাতে।
হাসি খুশি দাও ভরিয়ে
সকল প্রাণে
একই সুরে মিলুক সবে
আজকে গানে।

ছড়াকার