ঋজুরেখ চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ

Reading Time: 2 minutes

আজ ৬ জুলাই কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তীর জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


অগ্নিবর্ণা, তুমি: ১০ 

অন্ধ রাত কুসুমপ্রসব সেরে নির্বীজ ঘুমোয়।

অনৃত অঞ্জলি পেতে বসুন্ধরা পিপাসায় মুগ্ধ বেঁচে থাকে।
তবুও গৃহাভিমুখী ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলে
যে-বিষাদ আড়ালে ঘনায়, আর
যে-আড়াল বিষাদের আত্মকথা শোনে কান পেতে,
অগ্নিবর্ণা,
তুমি সেই চিন্ময় সত্যের রূপ।

অগ্নিবর্ণা, আজ আর একা রাতে একা একা
প্রলয় ঠেকিয়ে রাখা খেলায় মাতি না।
বিপন্ন সৃষ্টির সুখ-
সেও এক স্বচ্ছতোয়া আদিম প্রবাহ, যার
শিরা-উপশিরাগুলি দেখা যায় সমর্পণ সাঙ্গ হয়ে এলে।
অনঙ্গ আশ্লেষ তবে কার কাছে ঋণী, তুমি বলো?

অন্ধ রাত কুসুমপ্রসব সেরে নির্বীজ ঘুমোয়।
আমি ও আমার বোধ, কে কার শিকার হবে, তূণীর জানে না।

 

 

বলো দেখি

ধরা যাক, এই মরপৃথিবীতে কোথাও কারুর কাছে তোমার কোনও ধরনের কোনও জবাবদিহির দায় নেই, এমনকী নিজের ছায়ার কাছেও না।

ধরা যাক, তোমার পা-দুটি ভূমির সঙ্গে সম্পূর্ণ সমকোণে রেখেও তুমি প্রণত হতে পার।

কিংবা ধরা যাক, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তুমি আবিষ্কার করলে তোমার যাবতীয় চিন্ময় স্ববিরোধ চকিতে উধাও হয়ে গেছে, এবং তোমাকে দেখতে হয়ে গেছে এক মৃন্ময় বিগ্রহের মতো অপরূপ।

এবার বলো দেখি, এই তিনটের মধ্যে কোন সম্ভাবনাটা বাস্তবায়িত হলে তুমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে?
মনে রেখো, ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলে বুঝতে হবে তোমার ভেতরে একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনি বাস করে, আবার উত্তর দিতে না পারলেও সেই একই।

অ্যান্ড… ইওর টাইম স্টার্টস নাও।

 

 

অকালবৈভব

প্রবীণ বনস্পতির কাছে তুমি লিখে রেখে এসেছ তোমার বিহঙ্গজন্মের স্মৃতিকথা, দুর্গম পাহাড়ি পথের কাছে লিখে রেখে এসেছ অশ্বজন্মের অভিজ্ঞতাগুলি, আর সমুদ্রের কাছে ডলফিনজন্মের। মাইল মাইল রেগিস্তান পেরুনো তোমার এখনও বাকি। প্রকৃত সারসের কাছে সারসের মতো গিয়ে তুমি পৌঁছাতে পারনি এখনও। মাঠের পর মাঠ হাওয়ার গতিতে পেরিয়ে গিয়ে লুণ্ঠন করে আনতে পারনি সাত রাজার ধন। নুলিয়া হয়ে উদ্ধার করতে পারনি কোনও ডুবন্ত দেবদূতকে। ভুবনজোড়া ত্রিলোকের অনিন্দ্য কোনও সুন্দর কেন তাহলে তোমার ওপর ভরসা করবে, তুমি বলো?

অথচ, দেখো, এরই মধ্যে তাকে ঘিরে, তার সুরের ডানায় ভর দিয়ে উড়তে উড়তে, তার হিরণ্ময় স্বপ্নগুলিকে পৌনপুনিক জাগরণের মতো ধাওয়া করতে করতে, তার একান্ত কান্নায় স্থির নিশ্চুপ বহে যেতে যেতে, আর তার জলপ্রপাতের মতো উচ্ছল হাসির কুচিগুলো নুড়ি পাথরের মতো কুড়োতে কুড়োতে কত অনায়াসে তুমি সহস্র আলোকবর্ষ পার হয়ে এসেছ! আর তারপর সাবলীল অমোঘতায় রাত নেমেছে শুনশান শীতের অরণ্যে, রাত নেমেছে খাদের ধারের আচমকা বাঁকের মুখে, রাত নেমেছে চলমান মুহূর্তের ঊর্মিমালার শিখরে শিখরে, রাত নেমেছে অকালবৈভবে। একা রাত। আশ্লেষী রাত। একা অথচ আশ্লেষী রাত। তার বিরল স্বেদবিন্দুগুলির নাতিশীতোষ্ণ ঘ্রাণের মতো নেমে এসেছে রাত।

এইসব এত এত পরাজয়, আর এই এত এত জয়, অথচ আজ অবধি কোনটা জয় আর কোনটা পরাজয় সেটুকুও তুমি নির্ণয় করে উঠতে পারলে না? শেষমেশ এই না-পারাটুকুই কি তোমার একমাত্র অবলম্বন?

 

 

অক্ষত্রিয়

সাজিয়ে নিলাম আধচেনা এই বাসা
প্রতীক্ষা এক স্বপ্নযাপন পথ।
হিরণ্যকায় মৃগের জিজ্ঞাসা–
চলৎশক্তি? তোমারই তো অভিমত।

তোমারই আলোয় অসম্ভবকে চেনা।
আশেপাশে যত ধ্বংস মৃত্যু দ্বেষ —
সে-দায় আমার, সে-পাপ আমারই দেনা।
সৃষ্টি নিজেরই নারকীয় অবশেষ।

অরণ্যে আজ বীর নেই কোনও আর,
অক্ষত্রিয়ের আধখানা কথা রাখো।
আধচেনা এই বাসায় পুরুষকার–
প্রেমে ও স্বপ্নে দোদুল্যমান সাঁকো।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>