একগুচ্ছ কবিতা
ছিঁটেফোঁটা-১
_____ তোমাকে লিখছি দেখে আমার তো সময় হচ্ছে না নাওয়া খাওয়া বাকি পড়ে যায় সংসার কি এতো হেলাফেলা নেয়? হেরে আছে মানুষ কোথাও, বিকেলের ছাদে সেখানে কথা নেই, কেবলই হাওয়া বৃত্তাকার ঘোরে যেখানে মৃত্যু নেই, খিলখিল শোনা যায় শুভ-সন্ধ্যায় আমার যেটুকু ভালো জেগে আছে তোমার খাতায়, তার দিকে ছুঁড়ে দাও পাতার বাঁশিটি অবিকল তোমার মত সুরে আমাকে উপেক্ষা করে যাক!
ছিঁটেফোঁটা-২
______
কতবার পালিয়েছি ঘর থেকে দুপুরের রোদে ভিজে, সন্ধ্যা ছুঁয়ে পেরিয়েছি ইছামতী! মনে নেই কেউ জানে না সে প্রতিবিম্ব হারা দিন, পাথরের গল্প। সারাবেলা খুব চুপ, তক্ষকের ডাকে সাড়া দেবার বাহানা, ছিল মাগরিব পুরোনো নিশ্বাস নিয়ে জ্বলে গেল আগুন-প্রদীপ, খুব চুপচাপ।
স্ব-বাহন
——–
নিজেকে আমি সহজে বয়ে চলি
যেমন রাত আঁধার টেনে চলে!
যেমন করে ভোরের আলো ছোটে
দীঘির জলে মেঘের ছায়া ফোটে
আমাকে আমি সহজে টেনে যাই
ট্রেনের বগি যেমন বহু দূরে
যাচ্ছে টেনে মানুষ মহাকাল
একটু থামে গতিরোধক বাঁকে
একটুখানি জিরোয় পথ-শেষেতোমাকে আমি সহজে বয়ে চলি
দৃশ্যহীনে অদৃশ্য সে থাকা
যেমন থাকে পথের পাশে নদী
নদীর জলে অকূলতার রেখা
রেখার মাঝে গোপন কোন মীন
ঢেউয়ে করে জীবন পাড়ি দিয়ে
কোথায় যাবে জানে না সে নিজে
আমায় আমি, তোমায় আমি মিলে
নীরব কোন দিনের শেষে থামি
তোমার সাথে বদলে ফেলি চোখ
কেবল থাকা, শুধুই থাকা হোক

ছিঁটেফোঁটা-৩
_______
মনে খারাপের গান আজতক নেয়নি কেউ
কিছুটা শুনেই চলে গেছে পাহাড়
সন্ধ্যার দিকে মুখ ফিরিয়ে সমুদ্রের সাথে গল্প তার…নগ্নগাত্রে ধূলো, উল্কি আঁকার ইচ্ছেটাও ফাঁকা পড়ে আছে
ইচ্ছেহতের গল্প আর শুনতে চায় না কোন পাখি
চোরা ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে সে ডানা
ইশারা শরীরে গজিয়ে উঠছে অবহেলা গাছ
পরাগায়নের দিন ইতস্তত উড়ে যায়
বিদায়! হে বাহুলগ্না রাত
আমার নালিশে কার মগজ থেকে দীর্ঘ
ছুটিতে বাঁশি বেজে ওঠে!মন খারাপের সাথে আড়াআড়ি শুয়ে থাকি
জাতে-পাতে দৈনন্দিন যুগল মত্যুর ইন্ধন থেকে
লং-শটে ভাগিয়ে দিচ্ছি নিজের ব্যবহার্য শরীর।


চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেওয়া রিমঝিম আহমেদের কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। বিচিত্র রূপক-প্রতীকের ব্যঞ্জনায় বহুমাত্রিক ইশারার মাধ্যমে সময়কে স্পর্শ করতে আগ্রহী এই কবি। ২০২০ এ প্রকাশ পায় প্রথম উপন্যাস ‘বিস্ময়চিহ্নের মতো’।