| 29 মার্চ 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

ঋতুজ দহন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আমার কাশ,

এমন গ্রীষ্মের দুপুরে তুমি আসতে। নিভৃতে মোরাম বিছানো পথ বেয়ে রিক্সার পরিচিত হর্ণে  বেরিয়ে আসতো রিক। প্রভু না হলেও বুঝে গিয়েছিল ইনি  হলেন প্রভুর প্রভু। গেটের দুপাশের কমলিলতা বটল ব্রাশও মাথা নুইয়ে বলত এসো, এসো শিল্পী। গম্ভীর অমলতাস নীরবে দেখতো গ্রীষ্মের ঝুরঝুরে পাতার খসে পড়া রাস্তায় তোমার নীরব প্রবেশ। তেরাকোটা রঙে  জ্যামিতিক নক্সা কাটা পর্দা আপনা থেকেই উন্মুক্ত করে দিত অন্দর আড়াল। তুমি যে হৃদয়ের ঘরেই বসত করতে, সেই কুঠুরিতেই আমার লাব ডুব কেবল দিন রাত পালস অক্সিমিটারে ওঠা পড়া করতো, এই জোড়াতালি সমঝোতার জীবনে   হেঁটে আসা এক টুকরো অমল আলো তুমি ছাড়া আর কেই বা ছিল!

রিক এসেই কোমর জড়িয়ে ধরতো তোমার, একটু পাশ থেকে ভাবতাম আমি কেন পারিনা এমন সহজ হতে! আমার যার কাছে সহজ হবার কথা ছিল, সে হয়ে গেল কঠিন, আর যে ছিল কঠিন তাঁকে পাবার জন্যে কি আকুলতা। দারুচিনি রঙের স্তন বৃন্ত হয়ে উঠতো  দৃঢ উন্মুখ। ভোরের অমল  অনাঘ্রাত ফুলকলির মত। জোভান মাস্কের সুরভিত গন্ধে মাখামাখি হয়ে যেত  শরীরের অজানা কোণগুলি–বেজে উঠত তার সপ্তকের, পুরিয়া ধানেশ্রীতে তুমি যখন মীড় লাগাতে,  কালবৈশাখীর দিনে মিশ্র রামকেলীতে মেঘ রাগ, শরীরী না হয়েও কি আশ্চর্য স্পর্শকাতর- হয়ে উঠত দেহের প্রতিটি কোষ তা তুমি জানো না, আসলে তুমি শিল্পী এমন পূজোতেই  অভ্যস্ত! কিন্তু আমি…।

এলোমেলো বইঘরে এলোমেলো কবিতার খেলা, ওই উষ্ণতম দিনেও বাজতেন নিজের মনে নিচু স্বরে বিলায়েত খান- দরবারী কানাড়ায়- ধুলো জমা বইতে হাত দিতে তুমি আর সেই ধুলি কণা আমি আর মুছতাম না রেখে দিতাম পরে মাথায় নেব বলে! এ জন্মে আমি ইবাদতের আসনে বসতে পারিনি, যদি পরের জন্মে আবার বাঁশিতে সুর ওঠে, আমরা আবার  বইঘরে মিলতে পারি, নন্দিনী আবার জেগে উঠবে শিল্পী।

সে গ্রীষ্ম আর নেই,  নেই চালতা মাখা হলুদ দুপুর। লাল ফিকে আলোর শার্সিতে ধুলো জমে উঠেছে ক্রমশ!  পথ,  লাল মাটি, খোয়াই  পেরিয়ে আমি এখন  কংক্রীটের খাঁচায়  আলো দেখি, পৃথিবীর সব থেকে সুসভ্য দেশের আকাশের আলো দেখি বাতাস নিই, আমার সমঝোতা এক্সপ্রেস এবার অনেক দুরের পথে নিয়ে এসেছে।  তবু থেকে গেছে সেই বাড়ী, সেই অবকাশ, সেই বইঘর। শুধু  নেই তুমি আর আমি। ফিরবে কি আবার  নিভৃতে ওই পথে কোনোদিন? পথভুলেই নয় একটি বার
ফিরো।  তাহলে একটি বার   ডাক দিও শুধু! আমি যে আমৃত্যু তোমার অপেক্ষায় আছি।

আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, তুমি অবসর মত বাসিও

তোমার গন্ধবিহীন
পলাশ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত