[ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত দহন ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি বিখ্যাত সিনেমা। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে কবি ও গদ্যকার ইমরুল হাসান দহন বিষয়ক একটি গদ্য লিখে পোস্ট করেছিলেন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে। সেখানে গদ্যকারের একটি নিজস্ব অবস্থানের দেখা মেলে সহজেই। তো গদ্যটি নিয়ে পাঠকদের ভিতর একধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। যা সাহিত্যিক চিন্তার জায়গা থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোধ করি। গদ্য ও প্রতিক্রিয়াগুলো একসাথে পাঠ আরও কিছু নতুন চিন্তার জন্ম দিতে পারে। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য সেই লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো ঋতুপর্ণের প্রয়াণ দিবসে। ]
এইটা একটা সাংবাদিকতামূলক সিনেমা। মানে, সংবাদপত্রের নিউজ কিরকম হওয়া উচিত এইরকম সাজেশন ছাড়াও, দেখানোর ভঙ্গিমাটা- ইনডিভিজ্যুয়ালের গল্প এবং সাধারণের আবেগ, ফ্যাক্টস-অনুমান-নৈতিক সাজেশন এইরকম যে একটা ফর্মেশন সংবাদপত্রের/টিভি নিউজ/ভিউজের, সেইটা আছে। হইতে পারে যেহেতু কাহিনিটা নেয়া হইছে পত্রিকার নিউজ থিকা, এর প্যার্টানটাও বাই ডিফল্ট কিছুটা এমবেডেড হইছে। কিন্তু এর এসথেটিক্যাল আলোচনা দিয়া ত এর যে ইথিক্যাল আর্গুমেন্ট তারে এড়ানো যায় না।
এর যে ইথিক্যাল ইমপ্লিকেশন টু অডিয়েন্স সেইটা জাস্ট অ্যা পজ, একটা বিরতি’র মতো। কলকাতা শহরের মধ্যবিত্ত সমাজের সেক্সচুয়াল সিচুয়েশনের সম্ভাব্য সব এলিমেন্টই দেখানোর চেষ্টা হইছে যে, ‘নারী-কল্পনা’ই কিভাবে নারী’রে আরো বেশি কইরা ‘নারী’ বানায়া দিতেছে। কি কি ধরণের অবজেক্টিফিকেশন ঘটতে পারে এই সাবজেক্টের, তার ডিটেইলিংটা আছে।
যেহেতু আর্ট হিসাবে সিনেমাটা তার অডিয়েন্সরে ইথিক্যালি এনগেজ করতে চায়, এইটা নতুন কোন ইথিকসের দিকেও নিয়া যাইতে পারতো। আসলে সমস্যাটা ত সবসময় ফিনিংশটা নিয়াই যে, কে কিভাবে দ্য এন্ড করতেছে। একটা ইথিক্যাল ইস্যু’র সলিউশন ঋতুপূর্ণ ঘোষ দিতেছেন প্রচলিত এসথেটিক্যালের প্যার্টানের ভিতর যেইটা দিয়া উনার ইথিক্যাল ইন্টারভেনশনটা আন্ডারমাইন্ড হইছে।
কিন্তু অ্যার্পাট ফ্রম দ্যাট, দর্শকের ‘চেতনা জাগ্রত করার’ যে মিশন ঋতুপূর্ণ ঘোষ নিছেন, সেইটাতে উনি সাকসেসফুল হইছেন। বিশেষ কইরা একটা সিনে উনি ত খুবই ক্লোজ, যখন হ্যাজব্যান্ডটা বউ’রে রেইপ করে, সে একইরকমের অবজেক্টিফিকশনের ভিতর দিয়াই ব্যাপারটারে সম্ভব কইরা তোলে, যেইটা মেট্রো-রেলষ্টেশনে’র তরুণেরা কইরা উঠতে পারছিলো।
যে কোন ধরণের রেইপের জন্যই এক ধরণের অবজেক্টিফিকেশন জরুরি। একটা সাবজেক্টের বিভিন্ন পরিচয়ের পারসপেক্টিভে এই অবজেক্টিফিকেশনগুলা ঘটে। সিনেমার মূল ঘটনাটাতে, কলকাতার মেট্র্রো-ষ্টেশনে কয়েকজন তরুণ একজন নব-বিবাহিত নারী’র শ্লীলতহানির (ওয়ানস এগেইন, এই শ্লীলতা জিনিসটা অ্যাজ অ্যা হোল ক্রিটিক্যাল করা হয় নাই। বলা হইছে, কতটুকু শারীরিক অভিঘাতরে আমরা শ্লীলতাহানি বলবো, মানে এইটা নিয়া কেন আমরা কথা বলবো না? কিন্তু নারীর শ্লীলতা কেন এত জরুরি একটা বিষয়, এই জায়গাটা মিসিংই ছিল।) চেষ্টা যখন করছিল তখন আরেকজন তরুণী আইসা তারে উদ্ধার করে। এই জায়গাটা সিনেমাটাতে যেইভাবে দেখানো হইছে তাতে দুইটা পর্যায়ে অবজেক্টিফিকেশনের ঘটনাটা ঘটে- প্রথমত, পরমা যখন সাইড চায় রাস্তায়, এক্সকিউজ মি বইলা। এইটারে এক ধরণের প্রভোকেশনের ভিতর দিয়া দেখা সম্ভব। নরমালি কি হয়, ‘নারী’ ত অ্যাপ্রোচ করে না, চুপ কইরা দাঁড়াইয়া থাকবে, তা না হইলে স্বামীরে কইবো, ওদের কে একটু সরতে বলো না (‘গো’ও অ্যাড করতে পারে, নট অ্যাজ গরু অবভিয়াসলি, অ্যাজ টু এনসোর হিজ ওনারশিপ আপন হার) বা যা-ই বলুক আগে ভাইয়া বইলা নিতে পারে; ভাইয়া / দাদা একটু জায়গা দেন, যাবো (অবশ্যই ভিখারীর মতোন না, ভগ্নী-ভাব জাগ্রত করে)। কিন্তু সে ‘পুরুষ’ এর মতো কথা বইলা উঠে এবং সেইটা ইংরেজীতে। হাউ অ্যারোগেন্ট। একজন নারী এবং শি ক্যান স্পিক আউট লাউড! এইটা আবশ্যিকভাবে তার নারী-পরিচয়ের একটা ডির্পাচার। অবজেক্ট হয়া উঠার সম্ভাবনা।
দ্বিতীয়টা আরো মারাত্মক, সঙ্গে স্বামী থাকাটা। বিয়া জিনিসটার সোশ্যাল মিনিং ত হইলো, সেক্সচুয়াল অ্যাক্টিভিটি’র অধিকার। স্বামী-স্ত্রী মানে আমরা দুইজন একসাথে সেক্স করতে রাজি আছি। তার যে স্বামী আছে এই পরিচয়ের মানেই হইলো, তিনি সামাজিকভাবে সেক্স করার অধিকার অর্জন করছেন। তার সাথে বাপ বা ভাই থাকলে, নারী’রে যে সেক্সচুয়াল অবজেক্ট হিসাবে ইমাজিন করা যাইতো না তা না, তার সেক্সচুয়াল পরিচয়ে মালিকানাটা ‘ভোগ-দখল’ এর চাইত ‘হেফাজত’ এর দিকে ঝুইলা থাকতো একটু বেশি। যিনি স্বামী তিনি রক্ষা করেন তার মালিকানার এক্সক্লুসিভনেস ধইরা রাখার জন্য। বাপ ভাই তারে হেফাজত করে ‘সম্পত্তি’রূপে। মানে, চিন্তার দিক থিকা এইটা ‘দাস’ এর চাইতে ভিন্ন কিছু না, এক্সচেইঞ্জের প্যার্টানটা এখনো স্টক মার্কেট পর্যন্ত যায় নাই আর কি।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, মলেস্টেশনের ঘটনাটা এই কারণেই ঘটছে, কিন্তু এই জায়গাগুলা থিকাই এক্সপ্লোরড হইছে বইলা সিনেমাটা দেইখা আন্দাজ করা যাইতেছে। একটা সাবজেক্টরে কি কি ভাবে তার একগজিসটেন্ডের বাইরে গিয়া কল্পনা করা যাইতেছে। সাবজেক্ট > অবজেক্টিফিকেশন > সাবজেক্ট হিসাবে পুনরাবিষ্কারের ঘটনা এইখানে ঘটে।
সবচে’ ভয়ংকর হইলো, সহানুভূতির জায়গাগুলা, কোর এক্সপ্লয়টেশন এরিয়া। যারা রেইপের ঘটনা থিকা ইরোটিক আনন্দ নিতেছেন তারা না, যারা রেইপটারে সর্ব্বোচ অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেন, তারা যতোটা না নারী’রে একটা অবজেক্ট হিসাবে দেখতে পারার জায়গাটাতে কনসার্ন, তার চাইতে অনেকবেশি ‘পবিত্রতা’ নিয়া টেনশিত থাকেন। দুইটা জিনিস জাস্ট অপজিট। নারী’রে বরং একটু অপবিত্র থাকতে দেন।
ঋতুপূর্ণ ঘোষ কোন নারীরেই অপবিত্র করতে পারেন নাই উনার এসথেটিক্যাল জায়গা থিকা। এই তুলনায় ‘স্টিলিং বিউটি’তে প্রথম সিনেই দেখা যায় নায়িকার মুখ দিয়া ঘুমাইবার সময় লালা পড়তেছে (হাউ সুইট! তাই না?)। টিভিতে ডেইলি সোপগুলাতে দেখবেন যে, নারী’রা ঘুমানোর সময়েও মেকআপ নিয়া ঘুমাইতেছে (মেকআপ করা বা সৌন্দর্য্যচর্চা অবশ্যই বাজে কাজ না; বরং সৌন্দর্য্যচর্চাই যে একমাত্র সুন্দর, এইটা একটা ফ্যাসিস্ট জিনিস; সৌন্দর্য্যচর্চা না-করাটারে যারা একমাত্র সুন্দর বইলা ভাবতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা একইরকম)। এইভাবে, নারী’র যে এসথেটিকস তৈরি হইতেছে সেইটা নারী-কল্পনারে একভাবে কনস্ট্রাক্ট করতেছে। কত রকমের নারী-কল্পনা যে এগজিস্ট করে সেইটা আইডেন্টিফাই করাটা খুব অসম্ভব না। কিন্তু এইটা যে আছে, প্রাথমিকভাবে এই ভাবনাটা জরুরি।
এইটাই পুরাটা না, কিন্তু এইভাবে দেখলাম আর কি সিনেমাটারে।