আজ ১০ জুলাই লেখক এবং প্রাবন্ধিক আদনান সৈয়দের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
বাঙালি মানেই তর্ক করবে। আর সেই তর্কের বিষয় যদি হয় ঋত্বিক এবং সত্যজিৎ তাহলেতো কথাই নেই। আমরা তর্ক প্রিয় জাতি। তর্ক করতে ভালোবাসি। আবার তর্ক শেষ হয়ে গেলে একসাথে গলা জড়িয়ে আড্ডা দেই। ঋত্বিক এবং সত্যজিৎ দুজনেই আমাদের মহামূল্যবান সম্পদ। একজন কে ছোট করে আরেকজনকে বড় করার সাহস আমাদের কারোরই নেই। আর সেটি সম্ভব নয়। রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে সুভাষকে আমরা না মানলেও দেশ প্রেমিক সুভাষকে বাঙালি সব সময় মনে রাখবে। ঋত্বিক আর সত্যজিৎ তারা দুজনেই অনেক বড় মাপের চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাদের এই বড়ত্ব শুধুমাত্র বাংলা অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে নি। তাদের চলচ্চিত্র ক্ষ্যাতি গোটা দুনিয়ায় অবাধ বিচরন। তারপরও আগেই বলেছি বাঙালি তর্ক ভালোবাসে। হোক না তর্ক? তর্কের বিষয় ঋত্বিক নাকি সত্যজিৎ? এই বিষয়ে আমার সাথে সবসময় তর্ক হতো চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল এবং আরেক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিন্দ আতিকের সঙ্গে। তারা দুজনেই ঋত্বিক পক্ষ। আর আমি একা একাই কামান দাগাই সত্যজিৎ বাবুর পক্ষ নিয়ে।
পশ্চিমা বিশ্বে সত্যজিৎ রায়ের নাম ডাক অনেক। যারা সিনেমা দেখেন তারা মোটামুটি সত্যজিৎ কে চেনেন। তাঁর সিনেমা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়, সাহিত্য পাতায় গুরু গম্ভির তাত্বিক আলোচনা হয় এবং সেই সাথে সুযোগ পেলেই সত্যজিৎের তৈরি করা সিনোমাগুলোর কাঁধে হাত রেখে মৃদ চাপ দিয়ে পশ্চিমা কায়দায় বাহবাও দেওয়া হয়। সত্যজিৎ নিজেও তাঁর আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস’ গ্রন্থে বিভিন্নভাবে পশ্চিমা সিনেমাকে সামনে তুলে ধরেছেন এবং তিনি পশ্চিম থেকে সিনেমার যেসব মাল মশলা আত্বস্থ করেছেন তা চোখ বুজে কবুল করেছেন। অন্যদিকে ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে পশ্চিমাদের তেমন কোন হৈচৈ নেই, এখানকার সিনেমা হলে খুব কমই ঋত্বিক ঘটকের সিনেমার প্রদর্শনী করা হয়। সত্যজিৎের তুলনায় ঋত্বিক এর নাম পশ্চিমা বিশ্বে মৃদ কন্ঠে উচ্চারিত হয় এবং খানিকটা অবেহেলিতও বলা যায়। কথা হল আমাদের আত্মায় কে বাস করে? ঋত্বিক নাকি সত্যজিৎ?
ম্যানহাটনের রাস্তায় আমরা জোড় কদম ফেলে হাটছি। আমাদের আপাত গন্তব্য বাউরি, ১২ তম সড়কের ইস্ট ভিলেজ সিনেমা। সেখানে চলছে নিউইয়র্ক ট্রইবেকা ফিল্ম ফেস্টিবল। আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেখানেও সত্যজিৎ রায় খুব যুত করে একটা জায়গা করে নিয়েছেন। আমাদের ছোট গ্রুপে রয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল, তরুন চলচ্চিত্রকার অনিন্দ আতিক এবং নাট্য অভিনেতা গোলাম সারওয়ার হারুন। সাধারনত যা হয় সত্যজিৎ এর প্রসংগ এলে সেই আলোচনায় ঋত্বিক আসবেই। তখন আলোচনায় দুটো গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে দুটো পক্ষই তখন তাদের যুক্তি আর তর্ক দিয়ে সত্যজিৎ এবং ঋত্বিককে বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করে। আমাদের ক্ষেত্রেও দুটো দল হয়ে গেল। আগেই বলেছি আমি সবসময় সত্যজিৎ এর পক্ষ নেই। এবারও তাই নিলাম। বাবুল ভাই কিংবা অনিন্দ ঋত্বিক ছাড়া কিছুই বুঝে না। তাদের যুক্তি হল ঋত্বিকের সামনে সত্যজিৎ নস্যি। ঋত্বিকের মাঝে তারা চলচ্চিত্র এবং দেশকে খুজে পান। তাঁর নাগরিক, অযান্ত্রিক, কোমলগান্ধার, সুবর্ণরেখা, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো অথাব তিতাসা একটি নদীর, অথবা মেঘে ঢাকা তারা’য় সহ তাঁর প্রতিটা সিনেমাতেই মানুষ, মানুষের আর্তি, জয়জয়কার, দুঃখ এবং একই সাথে মানুষে রাজনৈতিক মানসের ছাপচিত্রটি খুব স্ন্দুর এবং যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। আর অন্যদিকে সত্যজিৎ তাদের দৃষ্টিতে শিল্পের সাথে আপোষ করা এক লোক। আর ঋত্বিক আপোষহীন, দেশকে ভালোবেসে তিনি নিজেকে শিল্পের জন্যে গোটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তারা মনে করেন ঋত্বিক প্রতিষ্ঠার ইঁদুরে দৌড়ে নিজেকে কখনো অন্যদের সাথে প্রতিযোগীতায় নামেননি। নিজের মত করে তার কাজটি করে গেছেন। দেশ ভাগ নিয়ে একমাত্র তিনিই চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন। সত্যজিৎ করেননি। সত্যজিৎ অনেক বেশি আপোষকামী। ইউরোপের স্বীকৃতির দিকেই তার ঈগল চোখ সব সময় নিবদ্ধ ছিল।
এবার আমি আমার কথা বলি। এখানে স্পষ্টত দুটো বিষয়। প্রথমটি হল ঋত্বিক হোক আর সত্যজিৎ হোক অথবা কুরোসাওয়া হোক তাদের সিনেমা ’সিনেমা’ হল কিনা সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয় হল তাদের ব্যাক্তিগত বিশ্বাস। যেহেতু তারা চলচ্চিত্রকার তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের চলচ্চিত্র নিয়েই আমাদের এখানে কথা বলা উচিৎ। চলচ্চিত্রটি হল কি হল না, অথবা সেখানে শিল্প উপাদান ছিল কি ছিল না সে বিষয়ে আমাদের চোখ রাখতে হবে। আমার কথা শুনে এবার বাবুল ভাই যেন রেগেমেগে তেতে উঠলেন। বলে রাখি বাবুল ভাই ভারতের পুনেতে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশুনা করেছেন এবং ঋত্বিক কুমার ছিলেন তার সরাসরি শিক্ষক। খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি ঋত্বিকের পক্ষ অবলম্বন করবেন সেটাই স্বাভাবিক। ’ ঋত্বিকের সিনেমা বুঝার ক্ষমতা আগে তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন ঋত্বিক ভারতীয় সিনেমার পুরোধা। তিনিই প্রথম বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা তৈরি করেছেন। সত্যজিৎ নয়। সত্যজিৎ শুধুমাত্র পশ্চিমকে অনুকরণ করেছেন মাত্র। অবশ্যই তিনি বড় পরিচালক কিন্তু পশ্চিমা মেটেরিয়াল ছাড়া সত্যজিৎ একেবারেই শূন্য। ঋত্বিক কখনো ব্যাবসা সফল সিনেমা করেননি। কারন টাকার প্রতি লোভ তাঁর কখনো ছিল না। তিনি চাইলে বাজার কাটতি সিনেমা তৈরি করা তার জন্যে কোন বিষয় ছিল না। আপনি ’মেঘে ঢাকা তারা’র কথাই বলেন। বাজার কাটতি একটি সিনেমা। সিনেমাটি আমজনতা গ্রহন করলো। অথবা অযান্ত্রিক, সুবর্ণরেখা? মোট কথা হল তিনি চাইলে অনেক সিনেমাই বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি মৃনাল সেন অথবা সত্যজিৎ নন। কারন তার টাকার লোভ তার ছিল না।’ বাবুল ভাইয়ের কথায় অভিনেতা গোলাম সারওয়ার হারুন মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলেন। আমি বেশ বুঝতে পারলাম আমাকে এখানে সত্যজিৎ বাবুরে পক্ষ হয়ে একাই লরতে হবে।
সত্যজিৎের সিনেমা নিয়ে আমি নিজেকে পরিস্কার করে দাড় করাতে চাই। এ কথা সত্য যে আমরা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালিরা বেড়ে উঠিছি পশ্চিমের চিন্তা, রোমান্টিকতা, চলাফেরা, কথাবার্তা, আদব কায়দাকে ধারন করে। আমার চিন্তা এবং মননে সুস্পষ্ট ভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি প্রভাব আছে বৈকি! সাহিত্যে যেভাবে রবীন্দ্রনাথ সেই চিন্তাটাকে বাঙালির করোটিতে জাগিয়ে তুলেছিলেন ঠিক একই ভাবে সত্যজিৎ তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সে কাজটি করেছেন। মূল বিষয়টা হল তার ’মেকিং’। অভিনয়, সংগীত, চিত্রনাট্য, সংলাপ, কোনটাকে বাদ দেওয়া যায়? সিনেমার এই সব শৈল্পিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো কেটে ফেললে শিল্পের আর থাকলো কি? আমার দৃষ্টিতে সত্যজিৎ রায় খুব যথাযথ এবং সাবলিলভাবে শিল্পের ব্যবাহারগুলো তাঁর চলচ্চিত্রে করতে পেরেছিলেন। যথাযথ শিল্প উপাদানের অনুপস্থিতিতে একটি কবিতা যেমন অসাড় শ্লোগানে পরিনত হয়ে যায় ঠিক একই বিষয় সিনোমার ক্ষেত্রে সত্য। আমার কেন জানি মনে হয় ঋত্বিক এর কাজটি আরো যেন শৈল্পিক হতে পারতো। কেন জানি মনে হয় আরো একটু শিল্প দিয়ে আরেকটু ঘষামাজা করলে ভালো হত। কিন্তু বাবুল ভাই কিংবা অনিন্দ দুজনেই আমার এই কথার সাথে একমত হতে পারলেন না। আর একমত হওয়া কথাও না। এবার বাবুল ভাই একটু খেকিয়ে উঠলেন।
’ ঋত্বিক হল আমাদের গুরু। বুজলেন মিয়া। কথাবার্তা সামলানে কন । শুনেন, আপনার কি মনে হয় যে ঋত্বিক তাহলে সিনেমার শিল্প কি জিনিষ সেটা বুঝেন না। ইউরোপিয়রা যে ভাবে সিনেমায় শিল্পরস তৈরি করেছে সেটাই কি একমাত্র ফর্ম? ফেলেনির এইট এন্ড হাফ, অথবা আন্দ্রেই তারাকাভোস্কির ’মিরর’ অনেকেই এক বসায় দেখতে পারেন না। তার মানে কি এই দাড়ায় যে তারকাভোস্কি ভালো চলচ্চিত্রকার নন? ফেলেনি সিনেমা বানাতে জানেন না।’
আমার বক্তব্য সেটি নয়। তারা অবশ্যই উচু দরের সিনেমা বানায় কিন্তু তাদের সিনেমায় শিল্প রস আমার কাছে সবসময় অনুপস্থিত আছে বলে মনে হয়েছে। যেমন ধরা যাক আমার কাছে মনে হয়েছে ঋত্বিকের সিনেমায় মেলোড্রামা খুব বেশি পরিমনে উপস্থিত। যে কারনে অনেক সময় চরিত্রটি খুব স্বাভাবিক লাগে না। চরিত্রের কেথায় যেন একটা ধাক্কা খাই।
এবার অনিন্দ আতিক গলায় মাফলার পেঁচাতে পেঁচাতে কথায় আলোচনায় যোগ দিল।
’ মেলোড্রামাও তো আমাদের জীবনের একটি বিশাল একটা অংশ। আমি, আপনি আমরা সবাই কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মেলোড্রামাকে আমাদের চরিত্রের একটা আসনে বসাই। মেলোড্রামা খারাপ কিছু না। সমস্যা হল আমরা চলচ্চিত্রে নির্দিষ্ট একটা ফরমেট থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারি না। সবাই কেন সত্যজিৎ এর মত সিনেমা বানাবে? সবাই কেন কুরোসাওয়া হবে? ’
কিন্তু সিনেমাতো একটা শিল্প। আমি ঋত্বিকের সিনেমায় শিল্প উপাদানের কথাই বলছি। একটা চরিত্র সেটি আমাদের আত্মায় কতটুকু আপন আর ভালোবাসায় জায়গা করে নিতে পারে। সেটি গুরুত্বপূর্ন । ধরা যাক পথের পাঁচালী ’র অপু অথবা দূর্গার চরিত্র। অথবা চারুলতা! এই চরিত্রগুলো রায়ের সৃষ্ঠি। বাংলা সিনেমা যতদিন আছে ততদিন এই চরিত্রগুলো ঘুরে ফিরে বাঙালির চিন্তা আর মননে থাকবেই। ঋত্বিক এমন কোন চরিত্র তৈরি করে যেতে পারেননি।
এবার বাবুল ভাই মুখ খুললেন।’ ঋত্বিককে বুঝতে হলে মানুষের অন্তরাত্বায় যে প্রতিনিয়ত কান্নার ¯্রােত বহমান সেই সুরটাকে আপনার ধরতে হবে। ঋত্বিক সেই আর্তনাদটি শুনতে পেয়েছিলেন। আর সে কারনে তিনি চলচ্চিত্র সংলাপের ক্ষেত্রে অনেক সাহসী ছিলেন। তার ’যুক্তি তক্ক আর গপ্পো’র কথাই ধরি। দেশ ভাগ নিয়ে এমন অসাধারন চলচ্চিত্র আর কোথায় পাবেন? ঋত্বিক কখনোই কোন চরিত্র তৈরি করে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করতেনা জানেনতো তিনি বলেছিলেন, ’ আজ যদি চলচ্চিত্রের চাইতে আরো বেশি কোন শক্তিশালী মাধ্যমের আবির্ভাব ঘটে, চলচ্চিত্রকে লাথি মেরে চলে যাব, আমি মশাই চলচ্চিত্রের প্রেমে পরিনি।’ এই কথা ভুভারতে একমাত্র ঋত্বিকের পক্ষেই বলা সম্ভব।
ঋত্বিকের দেশপ্রেম, তাঁর শিল্পের প্রতি ভালাবাসা সব কিছুই মাথা পেতে নিতে আমর কোন আপত্তি নেই। আমার শুধু তাঁর সিনেমা দেখলে মনে হয় রাস্তাটা বড্ড বেশি খানা খন্দে ভরা। আরো একটু মসৃন হলে ভালো হত। কেন যেন মনে হয় তিনি কোন কোন জায়গায় খুব বেশি খেয়ালী। শিল্পের চেয়ে তিনি সিনেমাকে ব্যাবহার করে তার নিজের ব্যাক্তিগত বিশ্বাস বা তাঁর ভাব দর্শনকেই বেশি ডেলিভারি দিতে চেয়েছেন। সে কারনে তাঁর সিনেমা অনেকটা বানী প্রধান হয়ে উঠে। সিনেমায় শিল্পের কারুকাজ দেখতে পাই না। যেমনটা দেখি সত্যজিৎের বেলায়। আমি প্রশ্নের তীরটা বাবুল ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিলাম।
বাবুল ভাই ঋত্বিক ভক্ত। সে কথা জানি। কিন্তু তিনি ঋত্বিকের সামনে সত্যজিৎের কোন প্রশংসাই যেন শুনতে চান না। তবে তিনি সত্যজিৎ বিরোধীও নন। ঋত্বিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আবার সেই সাথে সত্যজিৎের সিনেমা নিয়েও বেশ গঠন মুলক আলোচনা করেন। সেকারনেই হয়তো এবার তিনি একটি সমাধানের পথে আসলেন। ’ ঋত্বিক আর সত্যজিৎ দুজনেই দুই ঘরানার চলচ্চিত্র নির্মাতা। সত্যজিৎ তাঁর কাজটি করেছেন আর ঋত্বিক করেছেন তার কাজ। মৃনাল সেন তাঁর মত করে সিনেমা তৈরি করছেন আবার তারেক মাসুদ তার নিজের ভাবনায় সিনেমা নির্মাণ নিয়ে ব্যাস্ত। তো সবাই যার যার নিজেদের কাজ নিয়ে আপন মহিমায় বড় হয়ে আছেন। একানে সত্যজিৎ বড় নাকি ঋত্বিক বড় এ ধরনের তুলনা করা খুব বোকামি।
আমিও বাবুল ভাইয়ের কথায় সায় দিলাম। ঋত্বিক বলুন আর সত্যজিৎ বলুন তারা সবাই আমাদের চলচ্চিত্রকে বহুমাত্রায় বহুদুর নিয়ে গেছেন। তাঁদের দুজনের প্রতিই রইল আমাদের প্রাণের প্রনতি। এদিকে আমাদের সময়ও ফুরিয়ে এল। কিছুক্ষন পরই শুরু হবে সত্যজিৎ রায়ের ওয়ার্ল্ড অব অপু। আহা! স্টারবক্স থেকে কফি নিয়ে সবাই তখন আমরা সিনেমা হলের কিউয়ে দাড়িয়ে পরলাম। কিন্তু তর্কের রেশটা মনের গহীনে ঠিক যেন টের পাচ্ছিলাম। আমার কেন যানি মনে হচ্ছিল ঋত্বিক খুব অভিমানি ছিলেন। তিনি থিয়েটারের লোক ছিলেন। হয়তো এই মেকি সমাজে তিনি খুব বেশি সময় অক্সিজেন নিতে পারতেন না। কেন জানি মনে হচ্ছিল ঋত্বিক কখনোই নিজের রং বদল করতে পারেননি। হয়তো সে কারনেই তাঁর অনেক কাছের মানুষ তাকে ভুল বুঝেছে। তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ঋত্বিককে ছেড়ে দূরে চলে যাওয়া কি যায়? তাকি সম্ভব? ঋত্বিক মানেই তো আমার বাংলাদেশ। তারপরও বাঙালির বৈঠকখানায় চায়ে আয়েশি চুমুক দিয়ে আড্ডা চলবেই। কে বেশি ভালো ঋত্বিক নাকি সত্যজিৎ?আপনি কোন দিকে হেলে আছেন? জানাবেন? হোক না একটা তর্ক…।
(২০১৭ সালে প্রকাশিত ’পূর্ব পশ্চিমের আলো’ গ্রন্থ থেকে)
লেখক এবং প্রাবন্ধিক। জন্ম ঢাকা, বাংলাদেশ। পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকা থেকে ফাইনান্স এর উপর এমবিএ করেছেন। নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলা, নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার, নিউইয়র্ক সাহিত্য একাডেমিসহ নিউইয়র্ক ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। পেশায় আর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং আইটি পরামর্শক হিসেবে কাজ করলেও নেশা তাঁর লেখালেখি। ইতিহাস তাঁর প্রিয় এবং প্রধান একটি বিষয়। ভারত উপমহাদেশতো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বৈচিত্রপূর্ণ জীবন, ঐতিহাসিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনাবলীর উপর তাঁর রয়েছে গভীর আগ্রহ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রš’গুলো গ্রন্থগুলো হল্: শিপ জাম্পারঃ বাঙালির আমেরিকা যাত্রা(মুক্তধারা, নিউইয়র্ক, ২০২০), অ্যাকুরিয়ামের মাছ ও হলুদ প্রজাপতির গল্প(মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৯), চেনা অচেনা শহীদ কাদরী (মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৮), ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীরা (ইত্যাদি গ্রš’প্রকাশ, ২০১৭), পূর্ব-পশ্চিমের আলো (প্রিয়মুখ, ২০১৬),আমেরিকানামা (সূচীপত্র, ২০১৫), জানা-অজানা রবার্ট ক্লাইভ (সূচীপত্র, ২০১৪) । নেশা ভ্রমণ, সিনেমা দেখা এবং বই পড়া। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবতায় তিনি বিশ্বাসী।