এম মতিউর রহমান মামুন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পতিসরের সদর কাচারি বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পাশাপাশি সমপ্রতি উদ্ধারকৃত কবির হাতের চিঠি, কৃষি ব্যাংকের হিসাবের খাতা, চা-পাত্র, লোহার সিন্দুক, নাগর বোটের দরজা-জানালা, চেয়ারসহ আরও নতুন কিছু রবীন্দ্রস্মৃতির সংযোজন পতিসরের রবীন্দ্র জাদুঘরকে সম্মৃদ্ধ করেছে। প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিবেচনায় কবি প্রতিষ্ঠিত কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের গুরুত্বও কম নয়। তত্কালীন নির্মিত মাটির ঘর, কবির দেওয়া আর্শিবাণী, প্রজাদের উদ্দেশে দেওয়া কবির শেষ ভাষণ, কালীগ্রাম পরগণার শেষ জমিদার কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবির পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠির আবেদন অনেক বেশি। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রতিমা দেবীর চিঠিগুলো নিঃসন্দেহে রবীন্দ্র জমিদারির প্রামাণ্য দলিল। স্বীকার করতে হবে, কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের অরক্ষিত বিপুলসংখ্যক রবীন্দ্রস্মৃতি সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের কিছুটা দায় থেকে যায়। ভেবে দেখা উচিত, কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনে সংরক্ষণের জন্য একটি প্রথাসিদ্ধ সংগ্রহশালা করতে পারলে তা শান্তিনিকেতনের মতো আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। গবেষকেরা রবীন্দ্রস্মৃতি উদ্ধারে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনটিকে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। অবশ্য কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রনাথের ফেলে যাওয়া জায়গা-জমির অবৈধ দখল নিয়ে। গবেষকেরা জানতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরও নিদর্শন কোথায়, কীভাবে আছে; থাকলে সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব কি না? আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রতিমা দেবীর চিঠিগুলোর পূর্ণাঙ্গ পাঠ নেওয়ার জন্য। কিছুদিন আগে পতিসর ঘুরে গেছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেসর ড. জোসেফ টি ও কলিন, প্রফেসর ড. ক্যাথলিন এম ও কলিন, রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর ড. গোলাম আবু জাকারিয়া, প্রফেসর ড. এল কে জাকারিয়া, প্রফেসর ড. এফ লিংক, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. সুজিত কুমার চৌধুরী প্রমুখ। গবেষকগণ পতিসরে রবীন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিও জানান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন ছিল, সংসার থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে প্রিয় পরগনার প্রিয় প্রজাদের শেষবারের মতো দেখে যাবেন। কবির সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই নদীপথে পতিসরে আসেন তিনি। সেদিন অসুস্থ কবি খেটেখাওয়া হাজার হাজার প্রজাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। অসুস্থ কবির অশ্রুসিক্ত অভিভাষণের অংশবিশেষে যা লেখা আছে তা হলো, ‘সংসার থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে তোমাদেরকে দেখার ইচ্ছা ছিল তা আজ পূর্ণ হল। তোমরা এগিয়ে চল — জনসাধারণের জন্যে সবার আগে চাই শিক্ষা — এডুকেশন ফাস্ট, সবাইকে শিক্ষা দিয়ে বাঁচাও। ইচ্ছা ছিল মান-সম্মান-সম্ভ্রম সব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের সঙ্গে তোমাদের মতোই সহজ হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেব। কী করে বাঁচতে হবে তোমাদের সঙ্গে মিলে সেই সাধনা করব, কিন্তু আমার আর এ বয়সে তা হবার নয়, এই নিয়ে দুঃখ করে কী করব? আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখ। আমি তোমাদেরকে বড় ভালোবাসি, তোমাদের দেখলে আমার আনন্দ হয়, তোমাদের কাছে আমি অনেক কিছু পেয়েছি কিন্তু কিছুই তোমাদের দিতে পারিনি — আশীর্বাদ করি তোমরা সুখী হও। তোমাদের সবার উন্নতি হোক — এ কামনা নিয়ে পরলোকে চলে যাব।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের উন্নতি কামনা করে একটি পত্র লেখেন। এতে তিনি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন না করতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপদেশ দেন। তিনি লেখেন—
“রথীন্দ্র নাথের নাম চিহ্নিত কালীগ্রামের এই বিদ্যালয়ের আমি উন্নতি কামনা করি। এখানে ছাত্র এবং শিক্ষকদের সম্বন্ধ যেন অকৃত্রিম স্নেহের এবং ধৈর্য্যের দ্বারা সত্য ও মধুর হয় — এই আমার উপদেশ। শিক্ষাদান উপলক্ষে ছাত্রদিগকে শাসন পীড়নে অপমানিত করা অক্ষম ও কাপুরুষের কর্ম — একথা সর্ব্বদা মনে রাখা উচিত। এরূপ শিক্ষাদান প্রণালী — শিক্ষকদের পক্ষে আত্মসম্মানের হানিজনক। সাধারণতঃ আমাদের দেশে অল্পবয়স্ক বালকগণ প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষকদের নির্মম শাসনের উপলক্ষ্য হইয়া থাকে — একথা আমার জানা আছে। সেই কারণেই সতর্ক করিয়া দিলাম।”
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছিয়াত্তর বছর বয়সে—মৃত্যুর চার বছর আগে পতিসর থেকে শেষ বিদায়ের ভাষণে কবি কেঁদেছিলেন, হাজার হাজার প্রজা কেঁদেছিলেন, নাগর বয়ে নিয়ে গেল অশ্রুসিক্ত তার প্রিয় যাত্রীকে। এরপর কবির আর কখনো পতিসর তথা বাংলদেশে আসার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। কবির মৃত্যুর পর কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের ওপর জমিদারি দেখভালের দায়িত্ব অর্পিত হলে ১৯৪৫ সালের দিকে কবিপুত্র সস্ত্রীক পতিসরে আসেন, পিতার প্রিয় জমিদারি ও খেটেখাওয়া সাধারণ গরিব প্রজাদের শেষবারের মতো দেখা, নিজনামে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে রথীন্দ্রনাথ উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কেননা জমিদারি প্রথা যে বিলুপ্ত হবে, তখন তা কেবল সময়ের ব্যাপার। ৫০-এর দশকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগ-পর্যন্ত কবিপুত্র সশরীরে পতিসরে না আসতে পারলেও জমিদারি ও কৃষি ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ, অডিট রিপোর্ট নিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক চিঠি লিখেছেন বীরেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারীকে। জমিদারি বিলুপ্তির পূর্ব মুহূর্তে তিন বছরের বার্ষিক হিসাব-নিকাশের প্রতিবেদন কবিপুত্রের হাতে এলে তাতে যে বড় রকমের গোলযোগ আছে, তা বুঝতে পেরে সংশোধন করতে বিশ্বস্ত ম্যানেজার বীরেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারীকে তিনি লেখেন—
রাজপুর, ৭ই নভেম্বর
কল্যাণীয়েষু, তোমার চিঠি ও সেই সঙ্গে ৩ বছরের বার্ষিক ষ্টেটমেন্ট যা অন্নদা তোমাকে দিয়েছে তা পেলুম। এর থেকে কিছু বোঝা যায় না। তবে দুটো বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তোমাকে জানাচ্ছি। ১৩৫৯ পর্যন্ত Suspense a/c কিছু ছিল না। কিন্তু ১৩৬০ সালে সসপেন্সে ৪৬,৬১৫।• জমার দিকে দেখান আছে তার মধ্যে ২৭,৬৫৪ ৩ মাত্র clear করা হয়েছে। এত টাকা কেন সাসপেন্সে পড়ে থাকবে বুঝলুম না।
কিন্তু এর চেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে Income Tax এর হিসাব। আমি এই বিষয়েই বেশি আশঙ্কিত ছিলুম। অন্নদার কাছ থেকে তুমি যে ষ্টেটমেন্টগুলি পাঠিয়েছ — তার সঙ্গে দুএক মাস পূর্বে অন্নদা directly আমাকে Inc.tax এর যা হিসাব পাঠিয়েছিল — তার কোনো মিল নেই। আমি ওকে খুব তাগিত দিয়ে গত পাঁচ বছরের Inc.tax payment এর একটি হিসাব আদায় করেছিলুম। এই দুটি ষ্টেটমেন্ট আনুযায়ী আমি একটি comparitive statement প্রস্তুত করে তোমার কাছে পাঠিয়েছি। মনে রেখো ১৩৫৮ সালের পূর্বে Income Tax যা দেয় তা সম্পূর্ণ শোধ করা হয়েছিল — পূর্বেকার দরুণ ১৩৫৮ সালে কোনো টাকা ডিউ ছিল না।
আমার Statement দেখলে বুঝতে পারবে অন্নদা আমাকে জানিয়েছিল এই তিন বছরে মাত্র ৫৯,৮৮০ ্ম. সর্বসমেত ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে — তারপর ১৩৬১ সালে সৌরীণ ১৯,০০০- ্ দিয়েছে (এটা অন্নদার হিসাবে দেখান নেই — অন্নদা হিসাব পায়নি) — তাহলে হাল নাগাদ ৭৮,৮৮০ ্ম. দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তোমাকে অন্নদা যে ষ্টেটমেন্ট দিয়েছে তাতে দেখছি সৌরীণের দেওয়া ১৯,০০০ ্ ধরলে সর্বসমেত ১,২১,৩৩৪ ্ payment হয়েছে। এই অসামঞ্জস্য কি করে হয়? ৪২,০০০ ্ টাকার উপর Discrepancy!
আর একটা বিষয় লক্ষ্য করার আছে—
Inc.tax বিভাগ ১৩৫৮ থেকে ১৩৬১ পর্যন্ত ৪ বছরে total assessment ১,০৬,৬৪৭।• অথচ payment করা হল ১২১,৩৩৪ ্এবং এখনো শুনছি অনেক টাকা বাকি আছে দিতে। এরও রহস্য বুঝলুম না। সমস্ত হিসাব পরীক্ষা করতে সময় লাগবে। কিন্তু Inc.tax payment সমন্ধে এমন একটা গোলমাল দেখছি — এ বিষয়ে অনুসন্ধান ফেলে রাখা যায় না। পরীক্ষা করতে ২/১ দিনের বেশি সময় লাগতে পারে না। তুমি পতিসর যাবার আগে এই বিষয়টা অনুসন্ধান ও হিসাব পরীক্ষা করে দেখে তোমার রিপোর্ট আমাকে দিয়ে যাবে। তোমরা এত চেষ্টা করে টাকা দিয়ে যাচ্ছ— অথচ over payment হয়ে যাচ্ছে— এর বিহিত ব্যবস্থা এখুনি করা দরকার। Suspense clear করার জন্য আমি অন্নদাকে আজ লিখে দিয়েছি।
ইতি—
শুভার্থী শ্রীরথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পু: সৌরীণ কি এখন কলকাতায় আছে?
পু: পু: শান্তিনিকেতনে যাবার আগে আমাদের উকীল বাবুর সঙ্গে জোড়াসাঁকোয় দেখা করে যেতে পার। তাঁর হাত দিয়ে অধিকাংশ payments হয়েছে। তাঁর কাছেও হিসাব থাকতে পারে। যদি দেখো যে হিসাবে বিশেষ গণ্ডগোল আছে তবে আমাকে টেলিগ্রাম কর—আমি চলে যাব।
Inc.tax এর original রশিদগুলি ভাল করে চেক করে দেখ।
হিসাব-নিকাশ সংশোধন করতে অনুরোধ করলেও তাতে খুব একটা ফল হয়নি। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগাম ইঙ্গিত যখন রবীন্দ্রনাথের নিকট আত্মীয় ও এস্টেটের কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছেন, তখন সঠিক হিসাব তো দূরের কথা স্বয়ং জমিদারের আদেশও অমান্য করেছেন! রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর হূদয়বিদারক অপর এক চিঠিতে বিশ্বস্ত ম্যানেজার বীরেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারীকে লিখেছেন—
শ্রীবীরেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারী
কল্যাণীয়েষু,
গত তিন বছরের হিসাব পরীক্ষা করার আমি সুযোগ পাই নাই। অন্নদাকে শৈলেশ বাবুকে হিসাবের খাতা ও ভাউচার অডিটের জন্য দিতে লিখিয়াছিলাম — আমার সে আদেশ অগ্রাহ্য করিয়াছে। তুমি পত্র পাঠ শান্তিনিকেতনে গিয়া অন্নদার কাছ থেকে খাতাপত্র নিজের হেফাজতে লইবে — এবং সমস্ত বিষয়ই চার্জ বুঝিয়া লইবে। যখন চলিয়া আসিবে আফিস ঘর ভালো করিয়া তালাচাবি দিয়া আসিবে। হিসাব পরীক্ষা হইয়া গেলে আমাকে অডিট রিপোর্ট পাঠাইয়া দিও। ইতি—
রাজপুর শুভার্থী—
১০.১০.৫৪ শ্রীরথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অবশ্য ম্যানেজার বীরেন্দ্রনাথ সর্বাধিকারী তাঁর প্রিয় জমিদার রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অর্পিত দায়িত্ব জমিদারি বিলুপ্তি পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন এবং পতিসর এস্টেটের সকল হিসাব-নিকাশ কাগজপত্র নিজ হেফাজতে নিয়েই পতিসর ত্যাগ করেছেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির কিছু আগে ঠাকুর পরিবার যখন অর্থনৈতিক ভগ্নদশায় পড়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ঠাকুর পরিবারে ছেলের বিয়ের জন্য দু-হাজার টাকা ধার চেয়ে ম্যানেজারকে চিঠি লিখেছিল কবির পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। নিজে অর্থকষ্টে থেকেও শরিকানদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে প্রতিমা দেবী লিখেছেন—
শনিবার
শান্তিনিকেতন
কল্যাণীয়েসু,
বীরেণ, জোড়াসাঁকোর বাড়ী থেকে অমিতার চিঠি পেলুম। তার ছেলের বিয়ে ঠিক্ হয়েছে ইতিপূর্বে তোমাকে বলেছি। বিয়ের খরচের টাকা সংগ্রহের জন্য তারা খুবই বিব্রত হয়ে পড়েছে। আমাকে বার বার লিখছে। অজীনের সঙ্গে তোমাকে দেখা করবার জন্য বলেছিলুম— তুমি কি দেখা করেছ? না করে থাকলে নিশ্চয় একবার দেখা করে কথাবার্তা বলে নিয়ো। এ’সময় তাদের কিছু টাকা দেওয়া বিশেষ দরকার। প্রয়োজন বোধ করলে তুমি দেরাদুনে তোমার বাবু মহাশয়কে লিখে অনুমতি আনিয়ে, অজীনকে কিছু টাকা দেবার ব্যবস্থা—যাতে হয় করবে। তাদের এখন বিশেষ অভাব চলছে, এই সময় তাদের কিছু টাকা না দিলে খুবই অন্যায় হবে।
আমিতা বৌমা লিখেছেন, ইজারার টাকা হিসাবে পেলে, সেই টাকা তাঁরা নিজেদের কাজে লাগাতে পাবরেন না সরিকদের মধ্যে হিসাব মত বণ্টন করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব যে জমিদারীর হিসাবের আমার নিজস্ব চার্জ্জ বাবদ যে টাকা পাওনা হয়েছে (হিসাব যদিও আমি পাইনি তবে সম্ভবত দুই হাজারের উপর হবে। তার থেকে যদি দুই হাজার টাকা আমার নামে অজীনদের ধার দাও আমি যেন ধার দিচ্ছি এই ভাবে) ত খুবই খুসী হব। তাতে আমার অসুবিধা হলেও, এদের এসময় সাহার্য্য দেওয়া নিতান্তই উচিত বলে মনে করি। অজীনের ছেলের বিয়ে জানুয়ারীতে স্থির হয়েছে, সেই জন্য তুমি যদি ওদের টাকাটা শীঘ্র দেওয়ার ব্যবস্থা কর ত খুসী হই। বৌমা জানিয়েছেন অন্তত তাঁর তিন বা ৪, হাজার টাকার দরকার, আমি দুই হাজার তাঁদের দিতে পারি সেটা তুমি তাঁকে জানিও। এবং জমিদারীতে ফিরে গিয়ে ১, হাজার টাকা আন্দাজ তাঁকে পাঠিয়ে দিও যাতে তাঁরা বিয়ের জিনিষ পত্র কেনাকাটা করতে পারেন। নভেম্বর শেষে টাকাটা পাঠালেই ওঁদের সাহার্য্য হবে। আশা করি তুমি যথা সাধ্য চেষ্টা করে এই দায় থেকে আমদের উদ্ধার করবে।
ইতি,
আশীর্ব্বাদিকা
প্রতিমা দেবী
দুঃখের বিষয়, আজ যখন ‘গীতাঞ্জলি’র একশ বছর পেরিয়ে পালন করছি রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী; কবির নোবেলপ্রাপ্তির শততম বছর, তখন রবীন্দ্রনাথের আর্শীবাণী, অভিভাষণ, রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠিগুলোর কিছু অংশ পোকায় কেটে ফেলেছে। বিনষ্ট হচ্ছে সমমানের আরও কিছু নিদর্শন। সংরক্ষণের অভাবে এই মহামূল্যবান রবীন্দ্রস্মৃতি বিনষ্ট হওয়ার পথে। শেষপর্যন্ত এই মহামূল্যবান নিদর্শন ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রবীন্দ্রনাথ ও পতিসরে দুর্লভ দলিলপত্র সংরক্ষণ করতে পারলে তা শ্রেষ্ঠ কাজ হতে পারে।
(উদ্ধৃত চিঠিতে টাকা, আনা, পাই ও পয়সার প্রতীকের ব্যবহার রয়েছে)
