Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

নারী পুরুষের মিলন কাহিনী(পর্ব-৩৪)

Reading Time: 6 minutes

বিবাহ  মানব সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যুগে যুগে প্রতিষ্ঠানটি এর আদি রূপ থেকে বর্তমান কাঠামোয় উপনীত হয়েছে। বিবাহপ্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে প্রধানত ধর্ম। বিয়েসংক্রান্ত সকল নিয়মকানুন বিধিবদ্ধ হয়েছে ধর্মীয় অনুশাসনে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় ধর্মীয় শাস্ত্রের বিধানই ছিল সামাজিক আইন, ধর্মীয় আইনের দ্বারাই শাসিত হতো সমাজ-সংসার। ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি লোকজ সংস্কৃতিও বৈবাহিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে। মনুস্মৃতি এবং অর্থশাস্ত্রে আট প্রকারের হিন্দু-বিবাহ পদ্ধতির উল্লেখ আছে। ‘ব্রাহ্ম’, ‘দৈব’, ‘আর্য’, ‘প্রজাপত্য’, ‘অসুর’, ‘রাক্ষস’, ‘পৈশাচ’ ও ‘গান্ধর্ব’ এই আট ধরনের বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহই শুধু গ্রহণযোগ্য ছিল। দায়ভাগ গ্রন্থে জীমূতবাহন উল্লেখ করেছেন যে, ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রজাপত্য এবং গান্ধর্ব বিবাহ অনিন্দনীয়। ধর্মশাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী নিজ বর্ণের মধ্যে বিবাহ ছিল সাধারণ নিয়ম। সবর্ণে বিবাহ উৎকৃষ্ট হলেও মনু ব্রাহ্মণ পুরুষকে নিজ বর্ণ ছাড়া নিম্নতর তিন বর্ণে বিবাহের অধিকার দিয়েছিলেন। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে, যেমন চন্ডীমঙ্গলে, মুসলমানদের নিকা বিবাহের কথা বলা হয়েছে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, এমনকি বিশ শতকেও মুসলমানদের মধ্যে বহুবিবাহ ব্যাপক হারে প্রচলিত ছিল। উচ্চশ্রেণীর অবস্থাপন্ন মুসলমানদের একাধিক স্ত্রী থাকত। বিশ শতকের শুরুতে কুলীনদের বাইরে হিন্দু সমাজে বহুবিবাহ তেমন প্রচলিত ছিল না। বিয়ের এমন অনেক জানা অজানা বিষয়ে আলো ফেলেছেন ড. রোহিণী ধর্মপাল তাঁর এই ধারাবাহিক ‘নারী-পুরুষের মিলন কাহিনী’-তে। আজ থাকছে নারী-পুরুষের মিলন কাহিনীর ৩৪পর্ব।


নাঃ! নলকে অনেকক্ষণ টেনশনে রেখেছি। এমনিতেও বেচারার জীবনে অনেক রকম সমস্যা আসবে! আমি আর অযথা কষ্ট দি কেন! নলকে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছিলাম দেবতাদের প্রণয়বার্তা নিয়ে দময়ন্তীর কাছে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে, সেইখানে ফেরা যাক।
মজা হল, যাদের নিয়ে প্রবাদ তৈরি হয়, বলা হয় মেয়েদের বুক ফাটে, তো মুখ ফোটে না, তাদের ভালোবাসার প্রকাশে একবারও পিছ-পা হতে দেখছি না। সেই অম্বা থেকে দময়ন্তী, এই একটি জায়গায় কী মিল, কী মিল! নল দময়ন্তীকে ভালো বাসলেন, তারপরেও দেবতাদের বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে গেলেন প্রেমিকার কাছে। দেবতাদের একবার মিনমিন করে বলেছিলেন বটে, যে “আমিও তো ঐ জন্যই আসিয়াছি”(বন পর্ব, খণ্ড সাত, পৃঃ ৪৯১)! কিন্তু ওই পর্যন্তই। অথচ দময়ন্তী, স্পষ্ট বলে দিলেন, “আমি আপনাকে ভালো বেসেছি। এখন আপনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে বিষমগ্নিং জলং রজ্জুম্, বিষ খেয়ে বা আগুনে পুড়ে বা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হতে হবে আমাকে!”(পৃঃ ৪৯৫)
এমন কথার পরেও নলের ভয় যায় না! তখন দময়ন্তী বললেন, “আচ্ছা, স্বয়ংবর সভায় দেবতাদেরও ডাকুন। সবার সামনে আপনাকে বরণ করে নেব আমি। তাহলে তো আর আপনাকে কেউ দোষ দেবে না!”(পৃঃ ৫০০) 
এই যে আমরা পুরুষত্ব আর মেয়েলীপনাকে আলাদা করে দেখি না? এটাও বোধহয় একটা বিরাট সামাজিক ষড়যন্ত্র। আসলে পুরুষই পুরুষত্ব অর্থাৎ সাহস বীর্য প্রভৃতি  দেখাবে আর মেয়েরা হবে মেয়েলী মানে লাজুক কোমল; এমনটি কখনোই ছিল না। এই প্রতিটিই মানবিক গুণ এবং ছেলে বা মেয়ে উভয়ের মধ্যেই সমানভাবে থাকতে পারে।
 এই প্রসঙ্গে বাণভট্টের আত্মকথা থেকে গৌরী ধর্মপালের অনুবাদের একটা অংশ তুলে দি। 
“মহামায়া– হ্যাঁ কন্যা, নারীহীন তপস্যা সংসারের মস্ত বড় ভুল। এই ধর্মকর্মের বিশাল আয়োজন,  সৈন্য সংগঠন রাজ্য ব্যবস্থাপন, সকলই ফেন বুদ্বুদের মতো বিলুপ্ত হইয়া যাইবে, কারণ ইহাতে নারীর সহযোগিতা নাই। এই সব উদ্যোগ আয়োজন সংসারে কেবল অশান্তি সৃষ্টি করিবে।
ভট্টিনী– তাহা হইলে মা, মেয়েরা যদি সৈন্যদলে ভর্তি হইতে আরম্ভ করে অথবা রাজত্বের উত্তরাধিকার পায়, তবে এই অশান্তি দূর হইয়া যাইবে?
মহামায়া– আমি নারীর দেহপিণ্ড কোনো মহত্ত্বপূর্ণ বস্তু বলিয়া স্বীকার করি না। আমি নারীতত্ত্বের কথা বলিতেছি রে। সেনাদলে যদি নারীর দেহপিণ্ড গিয়া দল ভরতি করে, তাহা হইলে যতক্ষণ উহাতে নারীতত্ত্বের প্রাধান্য না থাকিবে, ততক্ষণ অশান্তি জমিতেই থাকিবে।
ভট্টিনী– আমি বুঝিতে পারি নাই ।
মহামায়া– তুমি কি এই মাংসপিণ্ডকে স্ত্রী অথবা পুরুষ মনে করো? না সরলে, তাহা নয়। যেখানে নিজে নিজেকে উৎসর্গ করিবার, নিজেকে নিজে বলি দিবার ভাবনা প্রধান, সেখানেই নারী। যেখানে কোথাও দুঃখ সুখের লক্ষধারায় নিজেকে দলিত দ্রাক্ষাসম নিঙাড়িয়া অন্যকে তৃপ্ত করিবার ভাবনা প্রবল, সেখানেই আছে নারীতত্ত্ব, শাস্ত্রীয় ভাষায় শক্তিতত্ত্ব। আজকার ধর্মকর্মের আয়োজন সৈন্য সংগঠন রাজ্যবিস্তার, উহাতে অন্যের জন্য আত্মবলির ভাবনা নাই। (গৌরী ধর্মপাল অনূদিত, কাদম্বরী, ভূমিকা, পৃঃ ৩১)
 সুতরাং, এই পুরুষত্ব নারীত্ব ছেলে এবং মেয়েতে আরোপ করা বন্ধ করুন। মেয়েরাও সাহসী হতে পারে, ছেলেরাও লাজুক হতে পারে। দুটিই অত্যন্ত স্বাভাবিক।
 সুতরাং নল দ্বিধাগ্রস্ত হলেও দময়ন্তী একেবারে সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। এবং দেবতাদের সব বিশ্রী ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিলেন। ইন্দ্রাদি ক’জন করেছিলেন কী, স্বয়ংবর সভায় সবাই নলের রূপ নিয়েছিলেন। একেবারে ডিটো! এতটুকু আলাদা নয়। অথচ দময়ন্তী ঠিক ধরে ফেললেন কে তাঁর নল। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, যাঁদের দেহে ছায়া নেই, গায়ে ঘাম নেই, ধুলো নেই, সাজসজ্জা ফুলের মালা অম্লান (ছেলেরা তখন কিছু কম সাজত না। সত্যি বলতে এখনও কম সাজে না। careless beauty look টা শুধু প্রাণপণ ধরে রাখে! সেজেছি যথেষ্ট, কিন্তু তা যেন কেউ না বোঝে! আর প্রেমে পড়লে তো সারাক্ষণ আয়নার সামনে!) এবং পা মাটি ছোঁয় নি। নলের অবস্থা ঠিক এর বিপরীত। সুতরাং নিজের প্রেমাস্পদকে বরণ করতে দময়ন্তীর কোনো অসুবিধাই হলো না।
 তবে এই দেবতাগুলি শেষ পর্যন্ত ততটা খারাপ নন। তাঁরা দময়ন্তীকে না পেয়ে রেগে তো গেলেনই না, বরং নলকে আট আটটা বর দিলেন (দময়ন্তী কে কেন নয় বাপু!! )। 
এর পর শুরু হল আসল নাটক! সেই যে কথা দিয়ে এই আখ্যান শুরু করেছিলাম। পুরুষের ঈর্ষা ভয়ানক কতখানি! দেবতারা যখন স্বয়ংবর সভা থেকে ফিরছেন, তাঁদের দেখা হল কলি আর দ্বাপরের সঙ্গে। বৃত্তান্ত কী! না, তাঁরা দুজন যাচ্ছেন দময়ন্তীর স্বয়ংবর সভায়। “সে কী! সেই স্বয়ংবর তো শেষ! দময়ন্তী তো নলকে বেছে নিয়েছেন জীবনসঙ্গী রূপে!”
 কলি এই কথা শুনে ঈর্ষায় বেগুনি বর্ণ হয়ে গেলেন! বললেন, “দময়ন্তী আমাদের ছেড়ে একটা মানুষকে বরণ করল! ওর কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত!” দেবতা চারজন যথেষ্ট বোঝানোর পরেও কলি কিছুতেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরলেন না। বরং দ্বাপরকে বললেন, আমি আমার রাগকে দমন করতে পারছি না। আমি নলের ওপর ভর করব। ওকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে ছাড়ব। দময়ন্তীর সঙ্গে ওর রমণ করা ঘুচিয়ে ছাড়ব! ওর পাশা খেলার প্রতি যে লোভ আছে, সেটাকেই কাজে লাগাব। তুমি আমার সঙ্গে থেকে এই কাজে সাহায্য করো (তদেব, খণ্ড সাত, পৃঃ ৫১৩)।
এর পরের ঘটনায় বিস্তারিত যাব না। শুধু এটুকুই বলার যে কলির ঈর্ষা আর ক্রোধ নল দময়ন্তীর জীবনে চরম অন্ধকার আনল। নলেরই ভাই পুষ্কর কলির প্ররোচনায় নলকে পাশা খেলার আহ্বান জানিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিলেন। কারণ নল পাশাসক্ত হলেও খেলায় খুব বেশি দক্ষ ছিলেন না। তবে তিনি যুধিষ্ঠিরের মত দময়ন্তীকে পণ রাখেন নি(পরে রেখেছিলেন, বলছি সে কথা)। দুজনে প্রথমে রাজ্য ত্যাগ করে এক অরণ্যে এলেন। সেখানে দুজনের ছাড়াছাড়ি হল। আরো নানা বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে দুজনের মিলন হলো। তার মধ্যে দময়ন্তীকে দ্রৌপদীর মতোই সৈরিন্ধ্রীর পরিচয়ে থাকতে হয়েছে। নলকে আরেক রাজা, ঋতুপর্ণের কাছে সারথির কাজ করতে হয়েছে। শেষে যখন সব সত্য প্রকাশ পেল, তখন অশ্ববিশেষজ্ঞ নল রাজার কাছ থেকে ঋতুপর্ণ শিক্ষা করলেন অশ্ব সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান। ওদিকে ঋতুপর্ণ ছিলেন অক্ষ মানে পাশাখেলায় দারুণ নিপুণ। তিনি নলকে এই খেলার সমস্ত মারপ্যাঁচ শিখিয়ে দিলেন।
বহু বছর কষ্ট ভোগ করার পর নল দময়ন্তীকে নিয়ে ফিরলেন নিজের রাজ্যে আর ভাই পুষ্করকে চ্যালেঞ্জ জানালেন। কিন্তু এই বার নল  দময়ন্তীকেও পণ রাখলেন! জেতা সম্পর্কে যত নিশ্চিত থাকুন না কেন, নলের এই কাজ একইরকম নিন্দনীয়। যদিও এই বার নল একবারে জিতলেন এবং ভাইকে ক্ষমাও করে দিলেন! কিন্তু ভাবলে শিউরে উঠি, যে কোনো ভাবে হারলে কি হত! কারণ দময়ন্তীকে পণ রাখা মাত্র পুষ্কর একেবারে উল্লসিত হয়ে উঠেছিল, যে এইবার দময়ন্তীকে পাওয়া যাবে আর নিজের সেবাদাসী বানানো যাবে! মেয়েদের ইচ্ছে মতো ভোগ করতে করতে পারাকেই আসলে অনেকে পুরুষত্বের পরাকাষ্ঠা ভাবে! 
যাই হোক, এইভাবে সাহিত্য কলির ঈর্ষার আগুনে যছেচ্ছ পুড়িয়েও শেষ পর্যন্ত নলদময়ন্তীকে মিলিয়ে দিয়েছিল! বাস্তবে এমনটা হয় না। ঈর্ষা মানুষকে নষ্ট করে দেয়। আমি পাব না তোমাকেও পেতে দেব না, এই মনোভাব ছেলেদের মধ্যে কিছু কম নেই, বরং হয়ত বা খানিক বেশি। অথচ হিংসে শব্দটি মেয়েদের সঙ্গেই জুড়ে আছে!
এবার একটা অন্যরকম মিলনকাহিনী শোনাই। তার আগে গ্রিক পুরাণের একটা গল্প শুনতে হবে। থিবস রাজ্যের রাজা লিয়াস জানতে পারলেন তাঁর সন্তানের হাতেই তাঁর মৃত্যু লেখা আছে। শুধু তাই নয়, সেই সন্তান তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অর্থাৎ নিজের মার সঙ্গে শারীরিক ভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবে! এমন ভয়ানক পরিণতির কথা শুনে রাজা লিয়াসের সন্তান স্নেহ মাথায় উঠল। তিনি নিজের পুত্রকে মেরে ফেলার হুকুম দিলেন। কিন্তু দৈববলে সেই ছেলে বেঁচে গেল। আর শেষে সেই ঘটল, যা বলা হয়েছিল। নিজের অজান্তেই ইডিপাস মারল নিজের বাবাকে, সেই রাজ্যের সিংহাসনে বসল ঘটনাচক্রে এবং রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী পূর্বতন রাজার স্ত্রীকে বিবাহ করল। অর্থাৎ নিজেরই মাকে। এবং যখন সেই দুজন মানুষের অনিচ্ছাকৃত অজ্ঞাত অপরাধের জন্য পুরো রাজ্য জুড়ে বিপর্যয় নেমে এল, তখন ঈডিপাস সেই অপরাধীর খোঁজ করতে গিয়ে সত্যিটা জানতে পারল।।ঈডিপাসের মা জোকাস্টা নিদারুণ লজ্জায় আত্মহত্যা করলেন। ঈডিপাস মায়েরই পোষাক থেকে একটি কাঁটা খুলে নিজের চোখে বিঁধিয়ে নিজেকে চির অন্ধকারে নিমজ্জিত করল।
 মনস্তত্ত্ব যাঁরা জানেন, তাঁরা সবাই জানেন ঈডিপাসের নাম দিয়ে একটি জটিল মানসিক অবস্থার নামকরণ করা হয়েছে, ঈডিপাস কমপ্লেক্স, যেখানে একটা বয়সে মায়ের প্রতি পুত্র সন্তানের একটা আকর্ষণ একটা possessiveness তৈরি হয়।
 একেবারে মূল কাহিনী এক, এই রকম একটি গল্প পেয়েছি ব্রহ্ম পুরাণে। পুরাণগুলির মধ্যে সবথেকে পুরোন বলা হয় যাকে। সেই কাহিনী শুনুন এবার। 
এই গল্পে মায়ের নাম মহী। দেখুন, অর্থটাও কী অর্থবহ। মহী হল পৃথিবী। ইনি স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেকে গালবমুনির আশ্রমে রেখে বাইরে চলে যান এবং বহু পুরুষ সংসর্গ করতে থাকেন। তাঁর ছেলে সন্নাজাত নানা শাস্ত্রে পারদর্শী হলেও মায়ের মতোই ব্যভিচারের অভ্যাস তার মধ্যেও তৈরি হয়। আশ্রমে থেকে তা সম্ভব নয়, সুতরাং সেও মায়ের মতোই আশ্রম ত্যাগ করে। পরবর্তীকালে নানা ঘটনার পর মা ছেলে মুখোমুখি হয়। যথারীতি কেউ কাউকেই চিনতে পারে না এবং শারীরিক ভাবে তাদের মিলন ঘটতে থাকে। একবার নয়। বারবার। শেষ পর্যন্ত একদিন কথায় কথায় সত্য প্রকাশ পায়। স্বভাবতই দুজনের মধ্যে অনুশোচনা জাগে। দুজনে সোজা চলে যান গালবমুনির আশ্রমে। তাঁকে সব কথা খুলে বলেন। গালব যখন বুঝলেন মা ছেলে দুজনেই নিজেদের সমস্ত কাজের জন্যই অনুতপ্ত, তখন তিনি তাদের সান্ত্বনা দেন এই বলে যে, অনুশোচনার আগুন সব পাপকে ছাই করে দেয়।
এই হল ভারতীয় পুরাণের সঙ্গে, ভারতীয় দর্শনের সঙ্গে, ভারতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে পাশ্চাত্যের প্রভেদ। ভারতবর্ষ সব সময় পাপকে বর্জন করার কথা বলেছে। পাপীকে নয়। বিশেষ করে সে যদি অনুতপ্ত হয়ে থাকে।
আর মহী নামটিকে অর্থবহ এই জন্যই বলেছি যে মা পৃথিবীকে তাঁর সন্তানেরা প্রতি মুহূর্তে কীভাবেই না ধর্ষণ করে চলেছে! নিংড়ে চুষে সমস্ত স্নেহরসটিকে বার করে করে ছিবড়ে করে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। এবং কোনো অনুতাপ নেই। এই গল্প তো গল্প নয়, বরং ঘোর বাস্তব। দেশি ও বিদেশি পুরাণে তার প্রকাশ ঘটেছে মা ছেলের গল্পের মধ্যে দিয়ে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>