অনুবাদ কবিতা: দেহ ঘর । রুপি কৌর । অনুবাদক: সায়মা মনি
কবি পরিচিতি
রুপি কৌর একজন কবি, শিল্পী।একুশ বছর বয়সে যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন একাধারে লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন।”মিল্ক এ্যান্ড হানি” নামের নিজের বই নিজে প্রকাশ করেছেন।এর পর “দ্যা সান এ্যান্ড হার ফ্লাওয়ারস” প্রকাশিত হয় এবং এই বই দুটি আট মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় আর চল্লিশটির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়।”হোম বডি” যার বাংলা নামকরণ করেছি “দেহঘর” এটি তার তৃতীয় বই।রুপির কাজে ভালোবাসা, প্রেম, ক্ষতি, হারানোর অনুভুতি, আতঙ্ক, নারীবাদ, অভিবাসীদের যন্ত্রনা এই সব বিষয়গুলো বেশি ছুঁয়ে যায়।তিনি মঞ্চে তার কবিতা পাঠ করেন যা এক অনবদ্য উপস্থাপনার রূপ নেয়। উল্লেখ্য যে তার প্রথম বই “মিল্ক এন্ড হানি” আড়াই মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং পঁচিশটির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।নিউইয়র্ক টাইমসে সাতাত্তর সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক বেস্ট সেলার হিসেবে ছিল।তার তৃতীয় বই “হোমবডি” তথা “দেহঘর“২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়।
রুপি কৌর ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং খুব অল্প বয়সেই তার পরিবারের সাথে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।তিনি প্রথম তার কবিতা পাঠ করেন মঞ্চে ২০০৯ সালে এবং তারপর ইন্সটাগ্রামে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন।অতঃপর উপরে উল্লেখিত তিনটি কাব্য সমগ্র দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে প্রবেশ করেন।কৌরের কবিতায় সহজ শব্দের ব্যবহার সহজবোধ্যতা খুব সহজে মন কাড়ে।তার শৈশব আর তার ব্যক্তিগত জীবন তার কবিতার অনুপ্রেরণার উৎস। কবিতার সাথে তার নিজ হাতে আঁকা স্কেচ কবিতাকে বুঝতে সাহায্য করে।কবিতার সহজ সরল ভাষার আড়ালে গভীর দর্শন ও জীবনবোধে আমরা সহজেই আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।
অধ্যায় ৩
বিশ্রাম
৮৫
আমার ভেতর কতগুলো বছর আছে
যারা ঘুমায়নি
৮৬
আমি আমার যোগ্যতা মাপি
আমি কতটা গঠনমূলক থেকেছি তা দিয়ে
কিন্তু কোন ব্যাপার না
যত কঠিন পরিশ্রমই আমি করি
তবু আমার তা অপ্রতুল মনে হয়
—- গঠনমূলক হওয়ায় অপরাধবোধ
৮৭
আমার ভয় হয় যে
আমার শ্রেষ্ঠ বছরগুলো আমার পেছনে
আর কিছু নতুন এই বিন্দুতে যোগ হবেনা
৮৮
গঠনশীলতার উদ্বেগ
আমার এই গঠনমূলক হওয়ার উদ্বেগ আছে
যেন বাকি সবাই আমার চেযে বেশি পরিশ্রম করছে
আর আমি পেছনে পড়ে থাকবো
কারন আমি পর্যাপ্ত দ্রুত কাজ করছিনা
পর্যাপ্ত দীর্ঘ
আর আমি আমার সময় নষ্ট করছি
আমি সকালের নাস্তা করতে বসিনা
আমি এটা গিলে ফেলি
আমি মাকে ডাকি যখন আমি সময় পাই – অন্যথা
একটি কথোপকথন দীর্ঘ সময় নেয়
আমি সবকিছু সরিয়ে রাখি যা
আমার স্বপ্নের কাছাকাছি নিযে যাবেনা
যেন আমি যেসব জিনিস সরিয়ে রাখছি
সেসব নিজেরা স্বপ্ন নয়
এটা কি স্বপ্ন নয়
যে আমার একজন মা আছেন যাকে ডাকা যায়
অথবা একটি টেবিল আছে যাতে সকালের নাশতা করা যায়
বরং আমি অসুস্থ প্রয়োজনে হারিয়ে গেছি
আমার দিনের প্রতিটি ঘন্টা নিয়ে আশা করতে
তাই আমি এমনভাবে বেড়ে উঠছি
যে কোন উপায়ে টাকা রোজগার করছি
যে কোন উপায়ে আমার বৃত্তিকে এগিয়ে নিচ্ছি
কেননা ওটাই দরকার
সফল হতে
ঠিক
আমি আমার জীবন খুঁড়ি
পুঁটলি বাঁধি
পৃথিবীর কাছে এটা বিক্রি করি
আর যখন তারা আরো বেশি চায়
আমি হাঁড়ের ভেতর দিয়ে খুঁড়ি
কবিতা রচনা করার চেষ্টা করি
পুঁজিবাদ আমার মাথার ভেতরে প্রবেশ করেছে
আর আমাকে নিজের মুল্য নিয়ে শুধু ভাবায়
কতখানি আমি তৈরি করলাম
মানুষর ভোগের জন্য
পুঁজিবাদ আমার মাথার ভেতরে প্রবেশ করেছে
আর আমাকে ভাবায়
আমার মুল্য আছে
যতদিন আমি কাজ করছি
আমি এর থেকে অধৈর্য্য হতে শিখি
আমি এর থেকে আত্ম সন্দেহ করতে শিখি
জমিতে গাছের বীজ বুনতে শিখি
আর পরদিন ফুল ফুটবে আশা করি
কিন্তু জাদু
এভাবে কাজ করেনা
জাদু ঘটে যায়না
কারন আমি ভেবে বের করেছি কিভাবে
আরো কাজ করে ফেলা যায় এক দিনে
জাদু চলে যায়
প্রকৃতির নিয়মে
আর প্রকৃতির নিজস্ব সময় আছে
জাদু ঘটে
যখন আমরা খেলা করি
যখন আমরা পালাই
দিবাস্বপ্ন আর কল্পনা
ওখানেই সবকিছু
সাথে আমাদের পরিপুর্ণ করে তোলার সবটুকু শক্তি
অপেক্ষা করছে হাঁটু গেঁড়ে আমাদের জন্য
——– গঠনশীলতার উদ্বেগ
৯১
আমরা কাজ করতে পারি
আমাদের নিজস্ব গতিতে
আর তার পরেও
সফল হতে পারি
৯২
একটি জীবন রাস্তার ওপরে
যখন আমি বড় হচ্ছিলাম
আমার বাবা সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতেন
একটি আঠার চাকার গাড়ি চালাতেন
মহাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
তিনি বাড়ি আসতেন
রাস্তায় এক সপ্তাহ থাকার পর
যখন আমার সহোদরা আর আমি ঘুমিয়ে থাকতাম
সামনের দরজার শব্দ সব সময় আমাকে জাগিয়ে দিত
দালানের সবচেয়ে নিচের তল খুব ছোট ছিল যেখানে আমরা থাকতাম
আমি শুনতে পেতাম মাকে রান্নাঘরে
তার জন্য টাটকা ডাল আর রুটি বানাতে
বাবা খেত
গোসল করত
বিছানায় যেত
কিন্তু যখন তার চোখ বুজে আসত
তার মনিব ফোন করত আর বলত
আবার রাস্তায ফিরে এসো
আর ঠিক এভাবেই
আমরা এক পলকে দেখতাম বাবার চলে যাওয়া
যখন তুমি একজন প্রবাসী
তুমি তোমার মাথা নিচের দিকে রাখ আর কাজ করতে থাক
যখন তুমি একজন উদ্বাস্তু আর
তোমার কাগজ নেই
যখন তারা তোমাকে অবৈধ বলে ডাকে
বহিরাগত
সন্ত্রাসী
তোয়ালে মাথা১
তুমি কাজ কর যতক্ষন না তোমার হাড় জিরজিরে না হয়
একমাত্র তুমি তোমার ওপর নির্ভর করতে পার
প্রতিবার তিনি একটি নতুন প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করতেন
তিনি মাসব্যাপী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতেন
তাদের বাধ্যতামুলক প্রশিক্ষনকালে
তাদের যে প্রশিক্ষন দেয়া দরকার হত মজার ছিল ব্যাপারটা
যে কিনা পরিপুর্ণভাবে অনুমতিপ্রাপ্ত
প্রশিক্ষিত
আর অভিজ্ঞ
তৃতীয় মাসের পরে
এক পয়সাও বাসায় না আনতে পারায়
বাবা ক্ষতিপূরণ দাবি করত
আর তারা প্রস্তাব করত তাকে
পাঁচ সেন্ট প্রতি মাইল চালানোর জন্য
কয়েক বছর আগে যখন সে একটা মাল বোঝাই গাড়ি চালায়
মন্ট্রিয়েল থেকে ফ্লোরিডার দিকে
সে একটি হাসপাতালে এসে যাত্রা শেষ করে
মধ্য আমেরিকার কোথাও
তার এ্যাপেন্ডিক্স নিয়ে যা কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে
আছে ফেঁটে যাওয়ার
যখন ডাক্তার তাকে বলে
তাদের জরুরী ভিত্তিতে তাকে অস্ত্রোপচার করাতে হবে
সে তার দিকে তাকাল আর বললো
আমার এটা করার সামর্থ্য নেই
এটা কি বিলম্বিত করা যায় আমার কানাডার বাসায় পৌঁছান পর্যন্ত
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো কখন তুমি বাসায় পৌঁছবে
সে জবাবে তিন দিনের কথা বলল
আর সে (ডাক্তার) তার দিকে তাকাল যেন সে নিশ্চিতভাবে
স্বাভাবিক নেই
সৌভাগ্যবশত
তার এটা মনে হয়নি
তাকে তার জীবনের ঝুঁকি নিতে দেয়নি
তিনি বিনা খরচে তার অস্ত্রোপচার করেন সেই রাতে
আর তুমি জানতে চাও সে রাতে আমার বাবা কি করেছিলেন
ঠিক তারা তাকে সেলাই করে দেযার পর
তিনি হেঁটে হাসপাতাল থেকে বের হন
তার ট্রাকে চড়ে বসেন
বিতরন শেষ করেন
আর তিনদিন ধরে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরে আসেন
আমি জিজ্ঞেস করি কেন তুমি নিজেকে এমন অবস্থায় ফেললে
তিনি তার কাঁধ ঝাঁকান আর বলেন আমাকে
আমার মনিব আমাকে একটা উড়োজাহাজের টিকিট করে দেবেন না বাসায় ফিরতে
কোথায় আমি ট্রাকটা ছেড়ে দিতাম
আমি চালিয়ে ট্রেলার২ পূর্ণ গাড়ি নিয়ে ফিরে আসতে পারতামনা
বিতরন করা হয়নি এমন সব গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে
আর চাকরি হারানোর ঝুঁকি নিতে
যখন তার কথা শুনছি
যা আমি ভাবতে পারি তা হলো
কারো এমন হাড় ক্ষয় করে কাজ করা উচিত না
এটা শুনে আমি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিলাম
তাদের প্রত্যেকের জন্য যারা নিজেদের পিষে ফেলে
তাদের প্রাপ্যের চেয়ে কম পাওয়ার জন্য
আমরা কি করে রাতে ঘুমাই
যেসব নিয়ম আমরা বজায় রাখি তা প্রকৃত অর্থে জানার পর
সামাজিক নিয়ম কানুনগত অবকাঠামোর সাথে আচরণ করি
দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মতো
যখন তারা হলো কারন
এই পৃথিবীর চাকা ঘুর্ণনের
আমি আমার বাবাকে দিতে চাই
একটা জীবনকালের শান্তি
কারন তিনি একটা জীবন ব্যয় করেছেন
রাস্তার ওপরে আমাদের ভরন পোষনের জন্য
আমি তাকে জানাতে চাই
আরাম পেতে কেমন লাগে
আমি তাকে দেখাতে চাই
তিনি পর্যাপ্ত পরিমানে করেছেন
———একটা জীবন রাস্তার ওপরে
১. মূল কবিতায় টাওয়েল হেড শব্দটি আছে।এর অর্থ তোয়ালে মাথা করা হয়েছে।তবে এই শব্দটি সাধারনত গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।আরব দেশে মুসলিমরা যেমন পাগড়ি পরে থাকে।অথবা শিখ সম্পর্দায় যেভাবে মাথায় পাগড়ি পরে থাকে তা ব্যঙ্গ করতে এই শব্দটি মূলত ব্যবহার করা হয়।
২. মূল কবিতায় ট্রেইলার লেখা আছে। যার অর্থ হল যে গাড়িকে অন্য গাড়ি টেনে নিয়ে যায়। এখানে এক গাড়ির বিভিন্ন অংশ ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যবহার উপযোগী কোন শব্দ পাওয়া যায়নি বিধায় একে অবিকৃত রাখা হয়েছে।
৯৬
যখন বিদ্যালয়ের শিশুরা জিজ্ঞেস করত
আমার মা কোথায় কাজ করতেন
আমি মিথ্যা বলতাম আর বলতাম কারখানায়
অন্য সব মায়েদের মতো
আমি খুব বিব্রত বোধ করতাম স্বীকার করতে
তার কোন “সত্যিকার চাকরি” ছিলোনা
এমনকি যদিও “ঘরে থাকা মা” বোঝায়
তিনি ছিলেন পুর্ণকালীন শ্রূশ্রূষাকারী
চালক
পাচক
সচিব
শিক্ষক
পরিষ্কারক
সর্বোত্তম বন্ধু
চার সন্তানের আর
একটি পৃথিবী সম্মত “প্রকৃত চাকরির” সংজ্ঞা
এই সব কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করতে পারেনি
৯৭
আমরা সবসময় টিকে থাকার প্রক্রিয়ায় ছিলাম
অনেক দিন পর আমাদের তা প্রয়োজন ছিল না
৯৮
আমি আটকে আছি
এই নিত্য চক্রে
আমার জীবন গঠনের দৌড়ে
আর দৌড়ে ফিরে আসি কারন
আমার অপরাধবোধ হয়
তাদের সাথে পর্যাপ্ত সময় না কাটাতে পেরে
———পিতামাতা-অপরাধবোধ
৯৯
আমি ভাবতাম আমার বাদামী অভিবাসী শরীর
সবসময় কঠিন পরিশ্রম করা উচিত
ঘরের অন্য সবার চাইতে
কারন এটাই আমাকে মুল্যবান করে তুলেছে
১০০
আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা নিষ্পত্তিযোগ্য নয়
১০১
জমিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ছড়িয়ে দিল
আর বললো তুমি তোমার পা ওপরে তোল
গাছেরা বললো আমরা তোমাকে জীবন দিব
বাতাস বললো আমাকে নিশ্বাসের সাথে ভেতরে নাও
মাটি বললো
যা কিছু তোমার যত্ন নেয় তুমি তাদের যত্ন নাও
আর আমরা তাদের সব কিছু থেকে আমাদের পিঠ সরিয়ে নিই
——-প্রতারনা
১০২
আমরা ধ্বংস করেছি
আমাদের একমাত্র ঘর
সুবিধা আর লাভের খাতিরে
এর কোনটাই হবেনা
ব্যবহার উপযোগী যখন পৃথিবী
নিঃশ্বাস নিতে হবে অপারগ
১০৩
পৃথিবীর খেলার মাঠে উচ্চকিত হওয়া
আমাদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেনা
যে ধুলা আমরা আমাদের পায়ে দলিয়ে যাই
বাতাস ছাড়া আমরা কিছুই না
আর আগুন আর পানি আর মাটি ছাড়া
আমরা মানুষ
যারা কি দিয়ে তৈরি তা ভুলে যাই
একজন মানুষ যে আবহাওয়া সম্পর্কে কথা বলে
যেন এটা পার্থিব আর জাদুকরী কিছু নয়
যেন সমুদ্র
পবিত্র জল নয়
যেন আকাশ
একটি দৃশ্য নয়
যেন প্রাণীকুল
আমাদের ভাইবোন নয়
যেন প্রকৃতি ঈশ্বর নয়
আর বৃষ্টি ঈশ্বরের চোখের জল নয়
আর আমরা ঈশ্বরের সন্তান নই
যেন ঈশ্বর নিজেই পৃথিবী নয়
১০৪
আমি একটি প্রথার উপযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম
যা আমাকে শুন্য করে দিয়ে গিয়েছে
——–পুঁজিবাদ
১০৫
আমি ভেবেছিলাম যে আমি পেরেছি
আমার পথের অভীষ্টলাভ করতে
সুখী হয়ে থাকার
অথচ বাইরে কিছু নেই
যা আমাকে পরিপুর্ণতার পথে নিয়ে গিয়েছিল
এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
১০৬
সুখ বুড়ো হয়ে গেছে
আমার জন্য অপেক্ষায় থেকে
আর আমি বুড়ো হয়ে গেছি
সুখের খোঁজে
সেসব জায়গায় যেখানে সে বাঁচেনা
১০৭
আমাদের আত্মারা
প্রশমিত হবেনা
আমাদের অর্জন দ্বারা
আমরা যেভাবে দেখি
অথবা যেসব কঠিন পরিশ্রম আমরা করি
এমনকি আমরা যদি ব্যবস্থা করতে পারি
পৃথিবীর সব টাকা আয় করতে
আমরা কোন কিছুর অভাবে শুন্য বোধ করবো
আমাদের আত্মা যৌথতার জন্য ছটফট করবে
আমাদের গভীবতম সত্ত্বা একে অন্যের সঙ্গলাভের আকাঙ্খা করতে থাকবে
আমাদের যুক্ত হওয়া প্রয়োজন
বেঁচে ওঠার জন্য
১০৮
আমি ভীষনভাবে পথভ্রষ্ট হই
যেখানে আমি যেতে চাই তা ভেবে
আমি ভুলে যাই যে যেখানে আমি আছি
তা ইতিমধ্যেই অনেক জাদুকরী
——-এখানে
১০৯
বন্ধুরা আমি সেই দিনগুলোর অভাব বোধ করি
আমার পার্থিব জীবনের প্রতিটা খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতো
আর আমি তাদের জীবনের সাধারন ঘটনার খুঁটি নাটি সম্পর্কে জানতাম
আমাদের সেই ধারাবাহিকতাকে ধরার চেষ্টা করে পরিনত বয়স
ফলকের চারপাশে হাঁটা
দীর্ঘ কথোপকথন যখন আমরা ছিলাম
মুহুর্তে এতটাই নিবিষ্ট যে সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতাম না
যখন আমরা জয় করি আর তা উদযাপন করি
যখন আমরা ব্যর্থ হই আর তা আরো কঠিনভাবে উদযাপন করি
যখন আমরা নিতান্তই শিশু ছিলাম
এখন আমাদের রয়েছে খুব গুরুত্বপুর্ণ চাকরি
যা আমাদের ভরিয়ে রাখে ভারি কর্মব্যস্ততায়
আমাদের বর্ষপঞ্জি যাচাই করে নিতে হয় শুধু কফি পানের তারিখ নির্ধারনে
যা আমাদেরই একজন শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়
কেননা পরিনত বয়স খুব বিধ্বস্ত হয়ে থাকে
বেশিরভাগ সময়ে আমাদের বাসা বের থেকে হওয়ার সময়ে
আমি অভাব বোধ করি আমি জানতাম একদা আমার ছিল
এক গোষ্ঠী মানুষ যারা আমার আমি থেকে বড় ছিল
সেই থাকার বোধ জীবনকে বাঁচতে সহজ করে দিত
——–বন্ধুত্বের স্মৃতিচারন
১১০
যা কিছু আমাদের পুর্ণ করে তুলতে পারে তা ইতিমধ্যে আমাদের ভেতর রয়েছে
সেগুলো শুধু জিনিস নয়
ওরা মানুষ
আর হাসি আর সংযুক্তি
___অপরিবর্তনীয়
১১১
তুমি হয়তো শেষ করেছো
বাইরের কাজ
কিন্তু তোমার মন উপবাসী
অন্তর্গত মনোযোগের জন্য
——শুনুন
১১২
আমি ছুঁড়ে মারছি সমস্ত কল্পিত বিষয়
সর্বান্তকরনে নিজেকে সাহায্য করার বানিজ্যিকীকরন
আমি পন্য ক্রয় আর সেবাদানের ধারনায় ক্লান্ত
যা আমাকে কিছুই আগের চেয়ে ভালো বোধ করায় না
১১৩
আমি নিখুঁত হওয়ার বিষয়ে তোয়াক্কা করিনা
আমি বরং গভীরতার দিকে গড়িয়ে যাবো
জীবনের বিশৃঙ্খলায়
১১৪
আমরা ভাবি আমরা হারিয়ে গেলাম
যখন আমাদের সম্পুর্ন
পাওয়া আর পরিপুর্ণ সত্ত্বা
ভবিষ্যতের কোথাও আছে
আমরা আমাদের হাত আর হাঁটুতে
ভাবছি আত্ম উন্নয়ন
আমাদের সাহায্য করবে তাদের কাছে পৌঁছতে
কিন্তু এই বোধ আমাদের যাচ্ছেতাই রকমের
কখনও শেষ হবার নয়
আমি ক্লান্ত জীবন যাপনের এমনতর স্থগিতকরনে যতক্ষন না পর্যন্ত
আমার কাছে আরো তথ্য না থাকছে আমি কে সম্পর্কে
প্রতি মাসে আমি একজন নতুন মানুষ
সব সময় কিছু হয়ে উঠছি আর হয়ে উঠছি না
শুধু হতে চাই আবার
আমাদের পুর্ণ সত্ত্বা ভবিষ্যতে আবদ্ধ নয়
তারা ঠিক এখানে
তারা অবস্থান করে শুধুমাত্র এই মুহুর্তে
আমার স্থির করার দরকার নেই
আমি সারা জীবন ধরে উত্তর খুঁজতে থাকবো
এ জন্য নয় যে আমি একজন অর্ধ গঠিত জিনিস
বরং এ জন্য যে আমার বাড়তে থাকার মতো যথেষ্ট দীপ্তি আমার আছে
যা কিছু প্রয়োজন একটি প্রানবন্ত জীবন যাপনের জন্য
ইতিমধ্যে আমার ভেতরে আছে
—- আমি সম্পুর্নভাবে সরল কারন আমি নিখুঁত নই
১১৫
নির্মান ক্ষমতা তা নয় যে কতখানি
কাজ আমি করি এক দিনে
বরং কত ভালো ভাবে আমি ভারসাম্য রক্ষা করি
সুস্থ থাকার জন্য যতটুকু আমার প্রয়োজন
—–নির্মান ক্ষমতা থাকা হল জানা কখন বিশ্রাম নিতে হবে
১১৬
আমার মন আর দেহকে সম্মান করতে হবে
যদি আমি এই যাত্রাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই
——জীবন
১১৭
তোমার যোগ্যতা যাচাই করার যোগ্যতা কারো নেই
প্রতিদিন তুমি জেগে ওঠ আর তোমার জীবন যাপন কর
তোমারটাই একমাত্র তোমার মতোন
যা গুরুত্বপুর্ণ
১১৮
ছোট কবি
মনে হয় যেন আরো শব্দ তুমি লিখো
তুমি যত চিন্তা কর
তুমি তা লিখছো
তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রিত কেন ভাবছ
শব্দগুলো কি উন্মোচিত হয়ে আসছেনা
তোমার সামনে প্রথমবারের মত
অনুমতি ছাড়া ঢালছো
আর এখন তুমি চেষ্টা করছো
তাদেরকে তোমার পক্ষে কাজ করাতে
কিন্তু জাদু এভাবে কাজ করে না
তোমার তাড়াহুড়া
তোমার শ্রেষ্ঠ কাজের শ্বাসরোধ করছে
তোমার ভেতরের আঁচে শুকিয়ে শক্ত হচ্ছে
তোমার কাজ হলো
প্রস্তুত প্রক্রিয়া স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া
ধৈর্য্য ধারন করো আর যখন সময় হবে
বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড তোমাকে আবার ব্যবহার করবে
——–প্রেরণা
১১৯
যদি তুমি ক্লান্ত হও
আর শেষ করে উঠতে না পার
যেখানে তুমি যেতে চেয়েছিলে
সেটাও তবে অগ্রগতি
১২০
নিশ্চুপ হও আমার মন আমি প্রার্থনা করছি
তোমার অতিরিক্ত ভাবনা
আমাদের আনন্দ ছিনিয়ে নিচ্ছে
১২১
তুমি যা কিছু করো তা সবই
আত্ম উন্নয়ন হতে হবে এমন নয়
তুমি যন্ত্র নও
তুমি একজন মানুষ
বিশ্রাম ছাড়া
তোমার কাজ কখনোই পরিপূর্ণ হতে পারেনা
খেলাধুলা ছাড়া
তোমার মন কখনোই পরিপুষ্ট হতে পারেনা
—–ভারসাম্য
১২২
খেলা হলো যখন আমরা সময় চুরি করি
১২৩
যদি তুমি সৃজনশীল হতে চাও
তোমার শেখা প্রয়োজন কি করে
উদ্দেশ্যহীন সব কাজ ঠাসাঠাসি করে করতে হবে
শিল্প তৈরি হয়না
সারাদিন কাজ করে
প্রথমে তোমাকে যেতে হবে
বাইরে আর বাঁচতে হবে
———শিল্প আসবে
১২৪
তোমার নিজের পথ থেকে তুমি বের হও
তোমার নিজের পথ থেকে তুমি বের হও
তোমার নিজের পথ থেকে তুমি বের হও
১২৫
আমি আমার চেষ্টা করা শেষ করেছি
নিজেকে প্রমান করতে
নিজের কাছে
১২৬
আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি
যখন আমি স্থির করলাম যে মজা করা
ছিল অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ
নিজেকে বোকা দেখানোর ভয় পাওয়ার চেয়ে
১২৭
আমরা অনেক কঠিন পরিশ্রম করেছি
এখানে থাকতে
আমাদের সঙ্গতি আছে
ধীর হওয়ার আর দৃশ্য উপভোগ করার
অধ্যায় ৪
জাগ্রত
১৩১
আমি জেগে উঠছি
আমার জীবনের দীর্ঘ রজনী থেকে
আমি সূর্য দেখেছি বছর পেরিয়ে গেছে
বোধন
১৩২
তুমি একজন আজন্ম মুখরা রমনীকে চুপ করাতে পারবেনা
১৩৩
আমি আমার মায়ের পায়ের মুখ থেকে পতিত
এই পৃথিবীর হাতের তালুতে
আমার ওপর ঈশ্বরের রাগ সাথে নিয়ে
——জন্ম
১৩৪
আমি রক্তে শোধ করেছি ঋণ এখানে থাকতে।আমি এখানে থাকতে শৈশবের মলমুত্রে ঋণ শোধ করেছি বড় দৈত্যের কাছে তোমার চেয়ে বেশি। আমাকে মারা হয়েছে নিঃশব্দে অনেক বার তারপর আমি এই পৃথিবীর কোলে এসেছি।তুমি তা দেখোনি যা আমি দেখেছি।আমার নিম্নতম স্থান এত গভীরে প্রবেশ করেছে যে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এটা নরক ছিল।আমি এক দশক ব্যয় করেছি এর ওপরে উঠে আসতে।আমার হাতে ফোস্কা পড়ে গেছে। আমার পা ফুলে গেছে।আমার মন বলত আমি এটা আর নিতে পারছিনা।আমি আমার মনকে বলতাম তুমি বরং তোমার নিজের সাথে এক হয়ে থাক।আমরা এখানে আনন্দের জন্য এসেছিলাম।আর আমরা এর পুরোটা একসাথে অনুভব করবো। আমাকে শিকার করা হয়েছে।মেরে ফেলা হয়েছে।আর হেঁটে ফিরে এসেছি পৃথিবীতে।আমি প্রত্যেকটা জন্তুর ঘাঁড় মটকে দিতাম যারা ভাবত এমনটা করা যেতে পারে।আর তুমি আমার আসন নিতে চাও।যেটা আমি তৈরি করেছি আমার জীবনের গল্প দিয়ে।মধু।তুমি খাপ খাওয়াতে পারবেনা।আমি তোমার মতো ভাঁড়েদের ভেলকি দেখাই।আমি দাঁত খোঁচাই আর তোমার মত বোকাদের সাথে হাসি মজা করি।আমি খেলা করেছি, ঘুমিয়েছি আর নেচেছি বড় শয়তানদের সঙ্গে।
১৩৫
দিনের বেলা তুমি নিজেকে শুনতে পাওনা
ধীর হও
তোমার দেহ আর মন
একে অন্যকে ধরে ফেলে
——-স্থিরতা
১৩৬
কি অব্যাহতি
এটা উদঘাটন করা যে
যন্ত্রণা আমি ভাবতাম
আমার একার ছিল
এও অনুভুত হয়
আরো অনেকের মধ্যে
১৩৭
আমার শরীর নিজেকে সমুদ্রের ঢেউ আর রক্তে নবায়ন করে
১৩৮
আমার একটি খুব জটিল সম্পর্ক আছে
যে দেশে আমি জন্মেছি তার সাথে
আমাদের পুরুষগুলোকে
ওইসব রাস্তায় জবাই করা হয়েছিল
আমাদের নারীরা ধর্ষিত হয়েছিল
যখন হাজারো লোকের ওপর অত্যাচার করা হয়েছিল
আর পুলিশ অনেককে গুম করে ছিল
ভারতীয় রাষ্ট্র অস্বীকার করে তাদের কৃতকর্মের
কিন্তু যে কোন পরিমানের ইয়োগা বা বলিউড
আমাদের ভোলাতে পারবেনা
শিখ গণহত্যা তাদের পরিকল্পিত ছিল।
——-কখনো ভুলোনা ১৯৮৪
১৩৯
আমি কখনো শান্ত হতে পার
বোনা
যেভাবে আমার
লোকজন প্রতিরোধ করে ছিল
যাতে আমি স্বাধীন হতে পারি
১৪০
আমাদের ক্ষতগুলোই হল কারন
আমি কবিতা লিখতে শুরু করার
প্রতিটা শব্দ
যা আমি কখনো লিখেছি
আমাদের বাহুতে আামাদের ফিরিয়ে আনার জন্য
১৪১
তারা ফিরিয়ে নিতে পারতো
আমাদের যা কিছু আছে
আর আমরা এমন জাদু করতাম
আবার সুন্দর জীবন সবার জন্য অগ্রগন্য হত
হাড়গোড় নিয়ে আমাদের পেছনে
এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতাম
মাটি থেকে উপরের দিকে
আমরা যাতে ভালো ছিলাম ঠিক তেমনটা
১৪২
আমাদেরটা অবশ্যই
একটি বিদ্রোহের রাজনীতি
স্বাধীনতা বেঁচে থাকতে পারেনা
যতদিন না সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিতরা স্বাধীন হয়
১৪৩
ঘুমিয়ে পড়োনা
তোমার সম্ভাবনার পাপোষ
অপেক্ষা করছে ঘটনার
যখন কিনা তুমি
যা ঘটে তা
১৪৪
তুমি একজন মানুষ
কিন্তু যখন তুমি চলো
একটা গোটা সমাজ
তোমার ভেতর দিয়ে হাঁটে
—– তুমি কোথাও একা যাওনা
১৪৫
বেঁচে থাকার ধর্ম অনুযায়ী
একটি বর্ণবাদী পৃথিবীতে
যারা কালো নয় তারা
কালোবিদ্বেষী হয়ে বেড়ে ওঠে
আমরা সবাই তেমনটাই শিখি যে
হালকা হওয়াই অধিকতর ভালো
—–পূর্বাবস্থা
১৪৬
তোমার কন্ঠ
হল তোমার সার্বভৌমত্ব
—–স্বাধীন
১৪৭
সে বলে তোমাকে ক্লান্ত দেখায়
আমি তার দিকে ঘুরে তাকাই আর বলি
হ্যাঁ আমি বিধ্বস্ত
আমি দশ বছর যাবত নারী বিদ্বেষী মনোভাবের সাথে যুদ্ধ করছি
আমাকে আর কেমন দেখাবে বলে তুমি আশা করো
১৪৮
এই গ্রহে কেউ নেই
ধবল পুরুষের চেয়ে অধিক
যে অস্বীকার করে
সবকিছু অগ্রাহ্য করে
তার সামনে রাখা প্রমান
তারপরেও ভাবে বর্ণবাদ আর লিঙ্গ বৈষম্য
আর সমস্ত পৃথিবীর ক্ষোভ অনস্তিত্বশীল
১৪৯
পৃথিবী বদলে যাচ্ছে
তুমি কি এটা অনুভব করতে পারো
নিজেকে নিরাভরণ করে পিছলে যাচ্ছে
অস্বস্তিকর কিছুর ভেতরে
আর তা আরো ন্যায় সঙ্গত
——ঢেউ
১৫০
আমি আগ্রহী নই
একটি নারীবাদী দর্শনে যা ভাবে
নারীকে তারা কেবল ওপরে অবস্থান করে দিচ্ছে
নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার ওপরে আদতে যা অগ্রগতি
—–তোমার সুবিধামতো প্রতিমুর্তি নয়
১৫১
ভবিষ্যত
আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী
তৈরি হতে পারেনা
অতীতের দুর্নীতির ওপরে
—–এটা ছিঁড়ে ফেল
১৫২
আজ আমি আমাকে প্রথমবারের মত দেখলাম
যখন আমি ধুলো ঝারলাম
আমার মনের আয়নার
আর যে নারী ফিরে তাকাল
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হযে যাচ্ছিল
এই সুন্দরী জন্তুটা কে
এই অতি স্বর্গীয় ধরনী বাসী
আমি আমার মুখ স্পর্শ করলাম আর আমার প্রতিচ্ছবি
আমার স্বপ্নের নারীকে স্পর্শ করলো
তার সব চমৎকার হাসি আমাকে ফিরিয়ে দিল
আমার হাঁটু মাটির কাছে আত্মসমর্পন করলো
আমি যেন কেঁদে উঠলাম আর দীর্ঘশ্বাস নিলাম ভেবে
একটা পুরো জীবন পার করে ফেলেছি
নিজের থেকে
অথচ নিজেকে দেখিনি
দশ বছর ধরে এই দেহে বাস করছি
কখনো একবারের জন্য একে ছেড়ে যাইনি
যদিও এর সব অলৌকিকতা হারিয়েছি
মজার না বিষযটা কি করে পারলে তুমি
একটা জায়গা দখল করে রাখলে
স্পর্শ না করে
কি করে আমার এত সময় দরকার হলো
আমার নয়নের নয়ন মেলে দেখতে
হৃদয়ের হৃদয় জড়িয়ে ধরতে
আমার ফুলে ওঠা চরণের তলে চুমু খেতে
আর তাদের ফিসফিস শুনতে
তোমাকে ধন্যবাদ
তোমাকে ধন্যবাদ
তোমাকে ধন্যবাদ
লক্ষ্য করার জন্য
১৫৩
তোমার উন্নতি করার মত সবকিছু রয়েছে
আত্মবিশ্বাসী হয়ে
তবুও তুমি নিজেকে সন্দেহ করে তোমার সব সময় নষ্ট করো
১৫৪
একটা কথোপকথন হয়
তোমার ভেতরে
গভীর মনোযোগ দাও
তোমার অন্তর্জগতের দিকে
কি কি বলছে
আরো পড়ুন: দেহ ঘর (দ্বিতয়ী অধ্যায়) । রুপি কৌর । অনুবাদক: সায়মা মনি
১৫৫
আমি প্রতিরোধ করা বন্ধ করলাম
অপ্রীতিকর অনুভুতি
আর গ্রহণ করলাম সুখ
যার সাথে কোন সম্পর্ক নাই
সব সময় ভালো বোধ করার
——ভারসাম্য
১৫৬
খুব সহজ ভালোবাসা
আমাদের ভালোটুকুকে
কিন্তু সত্যিকার আত্ম প্রেম হলো
খারাপ টুকুকে মেনে নেয়া
যা আমাদের সবার ভেতরে আছে
——–গ্রহণযোগ্যতা
১৫৭
তুমি কি সেই নারীর কথা শুনতে পাও যে আমার সামনে এসেছিল
পাঁচশত হাজার কন্ঠ
আমার ঘাড়ের ভেতর দিয়ে বাজছে
যেন এটা তাদের জন্য তৈরি মঞ্চ ছিল
আমি বলতে পারিনা আমার কোন গুণাবলী আমার
আর কোন গুণাবলী তাদের
তুমি কি দেখতে পাও তারা আমার আত্মাকে দখল করে নিচ্ছে
আমার গ্রন্থিগুলো ঝাঁকাচ্ছে
সবকিছু করতে
যা তারা পারে নাই
যখন তারা বেঁচেছিল
১৫৮
আমি আমার দেহের কুয়ায় ডুব দেই
আর অন্য জগতে এসে শেষ করি
আমার যা কিছু প্রয়োজন ছিল তার সবটুকু
ইতিমধ্যে আমার ভেতরে আছে
কোন প্রয়োজন নেই
আর কোন জায়গা দেখার
——ঘর
১৫৯
ওহ তবে গর্ভদুয়ার কত সাহসী
পাছে আমরা ভুলে যাই
কত কষ্ট
গর্ভদুয়ার সহ্য করতে পারে
কত আনন্দ এটি দেয়
নিজের কাছে আর অন্যদের
মনে রেখ
কিভাবে বের করে দেয় তোমাকে
একবারও পিছু না হটে
এখন এখানে তুমি আছো
গর্ভদুয়ার শব্দটা ব্যবহার করছো
গালির মতো করে
এমনকি যখন তুমি ছিলেনা
একজন হয়ে ওঠার মতো শক্তিশালী কেউ
১৬০
স্বশব্দে বাঁচো আর গর্ব করো যেন তুমি এর যোগ্য
আর তাদের ফালতু ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করো
একজন নারীর দেখতে কেমন হওয়ার কথা বিষয়ে
১৬১
নারীরা অবস্থানের জন্য লড়াই করছে দীর্ঘদিন যাবত
যখন আমাদের কোন একজন চুড়ান্তভাবে
তৈর করতে পেরেছে নিজের কর্মক্ষেত্র
আমরা সেই নারীকে ভয় পেয়ে যাই
সে আমাদের স্থান নিয়ে নিবে
কিন্তু স্থান এভাবে হয় না
সকল পুরুষর দিকে তাকাও কর্মক্ষেত্রে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠছে
তাদের সংখ্যার গুনিতক হারে
কর্মক্ষেত্রে আরো নারী মানে হলো
আমাদের সবার বেড়ে ওঠার জন্য আরো স্থান
——-একসাথে শক্তিশালী হওয়া
১৬২
আমি এমন একটি নারীবাদে আগ্রহী নই
যা রুপান্তরকামী নারীদেরকে বাদ দিয়ে দেয়
১৬৩
সে বলে তুমি একজন স্বমতে অত্যাসক্ত ব্যক্তি
যেন এটা অপমানজনক
এত বড় বিশ্বাস ধারন করা
সে তাদের আয়তন দেখে অবরুদ্ধ বোধ করে
——-কখনো শান্ত হয়োনা
১৬৪
ঘরে নারীদের খোঁজো
যাদের তোমার চেয়ে কম স্থান আছে
শোনো
তাদের কথা শোনো
আর তারা যেভাবে বলছে সেভাবে কাজ করো
——-প্রশস্ত হও আদিবাসী, রূপান্তরকামী, কৃষ্ণ, বাদামী বিভিন্ন কন্ঠের নারীদের প্রতি
১৬৫
কেন নিজের কাছ থেকে নিজে পরিত্রাণ চাও
যখন কিনা তুমি এত সুন্দর
নিজের দ্যুতির আরো কাছে যাও
১৬৬
দিনের বেলা আমি নড়াচড়া করতে পারতামনা
ওরা নারীরা ছিল
যারা আমার পায়ে জল দিতে এসেছিল
যতক্ষন পর্যন্ত আমি ঢের সুস্থ না হই
দাঁড়ানোর মতো
ওরা নারীরা ছিল
যারা আমার পরিচর্যা করতো
জীবনের দিকে ফেরাতে
——বোনেরা
১৬৭
নিজেকে একটা বিন্দু বানাও
নিজেকে ভালবাসতে
ততোটা ভয়ংকরভাবে যতোটা তুমি অন্যকে বাসো
——-প্রতিশ্রুতি
১৬৮
অন্য কারো এ বিষয়ে প্রভাব খাটানো উচিত নয়
আমরা আমাদের শরীর নিয়ে কি করবো
অন্তত তাদের কেউ তো নয়
যারা আমাদের জুতা পরে হাঁটেনি একদিনও
১৬৯
আমাকে হাসির রেখা আর বলিরেখা দাও
আমি প্রমান চাই আমাদের ভাগ করে নেয়া কৌতুকগুলোর
আমার মুখে ওই রেখা খোদাই করে দাও যেন
একটি গাছ হয় যার শেকড় গভীরে বেড়ে ওঠে
প্রতি বছর অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে
আমি সূর্যের পোড়া দাগ চাই স্মৃতি চিহ্নের মতো
সৈকতে যে শুয়ে আছি সেই জন্য
আমি দেখতে যেমন ছিলাম তেমন হতে চাই
কখনো ভয় পাইনা পৃথিবী যদি
আমাকে তার হাতে তুলে নেয়
আর দেখায় যা দিয়ে আমি তৈরি
আমি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাই নিশ্চিত হয়ে
যে আমি আমার শরীর দিয়ে কিছু করেছিলাম
একে নিখুঁত দেখানোর
চেষ্টা না করে
১৭০
আমি আমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারিনা
এখন যে আমি আমাকে দেখি
আমি আমার ওপর থেকে মন সরাতে পারিনা
কৌশলগুলো বিশ্বাস করতে পারিনা
আমার বরাত দিয়ে করানো হয়েছে
এমন সব ধর্মের দোহাই দিয়ে উপদেশ যে আমি অস্তিত্বের সাথে তর্ক করেছি
যে পাহাড়গুলো আমি ভেঙেছি
আমার আঙুল দিয়ে
আর যে পাহাড় আমি গড়েছি
সব বাজে জিনিস থেকে
মানুষ চেষ্টা করতো
মৃত্যুর সাথে আমাকে পাথরসম করে রাখতে
——-যোদ্ধা
১৭১
আমি প্রায়ই দিবাস্বপ্ন দেখি সেই নারীর যে আমি হয়ে উঠবো
যখন আমি তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে দিই
আমার অরক্ষিত বিশ বছর বয়স
আর পথে তুলে নিই আত্ম বিশ্বাস
আমি অপেক্ষা করতে পারিনা তৈরি করে নিতে
আমার অষ্টাদশী আত্মবিদ্বেষ
জাহান্নামের যেখানে আমি বড় হয়েছি
আমি তিরিশ আর আর চল্লিশের মাঝখানে অশান্ত হয়ে উঠি
আমার আত্মা হয়ে ওঠে
বয়সের সাথে আরো সম্ভাবনাময়
পঞ্চাশে আমি বসবো
আমার বলিরেখা আর রূপালী চুল নিয়ে
দুঃসাহসী কাজগুলো নিয়ে হাসতে থাকবো
আমরা একসাথে যা করেছিলাম
আরো অগনিত বিষয়ে কথা বলতে থাকবো
সামনের দশকগুলোতে
কি কি সুবিধা আছে
বেড়ে ওঠার
আমার সবচেয়ে সুন্দর সংস্করনে
——-বার্ধক্য
১৭২
এখানে থাকো
আজ যা যা করা প্রয়োজন তাতে
——এভাবেই তুমি আগামীকালকে সম্মান করতে পারো
১৭৩
যদি শয়তান না থাকতো
তোমাকে এক কোণায় ঠেলা না দিত
আর তোমাকে জোর না করতো এর ঘাড় মটকাতে
কি করে তুমি জানতে
তুমি এত শক্তিশালী ছিলে
১৭৪
আমার ভেতরে অলৌকিক ব্যাপার আছে
তাদের ঘটে যাওয়ার উপলক্ষ্যের জন্য অপেক্ষা করছে
আমি নিজেকে নিজে কখনো ছেড়ে দিচ্ছিনা
১৭৫
তুমি ভবিষ্যতের নও অথবা অতীতের নও
——-তুমি এখনকার
১৭৬
উচ্চকিত হও
বলো যা তোমার বলা প্রয়োজন
তুমি তোমার জীবন পুনরুদ্ধার করো এটা ভালো অনুভব করায়
১৭৭
যেভাবে আমরা বেড়ে উঠি
জীবনের প্রতিটা দুঃখ থেকে
আমার দেখা সবচেয়ে চমকপ্রদ জিনিস এটি
১৭৮
তুমি একটি সত্ত্বা।একটি পৃথিবী।একটি দরজা।একটি আত্মা।তুমি কখনো একা নও।তুমি অঙ্গ আর রক্ত আর মাংস আর পেশী। একটি সারিবদ্ধ অলৌকিক বিষয় একে অন্যকে বুনে চলেছে।
১৭৯
ভেঙে ফেলো
তারা যেসব দরজা তৈরি করে তার প্রত্যেকটি
তোমার নিজেকে বাহির করতে
আর তোমার সাথে তোমার সব লোকজনকে নিয়ে এসো
——ঝড়
১৮০
তুমি একা নও
যদি একা হতে
তোমার হৃদ কম্পন আর হতো না
আর তোমার ফুসফুস আর টেনে তুলতো না
আর তোমার নিঃশ্বাস আর ঠেলা দিত না
কি করে তুমি একা হও যদি
একটি গোটা সমাজ তোমার ভেতর বাস করে
——তোমার সবকিছু তোমার পক্ষে আছে
১৮১
আমার কখনো থাকবেনা
আমার নিজের এই সংস্করণ আবার
আমাকে ধীর হতে দাও
আর তার সাথে থাকতে দাও
——সদা বিবর্তনশীল
১৮২
তোমার সৌন্দর্য অস্বীকার করা যায় না
তবে তোমার প্রত্যেকটা পবিত্র আর পুরনো বিষয়
আরো বেশি অত্যাশ্চর্যময়
১৮৩
আমি আমার ঈশ্বরসত্ত্বায় জেগে উঠছি
১৮৪
কোন কিছুই আরো বেশি উপভোগের নয়
নিজের পক্ষে নিজে থাকার চেয়ে
১৮৫
আমি পরাজয়ের ভয় করিনা
আমি ভয় পাই আমার সম্ভাবনা
এই পৃথিবীতে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে
১৮৬
দিনগুলো এমন হয়
যখন আলো মিটমিট করে
আর তখন আমার মনে পড়ে
আমিই আলো
আমি ভেতরে প্রবেশ করি আর
আবার এটাকে জালিয়ে দিই
——শক্তি
১৮৭
তুমি শুধু উপরিতলে দাগ কেটেছো
তোমার যতটুকু সামর্থ্য আছে
এমন দশক আছে
তোমার সামনে জয় করার
১৮৮
বোকা মেয়ে
ছোট ফেরেশতা
ছোট শয়তান
এত ভুলে যাও যে তুমি হলে
অলৌকিকতার ঘটক
তুমি মা
জাদুকরী
তোমার জীবনের নিয়ন্ত্রক
১৮৯
এখন তুমি স্বাধীন
আর একটাই বাধ্যবাধকতা আছে
তা হলো তোমার স্বপ্ন
তুমি কি করবে
তোমার সময় নিয়ে
১৯০
দীর্ঘ সংযোগ বিরতির পর আমার দেহ আর মন চুড়ান্তভাবে একে অন্যের কাছে ফিরে এসেছে
____দেহঘর
তিনি ইংরেজি সাহিত্যের নিয়ে পড়াশুনা করে এখন এম ফিল করছেন টি.এস. এলিয়েটের কবিতা নিয়ে।বর্তমানে শিক্ষকতার সাথে জড়িত আছেন।