| 13 ডিসেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প সাহিত্য

তিথওয়ালের কুকুর

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

লেখক- সাদাত হাসান মান্টো

অনুবাদে- বর্ণালী জানা সেন

 

বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সেনারা একই জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। কোন নড়ন চড়ন নেই। লড়াইয়েরও কোন বালাই নেই। খালি নাম-কা-ওয়াস্তে দিনে কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি ছোঁড়া ছাড়া সৈন্যদেরও আর কোন কাজ নেই। আবহাওয়াও চমৎকার। আকাশ, বাতাস বুনো ফুলের গন্ধে মাতাল। প্রকৃতি চলেছে তার নিজের নিয়মে…নিজের খেয়ালে। পাহাড়ি এই এলাকার বড় বড় টিলার পেছনে গাছপালা, ঝোপঝাড়ের আড়ালে সৈন্যরা যে লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে প্রকৃতির কোন মাথাব্যথা নেই। পাখিরা মনের আনন্দে গান গাইছে…যেমনটা তারা গেয়ে এসেছে বরাবর। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে চারিদিক। বাতাসে ভেসে আসে ভ্রমরের গুঞ্জন।
মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দে ভয় পেয়ে পাখিগুলো ডানাঝাপটে উড়ে যায়…যেন বীণার তারে হঠাৎ করে বেসুর বেজেছে। সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে এল প্রায়। এখন না শীত, না গরম। শীত আর গ্রীষ্ম যেন নিজেদের মধ্যে একটা সন্ধি করে নিয়েছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যায়।
এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় হাঁপিয়ে উঠেছে সেনারা। মুখোমুখি যে দুটো পাহাড়ে দুপক্ষের সেনারা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে সে পাহাড়দুটোও আবার সমান উঁচু। তাই কেউ কারো ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছে না। কেউ কাউকে মাত দিতে পারছে না। নীচের উপত্যকায় সাপের মতো এঁকে বেঁকে চলেছে পাহাড়ি নদী।
এই যুদ্ধে বিমানবাহিনীকে শামিল করা হয়নি। আর সেনাদের হাতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক, কামান কিছুই নেই…একেবারে নিধিরাম সর্দার। রাতে দুপকক্ষের সেনারাই আগুন জ্বালিয়ে বসে বিশ্রাম নেয়…গান গায়। এপাশের লোকেরা শুনতে পায় ওপাশের কথা।
এই সবে আজকের মতো চা-পর্ব শেষ হল। আগুনও প্রায় নিভে এসেছে। শিরশিরে বাতাস গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। বাতাসে ভেসে আসে পাইন ফলের গন্ধ।এই গন্ধ ভালোই লাগে। সেনারা এখন ঘুমে কাদা। শুধু ঘুমোয়নি জমাদার হরনাম সিং। আজ তার ওপর রাত পাহারার দায়িত্ব। ঘড়িতে দুটো বাজে। হরনাম গিয়ে গান্ডা সিং-কে ডেকে দেন। এবার গান্ডা সিং পাহারা দেবে।
ডিউটি শেষ। এবার ঘুমোতে যান হরনাম। কিন্তু ঘুম আসে না তার চোখে। ঘুমপরী কি তবে আকাশের মিটমিটে তারাদের মতোই অত দূরের মানুষ! গুনগুনিয়ে গান ধরে হরনাম…পাঞ্জাবি লোকগীতি…
‘ও নাগর, এক পাটি জুতো কিনে দে
চুমকি দেওয়া ঝলমলে জুতো কিনে দে
দরকারে তোর মোষ বেচে দে
কিন্তু আমায় জুতো কিনে দে
চুমকি দেওয়া ঝলমলে জুতো কিনে দে’
এবার বুকের ভেতরটা খুব হালকা লাগে। চোখে জল এসে যায়। তার গান শুনে একে একে সবার ঘুম ভেঙে যায়। বান্টা সিং-এর গলাটা খুব মিষ্টি। এখানে সেই সবচেয়ে ছোট। ‘হীর রঞ্ঝা’ থেকে একটা প্রেমের গান ধরে বান্টা। মিলন-বিরহের পাঞ্জাবি এই অমর গাথা শুনে বাতাসও ভারি হয়ে ওঠে। বিষাদের এই সুর হালকা কুয়াশার মতো ঢেকে দেয় গোটা চত্বর। ধূসর, নীরেট পাহাড়ও যেন এই সুরে গলে জল।
তাল কেটে যায় হঠাৎ। কোত্থেকে যেন একটা কুকুর ডেকে ওঠে! মাথা গরম হয়ে যায় জমাদার হরনাম সিং-এর… ‘এই কুত্তার বাচ্চাটা আবার কোত্থেকে উদয় হল!’
কুকুরটা আবার ডেকে ওঠে। এবার আরো কাছ থেকে। পাশের ঝোপে যেন একটা খস খস শব্দ শোনা যায়! পুরো ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে উঠে যায় বান্টা সিং। একটু পরেই সে ফিরে আসে। তার পেছন পেছন লেজ নাড়তে নাড়তে আসে সেই কুকুর। একেবারে পাতি একটা নেড়ি কুত্তা।
বান্টা সিং ঘোষণা করে দেয়… ‘এটাকে ওই ঝোপের আড়ালে খুঁজে পেলাম। ও বলল ওর নাকি ঝুন ঝুন’। হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই।
কুকুরটা এবার লেজ নাড়তে নাড়তে যায় হরনাম সিং-এর কাছে। হরনাম তার হাতের ঝোলাটা থেকে একটা বিস্কুট বের করে মাটিতে ছুঁড়ে দেন। কুকুরটা যেইনা খেতে যাবে অমনি বিস্কুটটা ছোঁ মেরে তুলে নেন তিনি … ‘রোসো বাবা রোসো। তুমি যে পাকিস্তানি কুকুর নও তার কী প্রমাণ’?
আবার তারা হো হো করে হেসে ওঠে। বান্টা সিং কুকুরটার পিঠ চাপড়ে দেয়… ‘জমাদার সাহেব ঝুন ঝুন কিন্তু হিন্দুস্তানি কুকুর’।
‘তাহলে প্রমাণ দাও’…কুকুরটাকে আদেশ করেন হরনাম সিং। কুকুরটা আবার লেজ নাড়ে।
‘সব কুকুরই লেজ নাড়তে পারে। এতে কিছু প্রমাণ হয়না’।
এবার বান্টা সিং বলে ওঠে… ‘ও বেচারি একটা উদ্বাস্তু… দেখছ না কেমন লেজ নাড়ছে’।
এবার হরনাম সিং আরো একটা বিস্কুট ছুঁড়ে দেন কুকুরটার দিকে। কিন্ত মাটিতে পড়ার আগেই সেটাকে তিনি লুফে নে্ন।
একজন সেনা মাঝখান থেকে বলে ওঠে… ‘সবাইকে এখন ঠিক করে নিতে হবে যে সে হিন্দুস্তানি না পাকিস্তানি। কুকুরদেরও’।
হরনাম সিং ঝোলা থেকে আবার একটা বিস্কুট বের করেন… ‘সব পাকিস্তানিকে গুলি করে মারা হবে। কুকুরও বাদ যাবে না’।
আরেকজন সেনা চেঁচিয়ে ওঠে… ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’।
ওদিকে কুকুরটা বিস্কুটে মুখ দিতে গিয়েও আর দেয়না। ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লেজটাকে দু-পায়ের মধ্যে গুঁজে দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে। হেসে ফেলেন হরনাম সিং… ‘আরে নিজের দেশে এত ভয় কেন? এই নে বাবা আরেকটা বিস্কুট নে’।
রাত কেটে ভোর ভয়। আজকের সকালটা যেন বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেল! অন্ধকার ঘরে কেউ যেন হঠাৎ করে আলো জ্বালিয়ে ফেলেছে। তিথওয়ালের পাহাড়ে উপত্যকায় সকালের সোনা রোদ ছড়িয়ে পড়ে।
অনন্ত কাল ধরে এই যুদ্ধ চলছে। কে যে জিতছে তা কেউ জানে না। জমাদার সিং তার দূরবীণ দিয়ে এলাকাটাকে একবার জরিপ করে নেন। পাহাড়ের ওপাশ থেকে ধোঁয়া উঠছে। তারমানে ওরাও সকালের জলখাবারের আয়োজন করছে।
পাকিস্তানের সেনার সর্দার হিম্মত খান তাঁর ইয়া মোটা গোঁফে তা দিয়ে তিথওয়ালের ম্যাপ নিয়ে বসলেন। এবার এলাকাটাকে হাতের তালুর মতো চিনে নিতে হবে। তার পাশে বসে ওয়্যারলেস অপারেটর প্ল্যাটুন কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার কী করতে হবে না হবে তাপ্ল্যাটুন কমান্ডারই বলে দেবেন। একটু দূরে পাথরে হেলান দিয়ে বসে আছে বসির। রাইফেলটা তার সামনে পড়ে। সে একজন সামান্য সেনা। আরাম করে বসে গুনগুনিয়ে গান ধরে সে…
‘ও আমার চাঁদবদনী …ও আমার ফুলটুসি… রাতটা কোথায় কাটিয়ে এলি
রাতটা কোথায় কাটিয়ে এলি’?
গানে কথায় সে বেশ মজেছে। প্রতিটা শব্দ তাই কেটে কেটে বলে…তারপর গলাটা আরো চড়ায়। হঠাৎই চেঁচিয়ে ওঠেন সুবেদার হিম্মত খান… ‘কাল রাতে কোথায় ছিলি?’
কথাটা তিনিবসিরকে বলেনি। বলেছেন কুকুরটাকে। দিন কয়েক আগে ব্যাটা কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল। ক্যাম্পে বেশ আয়েসেই ছিল। তারপর কাল রাতে হঠাৎ করে উবে গেল। এখন নষ্ট মেয়ের মতো ঘরে ফিরে এসেছে।
কুকুরটাকে দেখে বসির মজা পেয়ে আবার গান শুরু করে… ‘রাতটা কোথায় কাটিয়ে এলি? রাতটা কোথায় কাটিয়ে এলি?’ কুকুরটা শুধু লেজ নেড়েই যায়। সুবেদার হিম্মত সিং একটা নুড়ি ছুঁড়ে দেন কুকুরটার দিকে ‘ব্যাটা শুধু লেজ নাড়তেই পারে…গর্ধভ কোথাকার’।
বসির বলে…‘কিন্তু ওর গলায় ওটা কী?
একজন সেনা এসে কুকুরটার গলায় বাঁধা দড়িটা খুলে দেয়। দড়ির মধ্যে এক টুকরো কাগজ বাঁধা। কিন্তু কাগজে কী লেখা আছে সেটা পড়তে পারে না।
এবার এগিয়ে আসে বসির। অনেক কষ্টে সে লেখাটা সে উদ্ধার করে… ‘কাগজে লেখা আছে ঝুন ঝুন’।
সুবেদার হিম্মত খান তাঁর সেই অতিকায় গোঁফে তা দিয়ে বলেন… ‘ও বসিরে…আর কী লেখা আছে ওটায়?’
‘ হ্যাঁ স্যার আছে। লেখা আছে যে এটা হিন্দস্তানি কুত্তা’।
‘হনে হয় এটা একটা সংকেত। কিন্তু এর মানেটা কী?’…সুবেদার হিম্মত সিং ভেবে কূল কিনারা পান না।
গম্ভীর মুখে বসির জবাব দেয়… ‘এটা মনে হয় একটা গুপ্ত সংকেত’।
আরেক জন সেনা এবার বিজ্ঞের মতো মতো বলে… ‘ঐ ঝুন ঝুন-এর মধ্যেই সংকেতটা রয়েছে’।
বসির আবার ভালো করে লেখাটা পড়ে দেখে… ‘ঝুন ঝুন…এটা হিন্দুস্তানি কুত্তা’।
সুবেদার হিম্মত খান তক্ষুনি ওয়্যারলেসটা তুলে নিয়ে প্ল্যাটুন কমান্ডারকে আদ্যোপান্ত সব বলে যান… ‘কুকুরটা এসে জুটেছিল দিন কয়েক আগে। কাল রাতে সে উধাও হয়ে যায়। আবার সকালে ফিরে আসে’।
‘কী বলছটা কী?’…ওপার থেকে হুংকার দেন প্ল্যাটুন কমান্ডার।
সুবেদার হিম্মত খান আবার ম্যাপটা জরিপ করতে বসেন। তারপর সিগারেটের প্যাকেটটা ছিঁড়ে একটা ছোট টুকরো বের করে নেন… ‘বসির, এর ওপর লেখ… গুরুমুখীতে লিখবে কিন্তু। ওটাই শিখরা বোঝে…
‘কী লিখব স্যার?’
‘লেখ যে…
বসিরের মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি খেলে যায়… ‘শুন শুন…হ্যাঁ এটাই ঠিক হবে। ওদের ঝুন ঝুন-এর জবাব হবে আমাদের শুন শুন’।
মাথা নাড়েন সুবেদার হিম্মত খান… ‘বাহ…বেড়ে বলেছ কিন্তু। কিন্তু তার সঙ্গে আরেকটা কথা লেখ যে… ‘এটা পাকিস্তানি কুত্তা’।
সুবেদার হিম্মত খান এবার কাগজটাকে বেঁধে দেন কুকুরটার গলায়… ‘যা ব্যাটা, এবার বাড়ির লোকজনের কাছে ফিরে যা’।
কুকুরটার দিকে এবার একটু খাবার ছুঁড়ে দেন তিনি… ‘কোন বেইমানি নয় কিন্তু, বেইমানির সাজা মৃত্যু’।
কুকুরটা লেজ নাড়তে নাড়তে খাবার খেয়ে যায়। তারপর, ভারতীয় সেনারা যেদিকে রয়েছে সেদিকে কুকুরের মুখটা ঘুরিয়ে এক ঠেলা দেন হিম্মত খান… ‘যা ব্যাটা, দুশমনদের এই সন্দেশ দিয়ে ফিরে আয়। এটাতোর কমান্ডারের নির্দেশ’।
কুকুরটা আবার লেজ নাড়ে। তারপর, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে উপত্যকার দিকে এগিয়ে যায়। দুটো পাহাড়ের মাঝে এই উপত্যকা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবার সুবেদার হিম্মত খান রাইফেলটা তুলে শূন্যে গুলি চালান।
ভারতীয় সেনারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এত সকালে তো গোলাগুলি শুরু হয় না! জমাদার সিং এতক্ষণ বসে বসে ঢুলছিলেন। গোলাগুলির শব্দ পেয়ে তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন… ‘ওদের পালটা জবাব দাও’।
আধ ঘণ্টা ধরে দু পক্ষের গোলাগুলি চলে। সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হয় না। শেষমেশ হরনাম সিং থামতে বলেন সেনাদের… ‘যথেষ্ট হয়েছে’। নিজের লম্বা চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নেন। তারপর বান্টা সিং-কে ডেকে বলেন… ‘ঐ যে কুত্তাটা…কী যেন নাম? ঝুন ঝুন…সে গেলটা কোথায়?’
দার্শনিকের মতো মুখ করে বান্টা সিং বলে… ‘ঐ যে কথায় আছে না কুকুরের পেটে ঘি সহ্য হয় না’।
এমন সময় চেঁচিয়ে ওঠে এক সেনা… ‘ঐ তো সে আসছে’।
‘কে?’…কৌতূহল চেপে রাখতে পারেন না হরনাম সিং।
‘ঐ যে কুত্তাটা। কী যেন নাম ওর? হ্যাঁ…ঝুন ঝুন’।
‘সে ব্যাটা কী করছে?’
নিজের দূরবীণে চোখ রেখে জবাব দেয় সেই সেনা… ‘ও এদিকেই আসছে’।
তার হাত থেকে দূরবীণটা ছিনিয়ে নেন হরনাম সিং… ‘হ্যাঁ সেই বটে। কিন্তু ওর গলায় ওটা কী ঝুলছে? ও তো পাকিস্তানিদের পাহাড়ের দিক থেকে আসছে। শালা…শূয়োরের বাচ্চা!’
নিজের রাইফেলটা তুলে নিয়ে কুকুরটাকে তাক করে গুলি ছোঁড়েন হরনাম সিং। গুলি গিয়ে লাগে পাথরে। কুকুরটা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
খবর এসে পৌঁছয় সুবেদার হিম্মত খান-এর কানে। দূরবিণে চোখ দিয়ে দেখেন কুকুরটা পেছন ফিরে আবার তাঁর দিকেই দৌড়ে আসছে। তিনি চেঁচিয়ে বলেন, ‘যা ব্যাটা যা, সাহসীরা কখনো যুদ্ধ ছেড়ে পালায় না। যা তোর কাজ শেষ করে আয়’। কুকুরটাকে ভয় দেখাতে তিনিও গুলি ছোঁড়েন… কুকুরের কান ঘেঁসে বেরিয়ে যায়গুলিটা । ভয় পেয়ে কুকুরটা শূন্যে লাফিয়ে ওঠে। সুবেদার হিম্মত সিং আবার গুলি চালান। সেটা গিয়ে লাগে পাথরে।
কুকুরটাকে নিয়েই এবার মজার খেলায় মেতে ওঠে দুই পক্ষ। কুকুরটা ভয় পেয়ে এদিক ওদিক চক্কর কাটতে থাকে। আর সেটার অবস্থা দেখে হেসে গড়িয়ে পড়েনহরনাম সিং আর হিম্মত খান । কুকুরটা এবার হরনামের দিকে ছুটে আসে। বাপ-মা তুলে গালি-গালাজ করে আবার তিনি গুলি ছোঁড়েন। গুলিটা গিয়ে লাগে কুকুরের পায়ে। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে সে । পেছন ফিরে আবার সে হিম্মত খানের দিকে ছুটে যায়। ওদিক থেকেওআবার গুলি। কুকুরটাকে ভয় দেখাতে গুলি ছোঁড়েন হিম্মত খান… ‘ যা ব্যাটা যা…মনে সাহস আন…ও… পায়ে লেগেছে বুঝি? তাতে কী! শুধু নিজের কর্তব্য করে যা’। কুকুরটা আবার উলটো দিকে মুখ ঘুরে দাঁড়ায়। একটা পা তো গেছে। আরেকটা পা টেনে টেনে হরনাম সিং-এর দিকে এগিয়ে যায়। এবার রাইফেলটা তুলে একেবারে নিঁখুত লক্ষ্যে গুলি চালান হরনাম। কুকুরটার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সুবেদার হিম্মত খান… ‘বেজম্মাটা আজ শহিদ হল’।
জমাদার হরনাম সিং-এর রাইফেলের নলটা এখনও তেতে রয়েছে। তার ওপর একবার হাত বুলিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলেন… ‘ব্যাটা কুত্তার মতো মরেছে’!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত