| 18 এপ্রিল 2024
Categories
অমর মিত্র সংখ্যা

পাঠ প্রতিক্রিয়া: সবুজ রঙের শহর ।  বিশ্বজিৎ পাণ্ডা 

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

“কি রকম জায়গা ? আচ্ছা, কলকাতায় নাকি গাছ নেই? ওখানকার সব গাছপালা কেটে ফেলেছে?” 

প্রায় একশো বছর আগে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের মঞ্চী এই প্রশ্নগুলি করেছিল শহর  কলকাতার মানুষ সত্যচরণকে। আজন্ম জঙ্গলে, প্রকৃতির পাঠশালায় পাঠ নেওয়া মানুষের কাছে শহর সম্পর্কে এরকমই ধারণা। তারা আশ্চর্য হয়ে ভাবে গাছহীন পরিবেশে মানুষের বেঁচে থাকার বাস্তবতা। নতুন নতুন শহর তৈরি, সভ্যতার অগ্রগতি আরও অনেক কিছুর সঙ্গে ধ্বংস করে দিয়েছে অরণ্য—গাছপালা। সভ্যতার বিষ বাষ্প প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। এর অনিবার্য প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। পরিবেশ রক্ষার জন্য পৃথিবী জুড়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।  

আর তা নিয়ে মানুষ যত ভাবছে ততই তার আগ্রহ বাড়ছে সবুজের প্রতি। সভ্যতার অগ্রগতির হাত ধরে নির্বিচারে আমরা সবুজ-নিধন করেছি। আজও করছি। এর পাশাপাশি মানুষের সবুজ-সচেতনতাও বেড়েছে। এই সচেতনতা থেকেই শহুরে মানুষ রুফ্‌ গার্ডেন, ব্যালকনি গার্ডেন করেন। এক চিলতে ঘরেও টবের মধ্যে সাজানো থাকে এক টুকরো সবুজ। ক্রমশ তার অনেকটাই হয়ে উঠছে দায়হীন দৃশ্য বিন্যাস। আর এরই ক্রম পরিণতি কৃত্রিম সবুজের আমদানি। টবে কৃত্রিম গাছ-পাতা-ফুলের বাহারি আয়োজন। পরিবেশকে বাঁচানোর বদলে এহেন আয়োজন তার আরও ক্ষতি করছে। দিনে দিনে সেই প্রবণতা বাড়ছে। এখান থেকে বোঝা যায় এই সবুজ প্রীতির সঙ্গে সবুজ সচেতনতার কত তফাৎ। এখন প্রায়ই চোখে পড়ে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা টাউনশিপের বিজ্ঞাপন। তারা সকলেই হাজির সবুজের পসরা সাজিয়ে। কে কত বেশি সবুজ দিতে পারবে তারই গালভরা প্রতিশ্রুতি। আর আমরা ইট-পাথরের ধূসরতায় ক্লান্ত হয়ে দৌড়ে যেতে চাইছি সবুজের কোলে। সবুজের হাতছানির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে সকল শুশ্রূষা। সবুজ আনন্দ পাওয়ার জন্য উপরি পয়সা মেটাতেও আমরা উৎসাহী। সবুজ গাছ, সবুজ ঘাস, সবুজ হাওয়া আমাদের প্রাত্যহিকতার গ্লানি দূর করবে। একটু খবর নিলে বোঝা যাবে সেই সব সবুজ টাউনশিপ প্রকৃত প্রস্তাবে এক একটা সবুজ রঙের টাউনশিপ। সবুজ রঙের শহর। সেখানে রঙের সবুজ হয়তো আমাদের সাময়িক চোখের আরাম দিতে পারে, মনের আরাম দেওয়ার সবুজ ঐশ্বর্য তার নেই। সবুজ মানে সবসময় প্রকৃতি নয়। সবুজকে এখন আর প্রকৃতির বিশেষণ বা পরিবেশের প্রতিশব্দ বলা যায় না। 

    এই কথাগুলো মনে হল অমর মিত্রের ‘সবুজ রঙের শহর’ উপন্যাসটির পাঠক্রিয়ায়। উপন্যাস জুড়ে সবুজের সমারোহ। সবুজ রঙের একটা সদ্যনির্মিত টাউনশিপের কথাই বলেছেন লেখক। ২০০৯-এ প্রকাশিত এই উপন্যাস পড়তে গিয়ে সমকালে পাঠক হয়তো ভবিষ্যৎ সময়ের আগ্রাসী অবস্থার কথা ভাবতেন। আর প্রায় এক দশক পরে, এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে এ কোনও ভবিষ্যৎ সময়ের কল্পবিশ্বের আখ্যান নয়, বর্তমান সময়ের আখ্যান। ভবিষ্যতে হয়তো আরও ব্যাপ্ত হবে, যে ব্যাপ্তি উদগ্র হয়ে আছে উপন্যাসের পাতায় পাতায়।         

    নগরের ভিতর আরেকটি নগর। সবুজ নগর। রাষ্ট্রের ভিতর আরেকটি রাষ্ট্র। সে নগরের নিজস্ব পুর-আইন আছে। মেয়রের স্বপ্ন অনুযায়ী সাজানো হয়েছে শহর। তাঁর ইচ্ছে মতো প্রতিটি আবাসিককে চলতে হয় এখানে। অথরিটি জানিয়েছেন নাগরিকদের পুরোনো কোনও স্মৃতি থাকবে না। সবুজ নগরের অধিবাসীরা যে স্মৃতি বহন করবে তা এই নগরের। মানুষের সব অভিজ্ঞতা হবে নগরের। মানুষ তার পূর্ব জীবনের কথা ভুলে যাবে। আগের শহর, আগের গ্রাম, স্বজন পরিজনের কথা ভুলে গিয়ে সবুজ নগরেই তার আত্মাকে সম্পূর্ণ নিবেদন করবে। এই সবুজ রঙের শহরে সব দিনই নতুন করে আরম্ভ হয়। আগের দিনের সবই যেন বর্জ্য। ফেলে দেওয়ার। এই নগরে কোনও স্মৃতি না থাকাটাই বিধি। অথরিটি একটি লিখিত বয়ানে জানিয়েছে—মেমোরি মানুষকে কষ্ট দেয়। স্মৃতি, পূর্বদিনের ঘটনাকে যত মুছে ফেলা যাবে মানুষ তত নতুন করে বেঁচে উঠবে। দুঃখের স্মৃতি যেন না থাকে, আনন্দের স্মৃতিও না। স্মৃতি থাকলেই তার সঙ্গে বর্তমানের একটি তুলনা এসে যায়। আর সেই তুলনাই মানুষকে বেদনার্ত করে। 

    স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে, উদ্বেগহীন জীবন কাটানোর জন্য এই শহরে এসে ফ্ল্যাট নিয়ে আছে মনোময়। সে স্মৃতি আগলে বাঁচে। তার মনে পড়ে সবুজ নগর তৈরির আগে সে এসে যেভাবে দেখেছিল এখানকার জমিকে তার স্মৃতি। তখন সবে গ্রাম দখল করছে নগর কর্তৃপক্ষ। বুড়ো শিমুল, বট, ফুলের বাগান, ফসলের খেত…। স্মৃতি থেকে কিছুই মোছেনি। তার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে এই শহর সম্পর্কে। মনোময় বারবার ডায়াল করে জানতে চায় কর্তৃপক্ষের কাছে। ফোনের ওপারে সুধাকণ্ঠী যুবতীরা সর্বদা প্রস্তুত পরিষেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু রেকর্ডিং নারীকণ্ঠ তার উত্তর দিতে পারে না। শুধু আরও আরও নম্বর বলে যায় ডায়াল করার জন্য। ডায়াল করতে করতে হয়রান হয়ে যায় সে। তার অনেক বই আছে। বই পড়ে। আসলে পড়াশুনোর উদ্দেশ্যেই এই শহরে এসে বাস করছে সে। কিন্তু বইও তো স্মৃতি। 

    মানুষ তো স্মৃতি নিয়েই বাঁচে। আমাদের জীবন পথের প্রতিটি বাঁকেই স্মৃতির মধ্যে জেগে উঠি আমরা। কিন্তু নতুন শহর, সমাজ স্মৃতিকে শেষ করে দিতে চায়। স্মৃতিকে ভয় পায় তারা। কারণ মানুষ যত দীর্ণ হবে ততই সে চাইবে স্মৃতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করতে। অতীত তাকে টানবে।   

    গ্রামে থাকা মনোময়ের পিসি প্রায়ই ফোন করে তাকে। কিন্তু একটানা অনেকক্ষণ কথা বলা যায় না এই শহরে। কর্তৃপক্ষ সেরকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর লাইন কেটে যায়। পিসি তাকে শোনায় চন্দ্রাবলীর কথা। যে চন্দ্রাবলী মনোময়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে গেল।  

    কর্তৃপক্ষ মনোময়কে ডেকে পাঠায়। কথায় কথায় সে জানতে পারে তার প্রতিদিনের খুঁটিনাটি অথরিটির নখ-পদর্পনে। তার কাছে কী কী বই আছে তার লিস্টও অথরিটির তথ্যভাণ্ডারে মজুত। কী বই পড়তে হবে তার লিস্ট করে দিতে চায় অথরিটি। তারা চায় ইরোটিকা, থ্রিলার, মার্ডার স্টোরি, সেক্স ভায়োলেন্সের স্টোরি এসব মনোময় পড়ুক। নগরের দর্শনকে মেনে চলতে হবে সকল আবাসিককে। মনোময়কে জানিয়ে দেওয়া হয়, উদ্বেগহীন জীবন যাপনের স্বার্থে, নগরকে নিরাপদে রাখতে যে কোনও রকম অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে, “তা সে চিন্তায় হোক, স্মৃতির পথে হোক।” মনোময় কার সঙ্গে মিশবে কার সঙ্গে মিশবে না, কী করবে কী করবে না সব ঠিক করে দেবে অথরিটি। অথরিটির অথরাইজ্‌ট পার্সন কম্পিউটারের মাউস নাড়াচাড়া করে বলে দেয় মনোময় কবে কখন কী করেছিল। অথরিটির চ্যানেল প্রত্যেক আবাসিকের দেখা বাধ্যতা মূলক। সেখান থেকে জানা যাবে অথরিটি কী করতে চায়, কী করতে চায় না; কী পছন্দ করে, কী পছন্দ করে না। প্রতিদিন সকালে ওয়ার পিকচার, দুপুরে লাভস্টোরি, বিকেলে ধর্মমূলক ছবি, সন্ধ্যায় টক শো, রাত্রে তিন রকম পর্নো। এক্স, ডাবল এক্স এবং ট্রিপল এক্স ফিল্ম দেখানো হয়। কিন্তু অথিরিটির কাছে যে রিপোর্ট আছে তাতে দেখা যাচ্ছে মনোময় তা কখনও দেখেনি। তাকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়—“দেখুন স্যার, আমাদের এই সিটিকে সমস্ত রকম উদ্বেগ থেকে মুক্ত করতে আমরা গড়ে তুলেছি এক অত্যাধুনিক তথ্য ব্যবস্থা, আপনার প্রতিটি তথ্য আমাদের তথ্যভান্ডারে মজুত হয়ে যাচ্ছে।” তাকে আরও বলা হয়—“এই নগরের অধিবাসী হয়ে নগর কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার মর্যাদা দেওয়া আপনার দায়িত্বের ভিতরে পড়ে, এত যে বিনোদনের ব্যবস্থা, জীবন সুন্দর করে তোলার আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি একটি নাগরিকও এর বিপক্ষে থাকে।” 

    মনোময় বুঝতে পারে অথরিটির কাছে সব আছে। সবকিছু জানার ব্যবস্থা আছে এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত নগরে। এমনকি আবাসিকদের বেডরুমের কথাও। এখানে কেউ নিজের মতো থাকতে পারে না। অথরিটি সকলকে তাদের মতো করে নেবে। যতটুকু জানানো হবে ততটুকুই জানবে।         

কর্তৃপক্ষ জানান নগর প্রসারিত হচ্ছে। আরও হবে। এই নগরই একদিন আমাদের দেশ হয়ে উঠবে। আমাদের দেশটা একদিন এই নগরের ভিতরে সম্পূর্ণ চলে আসবে। মেয়র স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। তাঁর স্বপ্নের শহর এটি। তিনি নগরটিকে যেভাবে গড়ে তুলতে চাইছেন তাতে নগরবাসীকে ক্লোজ ওয়াচে রাখা প্রয়োজন। তাই প্রত্যেকের প্রতি মুহুর্তের গতিবিধি ধরা আছে।  

অথরিটি সুন্দরী তরুণী পাঠায় মনোময়ের কাছে। কিন্তু মনোময় তাকে গ্রহণ করে না। আর নিয়ম অনুযায়ী মেয়েটির খাতায় সই না করলে সে টাকা পাবে না। মনোময় সই করে দিতে চায়। কিন্তু পরিষেবা না দিয়ে সে সই নেবে না খাতায়। এখানে এমনই নিয়ম যে মেয়েটির খাতা দেখে অথরিটিই বিল পাঠাবে আবাসিকের কাছে। সরাসরি মেয়েটিকে টাকা দিতে পারবে না কেউ। সবই অথরিটি নিয়ন্ত্রিত।   

সম্প্রতি নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যক্তি পরিসর। সরকার কতটা হস্তক্ষেপ করতে পারে মানুষের ব্যক্তি পরিসরে? কতটা জানতে পারে মানুষের ব্যক্তি যাপনের গোপনীয় সূত্র? এই প্রশ্ন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত যাই বলুক, আমরা চাই বা না চাই, সরকার সুকৌশলে নাগরিকদের ব্যক্তি পরিসরে হস্তক্ষেপ করে। করবে। যত দিন যাচ্ছে ততই বোধ হয় মানুষের ব্যক্তিগত জায়গাটা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে শুধু আমাদের দেশে নয়, সর্বত্রই ধীরে ধীরে মানুষের এই পরিসর কমে আসছে। আধুনিক রাষ্ট্রে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে, আরও নানান কারণ দেখিয়ে নাগরিকদের ব্যক্তিগত যাপনের খুঁটিনাটি সংগৃহীত হচ্ছে সরকারি তথ্য ভাণ্ডারে। তৈরি হচ্ছে বৃহৎ এক কৃত্রিম জ্ঞান ভাণ্ডার। মানুষের ব্যক্তিগত কোনও কিছুই আর থাকছে না। হয়তো পবিত্রও কিছু থাকছে না। বোদলিয়রের কথা ধার করে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন— একমাত্র তাই পবিত্র যা ব্যক্তিগত। সেই সূত্রে বলা যায় এখন আর পবিত্রও কিছু থাকছে না।   

    অমর মিত্রের ‘সবুজ রঙের পৃথিবী’ উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে ব্যক্তিপরিসরের অনিবার্য আগ্রাসন কোথায় যাচ্ছে তা অনুভব করবেন পাঠক। কবি লেখক শিল্পীদের ক্রান্তদর্শী বলা হয়। তাঁরা ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। আজকের এই আধার-কেন্দ্রিক ব্যক্তি পরিসরের আলোচনার প্রেক্ষিতে এক দশক আগে লেখা এই উপন্যাসে এই ক্রান্তিকালের কথাই বিধৃত হয়েছে। এখানে দেখি শুধু নাগরিককে নয়, অথরিটি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় মনুষ্যেতর প্রাণী, উদ্ভিদ—সমগ্র প্রকৃতি পরিবেশকে।   

সবুজের উপর নগর কর্তৃপক্ষ খুব বেশি করে জোর দিয়েছেন। প্রতিটি বাড়িতে, ফ্ল্যাটে বাধ্যতামূলক সবুজ সংরক্ষণ করার একটি পুর আইন রয়েছে। কিন্তু কখনোই তা প্রাকৃতিক সবুজ নয়, সিনথেটিক—কৃত্রিম রাসায়নিক সবুজ। কৃত্রিম সবুজ আরও দেবে কর্তৃপক্ষ। তা রাখার অনেক সুবিধে আছে। বাঁচিয়ে রাখার সুবিধে। টিভিতে অথরিটির নিজস্ব চ্যানেলে সেই সুবিধের কথা শোনানো হয়। অথরিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল ক্রমশ প্রাকৃতিক সবুজ নির্বাসিত করে কৃত্রিম সবুজে নগরের সৌন্দর্যায়ন ঘটানো।  

    এখানে চমৎকার অ্যাকোয়াটিকা আছে। নীলজল সেখানে সমুদ্রের কথা জানাবে। কৃত্রিম সমুদ্রের গর্জন, ঢেউ ফিল করতে পারবেন আপনি, আপনার জন্য সোনালি কেশ সুন্দরীরা অপেক্ষা করে আছে সেখানে। টাকা খরচ করে আর সমুদ্রে পাড়ি দিতে হবে না নাগরিকদের। টাউনশিপের মধ্যে সমুদ্র, পাহাড়, সবুজ জঙ্গলের হাতছানি।   

সিনথেটিক গাছে নগর ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। পিনাকীর মতো কেউ কেউ এতে খুব খুশি। কারণ তার মনে হয় এতে ম্যান পাওয়ার কম লাগে। একটা জীবন্ত গাছকে বাঁচাতে হয় অনেক কষ্টে। আর এইসব গাছ ফ্যাক্টরি-ফিনিশ্‌ড হয়ে বেরিয়ে আসছে। অথরিটি বসিয়ে দিচ্ছে রাস্তার ধারে। কোনও হ্যাপা নেই। এমনভাবে গাছগুলো তৈরি হচ্ছে প্রচুর ছায়া। পিনাকী বলে সেক্টর ফোর-এ একটা বটগাছ বসিয়েছে অথরিটি কী সুন্দর। ন্যাচারাল বটগাছের থেকেও ন্যাচারাল। 

    গাছে যে ফুল বসানো হয়েছে তা আসলের চেয়ে সুন্দর। যেমন রং তেমন তার ব্রাইটনেস। মনোময় বলে সে ফুল ঝরে না। অথরিটি জানায় ঝরা ফুল দরকার হলে তার ব্যবস্থাও করা যাবে। দিনে দুবার পরীক্ষামূলকভাবে পাখির ডাক শোনানোরও ব্যবস্থা হচ্ছে। 

    কদিনের ভিতরে নগরের মাঠে ময়দানে পথের দুপাশে প্রতিটি আবাসনের সামনে, প্রতিটি শপিংমল রেস্তোরাঁর সামনে গাছ বসে গেল। মাঠের অনেকটা জায়গা জুড়ে সাত পুরুষের বট। অবিকল সাত বুড়ো যেন থেলো হুঁকো হাতে বসে গেল। দিগন্তে কৃষ্ণচূড়ার লাল, রাধাচূড়ার হলুদ জ্বল জ্বল করতে লাগল। এমনই তার রং যে আকাশ শূন্যতাতেও যেন সেই রঙের প্রতিফলন পড়েছে। পথের ধারে কোনো কদম গাছে ফুল, কাঠগোলাপে ফুল, কোনো গাছ পুষ্পবিহীন। কোনো আম গাছে এই জুন মাসেও আমের বোল, কোনোটায় আবার আম ঝুলে আছে এক এক থোকা। গাছে হাত দেওয়া নিষেধ। গাছ শোভা বর্ধন করবে নগরের। গাছের ছায়াতে একা একা যাওয়াও নিষেধ। নগর বড় সুন্দর হয়ে উঠল। দুই গাছের মধ্যিখানে একটু করে জায়গা। গাছের আড়াল আছে। আড়ালে গিয়ে বসো প্রেমিক-প্রেমিকারা, নগররক্ষী দেখেও দেখবে না।        

পথে নেমে মনোময় টের পায় বাতাস একটু তপ্ত। গাছগুলি কী সুন্দর দাঁড়িয়ে আছে। পথে-ঘাটে গাছের তলায় শুকনো পাতা নেই। গাছের তলায় গামছা পেতে শুয়ে নেই কোনও হাটুরে মজুর। গাছের তলায় সংসার পেতে বসেনি কোনো গৃহহারা দম্পতি। সব কিছু শূন্য করে পরম শূন্যতা নিয়ে ছায়াময় দাঁড়িয়ে আছে পরপর। 

এক অসহায় সভ্যতার নির্মম চিত্র। নাগরিক জীবনের নানান সমস্যা নিয়ে বাংলায় কিছু কম লেখা হয়নি। কিন্তু অমর এখানে অন্য এক সমস্যাকে বিষয় করে তুললেন। এই বিষয়টি আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা, তবে পড়া নয়। অভ্যেস আমাদের ভাবতে শেখায়নি পরিবেশ কেন্দ্রিক সমস্যাও নাগরিক জীবনের জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। এও যে আমাদের বাঁচা-মরার সমস্যা তা অমর এই উপন্যাসে অন্যভাবে তুলে ধরেছেন। 

গ্রামের কথা মনে পড়ে তার। আর তখনই আসে পিসির ফোন। সে পিসিকে ফোনে বলে—“শহর ভেঙে গাঁ গড়া যায় না, গাঁ ছাইয়ে চাপা দিয়ে মাটি ফেলে শহর করে দেওয়া যায়, গ্রাম হলো অরিজিনাল এলিমেন্ট।    

কিন্তু অরিজিনাল হলে কী হবে। সেই অরিজিনালকে ধ্বংস করে দেওয়ার শক্তি আছে কৃত্রিমের।  নাগরিকতার কৃত্রিম যাপন এর আগে কোনও উপন্যাসে এভাবে প্রকাশিত হতে দেখিনি। এই কৃত্রিম পরিবেশে ক্রমশ আমরা দ্বিধাহীনভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। আর সরকারও সুকৌশলে আমাদের যাপনে তা চারিয়ে দিতে চাইছে।    

একদিন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় জ্যোৎস্না দেখতে মনোময় চলে যায় নগর ছাড়িয়ে গ্রামে। লাঙলপোতায়। কীকরে যেন নগররক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে চলে যেতে পারে। সে হাঁটতে থাকে। এখান থেকেই নগরে প্রবেশ করে নানা রকম মানুষ। কেউ কাজে যায় দুটি অন্যের জন্য। কেউ যায় নগর ধ্বংসের পরিকল্পনা নিয়ে গ্রেনেড মাইন হাতে। ধরা পড়ে জেলে যায়।  

    কোনও অজ্ঞাত কারণে লাঙলপোতাকে বাদ রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। অঙ্কুরহাটি পাকুড়িয়া মদনপুরের মানুষরা এখানেই এসেছে। রিফুইজি গ্রাম এটা। এরপর আরও গ্রাম ঢুকে যাবে নগরের পেটে।  তখনও আবার কোনও গ্রামকে ছাড় দেবে কোম্পানি। তার নামও হবে লাঙলপোতা। এক টুরটুরে বৃদ্ধ মনোময়কে শোনায়—“মাঝ রাতে ছেলেপুলে নাতিপুতি নিয়ে সকলে পালিয়ে এসেছে এখানে। কাক, বক, হাঁস, টিয়ার দল, দুটো বুড়ো সাপ, পথের কুকুর তিনটে পেঁচা, আরো সব আছে, গো-সাপ আর বেজির দল, চিল শকুন।” বুড়ো এক স্বর্ণ গোধিকার কথা শোনায়। মাটিতে চাপা পড়ে গিয়েছিল। ধরা পড়লে মরত। ওর জোড়টি ছাড় পায়নি। মনোময় দূর থেকে দেখে স্বর্ণগোধিকাটিকে। 

    শূন্য গ্রামগুলির মতো মনোময় একা ফিরে আসে নগরে। আবাসনের কাছে এসে দেখে জটলা। বাঘের মতো হলুদ-ডোরা ইউনিফর্মে শাঁসালো কুকুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নগররক্ষীরা। তার নীচের ফ্ল্যাটের রিয়া চ্যাটার্জি ছুটে এসে জানায় সিটিতে প্রচুর বোমা পাওয়া গেছে। তারপর থেকে সার্চ হচ্ছে। মনোময়কে দেখতে পেয়ে নগররক্ষীরা কুকুরটিকে ছেড়ে দেয়। কুকুরটি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। রক্ষীরা মনোময়কে জেরা করল। তার আই-কার্ড নেই কেন ইত্যাদি। তারা মনোময়কে নিয়ে দৌড়ল কুকুরের পিছু পিছু। শেষ পর্যন্ত নগরের একমাত্র শিমুলগাছের গায়ে থাবা বসাল। এই গাছটাই টেররিস্ট। কুক্কুরিটি আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিল বুড়ো শিমুলের দেহটি। গাঁ উজাড় করা নগরে সে একা নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বহু কৌশলে। আর পারল না। তার কাণ্ডটি দুভাগ হয়ে গেল। আর ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা স্বর্ণ গোধিকা। রক্ষীরা উল্লসিত হল—“বেটিকে খোঁজা হচ্ছিল অনেকদিন, যখন এদিকে সব পুকুর বোজানো হয়, তখন বেটি গেল কোথায় ? এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে বেড়াতে দেখেছি, কিন্তু মাগীটাকে ধরতে পারিনি, এতদিনে বুঝলাম, এখেনে লুকিয়েছে, গাছটা শেলটার দিয়েছে।” 

    মনোময় দেখল স্বর্ণগোধিকার উপর এসে পড়া জ্যোৎস্না ম্লান হয়ে গেছে। রূপবতী শরীর বাঁকিয়ে ডাকল। মনোময় বলল—“লাঙলপোতা বস্তিতে, যেখেনে সব উচ্ছেদ হওয়া প্রাণী গিয়ে মাথা গুঁজেছে, চাষা-চাষানি কুমোর-কামার ধোপা-ধোপানি, মাদার গাছ, বট অশ্বত্থ পাকুড় আম জাম চালতা আমড়া থেকে পাখপাখালি, খরগোস বেজি থেকে কৃষ্ণগোধিকা স্বর্ণগোধিকা, তোমার দোসর ওদিকে আছে, তার এখন থেকে থেকে জ্বর আসে, তোমার জন্য কাঁদে।” স্বর্ণগোধিকা দৌড় লাগালো। ডোরাকাটা চিৎকার করে—“পালাচ্ছে, পালাচ্ছে, মোস্ট ওয়ান্টেড, খতরনাক মাগী, ফায়ার।” 

   গোধিকাকে মেরে ফেরার সময় নগররক্ষীরা কৃতজ্ঞ হয়ে মনোময়কে বলে—“আপনি যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন মনোময় শীল…এবার টেররিস্টরা একটু থমকাবে, ওই  মাগীটাই ছিল ব্রেন, ওই সব করাত।”

    ক্ষমতা শুধু মানুষকে নয়, তারা ভয় পায় সামান্য প্রাণীকেও। শুধু ব্যক্তি মানুষের পরিসরে নয়, মনুষ্যেতর প্রাণী-জীব জগতের পরিসরেও প্রবেশ করে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তাই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় স্বর্ণ গোধিকা জায়গা করে নিয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকেই ক্ষমতার অলিন্দে থাকা মানুষেরা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সব কিছু।   

    মনোময়ের মতো তার আবাসনের অসামান্যা সুন্দরী ছটফটে রিয়া চ্যাটার্জিও হাঁফিয়ে ওঠে এই নগরে। তার থেকে বয়সে অনেক বড় বর পিনাকীকে সে বলে নগর ছেড়ে চলে যেতে। কারণ এখানে গাছগুলির পাতায় কোনও স্পন্দন নেই। পাখীর ডাক নেই। শরীর-সর্বস্ব পিনাকী চ্যাটার্জি বুঝতে পারে না রিয়াকে। সেক্স আর ভায়োলেন্স ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না। 

একদিন মাঝরাতে রিয়া আসে মনোময়ের কাছে। ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রৌঢ় মনোময়ের বুকে। এই প্রথম সে যুবতী নারীর নিবিড়তায় পৌঁছল। কী আশ্চর্য স্পর্শ। চারিদিকে ডেকে উঠল অজানা পাখি। মনোময় টলে। পুড়ে যায় তার শরীর। রিয়াকে বলে দুদিন পরে সে আরও বুড়ো হয়ে যাবে। রিয়া বলে সে সব পারে। তার বার্ধক্যকে ধ্বংস করে দেবে। হাসতে হাসতে আবেগে ফুলতে ফুলতে রিয়া নিরাবরণ হয়ে যেতে থাকে। চাঁদের আলোর মতো ক্রমে ফুটে উঠতে থাকে তার শরীর। সোনালি দেহত্বকে স্বর্ণগোধিকা তাকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। 

স্বর্ণগোধিকার মতো অপরূপ সোনালি এক নারীর উত্তাপে পুড়ছে মনোময়। আগুন ধরে গেল যুবতীর শরীর থেকে তার শরীরে। যুবতীর প্রতিটি অঙ্গ থেকে, সোনার অঙ্গ থেকে আগুন ঠিকরে ঠিকরে বেরোতে লাগল। যুবতী গর্জন করে উঠল, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছ হে মনোময়, আগুন নিভছে না আমার মাই ফ্যানটম, সান্তিয়াগো, আমার কালকেতু, এস আরো আগুন নিয়ে এস। 

শরীরে শরীরে ঘর্ষণ হয়। ছিটকে বেরোচ্ছে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল দু’জনে। জ্বলে উঠল বিছানা বালিশ, জ্বলে উঠল খাট আলমারি। শুধু সেই পর্তুগিজ নাবিকের ভ্রমণ বৃত্তান্তখানি হাতে নিল রিয়া। জ্বলে উঠল কৃত্রিম ঘাস, সবুজ তৃণ, কৃত্রিম বৃক্ষেরা। তাদের গায়ের আগুন থেকে কৃত্রিম গাছেরা সব জ্বলে উঠছে। আফ্রিকা এশিয়া ইউরোপের কৃত্রিম গাছেরা সব তাদের সিনথেটিক শরীর নিয়ে জ্বলতে লাগল। ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠে যেতে লাগল। পলিমার গলে গলে পড়তে লাগল। কালো থকথকে গলন্ত পলিমার মাটিতে পড়ে মরা পোকার মতো গুটলি পাকিয়ে যেতে লাগল। ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল নগর। তারই ভিতর দমকল ঘন্টা বাজিয়ে পাগলা কুকুরের মতো পুব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পুবে, উত্তর থেকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ছুটে যেতে লাগল এমন ভাবে যেন ঘণ্টাধ্বনিই নিভিয়ে দেবে আগুন। ঘন্টাধ্বনিতে জেগে উঠে নগরের মানুষ পথে নামল। ছুটতে লাগল এদিক থেকে ওদিক। তাদের বাড়ি ঘরদোরও জ্বলতে আরম্ভ করেছে। তাদের ভিতর থেকে কে যেন বলল, লাঙলপোতায় চলো, বাঁচবে লাঙলপোতা ঘরপোড়া, ভিটেহারা মানুষের আশ্রয় লাঙলপোতা তারা সব লাঙলপোতার দিকে ছুটতে লাগল। পাগলা ঘন্টি বেজে উঠল। বন্দী পালিয়েছে। পাগলা ঘন্টি এখন বেজেই যাবে। তারপর আগুনে পুড়ে গেলে সেটিও থামবে হয়তো। শুধু ঘণ্টাধ্বনি জেগে থাকবে ধোঁয়ার ভিতর। 

স্বর্ণগোধিকা, রিয়া, মনোময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা চন্দ্রাবলী সব একাকার হয়ে যায়। প্রকৃত প্রস্তাবে স্মৃতির, ঐতিহ্যের, দেশজ গ্রামীণ পরিবেশের প্রতিভূ হয়ে যায় রিয়া আর মনোময়। বাতাসে পলিমার পোড়া দুর্গন্ধ থুকথুক করছে। মাংস পোড়া গন্ধ পায় তারা। লেখক তাই বলছেন—“তারা যে কেউ—যে কোনো দু’জন—স্বর্ণগোধিকা আর তিনশো বছরের বুড়ো বটও হতে পারে তারা”। ভস্ম পার হয়ে হয়ে আগুন এড়িয়ে এড়িয়ে তারা হাঁটছিল হারিয়ে যাওয়া অঙ্কুরহাটি, রসপুঞ্জ, পাকুড়িয়ার মাঠ ধরে। আগুন নিভেছে শরীর থেকে। বুনো হাঁসের মতো লাঙলপোতার দিকে উড়ে যায় তারা।  

আপাতভাবে মনে হবে একটা আশার আলো দেখা গেলো শেষে। কৃত্রিম নগর যাপন ধ্বংস হয়ে গেলো। প্রকৃত পক্ষে এই ধ্বংস পরিবেশের ধ্বংসের ইঙ্গিত। আমরা যেভাবে সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে সিনথেটিক সবুজতায় আক্রান্ত হচ্ছি, সব দিক থেকে কৃত্রিম নাগরিকতাকে আহ্বান করছি তাতে ভবিষ্যতে তাই বুমেরাং হয়ে আঘাত করবে আমাদের। বোকা কালিদাসের মতো আমরা গাছের যে ডালে বসে আছি, সেই ডাল কাটছি নির্বিকারে। লেখক এখানে তারই সাবধানবাণী শুনিয়েছেন শিল্পিত আখ্যানে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বড় প্রাসঙ্গিক মনে হয় এই আখ্যান। 

প্রকৃতির ছায়ঘন স্নিগ্ধতা এখন মিথ হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ যাপনের যে স্বপ্ন দেখি আমরা তাতেও মিশে থাকে প্রগাঢ় কৃত্রিমতা। এহেন প্রেক্ষাপটে পরিবেশ কেন্দ্রিক আশ্চর্য এক আখ্যান অমর মিত্রের ‘সবুজ রঙের শহর’। প্রকৃত সবুজ রঙেই ঢেকে যেতে পারত চারপাশ। আমরা একটু সচেতন হলে প্রাকৃতিক সবুজের শীতল ঘেরাটোপে কাটত আমাদের দৈনন্দিন। তার পরিবর্তে আমরা চাইছি সবুজ রঙে আচ্ছন্ন হতে। সবুজ এখন আর প্রকৃতি নয়, একটা রঙ শুধু। আর পাঁচটা রঙের থেকে তার কোনও তফাৎ নেই। কবে যেন সবুজ সচেতনতা হয়ে উঠেছে সবুজ রঙ সচেতনার নামান্তর। ক্রান্তিকালের এই আখ্যান আমাদের সে সম্পর্কে সজাগ করেছে। লেখক সবুজ রঙের শহরে আমাদের আহ্বান করেননি। বরং তিনি চেয়েছেন এই কৃত্রিম সবুজের গহ্বর থেকে মানুষ যেন বেরিয়ে আসে। পরিবেশবাদী দৃষ্টি থেকেই লেখক প্রত্যক্ষ করেন বিভিন্ন নগরকে। তাই তিনি অনুভব করেন এই শহরের সবুজ বড় রোমাঞ্চকর। গা ছমছম করে। স্বস্তি দেয় না। উপন্যাসের পাঠক্রিয়ায় আমরা নতুন করে অনুভব করি প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তা। প্রাকৃতিক সবুজের প্রয়োজনীয়তা। আখ্যানের সত্যতাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। অমরমিত্রের মৌলিক পরিবেশ সচেতন বীক্ষার আলোকে নাগরিক পরিবেশকে নতুন করে আবিষ্কার করি আমরা।  

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত