| 25 এপ্রিল 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

স্মরণে সাইদা খানম

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
১২ মার্চ, ২০১৯
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের মঞ্চের সামনে ফুলের তোড়া নিয়ে অপেক্ষায় আছি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আলোকচিত্র চক্রের সাথে। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে সদ্য একুশে পদক প্রাপ্তিতে শুভাকাঙ্খীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা গ্রহণ করতে আসা মানুষটি সম্পর্কে গুণীজনদের নানান শুভেচ্ছা বক্তব্য। ভেসে শব্দসুরের মধ্য থেকে টুকরো টুকরো কিছু শব্দ, যেমন- এদেশে প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী, বেগম পত্রিকায় আলোকচিত্র সাংবাদিকতা, সত্যজিৎ রায়ের সাথে কাজ এমন আরও আরও অনিন্দ্য কিছু শব্দগুচ্ছকে একত্রিত করা যাক। সব মিলে গাঁথা যে মালা তিনি – সাইদা খানম
নামটি শুনে অবধারিতভাবে সবার মাথায় প্রথমে যে শব্দটি আসে সেটি হল- ‘আলোকচিত্রী’।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
(ছবি: আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ)
সাইদা খানমের নিজের তোলা কিছু ছবি:
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাবনায় জন্ম নেয়া এই পথিকৃৎ আলোকচিত্রী গত ১৮ আগস্ট ২০২০ পরলোকগমন করেন ।
তাঁর কর্মময় জীবনের জানা-অজানা নানান দিক নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন-
‘‘স্মরণে সাইদা খানম’’
আজকের আয়োজনে সাইদা খানমের স্মৃতিচারণ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সৈয়দ আজিজুল হক।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সাইদা খানম পরবর্তী লাইব্রেরি সাইন্সেও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন ১৯৭৪ – ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত।

সাইদা খানম (১৯৩৭-২০২০)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে আমাদের স্নাতক সম্মান শ্রেণির ক্লাস শুরু হলো ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসের একেবারে শুরুতে। সেটা ১ তারিখও হতে পারে, হতে পারে ৩ তারিখও। প্রথম দিনের ক্লাসশেষেই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে। ক্লাসে শিক্ষকের বক্তৃতাই বই খোঁজার আগ্রহকে তীব্র করে দিয়েছিল। সম্ভবত প্রথম দিন দুটি ক্লাস হয়েছিল। দুটিই ছিল সম্মোহন সৃষ্টিকারী ও পাঠোদ্দীপক। ওইদিন বিকেলেই পাবলিক লাইব্রেরিতেও গিয়েছিলাম, মনে পড়ে। যাই হোক, বিভাগের সেমিনারে যাঁকে পেলাম তিনি লাইব্রেরিয়ান সাইদা খানম। তাঁর অন্য কোনো পরিচয়ই আমাদের কাছে সেদিন জ্ঞাত ছিল না। সেদিন তিনি আমাদের উত্তেজিত তারুণ্যের নতুনতর পাঠস্পৃহাকে সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছিলেন। তাঁর স্বভাবসুলভ ধীরস্থির রুচিশীল শিক্ষিত কণ্ঠ আমাদের উচ্চকণ্ঠ-উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করেছিল। আমরা প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে উচ্চকণ্ঠের অভিঘাত দিয়ে লাইব্রেরির শান্ত নিস্তব্ধতায় সেদিনের মতোই প্রায়শ ব্যাঘাত সৃষ্টি করতাম। সেখানেই ছিল তাঁর ঘোরতর আপত্তি ও নিজকণ্ঠের শাসন। কিন্তু অচিরেই তিনি আমাদের গ্রন্থপাঠের ঐকান্তিক আগ্রহ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছিলেন। ফলে প্রয়োজনীয় বইটি পাওয়ার ব্যাপারে তাঁর অনেক আনুকূল্য ও স্নেহপূর্ণ প্রশ্রয় পরবর্তীকালে পেয়েছি।

তারপর একে একে জেনেছি, তিনি বাংলা সাহিত্য ছাড়াও গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিগ্রিপ্রাপ্ত। জেনেছি, তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী ফটোগ্রাফার সাংবাদিক। জেনেছি, তিনি অতি উচ্চ শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক আবহবিশিষ্ট পরিবারের সদস্য। জেনেছি, তিনি বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আবদুল আহাদের বোন। জেনেছি, ভাইয়ের মতোই তিনিও অকৃতদার। যতই জেনেছি ততই শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছি। তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বাংলা বিভাগের সেমিনারে কর্মরত ছিলেন।

বইয়ের প্রতি আগ্রহের প্রাগঢ়তাই তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্রমশ ঘনিষ্ঠ করে তুলেছিল। আমাদের প্রগতিভাবনা ও উন্নত সাংস্কৃতিক বোধের অভিলাষ এই ঘনিষ্ঠতাকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েই তুলেছিল। সেই সম্পর্ক শুধু বিভাগের লাইব্রেরিয়ান-ছাত্র সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর তৃষিত মাতৃমনের স্নেহস্পর্শ আমরা প্রায়ই অনুভব করতাম। আমাদের স্নাতকোত্তর পর্বে (১৯৮১-৮২) একবার ইদের দিনে আমরা কয়েকজন তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। তিনি আমাদের এই গ্রন্থপিপাসু, বিভাগের পরীক্ষায় ভালো ফললাভকারী, কয়েকজনকে নিজ হাতের রান্না খাইয়ে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিলেন।আজ তাঁর স্মৃতির প্রতি প্রণতি জানাই। অনন্তলোকে তাঁর প্রশান্তি কামনা করি।

 

সৈয়দ আজিজুল হক

বাংলা বিভাগ/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত