| 24 এপ্রিল 2024
Categories
দুই বাংলার গল্প সংখ্যা

আমি এবং আমরা

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com‘‘কী, ভালো আছেন?’’
‘‘হ্যাঁ, তা আছি৷’’
‘‘আপনি তো দেবদাস দত্ত, তাই না?’’
‘‘না৷ আমার নাম অনিমেষ হালদার৷’’
চমক খেল বসন্ত৷ কী রে বাবা৷ এই লোকটাকেই তো সে দেবদাস দত্ত বলে জানে৷ যদিও সরাসরি আলাপ নেই৷ মাঝে-মাঝে রাস্তাঘাটে দেখে৷ ট্রেনেও সম্ভবত কয়েকদিন দেখে থাকবে বসন্ত৷ এতটা ভুল হলো! একটু অপ্রস্তুত হলেও আবার প্রশ্ণ করে বসন্ত৷ ‘‘সেদিন…! সেদিন মানে গত মঙ্গলবার, আপনি নৈহাটি স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের বইয়ের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন না? সেখানে একজন আপনাকে বলল, ‘দেবদাসদা, বাড়ির খবর কী?’ স্টলের মালিকও যে আপনাকে দত্তদা বলছিল!’’ লোকটা নির্বিকারভাবে, কিছুটা যেন উদাসভাবে বলে বসল, ‘‘গতমাসে আমি নৈহাটিতে যাই নি গিয়েছিলাম বটে সেদিন, তবে সেটা ফলতায়৷’’ একটু থেমে কী যেন ভেবে নিয়ে ফের বলল লোকটা, ‘‘কে কাকে কী বলে ডাকবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার, আমি আর কী করতে পারি৷’’ আর না দাঁড়িয়ে, কেমন ব্যস্তভাবে শরীরটা একটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে চলে গেল৷ বসন্ত ভারি অবাক হলো৷ আবার ভাবল, এতখানি ভুল হলো! স্মৃতির কোষে কি ধুলো জমেছে? সেই মুখ, টিয়াপাখির মতো সেই নাক, এমনকি নাকের ওপরে আঁচিলটা পর্যন্ত একরকম আছে৷ তবে কি লোকটা পরিচয় গোপন করল? লাভ কী ওতে? বসন্তের মতো অপরিচিত বা শুধুমাত্র সামান্য মুখচেনা লোককে ধাপ্পা দিয়ে কী লাভ কে জানে৷

সোদপুর থেকে মাঝে-মধ্যে ট্রেনে উঠতে দেখেছে ওকে বসন্ত৷ দেখেছে নৈহাটি থেকেও৷ যাই হোক, অবাক হলেও কী আর করা যাবে৷ কে নিজের কী পরিচয় দেবে, সেটা তার ব্যাপার৷ তবে লোকটা যদি সত্যিই দেবদাস দত্ত না হয়ে অনিমেষ হালদার হয় তাহলে খুব চিন্তার বিষয়৷ চিন্তা নিজের মাথা নিয়ে, মগজ নিয়ে৷ অথবা কিছুই নয় এও হয়তো একধরনের স্বাভাবিক ভুল৷ শুধু স্বাভাবিকত্বটুকু ধরতে পারছে না সে৷ খুব দূরের লোক তো নয়৷ নির্ঘাত ধরা যাবে ব্যাপারটা কোনো-না-কোনো দিন৷

কয়েকদিন পরের কথা৷ চাঁদমারিতে গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল বসন্ত৷ ক্লাসিক্যাল প্রোগ্রাম যে খুব একটা দেখে তা নয়৷ তবে দেখলে ডুবে যেতে পারে৷ সে-রাত্রেও বিখ্যাত সরোদিয়ার বাদন শুনে যাচ্ছিল বসন্ত৷ শুনতে শুনতে একটা সময় মনে হয় শব্দটা যেন মঞ্চ থেকে, মাইক্রোফোন থেকে বা বিশেষ কোনো জায়গায় বসা কোনো- একজনের থেকে আসছে না৷ সারা শরীর জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে৷ ভালোই লাগে সুরের বলয়ের মধ্যে বসে থাকতে৷ হঠাৎ শুনতে পেল কে যেন কাকে ডাকছে ‘‘শংকরদা, শংকরদা, ও মিঃ মজুমদার, শুনছেন?’’ বড্ড বিরক্ত হলো বসন্ত৷ এ-সব লোক যে কেন শাস্ত্রীয় সংগীত শুনতে আসে! বিরক্তিতে পিছনে মুখ ঘুরিয়েই ধাক্কা খেল ও৷ শংকরদা বলে যাকে ডাকা হচ্ছিল সে-লোকটাই তো অনিমেষ হালদার অথবা দেবদাস দত্ত৷ সেই চোখ, নাক, মুখ, নাকের ওপরে আঁচিল৷ ভিতরে ভিতরে ভীষণ রেগে গেল বসন্ত৷ লোকটা এক-একজনকে এক-এক নাম বলে নাকি! রাগটা ভিতরে কেমন পাক খেয়ে খেয়ে ঘোরাফেরা করতে লাগল৷ একটু পরে মনে হলো শংকর লোকটার ডাকনামও হতে পারে৷ এ-কথা মনে হওয়ায় মেজাজটা কিঞ্চিৎ ঠান্ডা হলো৷ কিন্তু মজুমদার? সুরের নেশা আর ধরল না৷ মনে মনে ঠিক করে নিল বসন্ত, আজকে অনুষ্ঠান শেষে কথা বলতেই হবে লোকটার সাথে৷ সেটা এখনই একটু বলে রাখলে হয়৷ লোকজনকে যতটা সম্ভব কম ডিসটার্ব করার চেষ্টা করে লোকটিকে ডাকল বসন্ত, ‘‘শংকরবাবু, শুনছেন?’’ লোকটি চকিতে মুখ ফিরিয়ে কঠোর বিরক্তিতে বলে উঠল, ‘‘মন নেই যখন, ক্লাসিক্যাল শুনতে আসেন কেন মশাই?’’ এত অপমানিত হলো বসন্ত, মনে হলো কেউ যেন দুটো থাপ্পড় কষাল গালে৷ সুরে আর মন বসল না৷ অনুষ্ঠান-শেষে স্বাভাবিক কৌতূহলে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে লোকটিকে দেখতে পেল না বসন্ত৷ এমনকি, রহস্যময় লোকটিকে ‘শংকরদা’ ডাকা লোকটিও কোথায় উবে গেছে৷

 

দিনগুলো কেটে যাচ্ছে বসন্তর৷ যেমন কাটে রোজ৷ অফিস, বাজার, বাড়ি৷ মাঝে মাঝে ক্লাব, ছেলের সুকল৷ অফিসের কাজ করতে গিয়ে সেরকম কোনো অসুবিধা হচ্ছে না৷ নিজের মাথা চেক করার জন্য ছেলের সুকলের অঙ্কও কয়েকদিন কষে দিল বসন্ত৷ বেশ, ঠিকই আছে৷ এদিকে দেবদাস দত্ত বা অনিমেষ হালদার অথবা শংকর মজুমদারের কোনো দেখা পায় নি ও অনেকদিন৷ নৈহাটি স্টেশনে নেমে পড়েছে বেশ কয়েকবার৷ বইয়ের স্টলে বই দেখেছে, চা খেয়েছে, কিছু লাভ হয় নি৷ কেন এই অনুসন্ধান? শুধুই কৌতূহল? বসন্ত নিজেও ঠিক পরিষ্কার নয় এ-ব্যাপারে৷ দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যেও মাঝে-মাঝে অবাক হয়ে ভাবে লোকটার কথা৷

সেদিন বারাসাত গিয়েছিল বসন্ত৷ একটা কাজে৷ হঠাৎ কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সামনে সেই লোকটাকে দেখতে পেল৷ বাঁ-হাত পকেটে ঢুকিয়ে মাথা নিচু করে কী যেন ভাবছে৷ বসন্তর মুখটা কঠিন হলো একটু৷ যেই তাকিয়েছে, দেখল লোকটা হঠাৎ ধাঁ করে ঢুকে গেল ব্যাংকের ভিতরে৷ বসন্তও৷ কেউ সেরকম কিছু জিজ্ঞেস করল না৷ লোকটাকে অনুসরণ করে একটা হলঘরে, অডিটোরিয়ামের মতো! সেখানে ঢুকে লোকটার ঠিক পিছনের চেয়ারে গিয়ে বসল৷ খানিকক্ষণ কথাবার্তা শুনে মনে হলো ওর যে, ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে কিছু-একটা হচ্ছে৷ কাউন্টার থেকে ডাক আসছে৷ বসন্ত আজকে খুব সতর্ক৷ লোকটাকে লক্ষ করছে তীক্ষ্ণভাবে৷ ওর আসল পরিচয়টা বার করতেই হবে৷ কাউন্টার থেকে হঠাৎ ডাক এল, ‘‘বসন্ত বাগচী৷’’ বসন্ত লাফ দিয়ে প্রায় উঠে পড়ল৷ অদ্ভুত! এখানে তো তার কোনো শেয়ার নেই৷ কোনো অ্যাকাউন্টও নেই৷ নিতান্তই নিজের অফিসের কাজে দু-একবার এসেছে এদিকটায়৷ তেমন কেউ চেনেও না ওকে৷ অবাক হয়ে অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েই আবার বসে পড়ল দ্বিগুণ চমক খেয়ে৷ ওই লোকটা! ওই হতচ্ছাড়া সর্বনেশেটা নিস্পৃহভাবে কাউন্টারে গিয়ে নিজের কাগজপত্র দেখাচ্ছে৷ কাউন্টারের লোকটা সব দেখেশুনে ‘‘ওকে বসন্তবাবু’’ বলতেই হতভম্ব বসন্তকে দাঁড় করিয়ে রেখে লোকটা বেরিয়ে গেল ব্যাংক থেকে৷ তার মানে! ‘বসন্ত বাগচী’র প্রমাণ ওই লোকটার সঙ্গে রয়েছে৷ একবার বসন্ত ভাবল, কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে৷ কিন্তু কী বলবে ও? সেও এক বসন্ত বাগচী, কিন্তু আপাতত প্রমাণ ছাড়া৷ প্রমাণসহ বসন্ত বাগচীকে সে নস্যাৎ করবে কী করে? তা ছাড়া কাউন্টার থেকে হয়তো মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে তাকে উড়িয়ে দেবে এই কথা বলে যে, মশাই এক নামে কি দুই লোক হয় না’? আজকে এই ব্যাংকে আসার কোনো গ্রহণযোগ্য কারণও তো দেখাতে পারবে না৷ প্রায় টলতে টলতে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এল বসন্ত৷ মনের জোর হারিয়েও লোকটাকে একবার ফলো করার কথা মনে পড়ল৷ ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷

দুই

আমি বসন্ত বাগচী৷ বাড়ি এই শহরে৷ সরকারি অফিসের এল ডি ক্লার্ক৷ মাঝারি মানের গৃহস্থ বউ৷ এক ছেলে আছে ঘরে৷ মাসের প্রথমে ইলিশ, শেষে তেলাপিয়া মাছ খাই৷ আমার জীবনে কোনো বড়ো ঘটনা ঘটে নি৷ দুঃখ, কষ্ট, সাফল্য আর ভোগ! সবই মাঝারি মাপের৷ কোনো চমক নেই আমার দৈনন্দিনতায়৷ মোটামুটি আগামী এক মাস কিভাবে কাটবে আমি দিন অনুযায়ী গড়গড় করে বলে দিতে পারি এখনই৷ উঁহু৷ বলে দিতে পারতাম এই সেদিনও৷ যাকগে সে-কথা৷ চাকরিতে যোগ দেওয়ার দিন সকালে নিজেকে যুদ্ধের নায়ক বলে মনে হয়েছিল৷ কিন্তু প্রথম দিনই ফাইলের নোটে সামান্য ইংরাজি ভুল হওয়ায় বসের জোর ধমক খেতে হয়েছিল আমাকে, এবং বাংলার শিক্ষাব্যবস্থাকে৷ আর-একবার নায়ক মনে হয়েছিল, বিয়ের রাত্রে৷ কিন্তু সঙ্গী বরযাত্রীরা রিপোর্ট করে, মেয়ের বাড়িতে বরাদ্দ ছিল মাথাপিছু দুটো রসগোল্লা৷ দুটি অথবা দুটির কম৷ এই দুটো ঘটনায় মোটামুটি আমার নায়কত্বের অকালমৃত্যু ঘটে৷ তারপর থেকে আমি আর আশাও করি না, চমকও খাই না৷ এছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে সস্তার বারে কখনো-কখনো আমাকে মদ খেতে যেতে হয় নিজেকে সাময়িকভাবে মহৎ ও দেশের পক্ষে প্রয়োজনীয় মনে করার জন্য৷ এই আমিই আজ এক অদ্ভুত লড়াইতে জড়িয়ে পড়েছি৷ একটা লোকের সঙ্গে৷ অথবা নিজের সঙ্গেই৷ যদিও আমি এখনও জানি না এটাকে ঠিক লড়াই বলা যায় কি-না৷ একটা লোক নানারকম নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ কেন? যদিও কোনো জালিয়াতির ব্যাপার আছে বলে এখনও প্রমাণ পাই নি৷ আমার নামই-বা ব্যবহার করল কেন? অবাক হতে হতে ক্লান্তিতে অবাক হওয়া ছেড়েও দিয়েছিলাম৷ লোকটাকে আবার খুঁজলে পাওয়া যায় না৷ যখন ওর ইচ্ছা হয়, তখনই যেন দেখা হয়৷ নিজের কাজগুলো যেমন চলছিল তেমনই চলছে৷ এর সঙ্গে ও-সবের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তবু কী যেন, কেউ যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়৷ এই এলাকা, এই শহর, চেনাপরিচিত জায়গা, দিবালোকের বাড়ির উঠোনের মতো৷ তবুও হঠাৎ হঠাৎ সেখানে যেন অচিন পৃথিবী নেমে আসে৷ আজকাল মাঝে-মাঝে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘরের লোকগুলোকে লক্ষ করি৷ রানি, আমার পনেরো বছরের পুরোনো বউ৷ সে-ও হঠাৎ অচেনা হয়ে যাবে না তো! আমার বাবাই৷ বাবাই আসলে বাবাই-ই তো! যত ভাবি, কষ্ট হয়৷ এ-সব অস্পষ্ট ভাবা-না-ভাবার দোলায় দোদুল্যমান হতে হতে চৌরাস্তার মোড়ে এলাম, সেদিন৷ একটা ভিড়৷ মোড়ের মাথায়৷ এগিয়ে যেতে ব্যাপারটা বোঝা গেল৷ চোর ধরা পড়েছে৷ পকেটমার ছোটখাটো ন্যালাখ্যাপা লোকটা টাকার পার্স হাতিয়ে নিয়েছিল এক বিশাল দানবের পকেট থেকে৷ লোকটার কাকুতি-মিনতি দেখে সত্যিই মায়া হয়৷ বেচারার চোরাই মালও গেল, ওদিকে আবার মার খেয়ে না মরে৷ দশাসই লোকটা ওর ঘাড়ে বনবেড়ালের মতো লাফিয়ে পড়েছে৷ দুটো মারাত্মক থাপ্পড় মেরে গলা চেপে ধরে বলল, ‘‘নাম কী তোর?’’ আমার খারাপ লাগছিল৷ লজ্জাও করছিল৷ গল্প-নাটকে তো গণধোলাইয়ের প্রতিবাদই দেখেছি৷ কিন্তু মার খাওয়া লোকটা কী বলল? ‘‘আমার নাম বসন্ত বাগচী৷’’ উফ্ ভগবান, ওর মার খাওয়াই উচিত৷ ওদিকে এই কথা শুনে বনবিড়ালটা আরো যেন ভয়ংকর হয়ে উঠল৷ চিৎকার করতে লাগল, ‘‘হনুমানের বাচ্চা! মশকরা হচ্ছে! টাকা চুরি করছ তো করছ, আবার আমার নামও চুরি! আমার নামটা জানলি কী করে বল?’’ চমকে উঠলাম, যদিও চমকে-ওঠা উচিত হলো না হয়তো৷ দশাসই ভামটার নামও নাকি…! আর পারছি না! দলকে দল কি পাগল হয়ে গেল? ‘‘আপনারা দু’জনেই বসন্ত বাগচী?’’ দেখলাম চশমা-পড়া প্রফেসার-প্রফেসার চেহারার একটা লোক, হাতে সরু একটা লাঠি, আর, আর সে-ও নাকি বসন্ত বাগচী! তারপর তিনজনে অর্থাৎ পকেটমার, বনবিড়াল এবং ইনি! এদের মধ্যে কী-সব কথাবার্তার পর শুরু হলো মারপিট৷ সে কী উল্লুকের মতো লড়াই আর লাফঝাঁপ! প্রত্যেকের দাবি সে-ই নাকি আসল বসন্ত বাগচী৷ আর আমি? রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের নাম বলা তো দূরের কথা, নামটা ভাবারও সাহস পাচ্ছিলাম না৷ মারপিট বেড়ে গেল৷ আরো কত কত লোক জুটে গেল কোত্থেকে৷ পুলিশের গাড়ি এল৷ পুলিশ অফিসার বসন্ত বাগচী হুংকার দিয়ে লাফিয়ে পড়লেন লাঠি হাতে৷ কিছুক্ষণ পর তিনি কালো মেঘের মতো মুখ নিয়ে হঠাৎ আমার কাছে চলে এলেন৷ সঙ্গে এক সহকারী৷ ‘‘অ্যাই তুই এখানে কী করছিস রে? নাম কী তোর?’’ সর্বনাশ! অফিসার বসন্ত বাগচীর মুখের ওপর কী করে বলব যে ঈশ্বর, আমি বসন্ত বাগচি! হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, ‘‘আজ্ঞে আমার নাম দেবদাস দত্ত৷’’ দুশো চল্লিশ ভোল্টের থাপ্পড়টা এল অফিসারের সহকর্মীর হাত থেকে৷ ‘‘আমাকে ছেড়ে ওকে ধরেছিস, বদমাইশ!’’ অফিসারের বজ্র হুংকার৷ ‘‘কী হে দেবদাস, তোমার কি যমজ ভাই আছে নাকি?’’ লোক দুটো আবার ভিড়ে ঢুকে গেল৷ এক পা এক পা করে পিছিয়ে সরে দাঁড়ালাম৷ চারদিক হঠাৎ কেমন অন্ধকার হয়ে এল৷ মেঘে মেঘে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় সবটাই যেন অকাল অমাবস্যাস্নাত পৃথিবী৷ পিল পিল করে শয়ে শয়ে হাজার হাজার লোক মারপিট করে যাচ্ছে৷ অন্ধকার ছিটকে ছিটকে রক্ত উছলে উঠছে৷ পা যেন সরতে চাইছিল না৷ তবুও অনেক কষ্টে পালালাম৷ পালাচ্ছি৷ অন্ধকার ভেদ করে পৃথিবীর অপর প্রান্তে পালাচ্ছি৷ পালাচ্ছি বসন্ত বাগচীদের থেকে, না নিজের থেকে, কে জানে!

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত