| 23 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

সুলতানি যুগে সমকাম- সাহিত্য, কিংবদন্তী ও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে

আনুমানিক পঠনকাল: 15 মিনিট

সুদীপ্ত পাল

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে গ্রীক সাহিত্যের মত  সমপ্রেম বা সমকামের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে অল্প কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে হয়তো। সুলতানি যুগে ভারতীয় সাহিত্যে কিছু বিবর্তন দেখা যায় এবং বেশ কিছু সাহিত্যে সমপ্রেম বা সমকামের উদাহরণও দেখতে পাওয়া যায়। সুলতানি যুগের শুরু হয় ১১৯২ সালে মহম্মদ ঘোরির দিল্লীজয়ের পর থেকে। মহম্মদ ঘোরির মৃত্যুর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লীতে রাজত্ব করে- মামলুক বা ‘দাস’বংশ (১২০৬-১২৯০), খলজি (১২৯০-১৩২০), তুঘলক (১৩২০-১৪১৪), সৈয়দ (১৪১৪-১৪৫১) ও লোদি (১৪৫১-১৫২৬)। আমাদের আলোচনার শুরু রাজরাজড়াদের দিয়ে নয়, ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা কবিদের একজন- আমীর খুসরোকে নিয়ে।

মামলুক ও খলজী এই দুটি রাজবংশের অন্ততঃ পাঁচজন সুলতানের সভাকবি ছিলেন আমীর খুসরো (১২৫৩-১৩২৫ অব্দ)। রাজা বদলেছে, রাজবংশ বদলেছে, কিন্তু দিল্লি সুলতানাতের কাছে তাঁর গুরুত্ব কখনো কমেনি। বলবন থেকে আলাউদ্দিন খলজী – প্রত্যেকেই তাঁর গুণগ্রাহী ছিলেন। খুসরোর কাজকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- এক, ফার্সী ভাষার সাহিত্য যা খুব ভালভাবে নথিবদ্ধ আছে। দুই, তাঁর হিন্দবী ভাষার ছোট-ছোট কবিতা যা মৌখিকভাবেই প্রচলিত রয়ে গিয়েছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক ছিল, কারণ তখন দিল্লির রাজভাষা ছিল ফারসি।

হিন্দবী (Hindvi/Hindwi/Hindavi) ভাষা এখনকার হিন্দি ও উর্দু ভাষার পূর্বসুরি বলা যায়। খুসরোর হিন্দবী ভাষার কাজ নিয়ে চর্চা করার তিনটি সমস্যা। এক, তাঁর হিন্দবী ভাষার কাজগুলি মূলত মৌখিক পরম্পরায় বাহিত হয়েছে। দুই, এই কাজগুলির কিছু তার নিজের আর বাকীগুলো পরবর্তী সুফী সাধকদের রচনা- তার নাম ব্যবহার করে। এখন বসে আলাদা করা সম্ভব নয় কোনগুলি তার আর কোনগুলি অন্যদের! তিন, এই কবিতাগুলি গত কয়েকশো বছরে যে ভাষায় প্রচলিত রয়েছে সেটি মূলতঃ এখনকার হিন্দি ভাষার মত, তখনকার হিন্দবী নয়। ঠিক যেরকম কৃত্তিবাসী রামায়ণ আমরা পাই প্রিন্টের যুগের আধুনিক বাংলায়- কৃত্তিবাসের যুগের বাংলা হারিয়েই গেছে।

তাই খুসরোর হিন্দবী ভাষার কবিতার কথা বলার সময় আমরা খুসরোর কবিতা না বলে খুসরোর ‘নামাঙ্কিত’ কবিতা বলব। খুসরোর নিজের হোক আর অন্যের- দিল্লির সুফি সাহিত্য-পরম্পরার প্রতিফলন অবশ্যই এই কবিতাগুলির মধ্যে দেখা যায়। এই আলোচনায় আমরা সমপ্রেম বলতে দুটি পুরুষ বা দুটি নারীর মধ্যে প্রেমভাবকে বুঝব। সেই প্রেম আধ্যাত্মিক, রোমান্টিক, শারীরিক সবরকমই হতে পারে।

খুসরোর গুরু সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়া। খুসরোর ‘নামাঙ্কিত’ হিন্দবী কবিতার বেশীরভাগই নিজাম অর্থাৎ নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে উদ্দেশ্য করে লেখা। সেখানে মধ্যম পুরুষে নিজাম আর উত্তম পুরুষে খুসরো। প্রায় সব কবিতার মধ্যেই খুসরোর নামটা পাওয়া যায়। খুসরো নিজের নাম প্রথম পুরুষে ব্যবহার করে উত্তম পুরুষের বক্তব্য রাখছেন। একটি কবিতার উদাহরণ দিচ্ছি:

“তোরি সুরত কে বলিহারি নিজাম।

সব সখিয়োঁ মে চুনর মোরি ম্যায়লি- দেখ হাসে নরনারী নিজাম।

অব কে বাহার চুনর মোরি রঙ্গ দে- পিয়া রখ লে লাজ হামারি নিজাম।

সদকা বাবা গঞ্জ-এ-শকর কা, রখ লে লাজ হামারি নিজাম।

কুতুব ফরিদ মিল আয়ে বারাতি- খুসরো রাজদুলারী নিজাম।

কোউ সাসু কোউ ননদ সে ঝগড়ে- হামকো আশ তিহারি নিজাম।

তোরি সুরত কে বলিহারি নিজাম।”

এটা বাংলায় অনুবাদের চেষ্টা করছি-

“তোর সুরতের বলিহারি নিজাম।

সব সখীর মাঝে ময়লা মোর চুনরি- দেখে হাসে নরনারী নিজাম।

এবার বসন্তে মোর চুনরি রাঙিয়ে দে- পিয়া রাখ লাজ হামারি নিজাম।

দোহাই বাবা গঞ্জ-এ-শকরের, রাখ লাজ হামারি নিজাম।

কুতুব ফরিদ মিলে বরযাত্রী এল- খুসরো হল রাজদুলারী নিজাম।

কেউ শাশুড়ি কেউ ননদের সাথে ঝগড়া করে- আমার আছে শুধু আশ তোমারই নিজাম।

তোর সুরতের বলিহারি নিজাম।”

সুফিধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল প্রেম। সেখানে গুরু, ঈশ্বর এবং প্রেমাস্পদ মিলে এক হয়ে যায়। এখানেও আমরা দেখতে পাই একটি বিয়ের চিত্রণ যেখানে খুসরো রাজদুলারী, নিজাম তাঁর প্রেমাস্পদ আর সেই বিয়েতে বরযাত্রী এসেছেন অন্য দু’জন সুফি সাধক- কুতুব এবং ফরিদ। খুসরো দুঃখিত তাঁর ময়লা ওড়না নিয়ে এবং তাঁর প্রার্থনা আগামী বসন্তে নিজাম তাঁর ওড়না রাঙিয়ে দিয়ে তাঁর লজ্জা রক্ষা করবেন।

ঈশ্বরকে প্রেমাস্পদ হিসাবে ভেবে নিজেকে নারী হিসাবে কল্পনা করা ভারতীয় আধ্যাত্মিকতায় নূতন বিষয় নয়। একই ভাবনা বৈষ্ণবধর্মেও আমরা দেখি। খুসরোর নামঙ্কিত হিন্দবী কবিতাগুলিতে দেখি খুসরো নিজেকে দেখছেন গ্রাম্য বালিকার রূপে – কখনও মাটির কলসী হাতে নদীতে জল ভরতে যাচ্ছেন, উত্তেজনায় দৌড়তে গিয়ে কলসী ভেঙে ফেলার ভয় তাঁর মধ্যে, কখনও তাঁর হাতে সবুজ চুড়ি, কখনও তিনি প্রেমিকের জন্য ক্ষীর বানিয়ে ভয় পাচ্ছেন কুকুর এসে খেয়ে যাবে। কখনও তিনি নিজেকে রাধা বলে ভাবেন আর নিজামকে কৃষ্ণ বলে। জয়দেবের গীতগোবিন্দের মতই হয়তো এই কবিতাগুলি একদিকে প্রেমের আড়ালে কোনও অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ভাবনার প্রকাশ, আবার অন্যদিক থেকে দেখলে এগুলি হয়তো বিশুদ্ধ প্রেমেরই কবিতা।

খুসরোর মা জন্মেছিলেন হিন্দু রাজপুত পরিবারে, তাঁর মাতামহ ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন। তাই হিন্দু সংস্কৃতির বিষয়ে খুসরোর গভীর ধারণা ছিল। এর প্রতিফলন তাঁর ফার্সী ভাষার কাজেও (যেগুলি বেশী অথেন্টিক) দেখা যায়। বলবনের সভাকবি হয়ে ওঠার আগে তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, জ্যোতিষ বিষয়েও তাঁর ভাল জ্ঞান ছিল। ফারসি সাহিত্য এবং কুর-আন তিনি গভীরভাবে চর্চা করেছিলেন। সমসাময়িক রাজনীতি তিনি বেশ ভালভাবে নথিবদ্ধ করেছেন। বলা হয়- হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী সঙ্গীতের জন্ম অনেকটাই তাঁর হাত ধরে। ত্রিতন্ত্রী বীণার কিছু পরিবর্তন করে তিনি জন্ম দেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্রের – সেতার।

এখানে উল্লেখ করবো একটি কিংবদন্তীর। দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিনের দরগায় এখনও প্রতিবছর বসন্তপঞ্চমী উদযাপিত হয়। কীভাবে শুরু হয়েছিল এই প্রথা? বলা হয়, নিজামুদ্দিন আউলিয়া তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের মৃত্যুতে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন, তখন খুসরো উপায় খুঁজতে শুরু করলেন কীভাবে তাঁকে খুশী করা যায়। তিনি একদিন দেখলেন বেশ কয়েকজন গ্রাম্য মহিলা হলুদ পোশাকে, হাতে হলুদ রঙের সর্ষে ফুল নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। তিনি জানতে চাইলে তারা উত্তর দিল ঈশ্বরকে অর্পণ করার জন্য এই ফুল আর এই সাজ। খুসরো আবার প্রশ্ন করলেন- এতে সত্যি ঈশ্বর খুশী হয়? মেয়েরা উত্তর দিল- হ্যাঁ। এভাবে খুসরো তাঁর নিজের প্রশ্নের উত্তর পেলেন- নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে খুশী করার উপায়। তিনি নিজেও পরলেন বাসন্তী রঙের শাড়ী, হাতে নিলেন হলুদ সর্ষের ফুল, আর এই মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে গান গাইতে গাইতে নিজামের কাছে গেলেন-

“সকল বন ফুল রহী সর্সোঁ,

আম্বুয়া ফুটে, তেসু ফুলে, কোয়ল কুকত ডার ডার,

ঔর গোরী করত সিঙ্গার,

মালনিয়া গড়ওয়া লে আয়ি কর্সোঁ,

সকল বন ফুল রহী সর্সোঁ।

তরহা তরহা কে ফুল মাঙ্গায়ে,

লে গড়ওয়া হাথ মে আয়ে,

নিজামুদ্দিন কে দরওয়াজে পর,

আওঅন কহকে আজহু না আয়ে,

বীত গয়ি বর্সোঁ।

সকল বন ফুল রহী সর্সোঁ।”

(সকল বনে ফুটেছে সর্ষেফুল, আম ফুটেছে, পলাশ ফুটেছে, কোকিল ডাকছে ডালে ডালে। গোরী করছে শৃঙ্গার, মালিনীরা গড়ে আনছে ফুলের স্তবক। নানারকম ফুল আনিয়ে নিজের হাতে গড়ি, কিন্তু নিজামুদ্দিনের দরজায় আসব বলেও আজও আসা হল না, কেটে যায় বছরের পর বছর।)

হয়তো এটি অনেক বছর পরের কোনও কবির রচনা, ভাষা অনেকটাই পূর্বাঞ্চলী ঘেঁষা। এই ঘটনা সত্য না কাহিনী জানা নেই- তবে এরকমই কিংবদন্তীর রূপ নিয়ে সুফি সাধকদের মধ্যে বহু শতাব্দী জুড়ে আমীর খুসরোকে ঘিরে বেঁচে আছে প্রেমের সাথে একাকার হয়ে যাওয়া অধ্যাত্মভাবনা।

মধুরভাবের সাধনা করতে হলে সাধককে রাধা হতে হয় আর ঈশ্বরকে সে কৃষ্ণ বলে দেখে – সাধক পুরুষ হোক বা নারী। চৈতন্যের অনুগামীরা তাঁকে কখনও কৃষ্ণরূপে দেখেছেন- কখনও রাধারূপে। রামকৃষ্ণ মধুরভাবের সাধনা করার জন্য দীর্ঘদিন রাধারানীর বেশভূষায় কাটিয়েছেন। খুসরোর নামাঙ্কিত কবিতায়ও দেখা যায় তিনি রাধা আর নিজামুদ্দিন হলেন কৃষ্ণ।

“খুসরো শ্যাম কী আস লাগায়ে,

নিজাম পিয়া কাহে নহী আয়ে,

কাহে কো তুম নহী আয়ে কানহাইয়া,

মনমোহন ঘনশ্যাম বনসী বাজাইয়া,

খুসরো তোরি আস লগাবে কানহা,

শ্যাম পিয়া কাহে নহী আয়ে।”

এখানে নিজাম পিয়া এবং শ্যাম পিয়া এক হয়ে গেছে। নিচের কবিতাতেও আমরা সেটাই দেখি-

“কব আওগে মোরে শ্যাম,

হোরি খেলন কো গাম,

গঞ্জ শকর কে লাল নিজাম মোপে রঙ্গ ডারো রী…”

খুসরোর কল্পনায় অনেক সময়ই তিনি এক গ্রাম্য কিশোরী। যেরকম ‘বহুত কঠিন হ্যায় ডগর পনঘট কি’ কবিতায় আমরা দেখি সেই গ্রাম্য কিশোরীর আত্মবচন- সে কলসী হাতে জল ভরতে গেছে নদীর ঘাটে। বড় কঠিন সে পথ। নিজামুদ্দিন আউলিয়া যেন গ্রাম্য কিশোর। তাঁকে দেখে তাড়াহুড়ো করে পালাতে গিয়ে কিশোরীর মাটির কলসী ভেঙে যায়। তার আকুল প্রার্থনা নিজামুদ্দিনকে যেন তার ঘোমটার লাজ তিনি রাখেন। তার মাটির কলস কঙ্কর (নুড়িপাথর) মেরে সেই কিশোর ফাটিয়ে দেয়, আর সেই ভাঙা কলসীর জলে তার শাড়ী ভিজে যায়। কিন্তু সেই কিশোরী শেষে নিজামুদ্দিনকে ধন্যবাদই জানায় কারণ কলসী ফেটে গিয়ে সে জল আনার কাজ থেকে মুক্তি পেল। আধ্যাত্মিক বক্তব্য এখানে মিশে গেছে গ্রাম্য কিশোর-কিশোরীর প্রেমলীলায়, আর নিজামুদ্দিন আর খুসরো মিশে গেছে সেই কিশোর-কিশোরীর মধ্যে।

কখনও তাঁর প্রার্থনা আরও গভীর- 

“খুসরো কহত নিজাম পিয়া মোহে কাজল বনা আপনে নয়নন মা রখি লে,

চুড়িয়াঁ পহরাই, চুনরিয়া উডারি, মোহে খাসি দুলহনিয়া বনাই!”

(খুসরো বলে নিজাম পিয়াকে- কাজল বানিয়ে নয়নে রাখো, চুড়ি পরিয়ে চুনরি পরিয়ে আমায় নূতন বৌ সাজাও।)

খুসরোর হিন্দবী কবিতার মূল রচয়িতাদের নিয়ে সংশয় থাকলেও তাঁর ফারসি লেখাগুলো নিয়ে সেটা নেই। তাঁর ফারসি লেখা পড়ার সুযোগ এই লেখকের  হয়নি। তবে ফারসি কবিতার ইংরাজী অনুবাদ আমি দিচ্ছি যেগুলি সেলিম কিদওয়াই-এর প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত-

“That pert one drinks and then denies it to me-

What am I to do for I dare not smell his breath?

I saw him once in a dream, and now for years

Every night and day I remind myself of that dream.

Only the wind can now carry my feelings to the beloved’s abode

For no caravan bearing solace passes this way any more.

Alas, I am too weak to inquire about him-

Enough that I am lying at his door.”

তবে খেয়াল রাখতে হবে হিন্দি-ইংরাজিতে যেমন ক্রিয়া বা সর্বনামের লিঙ্গভেদ হয় ফারসি ভাষায় সেটা হয় না- অনেকটা বাংলার মত। তবে ইতিহাসবিদ সেলিম কিদওয়াই এখানে পুংলিঙ্গেই অনুবাদ করেছেন।

এবার সাহিত্য থেকে আমরা ইতিহাসের দিকে আসব। ইতিহাসকার ফিরিশতার বর্ণনায় আমরা পাই খুসরোর আর একটি ভালবাসার কাহিনী। এখানে মনে রাখতে হবে ইরানিয় ইতিহাসকার ফিরিশতা, যিনি শেষজীবনে ভারতবর্ষে বাস করতেন – তিনি খুসরোর দুই শতক পরের লোক। ফিরিশতার মতে খুসরোর একটা ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল নজমুদ্দিন হাসানের সাথে – আমরা সংক্ষেপে তাঁকে হাসান বলব। খুসরো একদিন বাজারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, নিজামুদ্দিন আউলিয়া ও তাঁর অন্যান্য শিষ্যদের সাথে। একটি ছেলে দোকানে রুটি বেচছিল। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে যুবক খুসরো রুটির দোকানে গিয়ে হাসানকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি রুটি কীভাবে বিক্রি করো?” ছেলেটি উত্তর দিল – আমি দাঁড়িপাল্লার একদিকে রুটি রাখি, অন্যদিকে ক্রেতাকে বলি পয়সা রাখতে। পয়সার দিকটা ভারী হলে ক্রেতা রুটি পায়। এবার খুসরো প্রশ্ন করলেন – আর যদি ক্রেতা গরীব হয়, পয়সা না থাকে? ছেলেটি উত্তর দিল – তাহলে আমি ভালবাসা ও বিনয়ের বিনিময়ে রুটি দিই। এই উত্তরে চমৎকৃত হয়ে খুসরো নিজামকে এসে এই ছেলেটির কথা বললেন। এই ছেলেটিই হাসান। এভাবে নিজামের কাছে হাসানের আসা যাওয়া শুরু হল, আর খুসরোর সাথে তার বন্ধুত্বও।

ধীরে ধীরে হাসান বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠল। হাসান আর খুসরো একসাথে কাজ করতে গেল মুলতানে- সুলতান বলবনের পুত্র ও মুলতানের গভর্নর খান মুহম্মদের সাথে কাজ করার জন্য। খুসরো হল মুশফদার- যার কাজ কুর’আনের রক্ষা করা। হাসান হল দোয়াতদার- যার কাজ দোয়াত রক্ষা করা অর্থাৎ লেখাজোখার কাজ করা। দুজনের ভালবাসা আরও গভীর হল- কিন্তু বাড়ল তাদের ঈর্ষা করার লোকের সংখ্যাও। দুজনের ভালবাসার কথা মুলতানের আর সবাইই জানত। তাদেরকে খারাপ প্রমাণ করার জন্য খান মুহম্মদের লোকেরা খানের কানে ঢোকালো যে দুজনে মিলে “মলামতী” ধর্মের চর্চা করে। মলামতী হল সুফিবাদেরই একটা শাখা তবে তারা ভারতীয় মুসলিম শাসকদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। মুহম্মদ দুজনকে আলাদা হবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তাতেও দুজনকে আলাদা করা গেল না। এবার মুহম্মদ শাস্তি হিসাবে হাসানকে ধরে চাবকালেন। তাতেও হাসানকে বিচলিত করা গেল না। মুহম্মদ এবার তলব করলেন খুসরোকে। খুসরোকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হল, তাদের সম্পর্কটা কীরকম জানতে চাওয়া হল। খুসরো বললেন, “আমাদের ভালবাসায় কোনও দোষ নেই, কারণ আমরা দু’জনেই এক। আমাদের শরীর-আত্মা সবই এক।”

মুহম্মদ বললেন- প্রমাণ করো তোমরা এক।

খুসরো তাঁর হাত খুলে দেখালেন। সবাই দেখল যেখানে যেখানে হাসানকে চাবকানো হয়েছিল- খুসরোর সেখানে সেখানে আঘাতের দাগ আছে। দরবারের সবাই চুপ হয়ে গেল। খুসরো তখন আবৃত্তি করলেন, “ভালবাসা এল- রক্ত হয়ে বইল আমার শিরায়, আর শুষে নিল সবকিছু আর তার বদলে ভরে দিল আমার বন্ধুকে আমার মধ্যে। তাই আমার অস্তিত্বের প্রতিটা কণা আমার প্রেমাস্পদের, আমার তো খালি নামটাই বাকী আছে- বাকী সবই তার!”

এই কাহিনী সত্যি কিনা জানা নেই, কারণ সমসাময়িক ঐতিহাসিক বরনির লেখায় বা খুসরো এবং হাসানের নিজেদের লেখায় এর উল্লেখ নেই। ঐতিহাসিক ফিরিশতা এই কাহিনী আরও দুই শতক পরে লিখেছিলেন। হতে পারে তাঁর নিজের কল্পনা, অথবা হয়তো এরকম কোনও কাহিনী সুফিসমাজে লোকমুখে প্রচলিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ভালবাসার গভীরতার এই উদাহরণগুলো রাখা হত “ইশক়-এ-হক়ীক়ি”র ধারণাকে শেখানোর জন্য। সুফিরা তাঁদের শিক্ষালাভের সময় এইরকম নিখাদ ভালবাসার চর্চা করতেন স্বর্গীয় ভালবাসার স্তরে উত্তীর্ণ হবার জন্য। হক়ীক় মানে সত্য- এখান থেকেই হিন্দি বা উর্দুতে হক়ীক়ত শব্দটা এসেছে। “ইশক়-এ-হক়ীক়ি” মানে স্বর্গীয় প্রেম বা সত্যিকারের ভালবাসা বা সত্যের প্রতি ভালবাসা বা ঈশ্বরপ্রেম। বা বলা যায় সত্যনিষ্ঠার মাধ্যমে ঈশ্বরপ্রেম। “ইশক়-এ-হক়ীক়ি” সুফিধর্মের ভালবাসার তিনটি রূপের মধ্যে একটি। অন্যদুটি হল “ইশক়-এ-মজাজ়ি” বা ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা এবং “ইশক়-এ-রসুল” বা নবী মহম্মদের প্রতি ভালবাসা।

এবার আলোচনা আরেকজন খুসরোকে নিয়ে- খুসরো খান। ইনি সুলতানী যুগেরই- দিল্লীর সুলতানও ছিলেন- দুই মাসের জন্য। খলজি আর তুঘলক রাজবংশের মাঝখানে এদের বাইরে আরও একজন দিল্লির সিংহাসনে বসেছিল – সেটা আমরা অনেকেই জানি না। 

খলজি বংশের শেষ সুলতান – কুতবুদ্দিন মুবারক শাহ খলজি – সংক্ষেপে মুবারক শাহ। তাঁর বাবা আলাউদ্দিন খলজি মালব জয় করার সময় দুই কিশোর ভাইকে যুদ্ধবন্দী দাস হিসাবে ধরে এনেছিলেন, ১৩০৫ সালে। দুজনের জন্মগত নাম জানা নেই – তবে এরা মালবের যোদ্ধা হিন্দু জাতি- ‘বরাডু’ বা ‘বারওয়ারি’ জাতির লোক ছিল। ইসলামে দীক্ষিত করে এদের নাম দেয়া হয়- হাসান আর হিসমুদ্দিন। হাসানের সাথে মুবারক শাহের একটা ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিসমুদ্দিনের সাথেও মুবারকের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে হাসানই মুবারক শাহের প্রিয়পাত্র ছিলেন।

আলাউদ্দিন খলজির মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই সিংহাসন নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী মালিক কাফুরকে হত্যা করান মুবারক, তারপর দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী নিজের ভাইকে হত্যা করান। ১৩১৬ সাল নাগাদ সিংহাসনে বসে প্রিয়জন হাসানকে তিনি উজিরের পদ দেন, এবং নূতন নামও দেন- খুসরো খান। হিসমুদ্দিনও গুজরাতের গভর্নরের পদ পান।

খুসরো খান আর সুলতান মুবারকের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছিলেন ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনী। বরনী মুবারকের সমসাময়িক হলেও এই কাহিনি তিনি নথিবদ্ধ করেছিলেন অনেক পরে- তুঘলক আমলে। তিনি মহম্মদ বিন তুঘলকের ঘনিষ্ঠ হলেও ফিরোজ শাহ তুঘলকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পারেননি। দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটছিল তাঁর। কিছুটা ফিরোজ শাহকে খুশি করার জন্যই তিনি তারিখ-এ-ফিরোজশাহী লেখেন। এটি সুলতানি যুগের শুরুর দিক থেকে ফিরোজ শাহ তুঘলকের সময় অবধি সুলতানি যুগের দলিল। এটি ঐতিহাসিকভাবে সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নয় তবে এর ব্যাপ্তি প্রশংসনীয়, এবং পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকরা এটিকে তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মনে রাখতে হবে নিজের দারিদ্র ঘোচানোর জন্য ফিরোজ শাহকে খুশি করার চেষ্টা বরনী এই লেখার মাধ্যমে করেছেন। তার জন্য তুঘলকদের হাতে দিল্লি দখলের একটা যুক্তি খাড়া করা দরকার। তার জন্য শেষ খলজি অর্থাৎ মুবারককে, আর দু’মাসের সুলতান খুসরো খানকে ব্যাভিচারী হিসাবে দেখানো দরকার ছিল। আর সমকামিতার কাহিনি তুলে ধরা হল ব্যাভিচারিতা প্রমাণ করার একটা উপায়। অতএব খলজি বংশের পতনকে সমকামিতার শাস্তি হিসাবে একটা দৈব পরিণাম হিসাবে দেখানোর উদ্দেশ্য বরনীর ছিল। তুঘলক বংশের মাধ্যমে যে একটা ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা বোঝানোর জন্য খলজিদের এবং খুসরো খানকে অধার্মিক দেখানো খুবই প্রয়োজন ছিল। তবে বরনীর এই কাহিনীতে কিছু সত্যতা ছিল বলে অবশ্যই আশা করা যায়।

এবার ফেরা যাক মুবারক আর খুসরো খানের কাহিনিতে। খুসরো খান ধীরে ধীরে রাজদরবারে নিজের প্রভাব গড়ে তোলেন। দেবগিরির যাদব আর ওয়রঙ্গলের কাকতীয়দের বিরুদ্ধে তিনি দুটি সফল সামরিক অভিযান করেন। বরনীর বর্ণনায় কিছু স্টিরিওটাইপ দেখা যায় – মুবারক আর খুসরো খানের সমকামী সম্পর্কে খুসরো খানকে তিনি রিসিভিং পার্টনার হিসাবে দেখিয়েছেন। কারণ হাজার হোক মুবারক হলেন সুলতান, আর খুসরো খান দাস। অতএব দাসকে রিসিভিং পার্টনার হিসাবে দেখাতেই হবে- এরকম একটা ব্যাপার ছিল। এই প্রবণতা প্রাচীন রোমান সাহিত্যেও ছিল। দুই, খুসরো খান যেহেতু দাস ও হিন্দু বংশজাত সেইজন্য খুসরো খানের অভ্যুত্থানকে তিনি পুরোটাই একটা সেক্সুয়াল ফেভারের ফলশ্রুতি হিসাবে দেখিয়েছেন- দেবগিরি বা ওয়রঙ্গলে তাঁর সামরিক সাফল্যের পরিণতি (অর্থাৎ নিজের গুণে ও বীরত্বে রাজ্যপ্রাপ্তি) হিসাবে নয়। 

মুবারক আর খুসরো খানের কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে বরনী আর একটা কাহিনির সঙ্গে তুলনা টেনে এনেছেন। আলাউদ্দিন খলজি আর মালিক কাফুরের কাহিনী। আলাউদ্দিন খলজির শেষ বয়সে গিয়ে যখন স্মৃতিলোপ হতে থাকে তিনি ক্রীতদাস মালিক কাফুরের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। অবশ্য তার আগে থেকেই তিনি কাফুরের গুণগ্রাহী ছিলেন। এই কাহিনিও হয়তো সত্যি, তবে এখানেও কিছুটা খলজিদের অধার্মিক হিসাবে দেখানোর প্রচেষ্টা হয়তো বরনীর ছিল। বরনী ধর্মভীরু মুসলিম ছিলেন, তাই তাঁর ইতিহাস লেখার মধ্যে ধর্মশিক্ষা থাকত।

মালিক কাফুর খোজা ছিলেন, আর খুসরো খান কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পুরুষ দাস ছিলেন। যাই হোক যুদ্ধবন্দী দাসদাসীদের সঙ্গে সুলতানদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেই দাসদাসীদের মধ্যে সলতনতের প্রতি ক্ষোভ থেকেই যায়। আর প্রেম বড় অস্থায়ী জিনিস। রাজা হবার উচ্চাকাংক্ষা তার থেকে অনেক বড়। হয়তো খুসরো খান ছোটবেলায় তাঁর এবং তাঁর ভাইয়ের প্রতি হওয়া অবিচারগুলো কখনওই ভুলতে পারেননি। খুসরো খান ধীরে ধীরে মুবারক খলজিকে নিজের প্রেমে এতটাই মাতোয়ারা করে দেন যে মুবারক নিজের সুরক্ষা, নিজের রাজ্যপাটের স্বার্থ সবই এক এক করে ভুলে যান।

দাক্ষিণাত্য অভিযানের সময়ে অন্য নেতাদের সাথে মিলে খুসরো খান সুলতান মুবারককে সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এই কথা দিল্লিতে মুবারকের ঘনিষ্ঠ অভিজাতরা তাঁর কানে তুললেও মুবারক সেটাকে পাত্তা দেননি। তবে অভিজাতদের কথামতো মুবারক খুসরো খানকে তড়িঘড়ি পালকিতে করে দিল্লিতে আনান। বরনীর লেখায় স্বাভাবিকভাবেই খুসরো খানের প্রতি একটা বিদ্বেষ দেখা যায়, তাই এই পালকি চড়িয়ে আনানোর প্রিভিলেজটাকেও বরনী কটাক্ষের চোখে দেখেছেন। বরনীর বিবরণ অনুযায়ী মুবারকের সাথে সঙ্গমকালে খুসরো খান একে একে দিল্লির অভিজাতদের নামে অভিযোগ করেন – কীভাবে তারা খুসরো খানের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে, মুবারকের কান ভরছে, তাঁকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। মুবারক খুসরোকেই বিশ্বাস করলেন।

এক এক করে খুসরোর প্রতিপক্ষের অভিজাতদেরকে হয় শাস্তি দেয়া হল, বা নিচু পদে নামানো হল, বা তাদের বেতন কমিয়ে দেয়া হল। সবার কাছেই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সুলতান তখন খুসরো খানের হাতের পুতুল। তাই অভিজাতরা ক্ষোভবশতঃ সুলতানকে সতর্ক করাও বন্ধ করে দিল। এর মধ্যে একদিন খুসরো খান সুলতান মুবারককে বললেন, “ছোটবেলা থেকেই দাস হয়ে দিল্লিতে আছি, তাই আমার পরিজন কেউ নেই। অন্য অভিজাতদের কত কত পরিবার পরিজন আছে। তাই আমার বারওয়ারি গোষ্ঠীর কিছু জাতভাইকে আমি দিল্লি আনাতে চাই।”

মুবারক এতে রাজী হয়ে গেলেন। এভাবে খুসরো নিজের অনেক হিন্দু জাতভাইকে দিল্লি আনালেন। এদের অনেককেই নিজের পরিবারের লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে খুসরো উচ্চপদে বসানোর ব্যবস্থা করলেন। দিল্লির রাজদরবারে বারওয়ারি হিন্দুদের সংখ্যাধিক্য হতে থাকল। এরা সত্যিই বারওয়ারি গোষ্ঠীর কিনা, নাকি খুসরো অন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে যোদ্ধা সংগ্রহ করেছিলেন নিজের সুবিধামত – সেটা জানা নেই। খুসরো খান মুবারককে বলেছিলেন তিনি জাতিভাইদের সঙ্গে প্রাসাদের বাইরে দেখা করতে গেলে তাঁকে সুলতানের থেকে যে অল্পসময়ের জন্য দূরে থাকতে হবে তা তাঁর পক্ষে সহনীয় হবে না – অতএব প্রাসাদে বারওয়ারিদের প্রবেশাধিকার দেয়া হোক। সুলতানও এক মুহূর্তের জন্য খুসরোকে ছেড়ে থাকতে চাইতেন না- তাই রাজী হলেন। রাজপ্রাসাদে অবাধ প্রবেশাধিকার পেল বারওয়ারিরা। অন্যদিকে মুবারকের উপর খুসরো খানের প্রভাব আরও বাড়তে থাকল।

সুলতানের শিক্ষক কাজী জিয়াউদ্দিন সুলতানকে সতর্ক করলেও খুসরো ভালবাসা দিয়ে সুলতানকে ভুলিয়ে রাখলেন।

“সুলতান, আমি আপনাকে ভালবাসি আর সেই ভালবাসার প্রতিদানে আপনি আমায় উচ্চপদাসীন করেছেন- তাই দিল্লির অভিজাতরা আর রাজপরিবারের সদস্যরা সবাই আমায় ঘৃণা করে।”- খুসরো খানের এই জাতীয় কথাগুলো মুবারকের মনকে আরওই ভিজিয়ে দেয়, তাঁর খুসরোর প্রতি দুর্বলতা আরও বাড়তে থাকে। 

বারওয়ারি হিন্দুদের প্রভাবে রাজপ্রাসাদের নিরাপত্তা আরও শিথিল হতে থাকল। সঙ্গমরত অবস্থাতেই একদিন মুবারককে হত্যা করলেন খুসরো- যখন সুলতান নিজের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে খুসরোর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। মতান্তরে খুসরোর এক জাতভাই মুবারককে হত্যা করেছিল। যাই হোক, যখন এই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তখন রাজপ্রাসাদ প্রায় দখল করে ফেলেছে বারওয়ারি গোষ্ঠীর লোকেরা। সুলতানের সবচেয়ে কাছের প্রহরীদের এরই মধ্যে হত্যা করে ফেলেছিল বারওয়ারিরা। এভাবে খলজি বংশের পতন হল। এক এক করে মুবারকের নাবালক ভাইয়েদের হত্যা করা হল, যাতে কেউ সিংহাসনের দাবী করতে না পারে।

বরনী এই কাহিনি লেখার সময় মুবারককে আগাগোড়া একজন কামাতুর দুর্বল চরিত্রের রাজা হিসাবে দেখিয়েছেন। আলাউদ্দিন খলজির সাথে মালিক কাফুরের সম্পর্ক আর মুবারক শাহ খলজির সাথে খুসরো খানের সমকামী সম্পর্কই যেন খলজি বংশের পতনের জন্য দায়ী – এরকম তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ চরিত্রহীন খলজিদের পতন যেন অনিবার্য ছিল, আর তুঘলকদের দিল্লি জয় যেন দৈব বিধান ছিল এমনই একটা বক্তব্য।

বরনী সামগ্রিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ হিসাবে দেখিয়েছিলেন, তবে মনে রাখতে হবে, খুসরো খান দিল্লির সুলতান হবার পরেও মুসলিম ছিলেন। তাছাড়া সুলতান হবার পরে উচ্চপদে তিনি মুসলিমদেরই রেখেছিলেন। বারওয়ারি হিন্দুরা ভাল পদ পেলেও খুব উচ্চপদে তারা ছিল না, কারণ তারা বেশীরভাগই নিরক্ষর ছিল। খুসরোর ভাই হিসমুদ্দিন অবশ্য ইসলাম পরিত্যাগ করেছিলেন তবে সেটা মুবারকের জীবদ্দশাতেই। হয়তো খুসরো খানকে কাফের ও হিন্দু-দরদী হিসাবে দেখিয়ে আর তুঘলকদেরকে তাঁর সংহারক হিসাবে দেখিয়ে বরনী তুঘলক রাজত্বকে আরও মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

যাই হোক, খুসরো খানের পরিণতিও অনেকটা তাঁর পূর্ববর্তী দাস-রাজা মালিক কাফুরের মতই দাঁড়ালো। মালিক কাফুরও এক মাসের জন্য দিল্লির সুলতান হয়েছিলেন, খুসরো হলেন দু’মাসের জন্য। আরও মিল আছে তাঁদের মধ্যে- দুজনেই হিন্দু বংশজাত, যুদ্ধবন্দী দাস, এবং দাস থেকে তাঁরা খলজি সুলতানদের প্রিয়ভাজন, এবং প্রভাবশালী নেতা হয়ে ওঠেন। দিল্লির অন্যান্য অভিজাতদের কাছে হিন্দু দাস থেকে রাজা হয়ে ওঠা সুলতানরা পছন্দের ছিলেন না। কিছুদিনের মধ্যেই অভিজাতরা দেবলপুরের গভর্নর গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের নেতৃত্বে খুসরো খানকে হত্যা করে সরালো- তুঘলক বংশের সূচনা হল।

মুবারকের স্ত্রী দেবল দেবীকে খুসরো বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু চারটি মাসিকের আগে বিধবারা পুনর্বিবাহ করতে পারতেন না- ইসলামী আইন অনুযায়ী- তাই খুসরোর মৃত্যুর পর এই বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করা হল। দেবল দেবীর নিজস্ব কাহিনি আছে। আলাউদ্দিন খলজির হিন্দু স্ত্রী কমলদেবীর পূর্বতন বিবাহের সন্তান তিনি, এবং আলাউদ্দিনের ছেলে খিজির খাঁর স্ত্রী। সৎমায়ের প্রথম পক্ষের মেয়েকে বিয়ে করা নিয়ে আলাউদ্দিন আর কমলদেবীর আপত্তি ছিল, কিন্তু সেই বাধাকে অগ্রাহ্য করেই দুজনে ভালবেসেছিলেন- সেটা নিয়ে কবি আমীর খুসরোর একটি মসনবী বা কবিতা আছে- ‘ইশকিয়া’। মুবারক খিজির খাঁকে হত্যা করার পর তিনি মুবারকের স্ত্রী হন, আর মুবারকের হত্যার পর খুসরো খানের।

আমরা দেখলাম বরনী অনেকটা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এই কাহিনী লিখেছেন যেখানে খলজীরা অযোগ্য শাসক, আর খুসরো খান দিল্লির সিংহাসনে এক অনাকাংক্ষিত রাজা। আবার হিন্দুত্ববাদী ন্যারেটিভে গল্পগুলো অনেকটাই উল্টো। সাভারকর Six Glorious Epochs of Indian History বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন খুসরো খান আর দেবলদেবী হিন্দু গৌরবের পুনরুদ্ধারকারী আর খুসরো খান দিল্লির মসনদে এক হিন্দু শাসক। কিন্তু খুসরো খান নূতন করে হিন্দু হবার চেষ্টা করেছিলেন এরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না- সেটা আগেও বলেছি। বরনী বা সাভারকর দুজনেই এটাকে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন- কিন্তু এটি যে আদৌ হিন্দু-মুসলিম সংঘাত ছিল তার তেমন প্রমাণ নেই। খুসরো খান উল্টে সুলতান হয়ে নূতন মুসলিম নাম গ্রহণ করেন- নাসিরউদ্দিন। আবার বরনীর লেখায় খুসরো খান রিসিভিং পার্টনার আর মুবারক ডমিনেটিং পার্টনার। সাভারকর করে দিয়েছেন উল্টো। তিনি মুবারককে নারীসুলভ বলে দেখিয়েছেন। নিজের ধর্মের লোককে কেউই রিসিভিং পার্টনার হিসাবে দেখাতে চাননি! সবাই পুরুষত্বের একটা সংজ্ঞা বেঁধে দিয়ে চলে। এখানেই শেষ নয়, সাভারকর দাবী করেছেন- মুসলিম ঐতিহাসিকরা খুসরোকে বারওয়ারি বা বারাডু এরকম কোনো রাজপুত জাতীয় বলে উল্লেখ করলেও আসলে তিনি পারিয়া নামক দলিত জাতির লোক। সাভারকর এর প্রমাণ কোথায় পেলেন জানা নেই। কে জানে, একজন রাজপুতকে সমকামী বা দাস হিসাবে দেখাতে হয়তো সাভারকরের বেধেছিল!

সুলতানি যুগের বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য হল শ্রীরামপাঁচালি যাকে আমরা কৃত্তিবাসী রামায়ণ বলেও জানি। এটি হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি এবং সুলতানি যুগের দু হাজার বছর আগের ঘটনাশ্রিত কাহিনি হলেও আমি সুলতানি যুগের আলোচনায় এই কাহিনি বলছি কারণ সাহিত্যে এই কাহিনির আবির্ভাব সম্ভবতঃ পঞ্চদশ শতক নাগাদ বা তারও পরে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ নেহাত বাল্মিকী রামায়ণের অনুবাদমাত্র নয়, এতে কৃত্তিবাসের অনেক নিজস্ব সংযোজন আছে। আবার অনেক সংযোজন কৃত্তিবাসের পরবর্তী যুগেও হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। যাই হোক কৃত্তিবাসী রামায়ণে এমন অনেক কাহিনি আছে যা বাল্মিকী রামায়ণে নেই বা থাকলেও বাদ পড়ে গেছে। এরকম একটি কাহিনি হল ভগীরথের জন্মকাহিনি। 

রাজা দিলীপ নিঃসন্তান মারা গেলেন তার দুই রানীকে রেখে। সেই রানীরা দুই বোন, দুই সতীন- কিন্তু ঘটনাচক্রে তাঁরা হয়ে উঠলেন একে অপরের প্রেমিকাও। এই দুই রানীর কোনো নাম নেই- দিলীপকামিনী বা দুই যুবতী- এভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজা দিলীপ মারা যাবার পর দেবলোকের দেবতাদের মাথায় ভাঁজ পড়ল। কারণ এই বংশেই রামের জন্ম হবে, কিন্তু সেটা হবে কী করে যদি কোনও সন্তান না থাকে! শিব মর্ত্যে নেমে এসে দুই রানীকে বর দিলেন এবং তাদের নিজেদের মধ্যে “রতি” করতে বললেন, এবং তার ফলে একজন সন্তানবতী হবে তাও জানিয়ে দিলেন। এরপর দুই যুবতী স্নান করতে গেলেন। 

“সম্প্রীতিতে আছিলেন সে দুই যুবতী। 

কত দিনে একজন হৈল ঋতুমতী।।

দোঁহেতে জানিল যদি দোঁহার সন্দর্ভ।

দোঁহে কেলি করিতে একের হৈল গর্ভ।।” 

এই রতি, স্নান করা, সম্প্রীতি, সন্দর্ভ, কেলি- অনেকটাই আভাস দিচ্ছে যে এটা শুধু সন্তানজন্মের খাতিরে নয়, শুধু দৈব বিধান নয়, – তাঁদের নিজেদের মধ্যে সত্যি একটা দৈহিক ভালবাসা গড়ে উঠেছিল।

“ভগে ভগে জন্ম হেতু ভগীরথ নাম”- ভগ অর্থাৎ যোনি- দুই নারীর ভগের মিলনে জন্ম বলেই ভগীরথ নাম- এমন ব্যাখ্যাই আমরা কৃত্তিবাসী রামায়ণে পাই। এইরকম সন্তানজন্মের উল্লেখ সুশ্রুত সংহিতায়ও আছে। প্রাচীন ভারতে বিশ্বাস করা হত সন্তানের অস্থি আসে বাবার দিক থেকে আর মাংস মায়ের দিক থেকে। শুধুমাত্র ভগের মাধ্যমে জন্ম হওয়ায় ভগীরথের দেহ অস্থিহীন ছিল।

“পুত্র কোলে করিয়া কান্দেন দুইজন।

হেন পুত্র-বর কেন দিলা ত্রিলোচন।

অস্থি নাহি মাংসপিণ্ড চলিতে না পারে।

দেখিয়া হাসিবে লোক সকল সংসারে।”

এরপর অনন্যোপায় হয়ে দুইজন শিশুটিকে চুপড়িতে ভরে নিয়ে গিয়ে সরযূর তীরে ফেলে আসতে গেল। বশিষ্ঠমুনি বললেন- পথে শুয়িয়ে রাখো, কারোর হয়তো দয়া হবে। অষ্টাবক্র মুনি স্নানে যাচ্ছিলেন, এবং অস্থিহীন শিশুটিকে দেখে ভাবলেন তাঁকে শিশুটি ভেঙচাচ্ছে। অভিশাপ দিলেন- যদি সত্যি ভেঙচাও তাহলে তোমার শরীর বিনাশ হবে, নাহলে আমার বরে তুমি মদনমোহন হবে। সেই শাপই বর হল। ভগীরথের দেহ অস্থিপ্রাপ্ত হল।

“উভয় রানীকে ডাকি আনে মুনিবর।

পুত্র পেয়ে হরষিত দোঁহে গেল ঘর।

আসিয়ে সকল মুনি করিল কল্যাণ।

ভগে ভগে জন্ম হেতু ভগীরথ নাম।”

তবে এখানেই বাধাবিপত্তির শেষ নয়। আজকের দিনেও যেমন সেম-সেক্স কাপলের সন্তানদের স্কুলে বুলিইংএর শিকার হতে হয়- তেমনই হল। বশিষ্ঠের আশ্রমে শিক্ষালাভের সময়-

“বালকে বালকে দ্বন্দ্ব যখন বাড়িল।

জারজ বলিয়া গালি এক শিশু দিল।”

অভিমান করে বাড়ী ফিরল না ভগীরথ। অনেক খুঁজে পাওয়া গেল। অনেক চেষ্টা চরিত্র করার পর তার মা ছেলেকে দিয়ে কথা বলাতে পারলেন। ভগীরথ বলল,

“বিরোধ বাধিল এক বালকের সনে।

জারজ বলিয়া গালি দিল সে ব্রাহ্মণে।

কোন বংশজাত আমি কাহার নন্দন।

ইহার বৃত্তান্ত মাতা করহ বর্ণন।”

এখানে দুই মায়ের মধ্যে কাকে বোঝানো হয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়, তবে জননী শব্দটার ব্যবহার থেকে আন্দাজ করছি গর্ভধারিণী মাকে বোঝানো হচ্ছে। এখানে সবচাইতে লক্ষণীয় বিষয় হল ভগীরথ এখনও তার ইক্ষ্বাকু বংশপরিচয় জানে না। অর্থাৎ ভগীরথের মা ভগীরথকে ইক্ষ্বাকু বংশজাত সন্তান হিসাবে মানুষ করেননি। এবার মাতাপুত্রের যে কথোপকথন হল তাতেও তিনি পুনরাবৃত্তি করলেন- “ভগে ভগে জন্ম হেতু ভগীরথ নাম।”- এই বাক্যটা কিন্তু এই কাহিনীতে দুবার আছে। শেষ অবধি ভগীরথের মা দিলীপ, সূর্যবংশ, সগরের ষাট হাজার সন্তানের মৃত্যু- এসব কথা বললেন।

ইক্ষ্বাকু বা নামান্তরে সূর্যবংশের কোনো প্রতিপত্তি যে তখন নেই সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অথচ এই বংশে একদিন রামের জন্ম হবে। বংশের চিহ্ন হিসাবে এই দুই নারী আর ভগীরথ- এরাই একমাত্র টিকে আছে। সবচেয়ে বড় কথা হল ভগীরথের মা এখানে ভগীরথকে সূর্যবংশী হিসাবে মানুষ করছেন না, বংশপরিচয় জানানওনি, জারজ সন্তান বলেই সবাই তাকে জানে, তাকে ব্যঙ্গ করে, রাজবংশজাত বলে কেউ দেখে না, এবং অকপটে ভগীরথমাতা তার ভগে-ভগে জন্মের কথা বলেন। এক নারীর এই সাহসিকতা আর স্বতন্ত্র সত্তার ভাবনা এই কাহিনির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়। এই কাহিনি বাল্মিকী রামায়ণে পাওয়া যায়নি – হয়তো বাংলার নিজস্ব কাহিনি – সংস্কৃত পদ্মপুরাণের বাংলা হরফে লেখা পুঁথি আর কৃত্তিবাসী রামায়ণ- এই দুই জায়গায় এই কাহিনী আমরা পাই। হয়তো এটা বাংলারই কোনও নিজস্ব নারীর কাহিনি।

মায়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে শেষ অবধি ভগীরথ বেরোলেন গঙ্গাকে মর্ত্যে এনে পিতৃকুলকে রক্ষা করতে।

“যাত্রাকালে করে রাজা মায়েরে স্মরণ।

দক্ষিণ নয়ন তার করিছে স্পন্দন।

মায়ের চরণে আসি করিয়া প্রণতি।

প্রথমে সেবিতে গেল দেব সুরপতি।”

ভগীরথের মায়ের কাহিনি এখানেই শেষ- বাকীটা ভগীরথের গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার কাহিনি- নূতন করে সূর্যবংশ প্রতিষ্ঠা হবার কাহিনি। এই দুই নারীর মিলন না হলে কখনওই সূর্যবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হত না, আর রামেরও জন্ম হত না।

কৃত্তিবাস ১৩৮১ সাল নাগাদ জন্মান এবং আমরা যে কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা শ্রীরামপাঁচালী পড়ি সেটা ১৮০২ থেকে ১৮৩৪ এর মধ্যে অর্থাৎ প্রিন্টের যুগে প্রিন্টের আকারে আসে। আমরা যেটা পড়ি সেটা প্রিন্টের যুগের ভাষা, কৃত্তিবাসের যুগে বাংলা মোটেই অমন ছিল না। অতএব এই সমকামিতার গল্প কৃত্তিবাসের নিজেরও হতে পারে, ১৪ থেকে ১৯ শতকের মাঝে কারো হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে বাল্মীকি রামায়ণে এই গল্পটা ছিল কিন্তু রক্ষণশীলরা কেটে বাদ দিয়েছে, আর কৃত্তিবাসী রামায়ণে এটা ফিরে এসেছে। এগুলো সবই oral tradition এবং কয়েকশো বছর ধরে রচিত, অতএব সব সম্ভাবনাই থাকে।

একই কৃত্তিবাসী রামায়ণে ভগীরথের দুই মায়ের কাহিনি সদর্থকভাবে দেখানো হলেও এর শেষের দিকে গিয়ে দেখি ইলা ও বুধ- এই দুই পুরুষের প্রেমকে অতটা সদর্থকভাবে দেখানো হয়নি- কারণ ইলাকে প্রায়শ্চিত্ত যজ্ঞ করতে হয়েছিল। 

এই লেখার ইতিহাস অনেকটাই কিংবদন্তী ও সাহিত্যের উপর নির্ভরশীল। মুবারক শাহ – খুসরো খানের কাহিনীর কিছু ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকলেও বাকীগুলো লোকশ্রুতি নির্ভর কাহিনি ছিল। কিংবদন্তী আর সাহিত্যের ইতিহাসও নিজগুণে একটা ইতিহাস। তারা হয়তো বাস্তব ইতিহাস নয়- কিন্তু একটা সময়ে মানুষ যা লিখেছে, যা ভেবেছে, যেসব কাহিনি লোকমুখে বলে বেরিয়েছে সেইসব কাহিনির ইতিহাস। প্রান্তিক মানুষের ইতিহাস অনেক সময়ই নথিবদ্ধ ইতিহাস হয় না, তার জন্য embedded historyর উপর নির্ভর করতে হয়। আর সেইজন্যই এই লৌকিক কাহিনীগুলো আরওই গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিক ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য। 

 

 

 

তথ্যসূত্র:

১) Ruth Vanita, Saleem Kidwai, ‘Same-Sex Love in India Readings from Literature and History’

২) Ruth Vanita, ‘Queering India Same-Sex Love and Eroticism in Indian Culture and Society’ 

৩) Ruth Vanita, ‘Born to Two Mothers, The Hero Bhagiratha’, Manushi, issue no. 146, p. 22

৪) Savarkar, ‘Six Glorious Epochs of Indian History’

৫) Mohammad Wahid Mirza, ‘The Life And Works of Amir Khusrau’ 

৬) প্রদীপ শর্মা খুসরো, ‘আমীর খুসরো’ (হিন্দী)

৭) বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’

8) https://scroll.in/article/702044/how-delhis-hazrat-nizamuddin-dargah-began-celebrating-basant-panchami

৯) https://scroll.in/article/810007/from-bulleh-shah-and-shah-hussain-to-amir-khusro-same-sex-references-abound-in-islamic-sufi-poetry

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত