যারা টাকাপয়সা জমাতে চান কিন্তু পারছেন না, তারা হয়তো ভারতের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের শ্রমিকদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।স্বল্প মজুরির এই নির্মাণ শ্রমিকরা একটি গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন, যার অংশ হিসাবে তারা মজুরি পাওয়ার পর কিছু অর্থ একটি খামে ভরে রাখতেন, যেটি তাদের সঞ্চয় হিসাবে বিবেচিত হতো।যখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ সন্তানদের ছবি সেই খামের সঙ্গে সেটে রাখলেন, তখন এই সঞ্চয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেলো।
প্রাত্যহিক খরচ বা টানাটানি থাকুক না কেন, হঠাৎ দরকারে ছেলে বা মেয়ের ছবি লাগানো খাম থেকে টাকা বের করে নিয়ে খরচ করতে তাদের অপরাধবোধ হতো। সুতরাং তারা যেহেতু সেই খারাপ লাগার মুখোমুখি হতে চাননি, তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণও দিনে দিনে বেড়ে যায়।
এটি আসলে কোন তত্ত্বের চেয়েও বেশি কিছু।
যুক্তরাজ্যেও হাজার হাজার মানুষ তাদের অর্থ থেকে কিছু টাকা অন্য কোন হিসাবে সরিয়ে রাখেন, যাতে প্রতিদিনকার চাহিদায় সেগুলো খরচ হয়ে না যায়। আর তাই ওয়েজস্ট্রিমের মতো যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য এই পুরস্কার ও অপরাধ বোধের কৌশল ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। তারা ব্যবহারকারীদের সঞ্চয় অ্যাপের সঙ্গে তাদের লক্ষ্যের একটি ছবি যুক্ত করার সুযোগ করে দেয়, যেমন একটি গাড়ি বা বেড়ানোর কোন জায়গার ছবি। তাদের সঞ্চয় যত বাড়তে থাকে, এই ছবিটি তত স্পষ্ট হতে থাকে।
কিন্তু তারা যদি সঞ্চয়ের অর্থ তুলে নেন, তাহলে ছবিটি মুছে যায়।
”এর ফলে তারা সঞ্চয়ের বাস্তব চিত্রটি সরাসরি উপলব্ধি করতে পারে, যার ফলে তাদের আচরণেও অনেক পরিবর্তন আসে” বলছেন ওয়েজস্ট্রিমের সহ প্রতিষ্ঠাতা পিটার ব্রিফেট। তবে বাস্তব হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমে গেছে, যা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে। কারণ সঞ্চয় না থাকলে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ নানাভাবে ক্ষতির শিকার হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ আর স্বল্প আয়ের লোকজন। কোন সঞ্চয় না থাকার মানে হলো যে, হঠাৎ করে কোন ঘটনার মোকাবেলা করার ক্ষমতা না থাকা। যেমন কোন বাড়ি ভাড়ার জন্য জামানত দেয়া বা বীমা না থাকলে অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার খরচের অভাব। যুক্তরাজ্যের ভিআইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১৭টি প্রকল্প নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করেছে যে, কীভাবে মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে তোলা যায়। তারা দেখতে পেয়েছে, সময় মতো মনে করিয়ে দেয়া এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করতে পারছে।
সংস্থাটির পরিচালক এলিজাবেথ কস্টা বলছেন, ”আমরা এতদিন সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণগত দিকটাকে অবহেলা করে এসেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সঞ্চয়ের ব্যাপারটি গ্রাহকদের জন্য যতটা সম্ভব সহজ আর স্বয়ংক্রিয় করে তোলা।”তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন যখন কেউ বাড়ি বদল করে বা তাদের সন্তানদের জন্ম হয়, তখন সবার উচিত সঞ্চয়ের বিষয়টি বিশেষভাবে ভেবে দেখা। মিজ কস্টা বলছেন, ”যখন সঞ্চয়ের প্রশ্ন আসে, তখন মানুষজন অনেকটা দ্বিধা বা সংকটের মুখে পড়েন। তখন তাদের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী চাহিদার একটি সংকট তৈরি হয়।”
ঐ সমস্যার সমাধানে এখন পুরস্কার পদ্ধতির কথাও ভাবছেন গবেষকরা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যখন নিয়মিত সুদের পরিবর্তে মানুষজনকে আর্থিক পুরস্কার জয়ের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, তখন তাদের সঞ্চয়ের হার ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।