ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-১৮) । মুম রহমান
মার্কিন গীতি কবি সারা টেয়াসডালের (১৮৮৪-১৯৩৩) লেখা ‘দেয়ার উইল কাম সফট রেইন্স’ বিশ্বের অন্যতম সেরা যুদ্ধবিরোধী একটি কবিতা। এই কবিতায় কবি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধে আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেলেও গাছ, পাখিরা রয়ে যাবে, বসন্ত আসবে, আর সোঁদা মাটির গন্ধ নিয়ে কোমল বৃষ্টিও আসবে। এই যুদ্ধ বিরোধী কবিতার জন্য বিশ্বখ্যাত হলেও ১৯১৭ সালে সারা পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘লাভ সঙস’ কাব্যগ্রন্থের জন্যেই। ব্যক্তিজীবনেও সারা সদাই প্রেম দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। ভাচেল লিন্ডসে’র সঙ্গে তার প্রেম থাকলেও অর্থনৈতিক অবস্থান ও অন্যান্য পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করেই তারা বিয়ে করেননি। তার দীর্ঘদিনের কবিতায় অনুরক্ত আর্নেস্ট ফিলসিঙ্গারকে বিয়ে করেছিলেন সারা। ব্যবসায়িক কারণে ফিলসিঙ্গার বরাবরই ব্যস্ত থাকতেন, বাড়ির বাইরে থাকতেন। তিনমাসের মাথায় তিনি আইনজীবির সহায়তায় ডিভোর্স নেন। ফিলসিঙ্গার হতবাক হয়েছিলেন আর সারা তার পুরনো প্রেমিক লিন্ডসে’র সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শুরু করেছিলেন। লিন্ডসে ইতোমধ্যেই বিবাহিত এবং সন্তানের জনক। ১৯৩৩ এর প্রচুর ঘুমের ওষুধ খেয়ে সারা আত্মহত্যা করেন। উল্লেখ করা দরকার, তার দুবছর আগে লিন্ডসেও আত্মহত্যা করেছিলেন।
বসন্তের বৃষ্টি
আমি ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছি আমি
কিন্তু সব কিছুই আবার ফিরে এলো
আজ রাতে বসন্তের প্রথম বজ্রে
বৃষ্টির তোড়ে।
আমার মনে পড়ে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দরজা
যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন ঝড় এলো বেগে,
বজ্র আকড়ে ধরলো মাটিকে
আর বিদ্যুৎ আঁকিবুকি কাটলো আকাশে।
চলন্ত মোটর বাসগুলো দুলে উঠলো,
কেননা বৃষ্টিতে পথ হয়ে গেছে নদী,
সোনালী ঢেউয়ে বাঁধা পড়লো সব
রঞ্জিত হলো বাতির আলোতে।
বুনো বসন্তের বৃষ্টি আর বজ্রে
আমার হৃদয় হয়ে উঠলা বুনো আর আমোদিত;
তোমার চোখ বেশি কিছুই বলেছিলো সে রাতে
যা তোমার ঠোঁট বলবে না কখনোই…
আমি ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছি আমি
কিন্তু সব কিছুই আবার ফিরে এলো
আজ রাতে বসন্তের প্রথম বজ্রে
বৃষ্টির তোড়ে।
ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছি আমি
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-১৭)
আমি গ্রাহ্য করবো না
যখন আমি মরে যাবো আমার উপর উজ্জ্বল এপ্রিল
ঝাকাবে তার বৃষ্টি-ভেজা চুল,
যদিও তুমি হয়তো ঝুঁকে আসবে আমার ভগ্ন-হৃদয়ের কাছে,
আমি গ্রাহ্য করবো না।
আমি শান্তি পাবো, যেমন পাতাভরা গাছেরা শান্তিময়
যখন বৃষ্টি নুইয়ে দেয় শাখা,
আর আমি হবো আরো শান্ত এবং শীতল-হৃদয়ের
এখনকার তোমার চেয়ে বেশি।
অনুবাদকের টীকা : কথিত আছে এটা সারা টেয়াসডালের সুইসাইড নোট এটি। কিন্তু তা সঠিক নয়, সারা আসলে এ কবিতা লিখেছেন তার মৃত্যুর ১৮ বছর আগে। ‘রিভার্স টু সী’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত এই কবিতাকে আবার কেউ কেউ তার প্রেমিকের প্রতি নিবেদিতও মনে করেন এই কবিতাকে। তবে প্রেম, অভিমান, আত্মহত্যা, মৃত্যু এমনকি সারা’র নিজের জীবনই যেন উঠে এসেছে ছোট্ট এই কবিতায়।
আজকের রাত
চাঁদ খোদাই করছে সোনার ফুল,
আকাশ স্থির আর নীল;
চাঁদ তৈরি করা হয়েছে আকাশকে ধারণ করতে
আর আমাকে তোমার জন্য।
চাঁদ বৃন্তহীন এক ফুল,
আকাশ উজ্জ্বল;
অমরত্ব তৈরি হয়েছিলো তাদের জন্য,
আর আজকের রাত আমাদের জন্য।
জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।