শরতের প্রতি
কখনো নতুন গল্প নেমেছে পাতায়
হরফে তারই কিছুকাল থামে চোখ
অনেক জীবন জীবনের নামে ছোটে
ঠিকরে পড়ছে চাঁদমল্লিকা-মুখ
প্রপিতামহের চোখের দৃষ্টি দিয়েই
দেখছি তোমার নগরের অলিগলি
যা কিছু হারাই ছুটি তার পাশ দিয়ে
ব্যক্তিগতের ক্ষতে রাখি অঙ্গুলি
হঠাৎ যে আলো ভেসে গেল মাগরিবের
তার হাত ধরে সন্ধেবেলার পাতা
উড়ছে হাওয়া, ভাসছে অন্ধকারে
রাত্রিবেলার ঘামে-ভেজা খেরোখাতা
ছিন্ন-মেঘের জলে পড়ে আছে চাঁদও
তুমি এক দেনা, বাঁধি আজ কোন ঋণে
যেখানে থেমেছি, অবিরল থেমে আছি
তোমার বিজন শিশির মাখানো তৃণে
শব্দের বোন
আমি সেই শব্দের বোন
অক্ষরে তোমাকে স্পর্শ করি ব্যাপক অক্ষমতায়
একই পাড়ায় থাকি
বটুয়া ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ে অসুখের বাদামি আধুলি
ঈর্ষা এত নিখুঁত হলে শহরের বাতি নিভে যায়
আমাদের সাক্ষাৎ বাড়ে, কথা বাড়ে না
খাদ খুঁজি
বিপজ্জনক বাঁকে একবার তলাতে পারলে
ফিরে না-আসা নিশ্চিত!
শব্দের দেনা বাড়ল
চোখের মর্ম চুইয়ে আশংকা ঝরে
অক্ষরে তোমাকে লিখি
বোধের প্রতিবেশী
চেনা পথে হোঁচট খেতে খেতে
পা থেমে যায় পাখিবৃক্ষের কাছে
আমরা তলাতে গিয়ে ধরে ফেলি বুকের আদর
অমরতা
অনেকদিন আগেই মরে গেছি
মরা আমি আবারও মরেছি
বারবার মরতে মরতে
চামড়ার নিচে গজিয়ে ওঠে জীবন
জুয়াড়ির হাসি ভেঙে খানখান
কী সামান্য রকমের বদল থেকে
শত্রুর চোখে ফের আমার জন্ম
সতর্কতা বাতিলের দাবি
বিশ্বাসের মাঝামাঝি তুলে দিল
পাথরের পিলার
শত্রু ও বন্ধুর মধ্যে তফাত দুই আঙুলের
দুবোর্ধ্য অক্ষরে লিখি – অমরতা দাও, হে শত্রুজন্ম!
আবার কোথাও অতলান্ত দূরে
জীবাশ্ম থেকে গজিয়ে উঠছে আমার চারা
কে তার উপড়ে দেবে মূল?
বিকাশ
আরও বড় হয়ে ওঠো!
আরও অন্য মানুষ, অনেক যত্নআত্তি করে
বিবাহ দাও তীব্র দুঃখের
পিচ্ছিল পা কোথাও দাঁড়ায় না
মাথার ভেতরে ভ্রমণ সেরে বসে
এই মন্দ-পাড়ায় এসে মেরেধরে ভাঙিয়ে দাও
যমজ কুকুরের ঘুম
সারা তল্লাটে ঘেউ ঘেউ রটে যাবে
আমিও কিছুটা রটিয়ে দিই
তোমার বাড়-বাড়ন্ত …
ডালপালা
কোথাও কেউ নেই
মৃতদের শহরে পাতা উড়ছে
কোথাও মর্মর, অনর্থের
গাড়ির চাকারা পেষণ করছে
জঙ-ধরা ইতিহাস
অযথাই মেরেকুটে লাল করে রাখে দিন
অপরাত্রি হেঁটে যাচ্ছে বাগানের দিকে
কোথাও জল নেই, নদী নেই…
আদ্যন্ত খাঁ খাঁ
আমার শরীরে গজিয়ে উঠছে
যেন আমারই ডালপালা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেওয়া রিমঝিম আহমেদের কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। বিচিত্র রূপক-প্রতীকের ব্যঞ্জনায় বহুমাত্রিক ইশারার মাধ্যমে সময়কে স্পর্শ করতে আগ্রহী এই কবি। ২০২০ এ প্রকাশ পায় প্রথম উপন্যাস ‘বিস্ময়চিহ্নের মতো’।