প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’

Reading Time: 2 minutes

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর জন্ম জয়ন্তীতে ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধা।


প্রথম রবীন্দ্র পুরস্কারটি সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’ পেলেও তা ছাপার যোগ্য মনে করেনি ‘দেশ’ পত্রিকা৷ স্বদেশি আন্দোলনের জন্য জেলে বন্দী থাকাকালীণ এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন লেখক ৷ পরে লেখাটি পড়িয়েছিলেন বন্ধু বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়কে (বনফুল)৷ লেখাটি পড়ে রীতিমতো উত্তেজিত বনফুল উদ্যোগ নেন তা ছাপাবার৷ ভাইয়ের (চিত্র পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে দেশ পত্রিকার সহ-সম্পাদক সাগরময় ঘোষের ঘনিষ্ঠতা থাকায় জন্য সেই লেখার পাণ্ডুলিপি পাঠান হয় দেশ পত্রিকায়৷ সেটি পাওয়ার এক মাস পরে অবশ্য সাগরময়বাবু ‘জাগরী’র পাণ্ডুলিপি অরবিন্দবাবুকে ফেরত দিয়ে জানিয়েছিলেন তা ছাপার জন্য মনোনীত হয়নি৷ কিন্তু লেখাটি পড়ে দাদার মতোই অরবিন্দবাবুরও মনে হয়েছিল তা অবশ্যই ছাপা দরকার৷ ফলে ওই লেখা নিয়ে তিনি চলে যান শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাশের কাছে ৷ কিন্ত সেই সময় তাঁর পত্রিকায় বনফুল এবং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে বের হচ্ছিল বলে তক্ষুনি ছাপানো সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু লেখাটি পড়ে সজনীকান্ত দাশের মনে হয়েছিল অবিলম্বে তা ছাপানো দরকার৷ তাই এক হিন্দি দৈনিকের সম্পাদককে চিঠিতে নির্দেশ দেন- ‘জাগরী ছেপে ধন্য হতে৷’ অবশেষে তা ছাপা হল এবং জন্ম হল এক নতুন লেখক সতীনাথ ভাদুড়ীর৷ আর রবীন্দ্র পুরস্কার চালু হলে এই ‘জাগরী’ প্রথম নির্বাচিত হল পুরস্কারের জন্য৷

তবে জাগরী নিয়ে আলোড়ন ওঠার পর লেখা নির্বাচনের ভুল বুঝতে পারেন সাগরময় বাবুরা৷ শোনা যায় ওই লেখাটি অন্য কেউ পড়ে অমনোনীত করেছিল৷ ফলে ভুল শুধরে নিতে বেড়িয়ে পড়েন তিনি নিজেই ৷ সতীনাথ ভাদুড়ীর কাছে গিয়ে নতুন উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি চান৷ সতীনাথবাবু অবশ্য ফিরিয়ে দেননি বদলে সম্মতি দেন আর এক কালজয়ী উপন্যাস— ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ ছাপার ৷ তা দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক হিসেবে বের হতে থাকে ৷ ১৯০৬ সালের ২৭সেপ্টেম্বর বিহারের পূর্ণিয়ার ভাট্টাবাজারে জন্ম গ্রহণ করেন সতীনাথ ভাদুড়ী৷ তাঁদের আদি বাড়ি কৃষ্ণনগর হলেও জীবিকার সূত্রে পূর্ণিয়ায় এসেছিলেন তাঁর বাবা ইন্দুভূষণ ভাদুড়ী৷ পূর্ণিয়া জেলা স্কুল থেকে ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তারপর পাটনা সায়েন্স কলেজ থেকে আই এসসি পাস করেন৷ পরে অর্থনীতিতে বিএ এবং এম এ পাশ করেন৷ পাটনা আইন কলেজ থেকে বিএল পাশও করেছিলেন তিনি। এদিকে গান্ধিবাদে আকৃষ্ট হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে সতীনাথ ভাদুড়ী প্রথমবারের জন্য কারারুদ্ধ হন।এরপর ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি দ্বিতীয়বার কারাবাসকালে জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন ৷ তখন তাঁকে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়। এই জেলে থাকাকালীনই তিনি ‘জাগরী’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন। এরপর ১৯৪৪ সালে তিনি তৃতীয়বার কারাবরণ করেন। তখন তাঁর সঙ্গে জেলে ছিলেন অনাথবন্ধু বসু ফণীগোপাল সেন,জয়প্রকাশ নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, অনুগ্রহনারায়ণ সিংহ প্রমুখ। কংগ্রেসের একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে কাজ করতে করতে তিনি পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন৷ কিন্তু দলের কাজকর্ম দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রী দলে যোগ দেন। শোনা যায় কংগ্রেসে থাকলে মন্ত্রীও হওয়ার জন্য তাঁর কাছে অফার ছিল ৷ কিন্তু তিনি সেই প্রলোভনে পা দেননি৷ বরং আরও বেশি করে মনে দিয়েছেন লেখাতে৷ ফলে একে একে লিখে ফেললেন চিত্রগুপ্তের ফাইল, ঢোঁড়াইচরিত মানস, গণনায়ক সত্যি ভ্রমণ কাহিনি , অচিন রাগিনী, পত্রলেখার বাবা ,জলভ্রমি, দিকভ্রান্ত ইত্যাদি৷ ১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চ সতীনাথ ভাদুড়ীর মৃত্যু হয়৷

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>