Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

কিভাবে তিনি বাবাকে চিনেছিলেন

Reading Time: 2 minutes

সত্যজিৎ রায়। এই নামটাই যথেষ্ট। তাঁকে ছাড়া সিনেমা জগতের কথা কল্পনা করাও মুশকিল। সত্যজিতের সঙ্গে বাংলা সিনেমা ও সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। ‘পথের পাঁচালি’ ছবি দিয়েই সত্যজিতের সিনেমা জগতে পথ চলা শুরু। তাঁর মতো পরিচালক এ দেশে আর নেই, এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবণা নেই। তবে তিনি শুধু পরিচালক নন, ছিলেন একজন সাহিত্যিকও। আর হবেই না বা কেন ! তিনি কার ছেলে সেটাও তো মাথায় রাখতে হবে। সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের ছেলে তিনি। তবে সত্যজিতের বাবা ভাগ্য তেমন ভাল ছিল না। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে ছিলেন তিনি। কালাজ্বরে মৃত্যু হয়েছিল সুকুমার রায়ের। তাও মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। সত্যজিৎ রায় লিখেছেন, “তিনি যখন স্কুলে যেতেন তাঁকে জানতে চাওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর জ্যাঠা?” এ প্রশ্নের কারণও ছিল অবশ্য। তিনি উপেন্দ্র কিশোরের নাতি। ও সুকুমার রায়ের ছেলে ছিলেন। সুকুমার অসুস্থ থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর প্রায়ই দেখতে যেতেন তাঁকে। এমনকি রোগ শয্যায় সুকুমারকে গান গেয়েও শুনিয়েছিলেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপেন্দ্র কিশোরের ভাল বন্ধু ছিলেন রবি ঠাকুর। সেই সূত্রেই সুকুমারের সঙ্গে তাঁর স্নেহের সম্পর্ক তৈরি হয়।

সত্যজিৎ রায় একবার আকাশবাণী কলকাতায় তাঁর একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, কিভাবে তিনি বাবাকে চিনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমার বয়স তখন আড়াই। যখন বাবা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমার জন্মের পর থেকেই বাবা প্রায় অসুস্থ হতেন। আড়াই বছর বয়সে তাঁর কোনও স্মৃতি আমার মনে থাকার কথা নয়। তবুও জানি না কেন ওই বয়সের দু’টি স্মৃতি আমার আজও মনে আছে। বাবা অসুস্থ ছিলেন বলে বাবাকে চেঞ্জে নিয়ে যাওয়া হত। একবার তাঁকে সোদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় আমিও গিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে। গঙ্গা দিয়ে একটি জাহাজ যাচ্ছিল। বাবা আমায় বলেছিলেন, ‘ওই দেখ স্টিমার যাচ্ছে।” এটি একটি সন্ধ্যার ঘটনা। এবং আমার স্মৃতিতে আজও রয়েছে এ ঘটনা। তবে বাবাকে আমার সেভাবে পাওয়া হয়নি কখনও। বাবার সম্পর্কে যা জেনেছি তা আত্মীয়দের থেকে এবং বাবার লেখা পড়ে।

বাবা মারা যাওয়ার পর আমি মায়ের সঙ্গে চলে আসি মামাবাড়িতে। যত বড় হয়েছি ততই বাবাকে আমার জানতে ইচ্ছে হয়েছে। তিনি কেমন ছিলেন জানতে চেয়েছি। আর বাবাকে জানার জন্য তাঁর অনেক লেখা ছিল। সেই লেখাগুলোই আমাকে বাবার কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। বাবার একটি ‘খেরোর খাতা’ ছিল। অনেকটা মুদি দোকানের খাতার মতো। যার পাতা লাল। সেখানে বাবা অনেক কিছু লিখতেন। বাবার লেখা একটি বিজ্ঞাপনও আমি পাই। একটি ওষুধের বিজ্ঞাপন। ওষুধের নাম ‘গন্ধ বিকট তেল।” সুকুমার রায়ের হাতের লেখা। তিনি লিখছেন, ‘গন্ধ বিকট তেলের নাম শুনেছেন তো? শোনেননি ? আপনি কি কালা !’ এর পর ওষুধের দাম বিবরণ এসব রয়েছে। এর থেকে বোঝা যেত তাঁর সবেতেই অসাধারণ দখল ছিল। বাবা বিদেশ থেকে অনেক চিঠি লিখেছিলেন দাদুকে। সেই চিঠি থেকেও বাবাকে জানা যায়। তিনি কখনও লিখছেন, ক্রিকেট খেলা কেমন চলছে? আবার কখনও মাকে লিখছেন আচার ছাড়া তাঁর চলবে না। কখনও বোনকে লিখছেন, তিনি টাই বাঁধা শিখে ফেলেছেন। এই সমস্ত কিছু থেকেই আমি বাবাকে চিনেছি। বাবার এত লেখা ছিল যে সেগুলো পড়লেই মনে হত বাবা আছেন। তাঁর লেখার মধ্যে দিয়েই তিনি বেঁচে ছিলেন। আমিও তাঁকে লেখার মাধ্যমেই চিনেছি। তাঁর সঙ্গে আমার তেমন পরিচয় হয়নি ঠিকই, কিন্তু এই সব খাতা, নোট বই আর চিঠি তাঁকে আমার খুব কাছে এনে দিয়েছিল।”

সত্যজিৎ বাবার স্নেহ, আদর তেমন বুঝতে না পারলেও বাবাকে জানতে পেরেছিলেন। সুকুমার রায়ের লেখা দিয়েই তিনি আপন করে নিয়েছিলেন বাবাকে। আড়াই বছরে বাবাকে হারানো যে কতটা যন্ত্রণার তা জানতেন সত্যজিৎ। কিন্তু তিনি ভাগ্যবান মনে করেছেন নিজেকে বার বার কারণ তাঁর কাছে ছিল তাঁর বাবার লেখা। জীবনের প্রতিটা সময়ে সেই লেখাগুলোয় ছায়ার মতো সঙ্গী হয়েছিল সত্যজিতের।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>