| 20 এপ্রিল 2024
Categories
শিশু-কিশোর কলধ্বনি

সত্যজিৎ রায়ের শিশুতোষ চলচ্চিত্র

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
সত্যজিৎ রায়ের শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলার আগে কিঞ্চিৎ জানতে হবে তার পূর্বপুরুষদের কথাও যাঁরা শিশুতোষ গ্রন্থ লিখে বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত হয়ে আছেন। সন্দেহ নেই সত্যজিৎের অন্তর্জগতে তাঁর পূর্বপুরুষদের আত্মা কিছুটা হলেও ভর করবে এইতো স্বাভাবিক! সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়ের ‘টুনটুনির গল্প’, ’মহাভারত’, ’রামায়ণ’ এর কিশোর সংস্করণ আমাদের চোখে এখনও ঘোর লাগায়। গল্পের ছলে তিনি সমাজের নীতি শিক্ষায় ব্রতী হয়েছিলেন। আর শুধুই কি গল্প? সেই সময় তাঁর নিজের আঁকা অসাধারণ ইলেস্ট্রেশন এর কথা এখনো ভোলা সম্ভব নয়। শিশুদের নিয়ে গল্প, ছবি ছাড়াও উপেন্দ্রকিশোর রায় এর অঙ্কন দক্ষতাও ছিল অসামান্য। অনেকটা পশ্চিমা ঢঙে তিনি তাঁর গ্রন্থের ইলস্ট্রেশনগুলো করতেন। জানা যায় তিনি চমৎকার বেহালাও বাজাতে পারতেন। প্রবাসী পত্রিকার বাঁক নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার বাঁক নির্মাণে তিনি ছিলেন সেই সময়ের পুরোধা। তবে উপেন্দ্রকিশোর রায়ের সবচেয়ে বড় কীর্তি ছিল শিশুদের জন্যে তাঁর সেই বিখ্যাত পত্রিকা ’সন্দেশ’। অনেকেই মনে করেন বাংলা শিশু সাহিত্যের নতুন এক বাঁক তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘সন্দেশ’ এর মাধ্যমে। লীলা মজুমদার তাঁর স্মৃতি হাতড়ে জানাচ্ছেন, “ ১লা বৈশাখ ১৩২০। সেদিনটি আমার এখনো মনে আছে। সন্ধ্যাবেলা আমরা সকলে দোতলায় বসবার ঘরে বসে আছি। এমন সময় জ্যাঠামশাই হাসতে হাসতে উপরে উঠে এলেন। হাতে তাঁর ‘সন্দেশ’ এর প্রথম সংখ্যা। কি চমৎকার তার মলাট! যতদূর মনে হয় এইটিই ছিল প্রথম মলাট”।

সেই উপেন্দ্রকিশোরের যোগ্য পুত্র সুকুমার রায়চৌধুরী বাংলা শিশুসাহিত্যের আরেক চমক! এই মহৎপ্রাণ শিশুসাহিত্যিককে নিয়ে এখানে নতুন করে লেখার ধৃষ্টতা নেই। কারণ বাংলা শিশু সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে হলে তাঁকে ছাড়া কথা বলা অসম্ভব! শুধু এইটুকু বলে দিতে পারি খেয়াল খুশির আবোল তাবোল রচয়িতা, আজগুবি হ য ব র ল’র স্রষ্টা সুকুমার রায়ের পুত্র সত্যজিৎ রায় শিশুতোষ সিনেমাতেও নিজের একটা আলাদা ছাপ রাখবেন এইতো স্বাভাবিক ? এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সত্যজিৎ রায় সিনেমা নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন বটে কিন্তু তাঁর আত্মায় ছিল সেই পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া শিল্প নির্যাস। বাংলার এই শিল্প-সাহিত্যকে অস্থি মজ্জায় লালন করতে তিনি পেয়েছিলেন অসাধারণ এক পারিবারিক শিক্ষা আর দক্ষতায়। তাঁর পুর্বপুরুষদের মত তিনি নিজেও দেশি এবং বিদেশি মশলা মিশিয়ে যে সিনেমা তৈরি করলেন তা ছিল বাংলা সিনেমার এক বৈপ্লবিক সূচনা। অতএব এই চলচ্চিত্রকারে হাত দিয়ে বাংলা সিনেমার কিছু অসাধারণ শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি হবে এইতো স্বাভাবিক!


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


তবে আমরা সত্যজিৎ এর যেসব সিনেমাগুলোকে শিশুতোষ সিনেমা বলছি সেসব সিনেমা নিয়ে মনের গহীন কোণে কোথায় যেন একটা ধন্ধ কাজ করে। মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যজিৎবাবু সত্যি সত্যি কী শিশুদের জন্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন? যদি তাই তিনি করতেন তাহলে আমি এই বুড়ো বয়সেও ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ‘হীরক রাজার দেশে’, জয় বাবা ফেলুনাথ অথবা সোনার কেল্লার নাম শুনলে ধপাস করে টিভি সেটের সামনে বসে পড়ি কেন? সত্যি বলতে সেই সব সিনেমায় এমন সব ম্যাটেরিয়াল থাকতো যা একাধারে শিশুতোষ আবার অন্যদিকে আমার মত বড়রাও গোগ্রাসে গিলতে পারে। এখানেই সম্ভবত একজন শিল্প নির্মাতার মহৎ কীর্তি নিহিত থাকে। সন্দেহ নেই সত্যজিৎ তাঁর দর্শকদের মনস্তাত্বিক ভাবনাগুলো বেশ ভালো করেই আয়ত্ত করেছিলেন এবং তা তিনি অসাধারণ দক্ষতায় তাঁর সিনেমায় পরিবেশন করেছেন।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


প্রথম কোন বয়সে সত্যজিৎ রায় নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্রে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম তা এখন দিনক্ষণ হিসেব কষে বলা কঠিন। তবে বেশ মনে আছে খুব ছোট বেলায় একবার ‘সোনারকেল্লা’ দেখে হজম করতে পরিনি। তখন সেই সিনেমার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারিনি। বিশেষ করে জাতিস্মর বিষয়টি মনে একটা বড় ধরনের ধন্ধ তৈরি করে দিয়েছিল। বেশ মনে আছে তখন সিনেমাটা দেখে শুধু একটা ডায়লগই মনে ভীষনভাবে দাগ কেটেছিল তা হল, “মিসটেক মিসটেক!” পরে আরেকটু বড় হয়ে সম্ভবত ১০/১২ বছর বয়েসে সিনেমাটা আবার দেখি। তখন সিনেমাটির আসল কাজগুলো বুঝবার ক্ষমতা অর্জন করেছিলাম। বিশেষ করে গুপ্তধনের লোভে একটি শিশুকে কিডনাপ করা, সত্যি সত্যি জাতিস্বর বলে কিছু আছে কিনা এই নিয়েও তখন অন্তরাত্মায় ব্যাপক তোলপাড় শুনতে পাই তারপর মনের মাঝে সারাক্ষণ একটা প্রশ্ন “গুপ্তধন পাওয়া যাবে তো”? ফেলুদা লাল মোহন গাঙ্গুলির দুর্দান্ত অভিনয় স্মৃতিশক্তিতে এখনো বেশ লেগে আছে। বেশ মনে পড়ে লালমোহন গাঙুলি অর্থাৎ জটায়ুকে কি ভোলা যায়? আহা! স্মরণ শুক্তিতে তাঁর কিছু ডায়লগ এখনো ভুলতে পারি না। “উট কি কাঁটা চিবিয়ে খায়?” তারপর সেই ট্রেনে উঠে পারিচয় হল তোপসের সঙ্গে। সেখানে তোপসে বলছে বিখ্যাত লেখক জটায়ুর বই তার পড়া। তোপসে বইয়ের নামগুলো বলে যেতে লাগল। জটায়ু চোখ উপরে উঠিয়ে কপাল কুঁচকে তপসের ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে বলছে, ’সাহারায় শিহরণ’! আহা! এই ডায়লগগুলো স্মৃতি থেকে কখনও কী ঝেড়ে ফেলা যায়? না! তা সম্ভব না। আর সম্ভব নয় বলেই এখনো সোনার কেল্লা দেখার জন্যে প্রাণটা ছটফট করে। সময় সুযোগ পেলেই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঝুঁপ করে বসে পড়ি। আহা! মনে হয় এই সিনেমাটির আত্মায় আমি যেন আমার এক চুমুক শৈশবকে ছুঁতে পাই।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


সন্দেহ নেই সিনেমাটি ভালো লাগার অন্যতম কারণ ছিল সেই কিশোর বয়সের চোখ দিয়ে সিনেমায় নতুন একটি স্বাদ অর্জন করা। সেই স্বাদটি ছিল ‘জাতিস্বর”। ভাবতাম, সেও কি সম্ভব? এমনও কী হতে পারে? কি সেই রোমাঞ্চকর উপলব্ধি! মনে হত যেন বাস্তব জীবনের ছবি। তখন নিজেও কল্পনার আশ্রয় নিতাম। আচ্ছা! আমিও কি এমন কিছু ভেবেছিলাম! এমন কিছু স্মৃতি আমারও আছে? মুকুলের চেহারায় তখন নিজের চেহারা দেখি। আবার যখন রাজস্থানের মুকুলের মতেই প্রভু নামের আরেক ছেলের স্বাক্ষাৎ পাই তখন প্যারাসাইকোলজিষ্ট এর স্মরনাপন্ন হওয়া আর উপায় থাকে না।

আমি না হয় আমার মত করে ভাবলাম অনেক কিছুই। কিন্তু গল্পটার কথাই একবার ধরুন! মুকুলের পরজন্মের কথা মনে আছে! সে রাত জেগে জেগে যুদ্ধের ছবি আঁকে। পূর্বজন্মে সে এই ছবিগুলো দেখেছিল। তবে ছবিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সিনেমা নির্মাতার ক্রাফটম্যানশিপ। শুধু পুর্বজন্মর স্মৃতিচারণ দেখিয়েই তিনি খ্যান্ত হননি পাশাপাশি একজন মনস্তত্ববীদ এবং প্যারাসাইকোলজিষ্ট এর চোখ দিয়েও একজন শিশুর মনোজগতকে অসাধারণভাবে এই সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তারপর রাজস্থানের কথাই ভাবুন! কি সেই অসাধারণ লোকেশন! সেই লোকেশন এই ছবি দেখলে এমনিতেই চোখে রোমাঞ্চ এর রং ধরে। আর ধরবেই না কেন? এমন ছবির এমন লোকেশান না হলে কি চলে? সত্যজিৎ শুধু একটি সিনেমার অভিনয় এর উপর গুরুত্ব দেননি। তিনি ছবিটির লোকেশন, সংলাপ, মেক আপ, ডায়লগ সব কিছুর উপর গুরুত্ব দিতেন। যে কারণে সিনেমায় ড. হাজরাকে শিশুরা তাদের ছোট আত্মায় সহজভাবেই জায়গা দিয়েছিল। তারপর ফেলুদা, জটায়ু অথবা তোপসের কথাই ধরা যাক! কে নেই সেই দলে? মনে হচ্ছিল আক্ষরিক অর্থেই গোটা সিনেমা দলটির সঙ্গেই আমি বুঝি জয়সালমেরের আনাচে কানাচে ঘুরছি, কথা বলছি, গান শুনছি। কি বাস্তব সেই স্মৃতি! জয়সালমের তখন মনে হয়েছিল আমার আত্মার ঠিকানা। চোখ বুজলেই জয়সালমের এর সব দৃশ্য চোখ দিয়ে চেটে দিতে পারি!


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


সত্যজিৎ এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হল “হীরক রাজার দেশে”। সিনেমাটি সন্দেহ নেই শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা কিন্তু এই সিনেমাটি সত্যি কি শিশুদের জন্যে? বুড়োদের জন্যে নয়? অবাক বিষয় হল হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রটির আবেদন যে সর্বসময় সর্বযুগের এ সত্যটি না বোঝার কিছু নেই। কিন্তু একজন শিশুর ছোট্ট বুকে এই কঠিন সত্যকে রোপন করা সহজ কথা নয়। সত্যজিৎ সে কাজটি করেছিলেন অপরিসীম দক্ষতায়। লক্ষ্য করুন তাঁর এই সিনেমার কয়েকটি খুব জনপ্রিয় ডায়লগ আমাদের জিভের ডগায় এখনো ঘুরে ঘুরে ফেরে। যেমন:

দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান’, “জানার কোন শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই”,

“বিদ্যা লাভে লোকসান নাহি অর্থ নাহি মান”, “যায় যদি যাক প্রাণ হিরক রাজা ভগবান”।

বিশ্বাস করুন, এই ডায়লগ গুলো আমাদের সেই শিশুকাল থেকেই মুখস্থ। অথবা বিজ্ঞানির যন্তর মন্তর ঘর! যেখানে মগজ ধোলাই করা হয়! হায়! এত কঠিন আর বাস্তব কথা এত সুন্দর আর সহজভাবে কোন সিনামায় পাওয়া যাবে? একদিকে সিনেমায় আছে ব্যঙ্গ আবার অন্যদিকে রয়েছে সিনেমার নিজস্ব শিল্পরূপ! শিল্পের এই দুই মেরুকে এক করা সহজ কোন কথা নয়! যে কারণে হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রটি শুধুমাত্র শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলে চালিয়ে দিতে আমি রাজি না। বরং একটি শিশুর আত্মায় সমাজের বিভিন্ন অসংগতিগুলোকে তুলে ধরার যে শৈল্পিক দক্ষতা সত্যজিৎবাবু দেখিয়েছেন তা ভাবতে গেলে সত্যি আমি অবাক হয়ে যাই!

হীরক রাজার দেশে সিনেমাটি নিয়ে আরো কিছু কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। আমরা জানি সিনেমাটি ‘গুপি গাইন বাঘা গাইন’ সিরিজের একটি চলচ্চিত্র। সন্দেহ নেই সিনেমাটির মূল আকর্ষন গুপি গাইন আর বাঘা গাইন। তাদের দুর্দান্ত অভিনয় সিনেমাটির প্রাণ। আর আছেন মহা পরাক্রমশিল হীরক রাজা। উৎপল দত্ত। আহা কি তার দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতা! গুপি গাইন আর বাঘা গাইন হল আমাদের বিবেক আর আত্মা। উদয়ন পন্ডিত হলেন জনতার মুখপাত্র। গোটা একটি দুর্নীতিগ্রস্থ শাষক ব্যবস্থার সফল চিত্রায়ন শুধু নয় সেই সঙ্গে একটি শিশুর অন্তর আত্মায় বিপ্লবের বীজ বুনে দেওয়ার মন্ত্র সিনেমাটির ভাঁজে ভাঁজে লক্ষ করা যায়। হীরক রাজাদের এখন পৃথিবীর সর্বত্রই দেখা পাওয়া যায়। বিভিন্ন নামে তারা বেশ জাকিয়ে বসে আছেন। কিন্তু এ কথাও সত্য যে অত্যাচারী কখনোই টিকে থাকতে পারে না। তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবেই। জনতার জয় হয়, হবেই। মানুষের অধিকারের জয় হয় আর জয় হয় বিবেকেরও। মানুষ ঘুরে দাড়ায়। সে কারনে সত্যজিৎের সিনেমা দেখে ছোট্ট শিশুটিও হয়তো চিৎকার দিয়ে জানিয়ে দেয়, “দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।”


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


আরেকটা সিনেমার কথা বলতে হবেই। জয় বাবা ফেলুনাথ। আহা! পুরো সিনেমায় কি টানটান উত্তেজনা! গণেশ মুর্তিটা নিল কে? সত্যি বলতে সত্যজিৎ যে শিশুতোষ মনে এত গোলক ধাঁধাঁ তৈরি করবেন তা ভাবাও যায় না! আমরা জানি সত্যজিৎ নিজেও শার্লক হোমস পড়তেন। তবে বলতে বাধ্য যে সত্যজিৎ এর আবিস্কার ফেলুদা আর্থার কোনান ডোয়েল এর শার্লোক হোমস থেকে কোন অংশেই কম নয়।

সত্যজিৎ রায় তাঁর সব সিনেমার ক্ষেত্রেই শৈল্পিক তুলি দিয়ে নতুন একটি ভুবন রচনা করতে সিদ্ধহস্ত। এই শক্তিটি তাঁর মজ্জাগত। তাঁর রক্তে তিনি তা লালন করেন, সৃষ্টি করেন এবং আমাদের দর্শকদেরকেও সেই অদেখা ভুবনে নিয়ে যান। তখন কোথায় যাব আর কোথায় তার শেষ হবে তা আমরা জানি না। শুধু জানি এ পথের বুঝি কোন শেষ নেই। আচ্ছা বলুন সিনেমাটায় সেই বেনারস শহরকে ঘিরে যত সব তুলকালাম কান্ড ঘটেছে তা আমাদের রক্তে কেন শিহরণ তৈরি করবে না? আবার ঘোষালবাড়ির মগনলালই যে এত কান্ড করে রাখবেন সে কথা কে জানতো? তিনি নিজেই মূর্তিটাকে নিয়ে যে খেল দেখালেন তাও তো একটা ভেলকিবাজী? কত নাটক? মনে হয় সিনেমাটি যেন ঢাকাইয়া পরোটার মতই ভাঁজে ভাঁজে চমক! এই চমক দেখার জন্যে আমাদের চোখে ঘুম নেই, নাওয়া খাওয়া বন্ধ। তারপর আছে সেই চিরচেনা গঙ্গার ঘাট। আশ্রম এর সাধু। কত কান্ড! তখন যদি বলি ’জয় বাবা সত্যজিৎ’ তা খুব একটা মন্দ হবে না!

শেষ কথায় এসে সেই একই কথা বলতে চাই। সত্যজিৎ এর শিশুতোষ সিনেমাগুলোতে এমন কিছু মশলা মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে যা সেবনে সেই সিনেমাটি বয়সকে তুড়ি মেরে গুড়িয়ে দেয়। তাঁর সিনেমাটি সত্যি বয়সের কোন বাঁধ মানে না। তবে তাঁর সিনেমায় কি সেই রহস্য যা সেবনে এখনো আমাদের আফিমের মত আসক্ত করে তোলে? একটা কথা গোপনে জানিয়ে রাখি সত্যজিৎ এর সিনেমার প্রেমে একবার পড়েছেন তো মরেছেন। এর থেকে কোন রেহাই নেই। সে শিশুতোষ হোক আর বুড়োদের হোক!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত