পুজোর পর থেকেই শরত যে বিদায় নিয়েছে, ভালই বোঝা যাচ্ছে। দিনের দৈর্ঘ্য কমছে, ভোরের দিকে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। হেমন্তের শুরু থেকেই সিলিং ফ্যানের পয়েন্টও ফুলস্পিড থেকে কমের দিকে। এই সময়েই সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, ঘুষঘুষে জ্বর জাঁকিয়ে বসে। ছোট-বড় সকলেই এই সময়টায় ভোগেন। এসব অসুখের জন্য ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস দায়ী। এই আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কমে যায় বলে কিছু ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এটা থেকে বাঁচতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। কারণ আপনার ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হয়েছে না কি ভাইরাল, তা কিন্তু একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন। দুটির চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। এছাড়াও কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং পরিবারের লোকজনকে সচেতন করতে হবে। তাহলেই ঋতু পরিবর্তনের সময় জীবানু আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
সবচয়ে বেশি বিপদ শিশুদের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু কম তাই ঋতু পরিবর্তনের ধাক্কাটা ছোটদের সবচেয়ে বেশি লাগে। যদি দেখেন শিশুর সর্দি-জ্বর হয়েছে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ দেবেন না। অনেক অভিভাবকই পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে শিশুকে ওষুধ খাইয়ে দেন। ভুলেও এ কাজটি করবেন না। একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন, কেন শরীর খারাপ হয়েছে এবং তার জন্য কী চিকিৎসা প্রয়োজন। আপনার দেওয়া ওষুধে রোগের সাময়িক উপশম হয়তো হবে, কিন্তু তার সঙ্গে শিশুর অন্য ক্ষতিও হতে পারে।
অনেক বাবা-মা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার অনুরোধ করেন। বাচ্চাকে পরীক্ষা না করে কোনো ডাক্তারের পক্ষেই ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। সর্দি, কাশি ছাড়া ডেঙ্গির প্রকোপে এখনও মানুষ আতঙ্কিত। শুধু বর্ষা নয়, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আবহাওয়া বদলের সময় ডেঙ্গুজ্বরও কিন্তু ছড়ায়। বাংলাদেশে এবার অনেক মানুষ মারা গেছে ডেঙ্গুজ্বরে। সুতরাং সন্তানকে সাবধানে রাখা ছাড়া উপায় নেই। তাকে বেশি করে তরল খাবার দিন। এই সময়ে শিশুদের খুব একটা ডায়রিয়া দেখা যায় না। তবে সাবধানের মার নেই। তেমন কিছু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
বড়দের জন্যও বিপদ আছে
যদি হালকা জ্বর বা গায়ে ব্যথা হয়, তখন প্যারাসিটামল খেয়ে নিতে পারেন। একশোর উপরে জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে, এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভাইরাল ইনফেকশন না কি ব্যাকটিরিয়াল, বুঝে চিকিৎসক ওষুধ দেবেন। আমাদের শরীরে অনেক ভালো ব্যাকটিরিয়াও রয়েছে। ভুল অ্যান্টিবায়োটিকে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিকারের উপায়
১) এ সময়ে শরীরের প্রচুর জল প্রয়োজন। শরীর ডিহাইড্রেটেড হলেই গায়ে ব্যথা, মাথাধরা শুরু হয়। সুস্থ-অসুস্থ সবাইকেই বেশি করে জল পান করতে হবে। ঠান্ডাতেও শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে। প্রয়োজনে ওআরএস খান।
২) রাতের দিকে একটু ঠান্ডা হাওয়া দেয়, ছোটদের বেশি পাতলা জামা পরাবেন না। গলাব্যথার ধাত থাকলে পাতলা স্কার্ফ জড়াতে পারেন।
৩) ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাবেন না। এ সময়ে একবার ঠাণ্ডা লাগে তো একবার গরম। গলা ব্যথা হলে একটু গরম জলে লবণ মিশিয়ে গার্গল করুন। এছাড়া গরম পানীয় খান আর রাতে ঘুমোনোর সময়ে গলায় ঢেকে রাখুন। সিলিং ফ্যানের গতি আর এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪) নিয়মিত ব্যায়াম অনেক রোগব্যাধি দূরে সরিয়ে রাখে। প্রতিদিনি সকালে হালকা কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ কিন্তু আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
৫) রাস্তায় বের হলেই অবশ্যই মাস্ক পরে নিন। নাহলে সর্দি-কাশি সারবে না।