| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ভাসাবো দোঁহারে

ভাসাবো দোঁহারে: আন্ধারমানিকে ডুব সাঁতার । সেলিনা হোসেন

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় তারানার। ভালোবাসার মানুষ পাওয়ার যে হাহাকার বুকের মধ্যে ছিল সেই দম-আটকানো অবস্থা আর নেই। এখন ওর বুকের গভীরে বয়ে যায় আন্ধারমানিক নদী। নদীর ধারে চুপচাপ বসে থাকে ও।নদীর দিকে তাকিয়ে বুক ভরে যায় তারানার। স্বামীর সংসারে এই নদী ওর আনন্দের সঙ্গী। আশেপাশের মানুষেরা জানে ও নদীর ধারে বসে থাকতে ভালোবাসে। তারেকের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পরে এই বসে থাকা আরও গভীর আনন্দের হয়েছে। জীবনে এমন একটি সময় আসবে এমন ধারণা স্বপ্নেও ছিল না। ওকে নদীর ধারে বসে থাকতে দেখে একদিন তারেক ওর ছোট্ট নৌকাটা পাড়ে ঠেকিয়ে নেমে এসেছিল। কাছে এসে বলেছিল, আপনি আমাদের গাঁয়ের বউ। আপনার মতো নদীর ধারে এমন করে কেউ বসে থাকে নাই। আপনি নদী খুব ভালোবাসেন না?
– হ্যাঁ, খুব ভালোবাসি। আমার বাবার বাড়ির ধারে নদী ছিল না।
– আমি এই নদীতে মাছ ধরি।
– হ্যাঁ, জানি। আমি আপনাকে দেখেছি নৌকা নিয়ে চলে যেতে। আমার মনে হতো আমিও যদি এমন নৌকা বেয়ে যেতে পারতাম।
–  খয়ের ভাইকে বলেন না কেন?
– ও এসব পছন্দ করে না। খালি ভাত রানতে বলে। কোথাও একটু বেড়াতেও নিয়ে যায় না।
– আমি নিয়ে যাব। যাবেন আমার সঙ্গে নদীতে ঘুরতে?
– যাব, যাব। অনেক দূরে যাব।
– কবে দিন ঠিক করেন।
– আচ্ছা দেখি।
– আজ আমি আসি। আমার খুব ভালোলেগেছে আপনার সঙ্গে কথা বলে। আপনি দেখতে যেমন সুন্দর, আপনার কথাও তেমন সুন্দর। আমি সুযোগ পেলে আপনার সঙ্গে বসে গল্প করব। আন্ধারমানিক দুচোখ ভরে দেখবে আমাদেরকে।
– ঠিক। একদম ঠিক। আমি এমনই নদী চাই।
– আজকে যাই। আবার আসব। তারানার দু’চোখে উজ্জ্বল হাসি ছড়ায়। সেদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় তারেক। নৌকায় উঠে হাত নাড়ায়।
জমে ওঠে প্রেমের খেলা। তারানা রোজ বিকেলে এসে বসে নদীর ধারে। সূর্য পশ্চিম আকাশে চলে যায়। বিকেলের ফিকে আলো ছড়িয়ে থাকে চারদিকে। যতদূর দৃষ্টি যায় ফিকে আলোর স্নিগ্ধতা ওর মনোজগতে ভিন্ন আবেশ তৈরি করে। বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস ওকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে যায় চারদিকে। এখন ওর জীবনে অন্যরকম সময় এসেছে। জীবনের এমন মধুর সময় ও ছাব্বিশ বছরে পায়নি। এ এক পরম পাওয়া। আন্ধারমানিক নদীর দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, নদীরে তুই আমার জীবনে এখন শুধু জোয়ার। আমার নদীতে ভাটির টান নাই। প্রেম তো জোয়ারই।

অনেকদূরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। ও নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। নিজেকে বলে ওখানে আমার প্রেম আছে। আমি প্রেমের নদীতে ডুবে থাকি। আন্ধারমানিক নদীতে ভেসে বেড়াই আমি। তারেক আমার আন্ধারমানিক। ও আমার জোয়ারের জল। আমাকে বলে, তুমি আমার ফুলের কুঁড়ি। গাছের ছায়া। নানা উপমায় মন ভরিয়ে দেয় তারেক। দুজনের খুনসুটিতে ভরে ওঠে পড়ন্ত বিকেল। প্রতিদিন দেখা হয় না। চারদিকের লোক চলাচল দেখে তারেক আসে। নইলে মানুষের চোখে পড়বে ওদের সম্পর্ক।
একদিন তারেক জিজ্ঞেস করেছিল, খয়ের মিয়া তোমাকে কি নামে ডাকে?
তারানা শুকনো মুখে বলেছিল, হারামজাদী।
– কি বললে?
– হ্যাঁ, এই শব্দে ডাকে।
– যাক ভালোই হয়েছে। আমার প্রেমই তোমার জীবনে প্রথম।
– তুমি আমার আন্ধারমানিক। এই নদীর ধারে বসে আমার কাছে প্রেম এসেছে।
– একদিন বনের মধ্যে হাঁটতে যাব দুজনে। বুকে জড়িয়ে ধরব তোমাকে।
উচ্ছ¡সিত হাসিতে ভেঙে পড়ে তারানা। তারেক মৃদু হেসে বলে, তোমার হাসি নদীর স্রোত। আজ যাই।
এভাবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারানার স্বস্তি। কেটে যায় কয়েক মাস।
তারেকের দিকে তাকালে ওর চোখ ফেরেনা। তারেক নিজেও দুচোখ ভরে ওকে দেখে। পলকহীন তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে মৃদু হাসি, যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে বুকে জড়িয়ে। হয়ে যাবে রঙিন প্রজাপতি। এই প্রথম নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। রঙিন দিনগুলো আলোর ফুলকি ছড়ায়। তারানা খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। নিজেকে অনেক কষ্টে আড়াল করে।
মাঝে মাঝে ধরা পড়ে যায় খয়েরের কাছে। ও চোখ গরম করে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে, তোর কি হয়েছে? চেহারায় এত খুশি কেন?
– চেহারায় খুশি দেখা যায় নাকি? খুশি কি চোখে দেখার জিনিস?
-খবরদার, বেশি কথা বলবি না হারামজাদী।
স্বামীর মুখে গালি শুনে নিজেও রেগে ওঠে তারানা। চেঁচিয়ে বলে, তুইও একটা হারামজাদা। দশ বছর ধরে সংসার করলাম পোলাপানের দেখা নাই।
– তুই বাঁজা মাইয়ালোক।
– আমি বাঁজা না, তুই বাঁজা। হারামজাদা বেডা একটা।

ক্রুদ্ধ খয়ের বৌয়ের রণরঙ্গী মূর্তি দেখে থমকে যায়। আর কথা বাড়ায় না। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। বারান্দায় বসে থাকে তারানা। স্মৃতির পাতায় ফুটে ওঠে বাবা-মায়ের সংসার। ও বিড়বিড়িয়ে বলে, বাবা-মায়ের প্রেমের সংসার। প্রেমের সংসারে হেসেখেলে ও বড় হয়েছে। এখন ও ছাব্বিশ বছর বয়সী। নদীর ধারে বসে জীবনের সুখ খুঁজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ভাবে, সুখ কি? আবার বাবা-মায়ের কথা মনে হয়। দুজনে কলেরায় মারা গেছে। ওর চোখের সামনে মাটিতে গড়াতে গড়াতে সকালবেলা মরে গেছে বাবা। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছিল ওর মা। ও নিজেও বাবার বুকের ওপর শুয়ে পড়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, বাজান গো, চোখ খোল, চোখ খোল। তোমার চোখের মণি দেখব।


আরো পড়ুন: পাখির ঠোঁটে প্রজাপতি । সেলিনা হোসেন


বাবা চোখ খোলেনি। মাও কলেরায় তড়পাচ্ছিল। কথা বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দুচোখ বন্ধ করে কাত হয়ে ঢলে পড়েছিল। চোখের সামনে বাবা-মায়ের মৃত্যু দেখা জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের দিন। একদিনের সকাল-দুপুর ছিল তারানার জীবনের দীর্ঘতম সময়। এই সময়কে ও বুঝতে শিখেছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সেদিন তারিখটা ছিল আটই ফাল্গুন। বসন্ত দিনের সুবাতাস ও প্রাণভরে নিজের নিঃশ্বাসে টেনেছিল। পাশাপাশি ব্যাকুল কান্নায় চিৎকার করে মাতিয়ে রেখেছিল ঘরবাড়ি। এই সময়ে ঘটে গেছে ওর পুরো জীবনের ঘটনা। যে ঘটনার রেশ গড়াতে থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। তখন তেরো বছরের বালিকা ছিল। প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ হয়েছে। ওদের গ্রামে হাইস্কুল ছিল না, যেতে হবে পাশের গ্রামের সীমানায়। অনেক দূরে। একা একা এত দূরে পাঠাতে রাজি ছিল না ওর বাবা-মা। তাই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গাঁয়ের কেউ কেউ বলেছে, মেয়েটার মাথা ভালো। ওকে ঘরে বসায়ে রাখলি কেন? হোস্টেলে দিয়ে পড়ালেখা করা।
– দিনমজুরি করে ভাত ভাই। কেমন করে হোস্টেলের টাকা দিব? চুরি করতে বলবেন নাকি?
– যা, পাগলামি করতে হবে না।
– পাগলামি না আযম ভাই, কষ্ট। স্কুলের ক্লাশে ফার্স্ট হয়। মাস্টাররা সবাই ওর প্রশংসা করে। আমার কইলজা ভরে যায়।
– লাভ কি তাতে? মেয়েটাতো পড়ালেখায় আগাতে পারল না। ভালো একটা চাকরিওতো করতে পারবে না।
মাথা নিচু করে দুহাতে চোখ মুছেছিল ওর বাবা হানিফ। বাড়িতে ফিরে ওর মায়ের কাছে একথা বললে ওর মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল। ওর বাবা মায়ের কপালে চুমু দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছিল। ও দাঁড়িয়েছিল পাশে। মায়ের কান্না থামেনা দেখে ওর বাবা চোখের উপর চুমু দিয়ে ঠোঁট ধরে রেখেছিল। মা হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল বাবার ঠোঁট। তারপর নিজেকে সরিয়ে নেয়। দুজনে বিষণ্ণ মুখে তাকিয়ে থাকে। সেদিন ও বুঝেছিল দুজনে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। একসময় আমিনা খাতুন জোরে জোরে বলে, হোস্টেলের খরচের জন্য আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করব।
– না, না। আমি তা হতে দেব না।
হানিফ ঘাড় নাড়িয়ে কথা বলে। ঢোক গিলে। নিজের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে চুল এলেমেলো করে।
– না, না কর কেন? কাজ করে টাকাতো থলিতে ভরব না। মেয়ের পড়ালেখায় খরচ হবে।
– মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও হোস্টেলের টাকা হবে না গো-
– ধারদেনা কর। তাও ওর পড়ার খরচ চালাও। মেয়েটার মাথা ভালো, দেখতেও ফুটফুটা।
হা-হা করে হাসে হানিফ। হাসতে হাসতে বলে, মেয়েটার কপাল মন্দ।
– ঠিক বলেছেন বাজান।
তারানা উঁচু কন্ঠে কথা বলে। নিজেও হেসে গড়িয়ে পড়ে। আমিনা খাতুন অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। পড়ালেখা হবে না। এ নিয়ে কি ওর দুঃখ নাই? হানিফ ওর মাথায় হাত রেখে বলে, মা রে তুই ছাড়া আমাদের তো আর পোলাপান নাই। তোরে-
– থাক বাজান থাক, কষ্টের কথা আর বলতে হবে না। আমি আপনাদের কাছে থাকব। আমিও দিনমজুরি করব। অন্য কোথাও যাব না।
– তাহলে তোকে হাইস্কুলে ভর্তি করে দেই। আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসব। আবার নিয়ে আসব।
– ঠিক বলেছ। তোমার কাজ থাকলে আমি যাব। আমি ওকে স্কুল থেকে আনব।
– কেন? কেন আপনাদের যেতে হবে? আমিতো একাই স্কুলে যেতে পারব।
– না, তোকে একা যেতে দিবনা। শয়তান পোলাপান তোর পিছে লাগবে। পাটক্ষেতে, ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে যাবে। গায়ের জোরে তুই ওদের সঙ্গে পারবি না।
হানিফ বলে, তোর চেহারা নিয়ে আমরা খুশি না। আমরা দুইজনে গলা ধরে কান্দি।
তারানা বাবার কথা শুনে হাসে। রাস্তায় হাঁটলে লোকেরা বলে, ইস, মেয়েটা কি সুন্দর।
বাবা সঙ্গে থাকলে কড়া করে ধমক দেয়।
– খবরদার এমন কথা বলবে না। আমার মেয়ের দিকে তাকাবে না।
– দিনমজুরি করে বেটা দাপট দেখায়।
– কি বললি? দাঁড়া দেখাচ্ছি
ছেলেটি দৌড়ে চলে যায়। তারানা বাবার হাত চেপে ধরে।
– বাজান আপনি ওদের পিছনে যাবেন না।
– তোর জন্য চিন্তায় মরে যাই।
– কেন আমার কি হবে?
– বড় হলে বুঝবি। চল যাই।
মেয়ের ঘাড়ে হাত রেখে হাঁটতে থাকে হানিফ মিয়া।
বাবা-মা মরে যাওয়ার পরে চাচার কাছে ছিল দেড় বছর। চাচা ওকে বিয়ে দেয় ওর চাইতে বয়সে দ্বিগুন বড় খয়ের মিয়ার সঙ্গে। লোকটির বয়সের কথা শুনে ও যখন কাঁদছিল তখন চাচা বলেছিল, তুইতো আমার ঘাড়ে বোঝা হয়েছিস। খয়েরকে যৌতুক দিতে হবে না। বেঁচে গেছি, লোকটার বৌ মরে গেছে। পোলাপান নাই। ভালোইতো হবে সংসার। আরামে থাকবি। অভাবের কষ্ট পাবি না।
– আমি বিয়ে করব না।
– খবরদার, একথা বলবিনা। বিয়ে দিয়ে দিব। চলে যাবি।
– আমাকে ভাত খাওয়াতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে?
– চুপ, কথা বলবিনা। তোকে পাহারা দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। এখন স্বামীর কাছে যাবি। আমি রেহাই পাব।
– তাহলে যাই।
তারানা সেদিন দুহাতে চোখ মুছেছিল। শুধু বাবা-মায়ের কাছে ও প্রেমের স্বপ্ন দেখেছে। ঠিকমতো ভাত খাওয়া হয়নি বাবা-মায়ের কাছে, কিন্তু বুকভরা আনন্দ ছিল। এখন স্বামীর সংসারে পেট ভরা ভাত আছে, কিন্তু আনন্দ নাই। প্রেম নাই। শুধু শরীর নাড়াচাড়া আছে। প্রেম ছাড়া এই নাড়াচাড়ায় আনন্দ নাই। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে, আমি ভালোবাসা চাই। ভালোবাসা।
তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে খয়ের মিয়া। তারানাকে চোখ মুছতে দেখে থমকে দাঁড়ায়।
– কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন?
– ভালোবাসার জন্য।
– কেন, তুই ভালোবাসা পাস না?
– না, পাইনা।
– দিব এক লাত্থি।
খয়ের মিয়া ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালে ও দ্রুত সরে পড়ে। তারেকের মুখ ভেসে ওঠে। বুকের ভেতর ধ্বনিত হয় তারেকের কন্ঠস্বর, ফুলকুঁড়ি আমার হাত ধরো। চলো আমরা ভেসে যাই। নদী থেকে সাগরে যাব। তারপর মহাসাগরে। আমাদের প্রেমের মহাসাগর। এমন ভাষা শোনার অপেক্ষায় ছিল ও। শিখেছিল বাবা-মায়ের জীবন থেকে। দুজনে ওর সামনে ভালোবাসার কথা বলে ওকে বুঝতে শিখিয়েছিল ভালোবাসা। কিন্তু খয়ের মিয়ার কাছ থেকে ভালোবাসার কোনো স্পর্শ পায়নি। বুকের শূণ্যতা কামড়ে ধরে থাকে রাতদিন। বাবা-মায়ের মৃত্যু ওর জীবনে একদিনের সকাল-বিকেল।

তারেকের ভালোবাসা এই সকাল-বিকাল সময় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে হৃদয়-জুড়ানো সৌরভ। ভাবে, বেঁচে থাকা কি সুন্দর। খয়ের মিয়ার গালমন্দ এখন ওকে আহত করে না। ওর সামনে নতুন দিনের চিন্তা। তারেকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবনে ডুবসাঁতার দেবে।
একসময় দুজনের প্রেম গ্রামের মানুষের চোখে পড়ে। নানা কথা কানে আসে খয়ের মিয়ার। নিজেও নদীর ধারে দেখতে পায় দুজনকে।

একদিন নদীর ধার থেকে ওকে তুলে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নদীতে। বলে, যা মর। মরে ভূত হ হারামজাদী।
তারানা ডুবে যায় নদীতে। সাঁতার দিয়ে আবার মাথা তোলে। দেখতে পায় দ্রুত নৌকা চালিয়ে এগিয়ে আসছে তারেক। নৌকা কাছে এনে বলে, উঠে আস ফুলকুঁড়ি। আমার হাত ধরো। নৌকায় উঠে পড়ে তারানা। ভিজে শাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, কি হলো আমাদের? খয়ের মিয়াতো আমাকে মরণে ঠেলে দিয়েছে। বলেছে মর।
– ভালোই করেছে। মরণের পরে আমরা এখন বেহেশতে আছি। আন্ধারমানিক আমাদের বেহেশত। খয়ের মিয়ার কাছ থেকে বেঁচে গিয়ে তোমার মরণ হয়েছে। তুমি এখন বেহেশতে। তোমার সঙ্গে আমিও বেহেশতে ঢুকেছি।
-বাহ, সুন্দর।
তারানা হাসিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। কলকলিয়ে বলে, আন্ধারমানিক আন্ধারমানিক। প্রেমের নদী আন্ধারমানিক।
কন্ঠস্বর ভেসে যায় নদীর চারদিক। নদীতে এখন জোয়ারের ভরা টান।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত