শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
যখন একাকী আমি একা
এখন সন্ন্যাসী দুইজন--
একজন আমি আর অন্যজন আমার পিতার
মমতাবিহীন চক্ষু
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
যখন একাকী আমি একা
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
কেন তাঁর নামত সন্ন্যাস
কেন তিনি মাত্র মায়াহীন
মনে ভাবি
এমন দেখিনি তাঁকে আগে
কোনদিন
এখন সন্ন্যাসী দুইজন--
একজন আমি আর অন্যজন আমার পিতার
মমতাবিহীন চক্ষু
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
যখন একাকী আমি একা।
চেনা পাথরের জন্যে
একটি চেনা পাথর পড়ে আছে
পরনে তার অসংখ্য মৌমাছি
ভিতরে মৌ–কী জানি কার কাছে
ভালোবাসার অমল মালাগাছি?
একটি চেনা পাথর পড়ে আছে
পাথর, ওকে নাম দিয়েছি ওরা
ভয় ক’রে তার শক্তি আগাগোড়াই
ঝর্না বলে ডাক দিলে প্রাণ বাঁচে।।
দিনরাত
দিনরাত মৃত্যু চলে সন্তান অবধি। দেখা তো হয়েছে ক্রূর যমের সহিত, তাকে বলা গেছে, আমি একাকীই যাবো। গঙ্গার তরঙ্গভঙ্গে নিভে যাবে আলো, আমি যাবো, সঙ্গে নিয়ে যাবো না কারুকে একা যাবো দিনরাত মৃত্যু চলে সন্তান অবধি!মানুষটি মৃত
সাড়ে ছয় হাতে দেহ জড়াবে নিশ্চয়, থানকাপড়ের গন্ধ আর জাগাবে না মৃত্যু নয়, প্রসঙ্গত মূর্ছা মনে হবে। কিছু কাঠকুটো আমি উঠোনে রেখেছি কাচের বয়ামে আছে পুরাতন ঘৃত তাহলে তো মূর্ছা নয়, মানুষটি মৃত।আমি একা, বড়ো একা
চন্দনের ধূপ আমি কবে পুড়িয়েছি মনে নেই। মন আর স্মৃতিগুলি ধরে না আদরে। সংশ্লিষ্ট চন্দন এই অবহেলা সহ্য করে গেছে। কখনো বলেনি কিছু, বলেনি বলেই পরিত্রাণ পেয়েছে সহজে, নয়তো অসহ্য কুঠারে ধ্বংস হতো। আমার সংহারমূর্তি দেখেছে চন্দন একদিন কিশোর বয়সে, সেই অভিপ্রেত সুকালে, সময়ে। দেখেছে এবং একা-একা ভয়ে-রহস্যে কেঁপেছে– বলেছে, আমার দুটি সুগন্ধি কৌটায় হাত রাখো, পায়ের নখর থেকে জ্বালিও না শিখর অবধি আমি একা, বড়ো একা, চন্দনের গন্ধে উতরোল।।যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো। এতো কালো মেখেছি দু হাতে এতোকাল ধরে! কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি। এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয় এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না, অসময়ে।।
দুঃখকে তোমার
দুঃখকে তোমার কোনো ভয় নেই, সেও ভালোবাসে ভালোবাসা থেকে তুমি ভয় পাও? সুখ থেকে পাও? উল্লেখযোগ্যতা যদি নিয়ে যায় সমুদ্রের তীরে– সেখানে তোমার ভয় আছে নাকি? আনন্দও আছে? তীরে সারবন্দী গাছ, সেখানে ভূমিষ্ঠ ছায়াতলে যদি তুমি একবার গিয়ে বসো পাথরের মতো তবেও তোমার ভয়? ভয় সবখানে! তোমার অবোধ ভয় থেকে আমি পাই অন্য মানে। দুঃখকে তোমার কোন ভয় নেই, সেও ভালোবাসে…