| 29 মার্চ 2024
Categories
সিনেমা

মুভি রিভিউ: শকুন্তলা দেবী আশার আলো দেখায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

শকুন্তলা দেবী হচ্ছে ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার আত্মজীবনীমূলক একটি ভারতীয় চলচ্চিত্র যা অনু মেনন কর্তৃক রচিত ও পরিচালিত এবং সনি পিকচার্স নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া ও বিক্রম মালহোত্রার অ্যাবান্ডেনশিয়া এন্টারটেইনমেন্ট কর্তৃক প্রযোজিত হয়েছে। ছবিটিতে বিদ্যা বালান শকুন্তলা দেবীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি “মানব কম্পিউটার” নামেও পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও অন্যান্য প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন যীশু সেনগুপ্তসানিয়া মালহোত্রা এবং অমিত সাধ।


 

নাম শুনেই অনুমান করা যায় এটা বিশেষ কারো জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা। বিশেষ এই মানুষটি হচ্ছেন শকুন্তলা দেবী।এই পৃথিবীতে আশ্চর্য প্রতিভা নিয়ে এপর্যন্ত জন্মানো অল্পকিছু মানুষের মধ্যে তিনি একজন। মানব-কম্পিউটার নামে খ্যাত শকুন্তলা দেবীর নামে সিনেমার নামকরণ করা হলেও সিনেমাটি পুরোপুরি এই কিংবদন্তির জীবনী নয়। তাই এটিকে বায়োগ্রাফি মুভি বলা যায় না। সিনেমার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে এটা শকুন্তলা দেবীর মেয়ের চোখে দেখা মায়ের জীবনের গল্প।

সিনেমাটির প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় শকুন্তলা দেবীর মেয়ে অনুপমাকে। ২০০১ সাল, লন্ডন, যেখানে অনুপমা তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার জন্য উকিলের কাছে যাচ্ছে। মেয়ের মামলার কারণে মায়ের জেল হতে পারে জেনেও মেয়ে মামলা করবে। স্বভাবতই এই দৃশ্যটি দর্শকদের ভেতর আগ্রহ তৈরি করবে সিনেমাটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে। তারা জানতে চাইবে একটি মা এমন কি করেছে যে মেয়ে তাকে জেলে পাঠাতেও দ্বিধা করছে না? এটি সিনেমার পরিচালকের বাণিজ্যিক মনোভাবেরই প্রকাশ। পুরো সিনেমাটি দেখতে দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য সিনেমার প্রথমাংশে একটা উস্কানিমূলক চিত্রায়ন। এবং পরিচালক অনু মেনন সফলকাম হয়েছেন তাতে।

গণিতে বিরল প্রতিভা নিয়ে জন্মানো শকুন্তলা দেবীর জীবনের শুরুটা আমরা দেখতে পাই সিনেমায়। ব্যাঙ্গালোরের নিভৃত পল্লী থেকে ধীরেধীরে পুরো ইন্ডিয়া ও একসময় পুরো বিশ্বে গণিতে তার নাম ছড়িয়ে পড়া দেখি আর পুলকিত হই। শকুন্তলা দেবী কখনো চারপাশে দেখা সামাজিক ব্যবস্থাপনার আদলে কথা বলেছে, যেমন সে নিজেকে পরিবারের “আব্বা” মনে করে, কারণ তার উপার্জন দিয়েই চলছিল তাদের পরিবার। আবার শকুন্তলা দেবী আরো পরিণত বয়সে গিয়ে নিজের চারপাশে দেখা প্রচলিত পারিবারিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। তিনি চেয়েছেন স্বামী ও কন্যা তার সাথে সাথেই থাকুক। তাদের জীবন যাপিত হোক শকুন্তলা দেবীকে কেন্দ্র করে। একমাত্র মেয়ে যখন বিয়ে করতে যায়, মেয়ের ভাবী বরের কাছেও শকুন্তলা দেবীর একই প্রত্যাশা ছিল।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


মূল চরিত্রের নামে নামাঙ্কিত এই সিনেমাটি দেখে দর্শক শকুন্তলা দেবীর অর্জিত সকল সাফল্যের কথা জানতে পারে। বিবাহিত হয়েও তার পরিবারহীনতার কথা জানতে পারে। সন্তান অনুপমার শৈশব হারানোর ব্যাথায় নারী ও পুরুষ দুইশ্রেণীর দর্শকই বুকে ব্যাথা পেয়েছে খুব। অনেকে ব্যক্তি শকুন্তলা দেবীকে অত্যাধিক উচ্চাভিলাষী বলে মন্তব্য করেছে। পুরুষ দর্শকের চোখে শকুন্তলা নিজেকে সংসারী মেয়ে হিসেবে প্রমান করতে পারেননি। আর নারী দর্শকের চোখে সে নিষ্ঠুর মা। তবে নিষ্পেষিত মেয়েদের চোখে সে স্বাধীনতার স্বপ্নের মতো উজ্জ্বল।

আমার কাছে মনে হয়েছে, সিনেমাটিতে মেয়েদেরকে নিজের ইচ্ছার মূল্যায়ন, স্বপ্নের বাস্তবায়নের পথে আগানোর সাহস দেয়া হয়েছে। শকুন্তলা দেবী নিজের সক্ষমতার উপর এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে তিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্টিত নিয়মানুসরণ না করে তিনি নিজের চিন্তার পথে হাঁটতে পেরেছিলেন। আর তাই ইতিহাসে লেখা হয়েছে শকুন্তলা দেবীর নাম একজন বিজয়ী মানুষ হিসেবে। কেবলমাত্র কারো স্ত্রী, কারো মা, কারো কন্যা হয়ে মুছে যাননি পৃথিবীর বুকে মৃত্যুর সাথে সাথেই।


আরো পড়ুন: ফিল্ম রিভিউ: অস্কারে সেরা ছবির অন্যতম দাবিদার ‘নোমাডল্যান্ড’


প্রতিভাধর এই মানবীর সাহসী জীবনবোধ, আত্মসম্মানবোধ, নিজের প্রতি তার ভালোবাসা, জীবনকে উপভোগ করার প্রচেষ্টা আর নিজের সংখ্যার প্রতি তার যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস সিনেমাটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। নিখুঁত অভিনয় করেছেন শকুন্তলা দেবীর চরিত্রে নায়িকা বিদ্যা বালান। পার্শ্ব চরিত্রগুলোও উজ্জ্বল ছিল। তবে তারা সবাই প্রধান চরিত্রের আলোয় আলোকিত ছিল মাত্র। শকুন্তলা দেবীর স্বামীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে অনেক মেয়েদের মন জয় করে নিয়েছেন অভিনেতা জিশু সেনগুপ্ত। শকুন্তলা দেবীর মেয়ে অনুপমার চরিত্রটি একটি বিশেষ চরিত্র ছিল এই সিনেমাটিতে। অনুপমা হিসেবে সন্যা মালহোত্রার অভিনয় পুরো সিনেমাতেই অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে। অন্য কেউ হয়তো এই চরিত্রটিকে আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতো।

প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা ছাড়াই শকুন্তলা দেবী কেমন করে গণিতের প্রতিভাকে নিজের ভেতর বিকশিত করে নিজেকে বিশ্ব দরবারে সেরা গণিতজ্ঞের একটি আসনে অধিষ্ঠিত করেন তার কিছু প্রচেষ্টা সিনেমাটিতে দেখানো যেত।পুরো সিনেমাতে শকুন্তলা দেবী হাসি ঠাট্টা করেই শো করে জিতে গিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে শকুন্তলা দেবী নিশ্চয়ই শো-এর আগে নিজেকে তৈরি করতেন, বিশেষ পরীক্ষার আগে আমরা যেমন পড়া মুখস্ত করে থাকি। সেই দিকটি সিমেনায় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,shakuntaladevi


শকুন্তলা দেবী গণিতের উপর বেশ কিছু বই লিখেছেন পরবর্তীতে, যেখানে তিনি তার নিজের মতো করে মেন্টাল ম্যাথ করার ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যার মানে, অঙ্কগুলো তিনি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে খুব দ্রুত (কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে) করে ফেলতেন কোন একটি উপায়ে। হয়তো শকুন্তলা দেবী যত লম্বা সংখ্যাই হোক না কেন, নিজের কানে শুনে তা মনের পর্দায় ছবির মতো সাজিয়ে রাখতে পারতেন। ক্যামেরায় তোলা ছবির মতো নাম্বারেরা তার মাথার ভেতর ছবি হয়ে থাকতো। তারপর হালকা কথা বলতে বলতে শকুন্তলা দেবী মুহূর্তে অংকটি করে উত্তর বলে দিতেন!

বায়োগ্রাফি মনে না করে বিনোদনের জন্য দেখলে শকুন্তলা দেবী নামে নির্মিত এই মুভিটি সত্যি উপভোগ্য একটি মুভি। গতিশীল সংলাপ, ভালো অভিনয়, নায়কের প্রাধান্য ছাড়া নায়িকার একা জমিয়ে তোলা ১২৭মিনিটের এই সিনেমাটি আমি বাড়িতে বসে টিভি পর্দায় দেখেছি। উপভোগ করেছি। পরিচালক অনু মেনন এবং প্রধান অভিনেত্রী বিদ্যা বালান উভয়ের জন্যই একটি জয়–“শকুন্তলা দেবী”।

 

 

মুভির নাম : শকুন্তলা দেবী

পরিচালক: আনু মেনন

প্রধান চরিত্রে: বিদ্যা বালান, সন্যা মালহোত্রা, যিশু সেনগুপ্ত, অমিত সাধ।

পুরো মুভিটি মুক্তি পেয়েছে: ৩১শে জুলাই ২০২০, এমাজন প্রাইমে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত