Reading Time: 11 minutes
অনেক দূর দেশ ঘুরে আমার সোনার দাসী আসে
আমি সংক্ষিপ্ত গলিপথ থেকে ঘরে কোলে করে নিয়ে আসি তাকে।
সোনার দাসী,যাকে প্রজাপতির মত দেখতে-
আমি চোখ বুজে শুঁকি যার টকটকে লাল সিল্কের জামা, গর্ভের শিরা
যার শুকনো অল্প চুল মাথার ওপর দুভাগ হয়ে
আমার কানের পাশে জটার মত ঝোলে।
আমার ঘরে লোহার খাট, জামাকাপড় রাখার দেরাজ
দেয়ালের মধ্যে মার্বেল পাথর বসানো কয়েকটা ড্রয়ার
এবং আখরোট কাঠের ওপর খোদাইকাজ করা ছোট্ট একটা টেবিল
যেন স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে থাকে।
আমি অবৈধ কার্পেট পুঁথি, ছেঁড়া কাপড় সোনার দাসীকে পরাই।
আমি হেসে তার সঙ্গে কথা বলি, তার জন্য আমার নিশ্বাস,
আঙ্গুলের সাদা হাড় তাকে দেখাই, তার জন্য আমার জলস্তম্ভ
এবং আমার জন্য তার দ্বিতীয় সত্তা অনেক দূরে চলে গেছে।
আমি সোনার দাসীর মনের কথা চিন্তা করি, সগর্বে উদাসীন হই
ফলে সোনার দাসী ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ে
বায়ুমণ্ডলের মতো তাকে মনে হয়
সে রঙিন বাদ্যযন্ত্র ও টুপি নিয়ে আমার সঙ্গে আমার সঙ্গে লড়াই লড়াই খেলে
আমি দেখি তার দীর্ঘস্পন্দিত খেলা, দীর্ঘ অঙ্গসঞ্চালনও করি
সোনার দাসীর অনুপক্রীড়ায় এখন আমার মূর্ত শরীর-
আমার ও সোনার দাসীর খেলা দেখে নিরাবরণ বুড়িরা উঁচুবাড়ি থেকে
বেরিয়ে আসে, সোনার দাসীকে তারা দয়াময়ের বাতাস দিতে থাকে
তাকে ঘিরে ধরে পাথরের পতগ লাগানো ওদের গুলবদন সম্ভ্রম।
চতুর্দিক দেখা বারুদের মতন সোনার দাসী শীতল মনে হাই তোলে
তার নিহিত চোখের ভেতর হতে অনর্গল রশ্মিকণা আসতে থাকে
তার জালি চোখ, উত্তপ্ত লাল ঠোঁট-ঝালর লাগানো স্মৃতি-
তার শরীরে আমার বেদনা মাখানো গন্ধ
আমি ও সোনার দাসী আমরা দুজনে এখনও স্পষ্ট,স্ফীত
আহরিৎ কাঠের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে যাই প্রায়ই নিচে।
আমার মৃত্যুর পর তোকে আর যন্ত্রণার তাঁত বুনতে হবে না
বল দেখি, আমার লেখা গল্পের, আঁকা-মানচিত্রের মধ্যে তুই কে?
এক রাত্তির জেগে ছেঁড়া কাঁথায় নকশা তুলেছিলি রাশ রাশ জুইঁ
কি সুন্দর, এসেছে শরৎ, গন্ধনাচনের দিন এলো, তবু তুই-
কার জন্যে কী? তুই রোদ্দুরে গেলেই আমার সর্বাঙ্গ বিদ্ধ হবে
অত্যন্ত না হলে আমার শরীর ক্রুসে সেঁটে গেঁথে লটকে দিস!
আমি বাঁচি,তুইও বাঁচিস,তোর জন্যে আমি, আমার জন্যে কী?
আকাশ তোর অরণ্যকুয়াশা ছাড়া কিছুই না, ধু ধু আর জল
আগে তুই বেশ ছিলি,সোনার চেয়ে দামি মুক্ত আলো ফেলেছিলি-
আমার জন্যে বাজিয়েছিলি মিষ্টি অরগ্যান-আজ বিক্ষত হলাম।
শান্তির শত্রু, আক্রোশের ভ্রূণকে পুড়িয়ে খুন করবি, বেশ কর
আর পৌরুষপ্রাপ্তির আগে ক্ষিপ্ত অঙ্গারে জ্বলে যাই যাই পালাই
আর যদি না পালাই, বিন্দু হয়ে যদি না মিশি বিস্মৃতির গুহায়-
তুই আমার দেহে দুর্ধর্ষহিম মেঘকুয়াশার ভল্ল গিঁথে দিস!
আমার মৃত্যু তোর কি?আলোর গহীন থেকে তুই কি আঁকি দেখিস!
আমি বেশ কয়েকটি অক্ষরকে নিয়ে
সোনালি নস্যি রঙের ফ্রককোট পরে
বিষুবরেখার কয়েক ডিগ্রি ওপরে উঠেছি
বিটকেল শিক্ষার্থীসুলভ তাদের হাত
আঁচড়ের সাহায্যে আমাকে এমন ব্যবহার করছে
এবং আমার ছ’মিটার চওড়া দোলনের ওপর
তারা এমন ভারি নম্র অন্তহীন খেলা খেলছে
যে তাদের ত্রস্ত শঙ্কিত ঐক্যবদ্ধ নীলবর্ণের গ্রীবার ওপর
তারা আমার অন্তর্হিত যুক্তির ধাপ দিয়ে
নৈঋত ছায়ার পরিধি থেকে এসে
তারপর তারা আমার কায়াহীন হাতের ওপর
আমি কোনো বীভৎস মুহূর্তে অক্ষরগুলির বোঝাও নামিয়ে নিয়েছি
তাদের মধ্যে কোথাও সৃজনীশক্তি লুকিয়ে আছে কিনা দেখবার জন্যে
অতি সুস্বাদু মাছ দিয়ে তাদের করেছিও বাতাস
বস্তুত তাদের রূপসী হৃদয় রম্বস, বৃত্ত, সামন্তরিক গড়ন নিয়েছে
পাঠক, অক্ষরগুলি এলেমদার, উদ্যত এখন
একটু হেসে আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারছে
অসম্ভব উৎস থেকে বেরিয়ে এসে
অগোচর লক্ষ্যে হারিয়ে যেতে পারছে
আমার শাশ্বতের মূল টেনে আনতে পারছে
রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক রাজধানীতে বাস করে
রাজনীতিবিদরা এক বিভবশালী বিবুধের দ্বারে বসে
প্রেরণাপূর্ণ নরক সৃষ্টি করে
রাজনীতিবিদরা দেশপ্রেমসমৃদ্ধ গ্রাম ও শহরের মানুষদের শেখায়
‘নিতান্তই দলের একজন লোক’-তাদেরই দুর্দশার হেতু
যারা কোন শিশুদর্শকদের হয়ে ছবি আঁকে না
বা লাথিয়ে খামচে চেঁচিয়ে হাড় ভাঙবার যোগাড় করে না
রাজনীতিবিদরা সাধারণত তাদের উপর নির্ভর করে না
জনগণ নামক শ্রবণযন্ত্রে সাড়া জাগাবার উদ্দ্যেশ্যে
রাজনীতিবিদরা কাগজে বেতারে পাঠায়
দেশ স্বাধীনতা পৃথিবী মঙ্গল বিষয়ে বিষ-অভিজ্ঞতা
রাজনীতিবিদরা রচনা করে এখনও কারাগার
পশু-সংস্করণ, রাক্ষস খোক্কসের সৃষ্টি-রহস্যের আদিকান্ড
তারা আধা পুরোন সমাজের মায়াপঞ্জিকার ভেতরে এখনও লুকিয়ে থাকে
তিনি নিজের তৈরি কৃত্রিম বিষাদের ওপর এলেন, দেখলেন;
এই শীতল উদ্যমের দেশ, তার যা-কিছু ধ্রুব দান সঙ্গে যুক্ত হল।
প্রেক্ষক এক সুন্দর বিশ্লেষন চালিয়ে পুনর্বার আলোর চারধারে ভেসে চলল
এই বিশেষ দেয়ালে ঝোলান অস্বস্তিময় কঙ্কালেরা যন্ত্রের ঢিপি, বসুন্ধরার শৈবাল
চারিদিকে তড়িৎক্ষেত্র; যৌক্তিক দেহ যাত্রা শেষ করে
আসবে। সলজ্জভাবে সে নানাজনকে বাধা দেবে; মায়াময় তার সৃষ্টির শক্তির
একটিকে গতিশীল সেই সন্ধান কায়াটির সঙ্গে বাঁধল।
আমি শৌখিন, বরতরফ। আমার চারধার অতিপ্রোন্নত
পাবক সন্ধান করে কারুকার্য করা
বিশেষ রঙিন শান্ত পা-যা প্রাকৃত কীর্তির তলায়
প্রায়ই নিস্বপ্ন করে দেখায় গন্ধ,অনেক শোয়ানো শরীর আকণ্ঠ উন্মুখ
পরিবর্তন অভ্যর্থনা সৃষ্টি করে আকাশরশ্মির মতো
তার দৃষ্টিতে এমন সমস্ত চিত্র
উর্ধাকাশের বায়ুমণ্ডলের ওপর তার পতি কেঁপে উঠেছেন।
তার নিটোল নরম চোখে অদ্ভুত অক্ষর রয়েছে। সমস্ত নক্ষত্র আকাশ
ও ভ্রূণ বের করা দাঁত প্রসক্ত,আক্রান্ত।
বস্তুত, যখন শরীর ওপর-নিচ হয়ে প্রীয়মাণ গহ্বরে
পরিবর্তিত হয়, চোখের তারা স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছিটকোয়
তখন এসে দাঁড়ায় মেধাবিনী, সবাইকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়।
শস্যপ্রসূ বসুন্ধরা যার সামনে এসে অসাড় বোধ করলেন
তিনি স্পর্শ করা সৌন্দর্যের চাঁদ
তিনি চিৎ হয়ে, যেন আর তার কিছুই নেই-দেবী অদিতি তাকে
এবং তার হৃদয় থেকে বেরুল উষার অবিশ্বাস্য-নিধি।
প্রেয়সী ঘরের একধারে এসে করলেন সহজব্রত
মাটিতে বসে সেই ছবি আঁকলেন,সমর্থ হলেন
সাজিয়ে দেওয়া সৌন্দর্যের ধারায় হংসযুগল
পুতুলের আকারের ওপর প্রাধান্য পেল
এবং সেই ভাস্কর্য রমণী,যিনি আমার জন্যে উদ্ভাবিত, তিনি এই হুবহু দেখলেন।
প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না(২৭)
হৃদরোগের সন্ধান নিয়ে ঢুকে পড়ো। সরবরাহকারী নির্মাণযন্ত্র
পৃথিবীর মেঘময় আতঙ্ক শেষপর্যন্ত আধার হিসেবে।
ঊর্ধ্বময় সর্বনাশ ভেবে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ। সুরক্ষিত জল
দহনক্রিয়া মাথার ধ্মনী ছিঁড়ে যাও, বোতল, বায়ুর কাঠিন্য অনুশীলন শরীর
অরণ্যসমগ্র, পাখিদের শ্রবণশক্তি, আঙুরসমস্যা শজ নয়
উজ্জ্বল মাথার পর্যবেক্ষণ ভেঙ্গে অবসাদগ্রস্থ উচ্চগ্রামের অংশে
প্রমানিত হি, অন্ধ দৈবজ্ঞ, সৌরশক্তি, প্রশান্তি যেন আওয়াজ বিক্রি
টিন-ভর্তি কুয়াশা নিয়ে মানুষ-জীবজন্তুর মাথা হয়ে হাতজোড় করি
বসো গৌরবসূর্য, অদ্ভুত ভূত-প্রেত বিশ্বাস সে-বিষয়ে সচেতন
পৃথিবীর মেঘ, শিষ,দৃষ্টিনির্ভর আস্বাদনের ফসল রহস্যের মিশ্রণ চেওনা
অতুল ঘনরাশি ও উরসুলা কিয়দংশের লাল রং লেগে আছে দুর্যোগমথিত
এলাকায়; তোমার কোনো অলৌকিক পরিক্রমা নেই। শুধু ফুলবাগিচার
ও জল বায়ু কুয়াশার অংশ লক্ষনীয়, সাড়া দাও। রূপকের মত বিবরণ, দৈববানী
সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমানিত হয়েযায়; শরীরের ভিতর বেশী, নিশ্চিত প্রমাণ এই
গবেষণা শক্তি, কেন-না, এখাএন এই উক্ত সত্যি স্বর্ণময় হয়-আবিস্কার
রং তুলি বিপদের হূঁশিয়ারী রূপকর্ম হয় ও যেন আদানপ্রদান
তোমার সহানুভূতিশীল হৃদয়টি আমার চাই…
আমার স্বরযন্ত্রের ঠিক নিচের থেকে গঠনকারী ক্ষীণ মূল শ্বাসনালী
আমার হৃদপিন্ডের মুখে নেমে এসে অণুস্তরে পৃথক দুই ক্লোমশাখায়
আমার নরম হাল্কা ক্লোমশাখা-দুটি ডাইনে বাঁয়ে এগিয়ে
তড়িৎধর্মী শাখা প্রশাখায় ভাগ হয়ে
আমার দুই ফুসফুসের দুই দিকে ঢুকে
আমার শরীরের নানাস্থানে ধর্মোদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছে;
তারা আমার মূল শ্বাসনালীর মতো উত্তেজনাপূর্ণ-ফাঁপা রয়েছে
আমার স্থিতিস্থাপক তন্তু দিয়ে আমার সরু সরু নলগুলো তৈরী
তাদের আজ মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে আমাকে দেখতে হচ্ছে
খুব কঠিন দেখালেও এরা হাড়ের তৈরী নয়
এগুলি কচকচে ধরনের একরকম উপাস্থি দিয়ে তৈরি
আর তারা এস-পি-ডি-এফ উপাস্থি দিয়ে গঠিত
আর তারা কেলাসাকার বা বর্তুলাকার
আমার পাতলা মাংসপেশী কখনো চুপসে যাচ্ছে না
কেননা আমার শ্বাসনালীর প্রশাখা আমার ফুসফুসের থেকে
আমার ফুসফুসের বায়ুকোষ পর্যায়ক্রমে একবার করে
চুপসে গিয়ে বায়ুশূন্য হচ্ছে
আবার ফুলে উঠে দিব্যি ব্রম্ভ্যবিদ্যা শিখছে
আমার সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম ব্রংকলগুলি যদি সংখ্যা গণনা করা যায়
তাহলে প্রত্যেক দিকে সংখ্যা হবে আড়াই কোটি
আর বায়ুকোষের যুক্ত ইনফণ্ডিবুলামের সংখ্যা গণনা করলে হবে
আমার স্বরযন্ত্রের বাক্সের মধ্যেই দুই পাশ থেকে দুটি ঝিল্লির পর্দা
বলা বাহুল্য আমার স্বরযন্ত্রের বাক্সটি বা আমার ভোকাল কার্ডের পর্দাগুলি
রৌপ্যবৃক্ষের আকারে সরুমোটা হয়ে অবস্থান করে
তার ভাষায়, ‘ঠিকমত কালো, পাতলা’
জীবানু গজাবার উপায় খুঁজছিল
তিনপায়ে দ্রুত ছুট লাগিয়ে
ভূঁই-এর প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছিল
বিস্ময় ০০০ তার দেহ থেকে গজাচ্ছে
তিনটি অপ্রতিহত দ্গদগে লালচে মাথা
সংলাপঃ নিয়তির বচনের সঙ্গে জ্বলতে থাকছে
ভিখিরি ও মাছির তাড়া খেয়ে
ঘন ঘিঞ্চি বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ছে
আলাউকম আবশো আমহারাঞ্চা আউকাল্লে
আর হাতির শূঁড় যাদের গলায়
যাদের কাছে শিলমোহরের কোন গরু নেই
তাদের জন্য ছায়ায় আশ্রয় তৈরী করছে
টুকরো টুকরো মেঘেদের ভর করে মরিয়া রহস্যে ফুলছে
ষাঁড়ের চামড়ায় তৈরী শাদা ঢাল নিয়ে
আমি ভেবেছি আমাকে ঘরের দেওয়ালে বিভিন্নভাবে
স্থাপন করে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করব।
আমি আজ নিরস্ত্র, অযুগ্ম, ত্বরমাণ।
আমি আমাকে আত্মসাৎ ও আক্রমন করি
দ্বিধাহীন ভাবে সমস্ত কিছু প্রকাশ করে দেখাই
আমি আমাকে থামিয়ে রাখি, অপরিবর্ত আকার তৈরি করি
আমি আমাকে দেবতার, পর্বতমালার
বা জড়পিন্ডের ঋজুরেখা তৈরি করতে কখনো দেখিনি
ধ্রুব বিশ্লেষণ ও স্থির বিষয়বস্তুতে আমি ক্লান্ত।
আমি বস্তুতে আমাকে দেখছি না
আমার হাতের একটা ছোট পেরেক সেই আমাকে দেখে যাচ্ছে
আমার ভেতর হালের কলাকৌশলের দেদার অনুপ্রবেশ ঘটেছে
অসংখ্য বিশ্বাস, সূর্যের যোজনা, অকৃত্রিম অস্তিত্ব, আলজিঘন কালচে পাথর
বড়বেশী অর্থবহ ছবি, মধুর বিহ্বল কারুকার্য সচেতন হয়ে আমরা মধ্যে আসছে
প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বৈচিত্র্যসৃষ্টি করা উদাহরন
আমি চিন্তা ও নিষ্ঠার শুদ্ধ পার্থক্য দেখাই স্বচ্ছ পাথরে
উত্তর হতে দক্ষিনের অভিযোগো নিবদ্ধ করি
প্রতিরূপমূর্তি আমাকে দেখে ফেলে
আমি লাল রঙ পরিমিতভাবে সূর্যকিরনের মত সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি
শঙ্কুর মত ধূসর ছাইরঙের কিছু গ্রাম,কিছু শহর দেখা যাচ্ছে
গড়িয়ে পড়ছে রঙিন ঘাসের ঘোড়া
আমি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি-অনুসন্ধানযানের ওপর শুয়ে প্রতিধ্বনি খুঁজছি ।
চারপাশের রিক্ত হৃদয় চিৎকার করে এসে দাঁড়াল গোচারনভূমির উপরে।
প্রত্যেকবার আমার পাশ বেয়ে প্রদর্শিতমুখ অভিশপ্তের উন্মুক্ত প্রার্থনার মত
বিবস্বানের নির্দেশে স্বতন্ত্রভূমি তৈরি করল ।
এক শ্বেত কুষ্ঠরোগিনী শতছিন্ন পোশাকের তলায় হাত ঢুকিয়ে আমার শরীরে
উচ্ছ্বাসের সংলাপ ঢালছিল। তার বৈশিষ্ট্য সমর্পিত, পরিপূর্ণ এবং তার
প্রশ্নকটি আমার কাঁধের ওপর হয়ে দিনের উষায় জঠরাগ্নি নামাচ্ছে।
পিতলের বাতিদানের চিহ্ন ধরে এসে গান গেয়ে ক্লোম জাগল।
মিশ্রিত ধ্বনি অবলীলাক্রমে এক একজন নৃত্যাঙ্গনা নোংরা আর উকুনভর্তি
নারীর মেঘবেশ্ম শাড়ির ছোট ছোট ঘোড়াদের ওপর পশুর গলা বানিয়ে ফেলল।
সবই বেসুরো। অপরিণত । স্বচ্ছন্দ ।
তিনজন আবকার আমার ঘরের মেঝেয় বসে হিজিবিজি বানাচ্ছে।
সামান্য আগে জানলাম। আমি তখনো আমার হয়ে ওঠেনি। নির্দিষ্ট।
মৃতদের বিস্ময়কর শক্তি দেখে আমার ভীষন রোষ হলো। আমি রাসায়নিক
তন্তুর কাছে অনেকদিন কাউকে গলে যেতে দেখলাম না। কোন মানুষ
ছায়া হতে পরিবর্তন এল। অপিঙ্গল বাতাসকে আমি কি করে
সম্বোধন করব! আমার আপশোস থাকল।
সুখের ক্ষীণ শব্দের মধ্যে আমার চাবুক এবং
চিরন্তন যেন জাহানের চিত্রের ঘাড় বেঁকিয়ে রূপান্তরিত। আধুনিক।
অনেকেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সহগামিনীরা বেগবান জলোচ্ছ্বাসের মত
এগিয়ে এল। ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে নাচতে লাগল। আর প্রত্নতত্ত্ব ভূতত্ত্ব ও
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের শাসন করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
আমার শূন্য যন্ত্রনা। আমার অজ্ঞেয় হৃদয়ে ধারনার আইনঘড়ি । প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তাদের নিরুদ্দেশ যাত্রায় ষাঁড়ের ও মেষশিশুর অবসর।
সবই নির্ব্যাজ নিকুঞ্জের বাইরে এসে পড়ল। দেখল মাটির ওপর
বিচ্ছিন্নতার ভেতর আমি পরিপূর্ণতা জুড়ে রয়েছি। আমার অভিসন্তাপ মুখ
দেখা যায়নি। আমার উদ্ধ্বত মুখ, শুদ্ধ, উন্মুক্ত, অভ্যর্হিত।
আজ আমার বরাদ্দ একটা প্লেটে শক্ত রুটি আর অদ্ভুত পাঁউরুটি আর গরুর
ও শূকরের মাংস আর সালতি আর চা কফি আজ সি-বি-আই এর খবরদারির
মধ্যে আছি আজ কাঠের খটাং খটাং শব্দ-করা ডি এফ লিফটে চড়ে ন’তলার
ঘরে এসে আমি পৌঁছেচি আজ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলাকে দেখা গেছে
মোজাম্বিকের আদি প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাচেলের ঘরনী গ্রাকা ম্যাচেলের
সঙ্গে আজ কলকাতার অফিস পাড়ায় একটি বেসরকারী লকার কোম্পানীর
মালিকদের এক শরিক কোম্পানির ন-হাজার গ্রাহকের ভল্টের চাবি পকেটে
নিয়ে বিদেশে যাওয়ায় আমার এক আত্মীয় চূড়ান্ত সংকটে পড়েছে আজ
কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রীটের মল্লিকবাড়ি থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হবে
তাতে পালকি ঘোড়ার গাড়ি পুরনো দিনের গাড়ি থাকবে শোভাযাত্রা শেষ
হবে আলমগীরের পৌত্র ওসমানের সমাধিস্থলে আজ প্রয়াগে একটি সতীদাহের
ব্যবস্থা করা হয়েছিল আজ মুম্বাইয়ের স্টেট ব্যাঙ্কের ডেপুট ম্যানেজিং
ডিরেক্টরকে সময় দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ভারতীয় হকি কি আজ
আটলান্টা থেকে হীরে নিয়ে আসবে আজ মনসার গান আজ মুজরিম হাজির
আজ এ মাউথফুল অব স্কাই আজ পঞ্চায়েত সমিতির ভোট আজ মাওয়ের
মৃত্যুবার্ষিকী হংকঙে কিংবা বেজিঙে অর্ধশত বেদনা রাখার অঙ্গীকার আজ
কোনও কোনও অঞ্চলে দু এক পশলা বৃষ্টি অথবা ব্জ্রবিদ্যুৎ বা বন্যাসহবৃষ্টি
হবেই আজ থেকে পর্যটনকর শেয়ার বিক্রির নতুন নিয়ম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আজ
শিক্ষক অধ্যাপক সরকারী কর্মচারীদের বেতন আটকানোর প্রস্তাব আজ থেকে
বাংলাদেশী মোটর ব্যাটারি সংস্থা ভারতে বিক্রী করবে কলোনেল মোটর
পাটশিল্পে সংরক্ষন বজায় রাখার আজ আর্জি এন জ়ে এস সি কর্তার আজ
ভারতকে ১৩৫০ কোটি ডলার সরকারী ঋন দেবে আমার শ্বশুরকূলাজ
পানাগড়ের বাজারে ভীষন ক্রিয়াহীন কালিমূর্তির তাণ্ডব আজ শুটিং শুরু
হয়েছে সাধ আহ্লাদের আজ হ্রাদকানির সুবিশাল ভাক্লাভ হাভেলের ইন্ডিয়া
দর্শন আজ দেবোত্তর সম্পত্তি আইনের ৩৫ ধারা লঙ্ঘন করেছে স্বামী
নিশ্চলানন্দ সরস্বতী জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে অ্যানফ্রাক্স রোগের মহামারী
ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বলে বনমন্ত্রী আজ দাবি করেছে আজ থেকেই তো
বাংলার বঙ্গীয় হাঙামা শুরু হয় আমার মাতৃকুল আজ অভিবাদন সম্পর্কে
নতুন আইনকানুন ঘোষনা করে আমি কী কাজ করি আজ অবশ্য সি বি
আই বা পিতৃকূল জানতে পারেনি আজ আমি আমার উদ্ভট নাটকের চরিত্র
বিশেষ আজ আমার বরাদ্দ একটা প্লেটে শক্ত রুটি আর অদ্ভুত পাঁউরুটি আর
চাকচিক্যময় আভিজাত্য বা বিক্ষিপ্ত প্রলাপ মনে করে
তারা বাণিজ্যের অযথার্থ ক্ষমতা দিয়ে
তাদের নাক মুখ কান দখল করে
এই শক্তিশালী প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের
তারা মেকি সুন্দরের মিথ্যে সীমারেখা প্রত্যাখ্যান করে
অন্তত্ব একটা ছোটখাটো দেবদূতের সন্ধান করুক
অকেজো জ্যুকবক্সে স্থির ডিস্ক
অশুভ যুদ্ধপরা যন্ত্রনায় আন্তর্জাতিক কোরাস
কবরখানা আর টাউনশিপের সুড়ঙ্গের মধ্যে গুঞ্জন করা
আস্তাবলের ধূর্ত পিটপিটে মায়া
কাঁধে অগ্নিবর্ণের ক্যামেরা
হাতে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ট্রানজিস্টর
অন্য সম্রাটের দায় যাতে মেটে
মাংস ভেদ করে সচল ফ্রেস্কোর মত
এইসব রেডিয়ো-টিভি-অ্যাকটিভ যুবশক্তি
মুক্তিবাদ এবং জাঁকজমক খুঁড়ে নৈশস্তব্ধতা
আমার অস্তিত্বের কেন একটা অজ্ঞাত উদ্দেশ্য আছে-আমি জানি না
আমার তুষারশুভ্র হাত আমাকে এগিয়ে দিয়ে
নিজেকে ফুটকি রঙের সাহায্যে প্রকাশ করে
আমি থাকি তার যন্ত্রপাতির ও তার রত্নভরা শরীরের টূকরো টাকরার মাঝে
নির্দিষ্ট আমি, অদ্বিতীয় শান্ত, মানুষকে বোঝাই দর্শনীয়ভাবে উর্ধ্বে যেতে ও
নীলরঙের সন্ধ্যায় ছদ্মবেশে ঘুরি এক জাজ্জ্বল্যমান মূহূর্তকে প্রতিষ্ঠা
করার জন্যে আমার ঘৃষ্ট স্বরঃ আমি নগরের কোথা থেকে আসছি?
আমাকে কি ঈশ্বরের নিঃসঙ্গতার উপায়সমূহ উপহার দেওয়া যায়? আমার
শীতল স্থাপত্য কাঠামো সম্পর্কে কি কিছু করা উচিত? আমি মাথা নাড়ি
আমার মনঃসংযোগ অস্থিচূর্ণিত বামনমূর্তির
বেশে নয়। শিকারী পাখির বেশে।
আমি প্রতীক্ষা করি। আমি সর্বদাই আক্রমন থেকে আত্মরক্ষায় বিস্তৃত
সবুজ টুপির তলায় আমি মোহিনী দৃশ্য এনে বসাই
ভাঙা ভাঙা গোঙানি নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আমি স্বীকার করি-
আমি হচ্ছি সেই ধরনের মানুষ যে শুধুমাত্র আবর্জনা দিয়ে যায় না
আমি নদীর উজানে গিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিই।
আমি ঊষার অস্পষ্ট আলোতে নিজেকে বিশ্লেষন করি
আমি বিস্ময়কর সব আভরণ ছাড়িয়ে কাজে নামি
আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আলো আমি সৃষ্টি করি তা হারিয়ে যায় আমি
হিমঘাসে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছি, সকলের সামনে কেঁচোর মত গুটিয়ে যাচ্ছি
বস্তুত শতাব্দীর মৃত আত্মারা উপুড় হয়ে ঝুঁকে পড়ে
হাড়ে হাড়ে ঠাণ্ডা অনুভব। উঁহু, ও হো
আমি বৃক্ষের সোনালী গুঁড়ি দিয়ে নিজেকে রূপান্তরিত করি।আমি
বাস্তবিক ভয়ংকর। গলা আমার আচ্ছাদিত গন্ধক ও ক্লোরিনের ওড়নায়
তবু আগুন যত বেড়ে ওঠে আমিও লুকোতে থাকি
আমি ব্যাখ্যেয় হেসে পথচলতি লোকের সামনে দুহাত তুলে ধরি
শেষে তাদের মিলিয়ে দিই গিঁট বেঁধে
শেষতম কলস্বর আমায় ঠেলতে থাকে।আমার প্রাচীন এই কোলাহলে
সৃষ্টির পরিসরের জড়তা কেটে গিয়ে
অনুপস্থিত লোকেদের ছায়া এসে পড়বে
আমি সেই রং পবিত্র গন্ধ যার ভেতর টলে যায়
আমি সেই ক্ষুদে সূর্য, আমার দুটো ডাকের মধ্যে একটা কথা লা হয়ে যায়
আমি আমার পান্ডুবর্ণ কানাঘুষার কার্পেট পাতা রাস্তায়
আমার ভবিষ্যৎটাকে ফাটতে দেখেছি…
আমার যে ভাই চায়না সার্টিনের একটা লম্বা আলখাল্লা পড়ত
এবং এক নির্দিষ্ট জায়গায় আমাকে খুব জমকের সঙ্গে সম্বধর্না জানাত
সে আগুনে পুড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে।
আর আমার যে বন্ধু অস্ত্রোপচার বিদ্যায় ছিল অত্যন্ত কুশলী
এবং যে তরবারি ও তীরপূর্ণ তূনীর নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে
সূর্যকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল
সে হাজতে পচে শেষে আত্মহত্যা করেছে
আমি বস্তুতঃ এখনও মারা যাইনি
এবং আমার মতলবের কথা ঘুণাক্ষরেও কারও কাছে প্রকাশ করিনি
কারণ এটা প্রকাশ করার মত কথা নয়।
(থেমে) ওদের আমি ফুলগুলো দিতে চাইনি
অবোধ শিশুগুলি খেলায় মেতেছে
(থেমে) দুঃখের বিষয় ওরা আদেশ মানে না।
ওরা নগ্ন হয়ে যথেচ্ছ যৌনক্রিয়াকলাপ প্রদর্শন করছে
(থেমে) বিপ্লব থেকে মানুষের মনকে ওরা দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে
ওদের সবচেয়ে কার্যকারী অস্ত্র
ওরা বাগানে মগ্ন গাছ পুঁতে দিচ্ছে
(থেমে) আমার বাগানের গোলাপগাছগুলোর চোখে প্রবীণদের দৃষ্টি ।
প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না(৯৬)
ওখানে বাণিজ্য-জাহাজরা নোঙর ফেলে। দরিদ্র এক মানুষ ভগ্নস্তুপ দেখে
সর্বপ্রাচীন বাড়ি ধ্বংস হয়ে আসে। সুস্থ করে গাছের পাতা
অন্ধপ্রথাগুলি দাবি জানায়। মানুষজাতি পরিশ্রান্ত স্বপ্নচারী প্রাস্তর
বা জলরাশি অগ্নিময় হৃদয়ের পারে নেমে আসে। মেঘের শুকনো আনাগোনা
বিদ্যুতের সিরসিরানির সঙ্গে অন্তরীক্ষের শেষ খেলা দূরে সরে যায়
কৃষ্ণবর্ণ অরণ্যের অন্তরালে ঘ্রাণময় হ্রদে আমার হৃদয় স্বপ্নে মুগ্ধ হয়
জরা-মৃত্যুর পাশে ভিড় করা গাছের মধ্যে উন্মুক্ত উদার সূর্যালোক এসে দাঁড়ায়
বৃক্ষের প্রত্যঙ্গ নড়ে এবং মৃদু হয়ে ভাসে বিষন্নতা
আমার স্মৃতি নেই, আমি বিদ্বেষ কলহের অন্তঃসার বুকে নিয়ে বৃদ্ধ হয়ে আছি
আজ দেখি, অসংখ্য হিমাদ্রি-মৃত্যুভয়গুলি একদিন দুহাত দিয়ে বেঁধেছিল আমায়
আমায় ধরে থাকে অনন্ত সুচিরমৃত শোভনপৃথিবী
আমার একাকীপাখি আমার মধ্যে বিশ্রাম রাখে চিরকাল
মেঘে মাস্তুলে চিহ্নিত একটি সান্ধ্য আকাশ, জলে সূর্যাস্তের আভা
ত্রিশ কোটি অসহায় ছেলের কাছে বসে ক্ষমা চাই
হে জনচিহ্নহীন,দিশাহীন ছড়ানো-যৌগিক পরাজয়
স্বর্ণধরনীর মধ্যে সবুজের বৈষম্য হয়ে আসা দেখি
মধুর জীবিত শীত নিয়ে যে-লোকটা গুঁড়ি মেরে আসছে
ওকে চিরমুক্ত সৃজনব্রতে নামতে দাও
ভূগর্ভের পাথর খুঁড়ে-ও একবার তাপময় নির্জনতা গ্রাস করেছিল
পিতৃপুরুষের ভিটে মেদিনীপুর জেলার সুতাহাটা থানার বিরিঞ্চিবেড়িয়া গ্রামে, জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ই আগস্ট হাওড়ার ১১, ঠাকুরদাস দত্ত বাই লেনে মাতুলালয়ে। পিতা নন্দলাল রক্ষিত ছিলেন ব্যবসায়ী, হাওড়ার দাশনগরে তাঁর একটি লোহার সিন্দুকের কারখানা ছিলো। মা রাধারানী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। কবির প্রাথমিক শিক্ষা সুতাহাটার পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বৃত্তি পরীক্ষা পাশ করে হাওড়ার কদমতলায় চলে আসার পর মাধ্যমিক স্কুল জীবন শুরু হয় ব্যাঁটরা মধুসূদন পালচৌধুরী স্কুলে। তিনি পরবর্তীতে নরসিংহ দত্ত কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেও প্রথাগত শিক্ষার প্রতি প্রভূত অনাগ্রহের কারণে তা সম্পূর্ণ করেন নি।
বিশুদ্ধ কবির জীবনকে তার কবিতা থেকে পৃথক করে দেখা পাপাচারেরই নামান্তর হয়, হাংরি আন্দোলন নিয়ে কবির তুমুল আগ্রহের ফলশ্রুতি ছিলো নিজস্ব সম্পাদনা ও প্রকাশনায় হাওড়ার বাড়ি থেকে প্রচারিত হওয়া “ব্লুজ” পত্রিকা, অক্ষয়কুমার রমনলাল দেশাই সম্পাদিত “Violation Of Democratic Rites”-এর তৃতীয় খন্ডে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৭৬ সালে পুলিশ শম্ভু রক্ষিতের উপর হাজতে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিলো আর তারপর বিনা বিচারে তাঁকে আট মাস আটক রাখা হয়েছিলো, ১৯৬৪ সালে শুরু হওয়া মামলার জেরে “ব্লুজ” পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়, হাংরি জেনারেশনের রূপকার মলয় রায়চৌধুরী শম্ভু রক্ষিতকে “সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত কবি” স্বীকৃতি দিয়ে লিখেছেন-.. … ” শম্ভুর একটি লেখা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কেমন করে গজিয়ে ওঠে তা এক রহস্য,কবিতা বিশেষটি আরম্ভ করে শম্ভু ক্রমশঃ ভঙ্গুর ডিকশানের মাধ্যমে তার গঠনবিন্যাসের ল্যাবিরিন্থে নিয়ে যান, ছবি পুরো গড়ে ওঠার আগেই অন্য ছবিতে চলে যান,ষাট,সত্তর,আশি,নব্বই দশকের কবিতার যে ধারা তার সঙ্গে শম্ভুর কবিতার মিল নেই, তিনি নিজের বাক্য সাজানোর কৌশল গড়ে ফেলেছেন এবং তা থেকে কখনও সরে যাননি,আশে পাশে নানারকম আন্দোলন ও শৈলী নিরীক্ষা সত্বেও”…… মলয় রায়চৌধুরীর বিশ্লেষণ অনুসারে শম্ভু রক্ষিতের কবিতাগুলি রাইজ্যোম্যাটিক, বহুরৈখিক, ম্যাক্সিমেলিস্ট, ফ্র্যাগমেন্টারি, নন-টাইটেল হোল্ডিং, আয়রনিকাল এবং অবশ্যই টেকনিক্যালি আঁভা গার্দ।
মাত্র তেইশ বছর বয়সে “তুমি কণিকা ও সূর্যের মধ্যে বিন্দু ও বিস্ফোরণজাত গোলাপ” -এর মতো লাইন সংবলিত শম্ভু রক্ষিতের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না’ (১৯৭১) তে আমরা অসম্ভব দার্শনিক প্রৌঢ়তার আভাস পাই “তোমার নিঃসঙ্গতা আমায় উপহার দেয় দীর্ঘ আনন্দময় সমাধি’, কবি রমিত দের বিশ্লেষণে স্বেচ্ছায় মূলধারার বাইরে থেকে যাওয়া কবি শম্ভু রক্ষিতকে ইতিহাসের অমরত্বে উত্তীর্ণ হতে দেখি–“…..তার নিজস্ব এক দূরত্বের ধারণা,এক অননুকরণীয় ভাষা,আত্মভেদী শব্দকোষ যা চিরমুক্ত প্রবাহ থেকে প্রবাহমানে,আরম্ভ থেকে সে চলেছে নতুন আরম্ভের দিকে,অহংকারের দিকে,তার ভাষা নিরাকার,দর্শন থেকে শুরু করে মহীলতার পরাবাস্তববাদ-গভীরতায় ঠাসা তার কবিতাগাথা,তার কোলাহল,তার লবনমুক্ত তন্ময়তা,বাংলা কবিতার স্রোতের বিপক্ষে তিরিশ দশক ধরে গড়ে তোলা তার ঘর-মাটি-আলো-জল যা তাকে সারস্বতের গুণগ্রাহিতা নয় বরং শিখিয়েছে বিশুদ্ধ কবিতার জনক হিসাবে নিজেকে অতি নিপুণভাবে প্রবীণ করে তোলা।”
এই অবধি তার 8 টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে,’সময়ের কাছে কেন আমি বা কেন মানুষ’, ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না’, ‘রাজনীতি’, ‘পাঠক,অক্ষরগুলি’, ‘সঙ্গহীন যাত্রা’, ‘আমার বংশধররা’, ‘আমি কেরর না অসুর’, ‘ঝাড় বেলুনের জোট’, ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাঁর গল্প সঙ্কলন ‘শুকনো রোদ কিংবা তপ্তদিন অথবা নীরস আকাশ প্রভৃতি’ এবং একমাত্র উপন্যাস ‘অস্ত্র নিরস্ত্র’ (১৯৮০)। তিনি আমেরিকা নিবাসী বাংলাদেশের সাহিত্যানুরাগীদের দেওয়া ‘শব্দগুচ্ছ’ পুরস্কার প্রাপ্ত। তাঁর কবিতা ইংরেজি ও হিন্দিতে অনূদিত হয়েছে, শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন “সত্তরের আধুনিক কবিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ও সম্ভাবনাময় কবি শম্ভু রক্ষিত”, শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন “তার কবিতা সমকালের পাঠকরা সেভাবে অনুধাবন করতে না পারলেও আগামী দিনের পাঠকরা সঠিক মূল্যায়ন করবে।” গত চল্লিশ বছর ধরে আজও এই কবি নিজে প্রুফ দেখা থেকে শুরু করে ছাপা অবধি “মহাপৃথিবী” নামের ব্যতিক্রমী কবিতা পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন। তাঁর অমোঘ উচ্চারণ ——
“কবিতা ছাড়া অন্য কোনও পবিত্রতায় আমার বিশ্বাস নেই”
Related
মানিক বৈরাগী says:
পরম শ্রদ্ধা প্রিয় কবি।
এখন আপনি খুব নিরাপদ থাকবেন। ভালো থাকুন ওপারে।