Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

শ্বেতা শতাব্দী এষ-এর ক্যাকাফোনি ও অন্যান্য কবিতা

Reading Time: 3 minutes

আজ ১২ অক্টোবর কবি শ্বেতা শতাব্দী এষের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

ক্যাকাফোনি 

নিদ্রাচ্ছন্ন ঘোরে সে বসে থাকে, অথচ

ঘুমাতে পারে না, এরকম দ্বন্দ্বে

কেটে যাচ্ছে মুহূর্তরা- পরাজিত সৈনিকের মতো

হৃদয়ে বেদনার ফণা, অথচ বেদনার উৎস কোথায়

জানে না ! তাই অজস্র কথা বল্লেও,

তার চারপাশে ঘিরে থাকে মৌন আড়াল !

 

 

শ্যাওড়াপাড়া 

আগারগাঁও পার হয়ে আরেকটু সামনে শ্যাওড়াপাড়া-
এইখানে একটি গলিতে যেকোনো বাড়ি নয়যে বাড়ির পাশ দিয়ে 
উদ্বেল বাতাস আর রঙের মনোমালিন্যে ছায়া ঘিরে থাকে,
যে বাড়ির সম্মুখে ও ডানপাশে নতুন বাড়ি তৈরি হয় ,
যে বাড়িতে একজন থাকে অথচ বাড়িটাতার নয় ! 
সে দেখে- কীভাবে সময় গলে যাচ্ছেপ্রতিবাদ প্রতিবাদ বলে, 
প্রধান সড়ক ধরে মিছিল চলে যায়সেই সাথে চলে যায় তরকারিওয়ালা,
আজ-কাল-পরশু করলা-আলু-পটলসে কেনে অথবা কেনে না ,
তিন তলার জানালা দিয়ে দেখে- মিছিল চলে যায়লোকেরা বাড়ি বানায়,
এবং বাচ্চাদের খেলতে না-পাওয়া সময়‘ নিয়ে শৈশব চলে যায়-

মিরপুর দশ থেকে আরেকটু পেছনে শ্যাওড়াপাড়া,
শ্যাওড়াপাড়ায় বর্তমানে অসুখ বাস করে !

 

 

উপসংহারপূর্ব 

তোমরা জানো সব ; জীবনের অত্যাশ্চর্য

প্রজ্ঞার আলোয় ভরে থাকে তোমাদের মুখ।

তাই কিছু বলবার নেই,

আর কিছু বোঝাবার নেই,

এখানে দাঁড়ি টেনে দেয়, সময়ের গতি থেকে বিচ্যুত,

পাথরের মতো দুটো চোখ।

 

 

মুখ

এরকম হোলো- মুখোশ থেকে বেরিয়ে এলো মুখ!

এ এক আশ্চর্য নদীময় বাঁক,

তবু কী সরল, জীবন বলতে আর

কিছুই বোঝালো না সে ;

যেসব বাঁকে হারিয়ে গিয়েছিলো

হীরা, নীলা, প্রবাল, তারা সব এখানেই আছে।

মুখোশের নীচে মুখ, বুকের গভীরে চোখ,

তাই দেখিয়েছে!

একদিন এভাবেই মুখোশের ভেতর থেকে

বেরিয়ে আসে মুখ !

 

 

 শব্দের দাগ

১।

সেই বিকেলের নিরানন্দ বিদায়ের পর
পৃথিবীর সমস্ত পেয়ালার চা
ঠান্ডা হয়ে গেছে!

 

২।

তোমার কল্পনার ভূগোল ততদূর 
বিস্তৃত কিনা জানি না,
আমার মাইলকে মাইল-

ক্লান্তি ছড়িয়ে আছে 

 

৩।

বিবিধ অভাব আমাকে কেবল

স্মৃতিকাতর করে তুলে-   

 

৪।

মুহূর্তের কাছ থেকে যা কিছু পেয়েছি
সেসবের খতিয়ান লেখা আছে
কালো পাথরটার ওপর, যা
একসময় আমার

 

লাল পায়রা

ফিরে যাচ্ছে বন,
নদীর অতল বলে কিছু নেই—
ভেঙে যাওয়া ঘুমে!
অন্ধকারের স্নায়ু ছিঁড়ে উড়াচ্ছি,
উড়িয়ে যাচ্ছি একান্ত শান্তির
লাল পায়রা।

 

 

 


এইসব রাস্তা

যাওয়া আর আসার একই রাস্তা, কিন্তু একই নয়—এইখানে বিশাল ব্যবধানে উলটে যায় রহস্যময় হাওয়া। ফুলতোলা জামার আস্তিনে মুছে যায় দ্রুতগামী সকাল। বিকেলের কথা আর কী-ই বা বলার আছে—কেবল কৌণিক দূরত্ব বেড়ে চলে একই রাস্তার অচেনা মেরুকূলে!

 

আমাদের বাড়িতে শীত

বরফকল ছিল না কোনো
আমাদের বাড়িতে তবু বারোমাস শীত—
আগুনে হাত সেঁকে সেঁকে
পুড়ে গেছে ভাগ্যরেখা, হাতের অলীক!
বসন্ত আসবে ভেবে হাওয়ার বাগানে
প্রতিদিন সকালে বৃষ্টি দিতাম,
রক্তকরবীর শরীরে কেবলই
পাতা ভরা অসুখের খাম!
এভাবে আমরা বড় হতে হতে
শীতকেই মনে হতো স্বাভাবিক—
বাকি সব ঋতুরা ভুল-সর্বনাম
কে কোথায় চলে গেলো বাড়ি থেকে দূরে,
সবার প্রথম আমি বসন্ত পেলাম
এইখানে তোমাদের ভিড়ে
সমস্নায়ু ভরা বিচ্ছিন্ন বাতাস
বসন্ত বেশিদিন ভালো লাগে না!
কুয়াশাছায়ার বুকে ফিরে যাওয়া সুর
আমাদের বাড়ির গভীরে
জমে থাকা শীত শীত গান!

 

 

শীত-পাখিদের আকাশ

শীতের পাখিরা আসতে চেয়েছে সন্ধ্যার বাস ধরে- 
অস্ট্রিয়া, জুরিখ, সাইবেরিয়া, মিসিসিপির
এলানো পথে পথে টুকরো টুকরো স্মৃতি পালকে গুজে 
পাখিরা জলের আয়নায় দেখে নেয় নিজস্ব মুখ ,
তারপর বালিয়ার চর, তুলসীপুর, সারিয়াকান্দি হয়ে তাদের কেউ কেউ 
দুইদিনের পাখি-পর্যটকের চোখের আরাম হয় জাহাঙ্গীরনগরে !
অথচ আমি ওদের দিকে তাকালে আকাশকে মনে হয় 
বিষণ্নতর চিঠি- তাই আমার উল্টো পা, 
 সন্ধ্যার বাস থেকে কুয়াশায় শীতের পাখির পতন
আমার ভাল লাগে না !

 

যে কোনো ফুলের নামে

চন্দ্রমল্লিকা নামে কোনো ফুল আমি চিনি না!
কে যেন সেদিন বলছিলো শেফালি,
সন্ধ্যামালতী আর ধুতুরার কথা;
যেসব ফুলের নামে রাখা আছে জীবনের মানে!
তাদের রঙের কথা, তাদের ঘ্রাণের কথা জানবো কীভাবে!
এখানে রাতের বুকে কেবলই হারিয়ে যায়
প্রিয় হাস্নাহেনা।

 

সন্ধ্যারং

এই ক্যানভাসে কোনো রং লাগানো হয়নি;
ঢেউগুলো ফিরে যাচ্ছে সব।
যে আকুতি নিয়ে মানুষ বাঁচে,
সেই রং খুঁজেছে চিত্রকর সমুদ্রের কাছে—
এই ক্যানভাসে একটি রাত আঁকতে চেয়ে
চিত্রকরের মনে পড়ে সমস্ত ভুলে যাওয়া সুর,
শান্ত জলাশয়—
দুটি নিস্তব্ধ চোখের গভীরে
ধীরে ধীরে কেমন করে রাত্রি জমা হয়!
তারপর প্রতীক্ষিত তুলির আঁচড়ে
জেগে ওঠে ক্রমশ নদী, নদীর শরীরে কোনো রং নেই,
ঢেউগুলো ফিরে যাচ্ছে জীবনেরই দিকে—
তবু প্রতিটি পরিচিত সন্ধ্যাকে সেখানে
অপরূপ অচেনা মনে হয়!

 

 

আলাহিয়া

আলাহিয়া নিজেকে খুন করার পর পৃথিবীর সমস্ত আয়না
ভেঙে ফেলেছিলো-
তাকে আমি চিনি না, তবু তার কথা ভাবলে 
দূরত্বকে বেশ সহজ মনে হয়। আলাহিয়া বলেছিলো- 
পৃথিবীর চোখের রঙ লাল ! 
পতনমুখী পাহাড়ের যন্ত্রণায় খুলে যাচ্ছে মুঠিবদ্ধ হাত
তাই লাল পতাকায় চোখ বেঁধে 
একদিন নিজেই সে খুন হয়ে যায়- নিজস্ব বোধের ফাঁদে !

আলাহিয়া, যাকে কখনো জানা হয়নি, তবু পুরনো চিঠির মতো 
সে লুকিয়ে থাকে পলকের ভাঁজে। আর তার গল্প 
বলতে গেলেই মনে পড়ে-
একটা নিশিক্ত ফুল কেমন কোরে ঝরে গিয়েছিলো, 
যেভাবে একটা সবুজ বিকেলের আগে সন্ধ্যা ঘনায় 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>