Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,shibram er shishutosh golpo harshabardhan

শিশুতোষ গল্প: হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার | শিবরাম চক্রবর্তী

Reading Time: 6 minutes
হর্ষবর্ধনকে আর রোখা গেল না তারপর কিছুতেই। বাঘ মারবার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন। আরেকটু হলেই তো মেরেছিলো আমায়।’ তিনি বললেন, “ওই হতভাগা বাঘকে আমি সহজে ছাড়ছি না।’
মারবো ওকে। আমাকে মেরেছে আর ওকে আমি রেহাই দেব তুই ভেবেছিস?
‘তোমাকে আর মারলো কোথায়? মারতে পারলো কই ?
একটুর জন্যই বেঁচে গেছি না! মারলে তোরা বাঁচাতে পারতিস আমায়? গোবর্ধন চুপ করে থাকলো, সে কথার কোন জবাব দিতে পারলো না।
‘এই গোঁফটাই আমায় বঁচিয়ে দিয়েছে বলতে কি ! বলে নিজের গোফ দুটাে তিনি একটু মুচরে নিলেন—‘এই গোঁফের জন্যই বেঁচে গেছি আজ। নইলে ওই লোকটার মতই হাল হতো আমার …’
গোবরাসে কথারও কোন সদুত্তর দিতে পারে না।
‘এই চৌকিদার! হঠাৎ তিনি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন—‘একটা বন্দুক যোগাড় করে দিতে পারো আমায়? যতো টাকা লাগে দেবো।’
‘বন্দুক নিয়ে কী করবেন বাবু?
‘বাঘ শিকার করবো, আবার কি? বন্দুক নিয়ে কী করে মানুষ?’ বলে আমার প্রতি ফিরলেন : ‘আমার এই বীরত্ব কাহিনীটাও লিখতে হবে আপনাকে। যতো সব আজেবাজে গল্প লিখছেন আমাকে নিয়ে। লোকে পড়ে হাসে কেবল। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে শুনেছি।’
‘তার কী হয়েছে? লিখে দেবো আপনার শিকার কাহিনী। এই বাঘ মারার গল্পটাই লিখে দেবো আপনার। কিন্তু তার জন্য বন্দুক ঘাড়ে এতো কষ্ট করে প্রাণপণে বাঘ মারতে হবে কেন? বনে-বাদাড়েই বা যেতে হবে কেন? বাঘ মারতে এতো হ্যাঙ্গামার কী মানে আছে? বন্দুকের কোন দরকার নেই। সাপ ব্যাঙ একটা হলেই হলো। কলমের কেরামতিতে সাপ ব্যাঙ দিয়েই বাঘ মারা যায়।’
মুখেন মারিতং বাঘং? গোবরা টিপ্পনি কাটে।
আপনি টাকার কথা বলছেন বাবু। চৌকিদার এতক্ষণ ধরে কী যেন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন ছিলো, মুখ খুললো এবার—‘তা টাকা দিলে এনে দিতে পারি একটা বন্দুক—দু’দিনের জন্য। আমাদের দারোগা সাহেবের বন্দুকটাই চেয়ে আনতে পারি। বাঘের ভারী উপদ্রব হয়েছে এধারে—মারতে হবে বাঘটাকে—এই বললেই তিনি ওটা ধার দেবেন আমায়। ব্যবহারের পর আবার ফেরত দিয়ে আসবো!”
‘শুধু বন্দুক নিয়ে কী করবো শুনি ? ওর সঙ্গে গুলি কর্তুজ-টার্তুজ ইত্যাদি এ সবও তিনি দেবেন তো? নইলে বন্দুক দিয়ে পিটিয়ে কি বাঘ মারা যায় নাকি? তেমনটা করতে গেলে তার আগেই বাঘ আমায় সাবড়ে দেবে।’
‘তা কি হয় কখনো ? বন্দুকের সঙ্গে কার্তুজ-টার্তুজ দেবেন বইকি বাবু।
তাহলে যাও, নিয়ে এসে গো চটপট। বেশি দেরি করো না। বাঘ না মেরে নড়ছি না আমি এখান থেকে। জলগ্রহণ করবো না আজ।’
‘না না, বন্দুকের সঙ্গে কিছু খাবার-টাবার নিয়ে এসো ভাই।’ আমি বাত্‌লাই, খালি পেটে কি বাঘ মারা যায়? আর কিছু না হোক, একটু গাঁজা খেতে হবে অন্তত।
‘আনবো নাকি গাঁজা ?’ সে শুধায় !
‘গাঁজা হলে তো বন্দুকের দরকার হয় না! বনেবাদাড়ে ঘুরে মরতে হয় না। বন্দুকের বোঝা বইবারও প্রয়োজন করে না। ঘরে বসেই বাঘ মারা যায় বেশ। আমি জানাই।
না না, গাঁজা-ফাঁজা চাই না। বাবু ইয়ার্কি করছে তোমার সঙ্গে। তুমি কিছু রুটি মাখন বিস্কুট চকোলেট—এইসব এনো, পাও যদি। গোবরা বলে দেয়।
বন্দুক এলে হর্ষবর্ধন আমায় শুধালো—কি করে বাঘ মারতে হয় আপনি জানেন?
বাগে পেলেই মারা যায়। কিন্তু বাগেই পাওয়া যায় না ওদের। বাগে পাবার চেষ্টা করতে গেলে উলটে নাকি বাঘেই পায়।
‘বনের ভিতর সেঁধুতে হবে বাবু’ চৌকিদার জানায়।
বনের ভিতরে পা বাড়াতে প্রথমেই যে এগিয়ে এসে আমাদের অভ্যর্থনা করলো সে কোন বাঘ নয়, বাঘের বাচ্চাও না, আস্ত একটা কোলা ব্যাঙ।
ব্যাঙ দেখে হর্ষবর্ধন ভারি খুশি হলেন, বললেন, ‘এটা শুভ লক্ষণ। ব্যাঙ ভারি পয়া, জানিস গোবরা?
‘মা লক্ষ্মীর বাহন বুঝি?
‘সে তো প্যাঁচা।” দাদা জানান—“কে না জানে!”
‘তাহলে ব্যাঙ বুঝি সিদ্ধিদাতা গণেশের না, না…’ বলে গোবরা শুধরে নেয়—সে তো হলো গে ইঁদুর।’
‘আমি পয়া বলছি কারো বাহন-টাহন বলে নয়। নিজের অভিজ্ঞতায়। আমরা প্রথম যখন কলকাতায় আসি, তোর মনে নেই গোবরা? ধরমতলায় একটা মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।’
‘মনে আছে। পেয়েই তুমি সেটা পকেটে লুকিয়ে ফেলেছিলে, পাছে কারো নজরে পড়ে। তারপর বাড়ি এসে খুলে দেখতে গিয়ে দেখলে…’
‘দেখলাম যে চারটে ঠ্যাং। মানিব্যাগের আবার ঠ্যাং কেন রে? তারপর ভালো করে পরীক্ষা করে দেখি কি, ওমা, ট্রামগাড়ির চাকার তলায় পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া ব্যাঙ একটা।’
‘আর কিছুতেই খোলা গেল না ব্যাগটা।’
‘গেলো না বটে, কিন্তু তারপর থেকেই আমাদের বরাত খুলে গেলো। কাঠের কারবারে ফেঁপে উঠলাম আমরা। আমরা এখানে টাকা উড়িয়ে দিতে এসেছিলাম, কিন্তু টাকা কুড়িয়ে থই পাই না তারপর।’
‘ব্যাঙ তাহলে বিশ্বকর্মার বাহন হবে নির্ঘাত।’ গোবরা ধারণা করে, যতো কারবার আর কারখানার কর্তা ঐ ঠাকুরটি তো। কী বলেন মশাই আপনি? ব্যাঙ বিশ্বকৰ্মার বাহনই তো বটে?
‘ব্যাঙটাকে দেখে একটা গল্পের কথা মনে পড়লো।’ আমি বলি—‘জামপিং ফ্রগের গল্প। মার্ক টোয়েনের লেখা। ছোটবেলায় পড়েছিলাম গল্পটা।’
‘মার্ক টোয়েন মানে ? হর্ষবর্ধন জিজ্ঞাসা করেন।
‘এক লেখকের নাম। মার্কিন মুলুকের লেখক।’
‘আর জামপিং ফ্রগ ? গোবরার জিজ্ঞাসা।
‘জামপিং মানে লাফানো, আর ফ্রগ মানে হচ্ছে ব্যাঙ। মানে যে ব্যাঙ কিনা লাফায়।’
‘লাফিং ফ্রগ বলুন তাহলে মশাই।’
‘তাও বলা যায়। গল্পটা পড়ে আমার হাসি পেয়েছিল তখন। তবে ব্যাঙের পক্ষে ব্যাপারটা তেমন হাসির হয়েছিল কিনা আমি জানি না। গল্পটা শুনুন এবার। মার্ক টোয়েনের সময়ে সেখানে ঘোড়দৌড়ের মতন বাজি ধরে ব্যাঙের দৌড় হোত। লাফিয়ে লাফিয়ে যার ব্যাঙ আর সব ব্যাঙকে টেক্কা দিতে পারতো সেই মারতো বাজি। সেইজন্যে করতো কি, অন্য সব ব্যাঙকে হারাবার মতলবে যাতে তারা তেমন লাফাতে না পারে—লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তো—সেইজন্য সবার আড়ালে এক একটাকে পাথরকুচি খাইয়ে বেশ ভারী করে দিতো কেউ কেউ।
‘খেতো ব্যাঙ সেই পাথরকুচি?
‘আবোধ বালক তো! যাহা পায় তাহাই খায়।’
‘আমার বিশ্বাস হয় না। হর্ষবর্ধন ঘাড় নাড়েন।
“পরীক্ষা করে দেখলেই হয়। গোবরা বলে : ‘এই তো পাওয়া গেছে একটা ব্যাঙ—এখন বাজিয়ে দেখা যাক না খায় কি না।’
গোবরা কতকগুলো পাথরকুচি যোগাড় করে এনে গেলাতে বসলো ব্যাঙটাকে। হা করিয়ে ও মুখের কাছে কুচি ধরে দিতেই, কী আশ্চর্য, তক্ষুনি সে গোপালের ন্যায় সুবোধ বালক হয়ে গেলো। একটার পর একটা গিলতে লাগল টুপটাপ করে। অনেকগুলো গিলে ঢাউস হয়ে উঠলো ওর পেট।
তারপর মাথা হেঁট করে চুপচাপ বসে রইল ব্যাঙটা। ভারিক্কি দেহ নিয়ে লাফানো দূর থাক, নড়াচড়ার কনো শক্তি রইল না তার আর।
‘খেলো তো বটে, খাওয়ালিও তো দেখলাম, ব্যাটা এখন হজম করতে পারলে হয়।’ দাদা বললেন।
‘খুব হজম হবে। ওর বয়সে কতো পাথর হজম করেছি দাদা!’ গোবরা বলে: “ভাতের সঙ্গে একদিন যতো কাঁকর গিলেছি, ছোটখাটো একটা পাহাড়ই চলে গেছে আমাদের গর্ভে। হয়নি গজম?’
‘আলবাৎ হয়েছে। আমি বলি : হজম না হলে তো যম এসে জমতো।” 
‘ওই দেখো দাদা!’ আঁতকে চেঁচিয়ে ওঠে গোবরা। 
আমরা দেখি প্রকাণ্ড একটা সাপ, গোখরোই হবে হয়তো, এঁকে বেঁকে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। 
চৌকিদার বলে—‘একটুও নড়বেন না বাবুরা। নড়লেই সাপ এসে ছোবলাবে। আপনাদের দিকে নয়, ব্যাঙটাকে নিতে আসছে ও।” 
আমরা নিম্পন্দ দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাই বটে। আমাদের প্রতি ভ্রাক্ষেপ মাত্র না করে সে ব্যাঙটাকে এসে আত্মসাৎ করলো।
সাপটা এগিয়ে এসে ধরলো ব্যাঙটাকে, তারপর এক ঝটকায় লহমার মধ্যে মুখের ভেতর পুরে ফেললো। তারপর গিলতে লাগলো আস্তে আস্তে । 
আমরা দাঁড়িয়ে ওর গলাধঃকরণ লীলা দেখতে লাগলাম। গলা দিয়ে পুরুষ্ট ব্যাঙটা তার তলার দিকে চলতে লাগলো, খানিকটা গিয়ে থেমে গেলো এক জায়গায়, সেইখানেই আটকে রইলো, তারপর সাপটা যতই চেষ্টা করুক না, সেটাকে আর নামাতে পারলো না। পেটের ভেতর ঢুকে ব্যাঙটা তার পিঠের উপর কুঁজের মতো উঁচু হয়ে রইলো। 
উটকো ব্যাঙটাকে গিলে সাপট উট হয়ে গেল যেন শেষটায়। তার মুখানা যেন কেমনতর হয়ে গেল।.তারপর তার আর কোন উৎসাহ দেখা গেল না। 
‘ছুঁচো গেলার চেয়েও খারাপ দশা হয়েছে সাপটার, বুঝলে দাদা? সাপের পেটে ব্যাঙ, আর ব্যাঙের পেটে যতো পাথরকুচি। আগে ব্যাঙ পাথরকুচিগুলো হজম করবে, তারপর সে হজম করবে ব্যাঙটাকে। সে বোধহয় আর ওদের এজন্মে নয়।’ 
‘ওদের কে কাকে হজম করে দেখা যাক। আমরাও খেতে বসি এধারে।’ 
চৌকিদারের আনা মাখন-রুটি ইত্যাদি খবরকাগজ পেতে খেতে বসে গেলাম। সাপটার অদূরেই বসা গেলো। সাপটা মার্বেলের গুলির মতন তালগোল পাকিয়ে পড়ে রইল আমাদের পাশেই। 
এমন সময় জঙ্গলের ওধারে একটা খসখসানি আওয়াজ পাওয়া গেল। ‘বাঘ এসে গেছে বাবু।’ চৌকিদার বলে

উঠলো,শুনেই না আমরা তাকিয়ে দেখি সত্যিই ঝোপঝাড়ের আড়ালে বাঘটা আমাদের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে।

‘রুটি মাখন-টাখন শেষ পর্যন্ত বাঘের পেটেই গেলো দেখছি। দেখে আমি দুঃখ করলাম। 
কি করে যাবে? আমরা চেটেপুটে খেয়ে ফেলেছি না সব, ওর জন্যে রেখেছি নাকি?’ বললো গোবরা পাউরুটির শেষ চিলতেটা মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে। 
‘যেমন করে পাথরকুচিগুলো সাপের পেটে গেছে ঠিক সেই ভাবে। আমি বিশদ করি। 
‘এক গুলিতে সাবাড় করে দিচ্ছি না ব্যাটাকে। দাঁড়ান না!’ বলে হর্ষবর্ধন হাতে কী একটা তুললেন, ‘ওমা! এটা যে সাপটা। বলেই কিন্তু আঁতকে উঠলেন—‘বন্দুকটা গেলো কোথায়? 
‘বন্দুক আমার হাতে বাবু। বললো চৌকিদার : আপনি তো আমার হাত থেকে নেননি বন্দুক। তখন থেকেই আমার হাতে আছে।’ 
‘তুমি বন্দুক ছুড়তে জানো? 
‘না বাবু, তবে আর দরকার হবে না। বাঘট এগিয়ে এলে এই বন্দুকের কুঁদার ঘায় ওর জান খতম করে দেবো। আপনারা ঘাবড়াবেন না।’
হর্ষবর্ধন ততক্ষণে হাতে সাপটাকেই তিন পাক ঘুরিয়ে ছুড়ে দিয়েছেন বাঘটার দিকে। 
সাপটা সবেগে পড়েছে গিয়ে তার অপর। কিন্তু তার আগেই না, কয়েক চক্কর পাক খেয়ে, সাপের পেটের থেকে ছিটকে বাঙটা আর ব্যাঙের গর্ভ থেকে যতো পাথরকুচি তীরবেগে বেরিয়ে—ছররার মতো বেরিয়ে লেগেছে গিয়ে বাঘটার গায়ে—তার চোখে মুখে নাকে। 
হঠাৎ এই বেমক্কা মার খেয়ে বাঘটা ভিরমি খেয়েই যেন অজ্ঞান হয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। – আর তার নড়াচড়া নেই। – ‘সপাঘাতে মারা গেলো নাকি বাঘটা?’ আমাো পায়ে পায়ে হতজ্ঞান বাঘটার দিকে এগুলাম। 
চৌকিদার আর  দেরি না করে বন্দুকের কুঁদায় বাঘটার মাথা থেঁতলে দিল। দিয়ে বললো—“আপনার সাপের মারেই মারা পড়েছে বাঘটা। তাহলেও সাবধানের মার নেই বাবু, তাই বন্দুকটাও মারলাম তার ওপর ।” 
‘এবার কী করা যাবে? আমি শুধাই‘কোন ফোটো তোলার লোক পাওয়া গেলে বাঘটার পিঠে বন্দুক রেখে দাঁড়িয়ে বেশ পোজ করে ফোটো তোলা যেতো একখানা।’ 
এখানে ফোটোওলা কোথায় বাবু এই জঙ্গলে ? বাঘটা নিয়ে গিয়ে আমি ভেট দেব দারোগাবাবুকে। তাহলে আমার ইনামও মিলবে—আবার চৌকিদার থেকে এক চোটে দফাদার হয়ে যাবো আমি—এই বাঘ মারার দরুন। বুঝলেন? 
‘দাদা করল বাঘের দফারফা আর তুমি হলে গিয়ে দফাদার।”
গোবরা বললো—’বা রে!” 
‘সাপ ব্যাঙ দিয়েই বাঘ শিকার করলেন আপনি দেখছি!’ 
আমি বাহবা দিলাম ওর দাদাকে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>