| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সম্পাদকের পছন্দ সাহিত্য

হ্যাঁ

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট
 
অধ্যাপক ঢোলাকিয়া অবশেষে এক জানুয়ারির শীতার্ত রাতে তার টেবিল ছেড়ে উঠল। টেবিলের ওপর অজস্র কাগজপত্র ছড়ানো, তাতে বিস্তর আঁকিবুকি এবং অসংখ্য অঙ্ক। এত অঙ্ক ও আঁকিবুকির সমুদ্র থেকে একটি মাত্র কাগজ তুলে নিল ঢোলাকিয়া, ভাঁজ করে কোটের বুক-পকেটে রাখল। গত সাতদিন ঢোলাকিয়া জীবন রক্ষার্থে সামান্য আহার্য গ্রহণ করা ছাড়া ভালো করে খায়নি, ভালো করে ঘুমোয়নি, বিশ্রাম নেয়নি। এখন সে একটু অবসন্ন বোধ করছিল, কিন্তু মনটা খুশিতে ভরা। মনে হচ্ছে সে কৌশলটা আবিষ্কার করতে পেরেছে।
 
ঢোলাকিয়াকে লোকে বলে অযান্ত্রিক মানুষ। এই কম্পিউটার এবং ক্যালকুলেটরের যুগে ঢোলাকিয়া পড়ে আছে দেড়শো বছর পেছনে। সে এখনও কাগজে কলম দিয়ে আঁক কযে, রেখাচিত্র আঁকে। পৃথিবীর যত শক্ত অঙ্ক আর রেখাচিত্র, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসেব-নিকেশ যখন যন্ত্রই করে দিচ্ছে তখন মানুষ কেন অযথা পরিশ্রম করবে? ঢোলাকিয়ার বক্তব্য হল, অঙ্ক আমার কাছে আর্ট, লাইন ড্রয়িং-এ আমি সৃষ্টিশীলতার আনন্দ পাই। যন্ত্র তো মানুষের মস্তিষ্কেরই নকল। যন্ত্র আর্ট বোঝে না, সৃষ্টিশীলতাও তার নেই। প্রোগ্রাম করা যান্ত্রিকতা আমার পথ নয়।
ঢোলাকিয়ার মতো আরও কিছু মানুষও আজকাল কম্পিউটারের চেয়ে কাগজ কলম বেশি পছন্দ করে। সংখ্যায় মুষ্টিমেয় হলেও এ-ধরনের কিছু মানুষের ইদানীং যে উদ্ভব হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ঢোলাকিয়া তার বাড়িটাকে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সাজায়নি। আজকাল বোতাম টিপলেই ঘরের আকার ও আকৃতি বদলে নেওয়া যায়। কম্পিউটারে নানারকম নকশা দেওয়াই থাকে। সেসব নকশার নম্বর ধরে বিভিন্ন বোতামের সাহায্যে ওপর থেকে বা আড়াআড়ি নানাধরনের হালকা ভাঁজ করা দেওয়াল এসে ঘরকে বদলে দিতে পারে। আছে বাতাসি পর্দা, যা দিয়ে বাইরের পোকামাকড় বা বৃষ্টির ছাঁট বা ঝোড়ো হাওয়া রুখে দেওয়া যায়–জানলা বা দরজায় কপাটের দরকার হয় না। বাতাসি পর্দাকে অস্বচ্ছ করে দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে। জানলা-দরজার প্যানেলে সরু সরু ছিদ্র দিয়ে প্রবল বায়ুর প্রবাহই হচ্ছে বাতাসি পর্দা।
 
ঢোলাকিয়া তার বাড়িটাকে শীততাপনিয়ন্ত্রিতও করেনি। ঠাকুরদার আমলের পুরোনো ঘরানার বাড়িতে সে যেন বিংশ শতাব্দীকে ধরে রেখেছে।ঢোলাকিয়া আজ কিছু চঞ্চল, উন্মন। সে তার স্টাডি থেকে বেরিয়ে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে উদভ্রান্তের মতো কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াল। নিজেকে শান্ত করা দরকার। বেশি আনন্দ বা বেশি দুঃখ কোনোটাই ভালো নয়।
 
ঢোলাকিয়ার বাড়িতে জনমনিয্যি নেই। এমনকী কুকুর, বেড়ালটা অবধি নয়। ঢোলাকিয়া বিয়ে করেনি, মা বাবা থাকে গাঁয়ের বাড়িতে। ঢোলাকিয়াকে সবাই অসামাজিক মানুষ বলেই মনে করে। আসলে সামাজিক হতে গেলে কাজকর্ম, ভাবনাচিন্তা এবং গবেষণার সময় অত্যন্ত কম পাওয়া যায়। সে একাই বেশ থাকে। অবশ্য সে জানে, একা বেশিদিন থাকা চলবে না। এই সোনালি দিনের আয়ু বেশি নয়। কারণ রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করাটা বাধ্যতামূলক। এবং সন্তান উৎপাদনও। দু-হাজার থেকে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, দুরারোগ্য ক্যান্সার আর এইডস, মারাত্মক ভূমিকম্প, বিশ্বযুদ্ধ ও ঘূর্ণিবাত্যায় পৃথিবীতে বিপুল লোকক্ষয়ের পরিণামে এখন জনসংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কম। সারা ভারতবর্ষে জনসংখ্যা এখন এক কোটি তিপ্পান্ন লক্ষ মাত্র। এবং ভারতের জনসংখ্যাই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। চিনে আড়াই কোটি মানুষ বেঁচে-বর্তে আছে। গোটা ইউরোপে আছে দু-কোটির সামান্য বেশি। আমেরিকায় মোট পঞ্চান্ন লক্ষ। আফ্রিকায় তিন কোটি দশ লক্ষ। বিপদের কথা হল, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি বাড়ছে না। বরং কমছে। ফলে কাউকেই অবিবাহিত থাকতে দেওয়া হয় না। সন্তান উৎপাদনও করতেই হবে। কিন্তু অরুণ ঢোলাকিয়ার দুশ্চিন্তাই হল বিবাহিত জীবন। একটা মেয়ের সঙ্গে বাস করতে হবে, তার ওপর ছেলেপুলের চ্যাঁ ভ্যাঁ–এসব কি সহ্য হবে তার? একটা কুশনের ওপর বসে কিছুক্ষণ ধ্যানস্থ হল সে। মনকে শান্ত ও সজীব রাখার এটাই প্রকৃষ্ট উপায়।স্যাটেলাইট টেলিফোনটা সংকেত দিল। পকেট থেকে ফোনটা বের করে অরুণ ঢোলাকিয়া বলল, বলুন।
 
ক্রীড়া দফতর থেকে অবিনশ্বর সেন বলছি। আপনার কাজ কি শেষ হয়েছে?
 
হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত।
 
ভালো কথা। কিন্তু এখনও আপনার বিপক্ষ গোষ্ঠী ব্যাপারটা মানতে চাইছে না।
 
তারা কি বার বার একটা আপত্তিই জানাচ্ছেন? নাকি নতুন কোনো পয়েন্ট বের করেছেন?
 
না, নতুন পয়েন্ট নয়। তারা সেই পুরোনো কথাই আরও জোর দিয়ে বলছেন, কোনো অ-খেলোয়াড়কে দলভুক্ত করা যায় না।
 
আমি তো বলেইছি, আমি খেলোয়াড় নই বটে, কিন্তু আমি একজন বিশেষজ্ঞ। আমার পারফরম্যান্স হবে সম্পূর্ণ ম্যাথমেটিক্যাল ক্যালকুলেশনের ওপর।
 
ওদের ওখানেই আপত্তি। চূড়ান্ত দলে আপনাকে জায়গা দিতে হলে একজন দক্ষ খেলোয়াড়কে বাদ দিতে হয়। যেক্ষেত্রে আমরা চাপে থাকব।
 
সেনবাবু, আপনাদের মানসিকতা পিছিয়ে আছে। এমন একদিন আসতে বাধ্য যখন খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞ এ-দুটোই দরকার হবে। একথা ঠিক যে আমি ক্রিকেট খুব বেশি বুঝি না, ব্যাট করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তবু আমি যা করতে পারি, তা আপনাদের টিমে কেউ পারবে না।
সেটাও পরীক্ষাসাপেক্ষ। আপনি কবে ডেমনস্ট্রেশন দিতে পারবেন?
 
আপনারা অর্থাৎ নির্বাচকমন্ডলীর সবাই যদি উপস্থিত থাকেন তবে আগামীকালই আমি ডেমনস্ট্রেশন দিতে পারি। কিন্তু দোহাই, একবারের বেশি দু-বার পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।
 
কেন?
 
আমার কলাকৌশল বেশি লোকের কাছে এক্সপোজ করা ঠিক হবে না। আমি কৌশলটা একেবারে বিশ্বকাপের আসরেই প্রয়োগ করতে চাই।
 
খুব মুশকিলে ফেললেন।
 
আর একটা কথা।
 
কী?
 
আমার অ্যাকশনের কোনো ভিডিয়ো তোলা চলবে না। কোনো ক্যামেরা বা রেকর্ডারও নয়।
 
আপনি বড্ড বেশি দাবি করছেন।
 
করছি, কারণ আমি একাই ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেব বলে মনে করছি।
 
নির্বাচকরা এটাই মানতে চাইছেন না। যাই হোক, আপনি কাল সকাল দশটায় ক্রীড়াকেন্দ্রে চলে আসুন।
ফোনটা পকেটে রেখে অরুণ ঢোলাকিয়া উঠে পড়ল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। কলকাতা শহরে আজকাল মাত্র বত্রিশ হাজার লোক বাস করে। একসময়ে এখানে এক কোটি মানুষ বাস করত। তখনও শহরটা ছিল ঘিঞ্জি, নোংরা, ভিড়াক্কার, এখন শহর গাছপালায় ভরতি। চওড়া রাস্তার দুধারে বড়ো বড়ো গাছের সারি, প্রচুর বাগান, পার্ক, জলাশয়। এসবের-ই ফাঁকে ফাঁকে অনেক দূরে দূরে একখানা করে বাড়ি।
 
এবার প্রচন্ড শীত পড়েছে। গতকালও দু-ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। অরুণ ঢোলাকিয়ার গায়ে পশমের জামা আছে, তা সত্ত্বেও তার শীত করছিল। একটু হাঁটাচলা না করলে মাথার জটটা খুলবে না।
 
মাইলখানেক হাঁটল অরুণ, একজন মানুষের সঙ্গেও দেখা হল না। দুটো ওভারক্র্যাফট নিঃশব্দে রাস্তা দিয়ে গেল।
 
আঞ্চলিক বাজার নামে কথিত একটা করে বহুমুখী কেন্দ্র শহরের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে। এগুলো আসলে বাজার, ক্লাব, রেস্তোরাঁ ইত্যাদির সমাবেশ।
 
ঢুকতেই একটা হলঘর। মাঝখানে বিশাল এক ফোয়ারা, তার চারপাশে চমৎকার বসার জায়গা। দুঃখের বিষয় বসবার লোক নেই। হলঘরের মধ্যে রয়েছে বিস্তর গাছপালা এবং সবুজ লনও। ছাদটা স্বচ্ছ আবরণে তৈরি বলে এই ঘরে সূর্যের আলো আসতে পারে। হলঘরের চারদিকে ছোটো ছোটো থিয়েটার এবং ভিডিয়ো হল। টিকিট কাটতে হয় না, থিয়েটার এমনিই দেখা যায়। তবে নাটক করার মতো দল বেশি নেই বলে থিয়েটারগুলো বেশির ভাগই অচল থাকে। ভিডিয়ো হলেও লোক হয় না।
 
স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে এল অরুণ ঢোলাকিয়া। এখানে কিছু রেস্তোরাঁ এবং দোকানপাট। কিছু মানুষজন দেখা যাচ্ছে। তবু খুব-ই ফাঁকা। এখানেই লোকটার আসার কথা।
 
অরুণ চারদিকে চেয়ে সবুজদ্বীপ রেস্তোরাঁয় গিয়ে ঢুকল। খুবই ছোটো রেস্তোরাঁ। সব মিলিয়ে দশটা টেবিল পাতা আছে। খুবই কম আলোয় দেখা গেল, খদ্দের নেই বললেই হয়। একটা টেবিলে চারজনের একটি পরিবার বসে খাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী এবং দুটি বাচ্চা। আর কোণের দিকে একজন লোক চুপচাপ বসে আছে।
 
ঢোলাকিয়া সেদিকেই এগিয়ে গেল।
 
নমস্কার।
 
লোকটা মুখ তুলে একটু হাসল, বোসো ঢোলাকিয়া।
 
সে বলল, কী খাওয়া যায় বলো তো?
 
যা খুশি। তবে আমি নিরামিষাশী।
 
সে তো আমিও। ভেজিটেরিয়ানদের সংখ্যাই তো বেশি।
 
নুডলসের অর্ডার দিয়ে লোকটি পকেট থেকে একটা খুদে টেলিভিশন সেট বের করে ঢোলাকিয়ার হাতে দিয়ে বলল, ওতে চার মিনিটের একটা কভারেজ আছে দেখে নাও।
 
ছোটো টিভি সেটটার মধ্যেই ভিডিয়ো টেপ রয়েছে। ঢোলাকিয়া সেটটা অন করল। একটা ক্রিকেট মাঠ। একজন ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে। একজন বল করতে দৌড়োচ্ছে। বল করল, পিচে পড়ে বলটা নীচু হয়ে গেল। খুব নীচু। ব্যাটসম্যান সেটাকে আটকে দিল। দ্বিতীয় বলটা নীচু হল না, কিন্তু অফস্টাম্পে পড়ে বাঁই করে ঘুরে স্টাম্পের দিকে এল। ব্যাটসম্যান বিপজ্জনক বলটাকে ফের আটকাল। দেখতে দেখতে ঢোলাকিয়া বলল, এ বল-এ আজকাল খেলা হয় না।
 
জানি। নতুন নোভা বলে ক্রিসক্রস সেলাই থাকে।
 
হ্যাঁ।
 
তুমি যে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে চাইছ তাতে নোভা বল হয়তো সাহায্য করবে। কিন্তু মনে রেখো, পঞ্চাশ বছর আগে পুরোনো ক্যাট বলেও এরকম সেলাই থাকত।
 
জানি। আমার কাছে পুরোনো সবরকম বলেরই নমুনা আছে।
 
পরের বলটা–আশ্চর্যের বিষয়–পিচে পড়েই সম্পূর্ণ গড়িয়ে স্টাম্পের দিকে গেল। ব্যাটসম্যান আটকাতে পারল না। বোল্ড।
 
লোকটা একটু হেসে বলল, দেখলে?
 
ঢোলাকিয়া মাথা নেড়ে বলল, দেখলাম, আপনি চল্লিশ বছর আগে শুটারস দিতেন।
 
হ্যাঁ, সারা পৃথিবীতে আমিই একমাত্র শুটারস আর লপ বল করতে পারতাম। তবে ছ-টা বলের মধ্যে একটা দুটো বা তারও কম। ডেলিভারির ওপর কন্ট্রোল সহজে আসে না। কঠোর অনুশীলন দরকার, কেরিয়ারের শেষদিকে আমি কৌশলটা খানিক রপ্ত করতে পেরেছিলাম, কিন্তু পুরোটা নয়। আজ অবধি কৌশলটা কাউকে শেখাইনি।
 
 
ঢোলাকিয়া কিছুক্ষণ নিঃশব্দে খাবার খেয়ে গেল, তারপর বলল, কাল ওরা আমার পরীক্ষা নেবে।
 
লোকটা একটু হাসল, মুখ না তুলেই বলল, ঈশ্বর তোমার সহায় হোন। যদি ওরা তোমাকে টিমে নেয়, তাহলে এই প্রথম একজন নন-ক্রিকেটার টিমে ঢুকবে।
 
হ্যাঁ, আমি ওদের বুঝিয়েছি যে, আমি ক্রিকেটার না, হলেও, একজন বিশেষজ্ঞ।
 
লোকটা সকৌতুকে একটু চেয়ে মাথা নাড়ল।
 
খাওয়া শেষ করে লোকটা বলল, এবার চলো, হাতে-কলমে ব্যাপারটা দেখা যাক।
 
বাইরে পার্কিং লটে লোকটার ছোটো হেলি-কারে এসে উঠল তারা। এ গাড়ি মাটি দিয়ে চলে না, হুশ করে। হাওয়ায় ভেসে পড়ে। দ্রুত গতি, ব্যাটারিচালিত মোটর পাখির ডানার মতো দুটি ফ্লোটারকে চালু রাখে, পাখির মতোই স্বচ্ছন্দে ওড়ে এই গাড়ি। দশ মিনিটের মধ্যেই তারা নিরিবিলি শরতলির একটা উজ্জ্বল আলোয় সজ্জিত মাঠে এসে নামল। মাঠের মাঝখানে বাইশ গজে ক্রিকেট পিচ। চারদিকে আলোর স্তম্ভ জায়গাটাকে দিনের। অধিক আলোকিত করে রেখেছে।
 
লোকটা অনুচ্চ স্বরে ডাকল, রজনি?
 
মাঠের ধারে একটা ছোটো তাঁবুর ভেতর থেকে একটি কিশোরী মেয়ে ঘুমচোখে বেরিয়ে এসে হাই তুলল। লোকটা বলল, আমার ছোটোমেয়ে রজনি। ও যদি ছেলে হত, তবে ওকে আমার সব বিদ্যে শেখাতাম। আমার ছেলে নেই, চারটিই মেয়ে।
 
মেয়েরাও তো ক্রিকেট খেলে।
 
খেলে, আমার মেয়েরা ক্রিকেটে আগ্রহী নয়। মেয়েটা পিচের একধারে নিঃশব্দে তিনটে স্ট্যাম্প পুঁতে দিয়ে সরে দাঁড়াল, তারপর বলল, ইনিই কি তিনি?
 
লোকটা বলল, হ্যাঁ, আমাদের তুরুপের তাস, এসো ঢোলাকিয়া, বল করো।
 
রজনি একটা ব্যাগ থেকে সাদা রঙের একটা বল বের করে অরুণ ঢোলাকিয়ার দিকে ছুঁড়ে দিল। এই সেই বিতর্কিত বল নোভা, বলটাকে যদি পৃথিবী হিসেবে ধরা যায় তাহলে এর একটা সেলাই গেছে বিষুবরেখা বরাবর, অন্যটা দুই মেরু ভেদ করে, বলের দু-পিঠে এক জায়গায় সেলাই দুটো কাটাকাটি করেছে আর এই দুটো জায়গাই অরুণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বলটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল অরুণ। নজরে পড়ল দুটো সেলাই যেখানে কাটাকাটি করেছে সেখানে হালকা পেনসিল দিয়ে চারটি অক্ষর–ডি ও এন টি, ভ্রূ কুঁচকে ঢোলাকিয়া একটু ভাবল, এর মানে কি ডোন্ট? সে মেয়েটার দিকে এক ঝলক তাকাল, মেয়েটা খুব বিরক্তি মাখানো মুখে অন্যদিকে চেয়ে আছে।
 
 
বৃদ্ধ রামনাথ রাই তার দিকে মিটমিটে চোখে লক্ষ রাখছে। রামনাথ ষাট সত্তরের দশকে ভারতীয় একাদশে খেলেছিল। তার রেকর্ড তেমন ভালো কিছু নয়, কিন্তু অরুণের মাথায় আইডিয়াটা ঢুকিয়েছিল এই লোকটাই, অঙ্কের জগতে অরুণ ঢোলাকিয়ার খ্যাতি সাংঘাতিক। বিশেষ করে জ্যামিতিক এবং ত্রিকোণমিতিক গণনায় সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার রৈখিক গণনায় সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার রৈখিক গণনা, বিচার ও বিশ্লেষণ পৃথিবীর যেকোনো বিষয়েই গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বৃদ্ধ রামনাথ একদিন তার দ্বারস্থ হয়ে বলল, বাপু, ক্রিকেটের জন্য তুমি কিছু করো।
 
সেই সূত্রপাত, রামনাথই তাকে ক্রিকেট বুঝিয়েছিল এবং আগ্রহী করে তুলেছিল। মাসতিনেক ধরে সে নোভা বল নিয়ে মেতে আছে। আজ নিজের সাফল্য সম্পর্কে সে ঘোর আত্মবিশ্বাসী। ভারতীয় নির্বাচকমন্ডলী তার মতো নামি লোকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারছে না, তাকে হয়তো দলে নেওয়া হবে। এরজন্য বৃদ্ধ। রামনাথের কাছে সে কৃতজ্ঞ। কিন্তু মুশকিল হল বলের গায়ে ডোন্ট কথাটা লিখে রজনি কী বোঝাতে চাইছে? তাহলে কি মাঠে ও আশপাশে বা ঊর্ধ্বাকাশে গুপ্তচর রয়েছে? তার বোলিং অ্যাকশন কি রেকর্ড করা হবে?
 
অরুণ ঢোলাকিয়া ফুটফুটে মেয়েটার দিকে বার বার তাকাল, কিন্তু মেয়েটা একবারও তার দিকে তাকাল না। উদাসীন মুখে ঘাসের ওপর বসে নিজের নখ দেখছে এখন।
 
ঢোলাকিয়া বিদ্যুৎবেগে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিল। বৃদ্ধ রামনাথকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
 
সুতরাং অরুণ যে ছ-টা বল করল, তার একটাও গড়িয়ে গেল না। একটাও লুপ হল না।
 
উত্তেজিত রামনাথ মাথা নেড়ে বলল, পিচে জায়গামতো পড়ছে না।
 
তাই তো দেখছি, মনে হচ্ছে শুটার বা লুপ আমাদের কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
 
রামনাথ রাই প্রচন্ড হতাশ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, তাহলে তোমার পরিশ্রম বৃথাই গেল?
 
তাই মনে হচ্ছে।
 
আবার চেষ্টা করে দ্যাখো, নোভা বলের ভেতরে এক ধরনের সিনথেটিক আঠা থাকে। তার ফলে বলটা ক্যাট বলের চেয়ে একটু বেশি লাফায়। মুশকিল কি সেখানেই হচ্ছে?
 
ঢোলাকিয়া জানে, সেটা সমস্যা নয়। সমস্যা রামনাথ নিজেই। অরুণ সেটা রামনাথকে বলে কী করে?
 
তবে সে আর এক ওভার বল করল, ইচ্ছে করে প্রথম পাঁচটা বল করল বিশ্রীভাবে। কিন্তু ষষ্ঠ বলটা করল। তার ক্ষুরধার ক্যালকুলেশন দিয়ে। বলটা নীচে পড়ে মাটি কামড়ে বুলেটের মতো ছুটে গিয়ে মিডল স্টাম্প ছিটকে দিল।
 
বাঃ, এই তো হচ্ছে? বলে চেঁচিয়ে উঠল রামনাথ।
 
রজনি হঠাৎ উঠে তাঁবুর দিকে হাঁটতে লাগল, ঢোলাকিয়া ভাবল সে কোনো মারাত্মক ভুল করে বসল নাকি? তবে বুদ্ধি করে সে ডান হাতের গ্রিপ বাঁ-হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। এবং শুধু গ্রিপ ছাড়াও অনেক ব্যাপার আছে যা, নকল করা সহজ নয়, বিশেষ এক গতিতে, বিশেষ এক কোণ থেকে ডায়াগোনাল রান আপ নিয়ে আসতে হবে। ডেলিভারির সময়ে গোটা হাতেরও একটা বিশেষ কম্পন চাই, এসব সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় অনুধাবন ও অনুশীলন সোজা কথা নয়। তবু মনটার খুঁতখুঁতুনি থেকেই গেল।
 
রামনাথ তাকে আরও বল করার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল, কিন্তু অরুণ রাজি হল না, টেলিফোনে একটা হেলি-ট্যাক্সি ডাকিয়ে এনে বাড়ি ফিরল।
 
একটু রাতের দিকে ফোনটা এল।
 
আমি রজনি।
 
ওঃ, রামনাথবাবুর ছোট্ট মেয়েটা?
 
হ্যাঁ। আপনি আজ খুব ভুল করেছেন, বলের ওপর আমি লিখে রেখেছিলাম ডোন্ট।
 
হ্যাঁ, দেখেছি।
 
তা সত্ত্বেও শেষ বলটা ওরকম করলেন কেন?
 
না-করলে, তোমার বাবা হতাশ হতেন।
 
তাহলেও ক্ষতি ছিল না, আজ মাঠের চারপাশে লোক ছিল, আপনি তাদের দেখেননি, কিন্তু আমি জানি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞরা আপনার অ্যাকশনের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। আপনি আমার বারণ শুনলেন না কেন?
 
আমার ভুল হয়েছে। আসলে তুমি একটি বাচ্চা মেয়ে বলে, তোমার বারণকে বেশি গুরুত্ব দিইনি।
 
আমার বয়স চোদ্দো, আজকাল এ-বয়সের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।
 
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞরা জানল কী করে?
 
আমার বাবাই জানিয়েছে। চল্লিশ বছর আগে বাবাকে ভারতীয় টিম থেকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়। এটা তারই প্রতিশোধ।
 
কিন্তু উনিই তো আমাকে এ-কাজে নামিয়েছিলেন।
 
হ্যাঁ, কারণ তিনি জানেন, আপনার মতো একজন ধুরন্ধর অঙ্কবিদকে দিয়েই কাজটা সম্ভব। আমার বাবাও একজন ম্যাথমেটিশিয়ান, কৌশলটা আপনাকে দিয়ে আবিষ্কার করিয়ে, সেটা অন্য দেশকে বেচে দেওয়ার মতলব ছিল তাঁর।
 
এখন তাহলে কী হবে?
 
সেটা আপনিই ঠিক করুন। আর এক মাস পরেই বিশ্বকাপ। দু-হাজার নিরানব্বই সালের সতেরোই ডিসেম্বর। প্রথম ম্যাচেই ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকা, আপনি কতবড়ো ভুল করেছেন আজ তা বুঝতে পারছেন?
 
পারছি রজনি, আমার এতদিনের পরিশ্রম বৃথা গেলে আমি খুবই ভেঙে পড়ব।
 
এখন মন দিয়ে শুনুন।
 
বলো।
 
আপনি আমার বারণ শুনবেন না বলে ধরে নিয়ে, আমি একটা কাজ করেছি। কী কাজ? পিচের সোজাসুজি যে দুটি বাতিস্তম্ভ ছিল, আমরা সে দুটি থেকে বিমার রশ্মি ফেলেছিলাম। যতদূর জানি এই রশ্মি ফেললে ক্যামেরার চোখ ঝলসে যায়, মানুষের চোখে কিছু ধরা পড়ে না।
 
সত্যি?
 
হ্যাঁ, আমি এবং আমার বান্ধবীরা বুদ্ধি করে এইটে করেছি। তাতে কতদূর কাজ হবে, তা আমরা জানি না। ওদের কাছে হয়তো আরও অত্যাধুনিক ক্যামেরা আছে।
 
সেটা থাকাই সম্ভব।
 
আমি যে-বলটা আপনাকে দিয়েছিলাম তাতেও একটা সলিউশন মাখানো ছিল। তাতে মুভমেন্টের সময় হাওয়া লাগলে, সেলাইগুলো সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যাবে। জানি না, এতে কতটা কাজ হবে। কিন্তু আমরা। আমাদের সাধ্যমতো করেছি।
 
তোমাকে কী বলে ধন্যবাদ দেব?
 
বিশ্বকাপটা জিতুন, তাহলেই হবে।
 
.
 
বিশ্বকাপের শুরুতেই সারাপৃথিবীতে তুমুল আলোচনা, ভারত তাদের দলে একজন নন-ক্রিকেটার অঙ্কবিদকে খেলাচ্ছে। হাসাহাসি, ঠাট্টা, মশকরা, সমালোচনা, প্রতিবাদ সবই হতে লাগল। তার মধ্যেই কলকাতার ইডেন উদ্যানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে নামল ভারত। টসে জিতে ভারতের অধিনায়ক নানক দাশগুপ্ত প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠাল ঢোলাকিয়ার পরামর্শে।
 
প্রথম ওভারেই ঢোলাকিয়ার হাতে বল। সারামাঠ নিশ্চপ। একজন অঙ্কের অধ্যাপক অ-ক্রিকেটার কী করতে পারে জানার জন্য সমস্ত পৃথিবীই দমবন্ধ করে বসে আছে। অরুণ ঢোলাকিয়া কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল। তারপর শুরু করল দৌড়।
 
প্রথম বলটা লুপ। স্টাম্পের সোজা পিচে পড়ে, বাঁ-দিকে বেঁকে গেল, ব্যাটসম্যানের বাড়ানো ব্যাটকে এড়িয়ে, ফের ডানদিকে ঘুরল, না, স্টাম্পে লাগল না। একটু উঁচু দিয়ে চলে গেল উইকেটকিপারের হাতে। ঢোলাকিয়া বিরক্ত। ক্যালকুলেশনের সামান্য ভুল।
 
দ্বিতীয় বলটা আবার লুপ। কিন্তু ধীর গতির ব্যাটসম্যান মরিস বলটাকে তার সিনথেটিক ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে দিল কভারে, চার।
 
আজকাল মাঠে কোনো আম্পায়ার থাকে না। কিন্তু মাঠের চারদিকে অজস্র বৈদ্যুতিন চোখ। স্কোরবোর্ড নির্দেশ দিল চারের।
 
তৃতীয় বলটা করার আগে ফের একটু ধ্যানস্থ হল সে। ধীরে দৌড়ে এসে বল করল। মরিস ব্যাটটা তুলল কিন্তু সময়মতো নামাতে পারল না। মাটি কামড়ে বলটা গিয়ে তার মিডলস্টাম্প উপড়ে দিল, শুটার।
 
ওভার যখন শেষ হল, তখন স্কোরবোর্ড-এ চার রানে চার উইকেট। হ্যাট্রিকসহ। দলের অন্য খেলোয়াড়রা এতদিন অ-ক্রিকেটার ঢোলাকিয়াকে পাত্তা দিচ্ছিল না। কিন্তু ওভার শেষ হলে, কেউ কেউ এসে তার পিঠ চাপড়ে গেল।
 
খেলা অবশ্য বেশিক্ষণ গড়াল না। মোট বাইশ রানে প্রতিপক্ষ অল আউট। ঢোলাকিয়ার ঝুলিতে দশ ইউকেট। সতীর্থদের কাঁধে চড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরল ঢোলাকিয়া।
 
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি এসে গেল। তাতে অবশ্য খেলা আটকায় না আজকাল। দুশো মিটার ওপরে অন্যদিক থেকে দশটা পদ্মফুলের পাপড়ির মতো স্বচ্ছ ঢাকনা এসে গোটা মাঠ ঢাকা দিয়ে দিল।
 
এক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত জিতে গেল ম্যাচ। জনতা গর্জন করে উঠল। ঢোলাকিয়া জিন্দাবাদ। সমগ্র পৃথিবী স্তম্ভিত। এ কী আশ্চর্য বোলিং! পরদিন পত্রপত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কেউ কেউ দাবি করল ঢোলাকিয়া চাক করছে, ওকে নো বল ডাকা উচিত।
 
দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যাণ্ড, তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া একে একে উড়ে যেতে লাগল। ফাইনালে শোচনীয়ভাবে হারল দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইণ্ডিজ। তারা পনেরো রানে অল আউট।
 
বিশ্বকাপের উত্তেজনার পর তার নির্জন বাড়িতে ফিরে এল ঢোলাকিয়া। এত উত্তেজনা, এত চেঁচামেচি ও শোরগোল ইত্যাদিতে সে বড়ো অস্বস্তিতে ছিল। নিরিবিলিতে এসে, সে খুব শান্তি পেল। তার কাজ শেষ। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে তার কলাকৌশল আর গোপন রাখা যাবে না। অন্যেরা কপি করে নেবে। তা নিক, লুপ আর শুটার নিয়ে বিস্তর গবেষণা হবে। বদল করা হবে বল, তাতে আর কিছু আসে যায় না অরুণ ঢোলাকিয়ার, সে তার অঙ্ক নিয়ে থাকবে।
 
অস্বস্তিটা শুরু হল তৃতীয় দিন থেকে। অধ্যাপক অরুণ ঢোলাকিয়ার খুব একা লাগছে। বড্ড একা, তার সময়। কাটতে চাইছে না। প্রচুর অভিনন্দন জানিয়ে লোকে ফোন করছে, উপহার পাঠাচ্ছে, অনেকে চলেও আসছে তাকে দেখতে, পৃথিবীজুড়ে তাকে নিয়ে আলোচনা। এ-সবই তার কাছে বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর।
 
কয়েকদিনের জন্য সে সমুদ্রের ধার থেকে ঘুরে এল। কিন্তু সারাক্ষণ একটা নিঃসঙ্গতা সঙ্গে রয়েছে তার। প্রিয় অঙ্কশাস্ত্রও যেন আলুনি লাগছে আজকাল। কেন এমনটা হচ্ছে? সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা বোধ করছে সে।
 
একদিন রাতে বিছানায় শুয়ে নিজেকেই সে প্রশ্নটা করল, এমন লাগছে কেন? কেন এমন লাগছে?
 
কোনো জবাব খুঁজে পেল না সে।
 
রামনাথ ফোন করল দশদিন বাদে, অভিনন্দন জানাচ্ছি। তুমি আমাকে ধাপ্পা দিয়েছিলে বলে, গত দশদিন ফোন করিনি। আমার অভিমান আর রাগ হয়েছিল, সেটা সামলে উঠেছি।
 
রামনাথের গলা শুনেই কেন যে বুকটা হঠাৎ এমন দুরুদুরু করতে লাগল কে জানে! ধরা গলায় অরুণ ঢোলাকিয়া বলল, অনেক ধন্যবাদ।
 
ফোন রেখে অনেকক্ষণ ভাবল অরুণ, রজনিরও কি উচিত ছিল-না, একবার ফোন করা বা অভিনন্দন জানানো? অদ্ভুত তো মেয়েটা! খুব রাগ হল অরুণের। কেন জানাল না? কেন এত দেমাক ওর! কেন ওর এত অবহেলা তাকে? তার যে ভীষণ রাগ হচ্ছে। রাগে যে জ্বলে যাচ্ছে গা। অসহ্য। অসহ্য।
 
আরও দু-দিন সময় দিল সে, তারপর আরও তিনদিন, নাঃ এ তো সহ্য করা যাচ্ছে না! কিছুতেই না।
 
সাতদিনের দিন এক সকালবেলা, সে রজনির মোবাইল ফোনের নম্বর বের করল কম্পিউটার সেন্টারে ফোন করে।
 
রজনির মিহি হ্যালো শুনেই রাগে ফেটে পড়ল অধ্যাপক অরুণ ঢোলাকিয়া, কী–কী ভেবেছ তুমি! অ্যাঁ! কী ভেবেছ? আমাকে এত অবহেলা করার মানে কী আমি জানতে চাই…
 
এই তীব্র রাগের জবাবে মেয়েটা তাকে অবাক করে দিয়ে খিলখিল করে হাসল। তারপর বলল, হ্যাঁ!
 
হ্যাঁ! হ্যাঁ মানে কী?
 
হ্যাঁ মানে হ্যাঁ।
 
অরুণ একটু লাল হল লজ্জায়। তারপর বলল, ও, তাহলে হ্যাঁ?
 
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত