আজ ০৩ নভেম্বর কবি,সম্পাদক শ্যামল কান্তি দাশের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
আমার মায়ের ভাষা
আমার ফসলগুলি, সারাদিন আমার শরীর
আমার মাটির বাড়ি কাদাজলে আমার শরীর
দু’দিকে গহন জল, জলটুকু আমার জীবন-
আমি এই জল ছেড়ে পুলকিত প্রাণে উঠে আসি
আমার গানের ভাষা নলিছেঁড়া প্রতিবাদে লেখা
আমি এই প্রতিবাদ বুকফাটা সুরে লিখে রাখি
আমার লেখার ভাষা মেঘে রোদে আগুনে পোড়ে না
দাঁতে দাঁত, চোখে চোখ, পড়ো এই জীবনমরণ
আমার মুখের ভাষা ভেঙে যাওয়া আমার স্বদেশ
আমার বুকের ভাষা টান টান লুকোনো পাঁজর
রক্তে রঙিন দিন, চারপাশে সবুজ নিশান-
ধোঁয়া ও বারুদ থেকে ভালোবাসা প্রাণ খুলে দেখি
আমার মায়ের ভাষা চিরদিন আমার শরীর
শরীরের লেখাগুলি দিকে দিকে তোমার আমার!
দূরের আকাশ
মেঘগুলো আজ মেঘ নয় আর
হাওয়া খুনসুটে, বৈরী,
মেঘ ও বৃষ্টি সামনে সমান
লাঠিসোঁটা নিয়ে তৈরী।
বাগানে গাছেরা গাছ হয়ে আছে
ফুলে ফুল ভারি দ্বন্দ্ব,
দোয়েল পাপিয়া হারিয়ে ফেলেছে
উড়ে বেড়াবার ছন্দ।
নদীটি এখন একা, চুপচাপ,
ঢেউ গেছে তার হারিয়ে
দূরের আকাশ তাকে ছোঁবে বলে
হাতখানা দিল বাড়িয়ে।
দুঃখ
বনের মধ্যে আবার যেন ভেংচি কাটছে কেউ
হঠাৎ খুবই ঘাম ঝরছে শিরায় ও লোমকূপে
কোমর থেকে কুলকুলিয়ে রক্ত নামছে নীচে
সূক্ষ্ম অঙ্গ ছিট্কে গেল, সূর্য নিল বিদায়
বিদায়-লেখা সূর্যে এখন কতই বা আর যাব
চড়াম চড়াম ঢাক বাজছে, আঁচড়ে দিল মালিক
বউ গিয়েছে নতুন কোনো সওদাগরের বাড়ি –
কালো মেয়ের দুঃখ অনেক, কান্না এল ঝেঁপে!
রক্ত
আবার আমি রক্ত খেতে মাঠের কাছে এলাম
রক্তগুলো কেমন যেন, আলুনি আর সাদা
আর তা ছাড়া… ফাঁকা মাঠের ফাটল দিয়ে ঘেরা
ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস, উড়ছে মরা পাতা
রক্ত ছাড়াই নদীর শেষে পালিয়ে যাচ্ছি, কুকুর!
প্রেমিক
আমরা দুজনেই প্রেমে মশগুল ছিলাম।
তিনশো তলা ইমারতের টঙ থেকেও
ভোলেভালা মানুষ শুনতে পেত তোমার প্রেমার্তি।
তোমার গোল গোল কান্নায় চাঁদের ছায়া পড়ত।
তুমি কোনোদিন জানতেই পারলে না,
একদিন আমিও তোমার
সর্বংসহ প্রেমিক ছিলাম!