স্নিগ্ধা বাউলের কবিতাগুচ্ছ
আজ ৩১ অক্টোবর কবি স্নিগ্ধা বাউলের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
নিত্যপুরাণ
কিছু প্রসন্নরোদ বারান্দা ছুঁয়ে গেছে
রোদকে ভেবে রাখি আটলান্টিক রিজ
স্কাইভিউ বিলবোর্ডের ছবিগুলো নেমে আসে
কুয়াশায় গলা ডুবিয়ে রাখি ক্যাপ্টেনের নামে—
শান্তসমুদ্র রুখে দাঁড়ায় দিকভ্রান্ত আমার হয়ে
উত্তালের মতো এমন তীব্র কটাক্ষ যায় রয়ে
শখের রোদ দূরে সরে যায় প্রহর প্রহর মেপে;
নাবিক, —তীরের কলকাঠি বাতাসে কাঁপে দেখো
শহরের গম্বুজ নামে তীক্ষ্ণ—সুচের মতো বুকে
নোনতা বাতাসের হাহাকার নামখানি তার;
কেসে আয়েগা ইতনি হিম্মত, দেখো—
রোদ সরে যায়, ছায়ারাগ নামে ক্লান্ত লাগে নিরেট
এক সমুদ্রে দুইজন থাকি দুই সমুদ্র দূরে।
আলোর বীজ
উত্তেজিত শিশ্নের মতো ধেয়ে আসছে চাঁদ
খুবলে খাবে অভুক্ত পাঁজর—
অন্ধকারের ত্রিসীমানা
আলো আসছে আলো—
জন্মের নতুন সূত্র।
সীমাহীন ইতিহাসের বিরদ্ধাচরণ
আজ
পূর্ণিমার রাত জুড়ে;
মুঠো ভরতি জ্যোৎস্নার বাকবাকুম শঙ্কা ছেড়ে—
এ ধারে চলে আসো পুরুষ
আলোতে মাখো বিলাস রতি
অন্ধকারে নয়, আলোতে হোক জন্ম কথা।
রূপান্তরিত প্রজাপতি
আমার খুব খরচ করতে ইচ্ছে করে
অসভ্য যৌবনের মতো
ঘাস ফড়িং রেখে বুনো প্রজাপতি আমার পছন্দ
তিতলি তিতলি খেলা;
আমি আকাশ দেখি খালি পায়ে
ভেজা মাটি জাগায় মেঘের মায়া
বিকেলের মাঠে ফিরে যাই আমি
আশ্বিনের ঘাসের কাছে, সবুজ রঙের
পূজার জামার মতো জড়াই সমস্ত;
বললে প্রজাপতি ভালোবাসো—
রঙ মেখে মেতে উঠবে আঁচলের ’পর—
সেই থেকে আমি বেখরচা;
কেবল খোলস ছেড়ে চলে গেছো তুমি
মথের রাজ্যে;
বেহায়া আকাশ আমার ঢেকেছে
ছাদের সাম্রাজ্যে।
পরিযায়ী
ফিরতি পথের অর্ধেক কেবল পরিচিত
কিছু পথ আড়াল
কিছু পথে হেঁটে যায় মৃত হরিণের মায়া
এত মায়া চোখ জ্বলে যায়—
পরাজিত ব্যবধানের দূরত্বে কিছু পথ
অমাবস্যার ছায়ায় নিজের দেহ—
অতিক্রম করতে চাই নি কোনো পথ
ডাহুক কিংবা ঘাসে ঢাকা ডিমের নীল বেদনিল;
হৃদয় প্রসব করে তবু তারে
দেখায় পৃথিবীর লাভা
অমায়িক মহাশূন্যের কোলাজ রিদম।
ভেসে আসে মহামায়া পুতলের সামনে
সোনালি ফ্রেমের বিকেলগুলো
পথ জানে আগের পথে
আস্ত মানুষটি মরে গেছে রোদের অভাবে।
নিত্যপুরাণ ২
তবুও আসে এমন দুর্দান্ত মোহ
হাঁটা পথ আর বিবাদ কলহ
অবাক রশ্মি বেহায়া বিকাল
দেয়ালে দেয়ালে উড়ালী হাল;
বারান্দা আরও বড় হও তুমি
সদরের চেয়ে কিছু আহামরি
সকালের চেয়ে বিকেলের মতো—
এমন খণ্ডন কালে,
মন দিয়ে দিবো সব ঘরবাড়ি
প্রতিদিন আসো প্রতিদিন আসো
দরজাবন্ধ ঘরে;
হাত খোলা থাকে চুলের ডগায়
উন্মাদ রাজা মরে—
প্রিয় বারান্দা,
তারে বলে দিও বল্লমে
এত গোপনে তারে রেখেছি
গোপনও জানেনা গোপনে।
শাড়ি
মায়ের নীল শাড়িটা
কাঁটাতারে উড়িয়ে দিয়েছে কেউ
ঠাকুমার সাদাসিধা থানের শাড়িটা
মেঘের মতো ভাসছে যেন
বন্ধুর গোলাপী শাড়িতে
দেখার আছে গল্প অনেক
কলাপাতায় মোড়ানো রঙের শাড়িটা
কাকিমার মতো ডাকে এখনো;
পাশের বাড়ির দিদির শাড়িতে
কালোর মতো জমাট দুঃখ
বৌদির শাড়ি বাহারী বরণে
বছর বছরে হয় আরও পোক্ত;
শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে আছে
শত না দেখা জীবন
আঁচল পেতে দিয়ে চলে যায়
মায়ার মতো কত কত বাঁধন-
আমার শাড়ি;
নদীর রঙের
দিয়েছিল কেউ খেয়ালে
ভেজা শাড়িটা শুকিয়ে মরছে
সর্বনাশের দেয়ালে।
