বিপ্লবী ছয় বাঙালি নারী

Reading Time: 2 minutes

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অনেকটা প্রদীপের সলতের মতো। একদিকে তারা নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের স্বামী, সন্তান ও ভাইদের। অন্যদিকে তারা কখনও ঘরের ভেতর থেকে কখনও বাইরে বেরিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নারীদের লড়াইয়ের কথা উঠলে প্রথমেই সামনে চলে আসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নাম। চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। মাস্টারদার নেতৃত্বে প্রীতিলতা ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ করেন। যেখানে স্পষ্টভাবে লেখা থাকতো ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশের অধিকার নেই’। এখানেই শেষ নয়, ধরা পড়ে প্রীতিলতা ব্রিটিশের হাতে নির্যাতিত হওয়ার থেকে সায়ানাইড খেয়ে নিজের প্রাণ ত্যাগ করা শ্রেয় মনে করেছিলেন।

কনকলতা বরুয়ার কথা অনেকে জানলেও তার নাম খুব একটা আলোচিত হয় না। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় এই নারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তিনিই ভারতের প্রথম নারী শহিদ। বিভিন্ন ব্রিটিশ অফিসে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলার উদ্দেশ্যে কনকলতা একটি ছোট দল নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই ছিল তার শেষযাত্রা। ব্রিটিশ পুলিশের গুলির নিশানা হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি।

তবে বুলেটের ভয় দমিয়ে রাখতে পারেনি সেই সময়ের সাহসী নারীদের। বীণা দাস তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলার তৎকালীন গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। স্ট্যানলি বেঁচে গেলেও ধরা পড়েন বীণা। তার ৯ বছর কারাদণ্ড হয়। এই বীণাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সীমান্তে যশোর রোডে গড়ে ওঠা একটি অস্থায়ী হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা কলকাতা ঘুরে ওষুধ সংগ্রহ করেছেন। তারপর সেই ওষুধ তিনি পৌঁছে দিতেন যশোর সীমান্তের নেতাজী ফিল্ড হাসপাতালে। সেবা করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

সরোজিনী নাইডু নামটি শুনলে দক্ষিণ ভারতীয় বলে মনে হতে পারে। বিয়ের আগে তিনি ছিলেন সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে ‘উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’। তিনিই প্রথম কংগ্রেসের বার্ষিক সভার সভাপতিত্ব করেন। ভারত স্বাধীনতা লাভের পর তিনি আগ্রার গভর্নর নিযুক্ত হন।

অরুণা আসফ আলি গান্ধীজীর নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম সারির নেত্রী এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অন্যতম মুখ। ১৯৩২ সালে তিহার জেলে বন্দি থাকাকালে তিনি জেলের ভেতরেই বন্দিদের সঠিক চিকিৎসার দাবি করে অনশন শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয় তার দাবি মেনে নিতে।

মাতঙ্গিনী হাজরাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের জীবনদানের প্রতীক মনে করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় এই গ্রামীণ নারী মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী একটি মিছিল চলার সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের কাঁথি থানার সামনে ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

এরা ছাড়াও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আরও হাজার হাজার নারীর অবদান ছিল। কিন্তু বেশিরভাগই পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে। যারা সময়ের অনেক আগে নারীদের মুক্তির বাণী, মানুষের মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন তাদের জন্য রইল শ্রদ্ধা।

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>