Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

উল্টোরথ কিংবা পথ

Reading Time: 3 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com[এক]

বান্ধব গড়ের জঙ্গল ছাপিয়ে পুলিশের সাইরেন আর হ্যান্ড মাইকের আওয়াজ! সেই সাথে মিশেছে “বিশাখা এক্সপ্রেস” মেল ট্রেনটির ঝুপঝাপ শব্দ। সারি বেঁধে পুলিশ ছুটছে। ঝোপঝাড় ভেঙ্গে চুরে একাকার।

হাঁপিয়ে উঠা পুলিশ অফিসারের কণ্ঠ থেকে ছিটকে এলো, হল্ট! দাঁড়াও বলছি গুলি করবো। কে-শুনে কার কথা। রাজ্য সরকার ঘোষনা দিয়েছে জীবিত অথবা মৃত ধরতেই হবে কম্যুনিস্ট সুশান্তকে।  মোটা দাগের একটা পুরস্কার রয়েছে। বাঘ বিখ্যাত এ জঙ্গলে আজ বাঘ ছেড়ে মানুষ ধরবার খুব তোড়জোড় চলছে।

বোধ হয় শেষ রক্ষাটা আর হলো না। একঝাঁক গুলির শব্দ। হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজের সামনে ছিটকে পড়লো সুশান্ত। রক্তের ধারাটা ক্রমাগত বইছে। গুলি এদিক দিয়ে ঢুকে ওদিক দিয়ে বেড়িয়ে গেছে।

সুশান্ত’র কণ্ঠ থেকে বেড়িয়ে আসে আহ্ পৃথিবী! বাঁচতেও দিলো না। শেষ নিঃশ্বাসটা নিতে গিয়ে মুখ ভর্তি রক্ত চলে আসে। আজ শেষ বারের মতো মনে পড়ছে রঞ্জন, মাসিমা, বাবা আর বিন্তি।

বিন্তি, ভালোবাসার এক বিশাল পাহাড় বুকে নিয়ে আজও গুনছে প্রহর।

[দুই]

হন্যে হয়ে রঞ্জন এসে বললো, সুশান্ত তুই এখানে আমি সারা কলেজ খুঁজে মরছি। তুই নাকি কমিউনিস্টদের দলে নাম লিখিয়েছিস?

– মাথা ঝাঁকিয়ে সুশান্ত বলে, হ্যাঁ তো হয়েছেটা কী?

-কদ্দিন পরপর কলেজে মারপিট করছিস ভালো ঠেকছে না। বিন্তি এসেছে।

সুশান্ত উঠে দাঁড়ালো। চৌ-দিঘির পাড়ে এসে দেখলো, বিন্তি দাঁড়িয়ে।

-সুশান্ত রাজনীতিতে কী পেয়েছো তুমি?

রাজ্যের যতো বিরক্তি ঝরছে বিন্তি’র মুখ থেকে। সুশান্ত এবার বলে উঠলো, বিন্তি তুমি কী দেখেছ, আজকাল রাজনীতি ছাড়া আধুনিক মানুষের বেঁচে থাকা কতো কঠিন। আজ যদি তুমি কিছু সৃষ্টি করতে যাবে; ভালো পরিবেশ খোঁজ, স্বার্থন্বেষী কোন দল ক্ষমতায় থেকে সে পরিবেশ হতে দেবে না।

যদি আজ তুমি কম্যুনিজম সমর্থন কর তাহলে সেই পরিবেশ তুমি পাবে। সবাই ভালো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় কেউ ভালো রাজনীতিবিদ হতে চায় না। আর যারা হয়েছে, তারা নামধারী।  দেশটাকে লুটেপুটে খাবার জন্য হয়েছে এভাবে একটা দেশ টিকে না। হাত নাড়িয়ে বিন্তি বললো বুঝলাম; কিন্তু এভাবে দেশ সেবায় গেলে বুড়ো বাপকে কে দেখবে? আর আমাকে ভালোবেসে যে গাছে উঠিয়ে রেখেছ সেটা কে নামাবে। জানি তোমার ফার্স্ট চয়েস রাজনীতি; তারপর আমি। তবুও জীবনটার কথা ভাবো একবার?

বিন্তি চলে যাবার পর সুশান্ত ভাবছে কি করবে সে। এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের সভা আবার ওদিকে বাবার অসুখ। রাজনীতির সাথে সে আষ্টপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে সে। এটাকে ছাড়া যাবে না। সব ভাবনা মাথা এলোমেলো করে দেয়।

[তিন]

রঞ্জন এসে ঝাউ গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে হাতে কলমের কালি লেগে আছে।  সুশান্ত  উসকোখুসকো চুলে আসছে এই দিকেই।

কি-রে তুই নাকি পরীক্ষার ফি দিস নি এখনও?

সময় যে শেষ! টাকা নেই রে। স্যারকে কী বলবো!

বাবাও আসেনি এক হপ্তা। টেনশন লাগছে। কমনরুমের ওপাশ থেকে বিন্তি ডাকছে, সুশান্ত টাকা জমা দাওনি কেন?

-কোত্থেকে দেবো? নেই যে!

স্কুল ব্যাগটার ভেতর থেকে একমুঠ খুচরো টাকা-পয়সা বের করে বলল এই নাও!

-হকচকিয়ে সুশান্ত বলল কোথায় পেলে?

-পুজোর জামা নেইনি তার বদলে টাকা নিয়েছিলাম; জানতাম এমনটা হবে।

-বিন্তি, ভাগ্যবিধাতা হলে নাকি?

-বিধাতা হলে তো এমন ছন্নছাড়া হতে দিতাম না তোমায়।

-আমি ছন্নছাড়া কে বলল তোমায়। তোমরা না থাকলে হয়তো কবেই শেষ হয়ে যেতাম; স্রষ্টা ঠিক উপর থেকে ত্রাণকর্তা করে আমার জন্যে তোমাদের পাঠিয়েছেন। বাঁধভাঙ্গা কান্না আসছে সুশান্ত’র। সব মানুষে সুখ পায় না।

[চার]

সুশান্ত এদিকে আয়, সকাল থেকে কিছু খাসনি বুঝি? মুখটা ওমন শুঁকনো কেন? বিন্তির মা কাছে ডেকে নিয়ে বসায়। পাঁচ বছর বয়েসি সুশান্ত’র খিদের জ্বালার বাঁধভাঙ্গা কান্নায় চোখের কাজল মুছে যায়।

-মাসিমা আজ যে সকাল ভাত রাধাই হয়নি। বাবার গায়ে যা জ্বর। ভাত রাধবে কিভাবে? কাল বিকালে খেয়েছিলাম, রাতে কিচ্ছু খাইনি।

বিন্তির মা সেই এত্তটুকুন বয়স থেকেই সুশান্তকে দেখে আসছে। আজও মনে পড়ে সুশান্তর মা মারা যাবার সেই মুহূর্তটা কী বেদনাদায়ক সুশান্তকে জন্ম দিতে গিয়েই বেচারির মৃত্যু। সবাই বলে আনমুখো জন্মের সময় মা’কে খেয়েছিস। সত্যিই কী মানুষ আনমুখো হয়? নাকি ভাগ্য বিধাতার খেল!

বিন্তির মা বলে উঠে, তোর মা মরে গেলো, তারপর থেকেই সেই যে একটা কী অসুখ বাঁধিয়েছে তোর বাপ। ছাড়বার জো নেই। ঘাড়ে শনি চেপেছে। বছরের শতভাগ সময়ই সুশান্ত বিন্তিদের বাড়িতে বাবা যে কবে পটল তুলবে বলা যায় না।    

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>