তিতকুটে প্রেমের অকবিতা
এরপর ম্যালা দিন গেছে চলে,
তাকে দেখিনি কভু দাঁড়াতে বাসস্টপেজে
সবুজ সে ছাতা আর পড়েনি অমন সুশী হাতে।
নীল পেড়ে শাড়ি পড়ে রোজ আসতো এখানে।
আমিও দাঁড়াতাম ফুল হাতা শার্ট গুটিয়ে-
চোরা চোখে দেখতাম।
ভালোলাগার বুদ-বুদ রাস্তায় উড়ছে যেন সর্ষে
ফুলের ক্ষেতে আমি সবুজ মেঘ।
ক’বো, ক’বো বলে অনেকদিন কথা বলা হয়ে উঠেনি;
শুধু চোখা-চোখি।
ফ্যাল-ফ্যাল করে তার হেসে ফেলা;
মনে হয় যেন কত কিছু বুঝে নিয়েছে।
সেবারই প্রথম বুঝেছিলাম প্রেম বুঝে নিতে বাদামের খোসার মতো করে,
কিংবা এলাচ দানার মতো সুগন্ধি ভরে
কিংবা নিমের মতো তিতকুটেও হয় প্রেম
সবটুকুই অনুভূতি।
আমার বাঁশি রক্তও তখন টগবগ!
চোখে দেখার আনন্দ ভাষায় প্রকাশের মতো নয়-
যাচ্ছিল দিন।
একদিন ছলাৎ করে সে বললো-
দেখুন তো ক’টা বাজে?
বিশাল সরোবর মন আমার, ঢিল পড়লো
তারপর শুধু ঢেউ আর ঢেউ-
ঘড়ির কাটা তখন দশের ঘরে। বাস আসি আসি করছে।
বেবুঝের মতো শুধালাম বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন কি?
মাথা নেড়ে সে বললে, হ্যাঁ
এরপর-
আসুন এককাপ চা হয়ে যাক? পাশেই বিপিন পার্ক!
ঠোঁট চুঁইয়ে চা যখন নামছে। ততক্ষণে পরিচয় পর্ব শেষ। জানলাম ফাইনাল ইয়ার চলছে তার,
আমি যে সামান্য চাকুরীজীবি ব্যাচেলার পুরুষ বলতে ভুলিনি।
এরপর-
গেল দিন কিছু
ব্রহ্মপুত্রের পাড় ধরে চারখান পা অনেক পথ দিল পাড়ি। সাহস করে গিলে নিলাম প্রেম।
ভারি মিষ্টি চোখে দেখালো, সাহস কাকে বলে। তখনো বুঝিনি- সব আনন্দই দীর্ঘ হয় না।
নিরানন্দ পাথরভার কারও কারও জন্যই হয়।
এভাবেই একদিন আমার ভাগ্যের রথ হঠাৎ গেলো থেমে।
জীবনের এক দুর্যোগ স্টেশনে সে পড়লো নেমে।
অনিলা
আজকাল রেল লাইন দেখলেই মনে পড়ে যায় তোমার কথা।
তুমি হাত ধরে হাঁটতে চাইতে।
এ যেন নদীর এপাড় আর ওপাড়ে দু’জন রয়েছি; মাঝখানে সমান্তরাল।
তোমার মনে পড়ে, এক মুহূর্ত অবসর মেলাতে, কত রোদ ঝকঝক সকালকে ঝেড়ে ফেলে আমরা দ্রুত দুপুরকে চাইতাম; একটু দুপুর আসুক!
পড়ার তাড়া থাকতো বলে, কত দুপুর আমাদের অপেক্ষায়-অপেক্ষায় যে শেষে বিকেল হয়েছিল তার ইয়াত্তা নেই।
সেই মেঠোপথ আর দুপাশের রেল লাইন ধরে আমরা সবাই বহুদূর চলে যেতাম।
রোজ ভাবতাম এই পথের শেষ প্রান্তে যাবো; কিন্তু কোন দিন যাওয়া হয়ে উঠে নি!
আমরা মাঝ পথেই থেমে গেছি ব্যাটারি হীন ঘড়ির মতো।
অনিলা তোমার মনে আছে?
যখন তোমার বয়স দশের ঘর পাড় করেনি, আমি তের পার করেছি;
সেই বয়সে একদিন তুমি বলেছিলে,
পকেটে অনেক টাকা যেদিন হবে সেদিন রেলপথের শেষপ্রান্তে যাবো আমরা? -আমার সঙ্গে যাবে তুমি?
সেদিন কিছু বলা হয়নি আমার; আমি তোমার মার্বেল চোখে তাকিয়ে ছিলাম
যেখানে তোমার ইচ্ছেরা ছোটাছুটি করছিলো;
আমি তোমার ইচ্ছের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছিলাম।
তোমাকে সেদিন বলতে পারিনি, সময় বড় নিষ্ঠুর! ক্রমশই বদলায়;
সময় অনেকটা আইসক্রিমের মতো হাওয়া লাগলেই ফুরোতে শুরু করে। আগের অবস্থায় তাকে আর নেয়া যায় না।
আজকাল লালরঙা মরচে পড়া ট্রেনগুলো অবহেলায় শুয়ে থাকে,
ওরা জানেনা আর কোনদিন ছুটতে পারবে কিনা আগের মতো করে।
তোমার স্বপ্নগুলোও অবহেলায় অবসরে চলে গেছে;
হয়তো ঠিক বলতে পারো না আবার কোনদিন তাতে প্রাণ ফিরবে কি না!
চোখ পেতে দেখা হলোনা তোমার লেখা শেষ চিঠি
এতটা বছর পেরিয়ে গেলো তবুও খোলা হয়নি তোমার লেখা শেষ চিঠি।
সেই মলিন খাম।
সেই হাতের লেখা।
সেই আবেগ।
সেইসব পুরোনা দিন আর সেই সব আমি-তুমি মার্কা সব আদিখ্যেতা।
অজানা এক কারণ।
তিরস্কার।
লোক-লজ্জা।
কিংবা অনেক ব্যাথায় জর্জরিত হবার ভয়ে,
খোলা হয়ে উঠেনি তোমার শেষ চিঠি।
অনেক কথার ভীড়ে, অনেক প্রিয় মানুষের ভীড়ে তুমি কখনও চিরচেনা হয়ে উঠলে না।
তার’চে ডায়েরির পাতায়, কবিতার খাতায়, উন্মাদ এ মাথায়,
তুমি শুধু চকমকি স্মৃতি হয়ে রইলে।
সেই অবাধ্য কথা।
সেই অভিমান।
সেই চোখের জল।
কিংবা সেই সব না বলা কথার কথায়, হাজার তারার আকাশ হয়েও
তুমি অনুজ্জ্বল অচেনা তারা হয়ে রইলে।
তুমি শুধু চকমকি স্মৃতি হয়ে রইলে।
কতটা বছর পেরিয়ে গেল তবুও একটিবারের জন্যেও দেখা হলোনা
তোমার ও চোখ।
সেই পিছু ফেরা।
সেই হাত নাড়া।
সেই অদৃশ্য স্পর্শ।
কিংবা সেই সব চোখাচোখি, তার সাথে আরও কত কি!
সব কিছুর ভীড়ে তুমি শুধু চকমকি স্মৃতি হয়ে রইলে।
অনেক ব্যাথায় জর্জরিত হবার ভয়ে,
চোখ পেতে দেখা হলোনা তোমার লেখা শেষ চিঠি।
দ্বন্দ্ব
অর্ধনগ্ন প্রচ্ছদ দেখিয়ে আর্টিস্ট বললেন,
এটা শিল্প!
নগ্নতা ও একটা শিল্প! ক’জন পারে এমন?
ক’জন মকবুল ফিদা, পিকাসো বা ভিঞ্চি হতে পেরেছে?
আমি মলাটে মলাটে শিল্প খুঁজি!
লেখাগুলো যতটা না শৈল্পিক তারচে’ মলাট বেশি।
বেখাপ্পা শিরোনাম শুনে চমকে গেলে টেবিলের চা উঠবে ছলকে!
তা আর হয় না।
শিরোনাম গুলোও শৈল্পিক-
কবি বলেছেন।
কাব্যের গরু ঘাস খেতে যায় আকাশে-
জানতে চাইলাম কিভাবে সম্ভব?
কবি বললেন- এটা রূপক!
রূপকতা কবিতার মুন্সিয়ানা; ক’জন পারে এমন?
ক’জন বিষ্ণু দে, সমরেশ, জীবনানন্দ হতে পেরেছে?
আমি কবিতার স্তবকে স্তবকে রূপক খুঁজি
বারংবার ব্যার্থ হই।
কবি বলেছেন-
উপযুক্ত; পরিপক্ক বা কবিতার উপযোগী পাঠক হাতে গোনা।
কবিগন সৃষ্টিতে আনন্দিত, শিল্পীর সৃষ্টিতে বিস্ময়!
পাঠক শ্রোতা তো নচ্ছার!
জীবন নগরের সুপার ফ্লপ একজন…
দহন সম সরলবৃক্ষ। ছন্দপতন পছন্দনীয়। অনুভূতির জানান দিতেই শব্দকল্পনার জন্ম দেই। প্রথাগত সাহিত্য বা শিল্পের জন্য কখনো সৃষ্টি করার প্রয়াস সঞ্চারিত হয় না বলেই নিরন্ন নিকোলাস হয়ে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। জন্মের পর থেকেই পড়তে ভালোবাসি সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত বা জনপ্রিয় মানুষের সঙ্গ থেকে অরণ্যে থাকতে পছন্দ করি।একদিন বিরাট কিছু হবার বাসনা নেই বলে লোভ ছুঁতে পারেনি, যে কারণে এখনো মানুষ হয়ে আছি, কবি কিংবা লেখক হয়ে নয়।
____________________________________
যা বললাম, এর’চে অধিক জানতে চেয়ো না।
না জেনেই মসৃণ পথ সৃষ্টি হয় আর জানলেই বিরক্তি বাড়ে।