somokalin-afgan-narider-kobita

অনুবাদ কবিতা: আফগানিস্তানের নারী কবির কবিতা

Reading Time: 3 minutes

সম্প্রতি আফগানিস্তানে কায়েম হয়েছে তালেবানি শাসন। বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করা এই ঘটনায় আফগানিস্তান আবারও এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো আফগান নারীদের রচিত কিছু কবিতা


শিরিন জাহরা

আফগান মেয়ে

আমি বসন্তের মতো।

আমার চুল ভরা ফুল,

আমার হৃদয় রোদে উজ্জ্বল,

আমার চোখ পরিষ্কার,

আমার পা শক্তিতে পূর্ণ, আমার হাত শুভেচ্ছায় ভরা,

আমি একজন আফগান মেয়ে।




শ. রসৌলি

ভাল দিন

আমি স্বপ্নের জগতের মেয়ে,

জীবনের বিশুদ্ধ অনুভূতিতে উজ্জ্বল।

আমি শব্দের ব্যাগওয়ালা মেয়ে

যার প্রতিটি সেকেন্ড বিশৃঙ্খলায় ছেয়ে যায়।

আমি একটি মেয়ে। আমাকে ভালো দিনগুলোর  কথা ভাবতে দিন।

আমি একটি মেয়ে। আমাকে শ্বাস নিতে দিন।




নেগিন বাদাখশ

বেশি নয়, কম নয়, আমরা সমতা চাই

উঁচু পাদদেশে আমাকে মূর্তি বানাবেন না

আমার সুগন্ধী চুলে অবরোধ আরোপ করবেন না।

আমাকে খাঁচায় রাখবেন না, আমার জীবনকে দুর্বিষহ করবেন না

এবং খাঁচার কোণে মিষ্টি রাখবেন না




শাবানা স্তানেকজাই

সাদা পোশাক

সাদা পোশাক ছিল একটি আরোপিত উপহার।

কঠিন এবং বেদনাদায়ক

না এটা আমার শরীরের সাথে সংযুক্ত হয়

না এটা আমার আলিঙ্গন ছেড়ে যায়।

পোশাক — একটি কফিন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে এটা আমার বাবার একটি অবাঞ্ছিত উপহার।

হায়, রীতিনীতি আমার নগ্ন ক্ষত সহ্য করে না।

আমি কষ্টে আছি

একদিনের জন্য

এটি আমার শরীরকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে।




 

মারওয়া সুবহান

আফগানিস্তানের স্কুল মেয়েদের জন্য

গত চৌদ্দ বছরে, শত শত আফগান মেয়েদের স্কুলে যাওয়াকে টার্গেট করা হয়েছে।

তাদের বিষ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তাদের হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের স্কুল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তাদের অপহরণ করা হয়েছে বা হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোক তাদের বাড়ি থেকে ভাঙা ভবন, তাঁবু এবং মাঠের পথ দিয়ে সাহস করে চলেছে যা তারা “স্কুল” হিসাবে পরিচিত করেছে।

এই কবিতাটি তাদের জন্য।

তারা বিষ পাঠায়, এবং কখনও কখনও ছুরি।

তারা আগুন পাঠায়, এবং কখনও কখনও জাহান্নাম।

আমার স্বদেশের মেয়েদের জন্য।

তারা বসন্ত নিয়ে আসে, কিন্তু তা ছাই দিয়ে তৈরি।

 




 

শাকিলা আজিজজাদা

অভিসার

হয়ে তো গেল অনেক বছর

তারপর ঝরেছে চেনারের পত্রালি ঢের

বলতে পারি না ‘শুভকামনা’ দেখা হবে ফের

যেহেতু আমরা ক্রমাগত হচ্ছি প্রবীণ

আমাদের দেখা হবে নিশ্চিত

কেবলমাত্র রোজ কেয়ামতের দিন।

আমি জানি তোমার উপস্থিতিতে

প্রফুল্ল হবে আমার তনুমন

তুমি বলতে রেশমের কৃষ্ণাভ টাইটস দুটি

আমার দু-পায়ে দেখাত সুদর্শন।

যদি একবার আমি দেখতে পেতাম

তোমার চাহনি শরমে শিহরিত

কম্পমান চোখজোড়া আমার

ফিতার ফুল ছুঁয়ে হচ্ছে উদ্দীপ্ত।

ধরবে বাজি—আমি বলি নদী

নাকি তুমি চাও মাছ

বয়ে যায় আমাদের প্রেষণার জলধি।

তোমার সাথে দেখা হবে ফের প্রস্রবণের পাশে

তোমার হাতে থাকবে একটি গোলাপ সংগোপনে

স্বপ্ন আমার ভাঙচুর হবে মৌমাছির গুঞ্জরণে

আর প্রত্যাশায় আমি হব থর থর আনত

পুষ্পের ভারে ডালিমের ডালটির মতো।
 




 

নাদিয়া আনজুমন

আফগান দুহিতা

কীসের কবিতা?

কী আমি পাঠ করব বলো —

ইচ্ছে হয় না মুখ খুলতে,

ঘৃণা করেছে সরবে সমাজ

সমকাল দেবে না আমাকে

.                         মাথা তুলতে।

কীভাবে করব আমি প্রতিবাদ?

ঠোঁটে ছোঁয়াতে চাই যে মধু

বিষ তা — মুখে লাগে বিস্বাদ।

যারা রুদ্ধ করেছে আমার বাকস্ফূর্তি

কীভাবে জানাই ধিক্কার?

বাস করছি এমন এক দুনিয়ায়

শুভার্থীও নেই কোনো — তারিফ করার।

আমি কাঁদি কিংবা হাসি

যায় আসে না কারো কিছু,

যদি-বা হয় আমার মরণ

বন্ধ করে দেয়াই সমুচিত

বিশেষ বাচনভঙ্গি

.          আমার কবিতা পাঠের ধরন।

বন্দি আমি আমারই অনুশোচনার

রুদ্ধ হয়েছে সম্ভাবনার সকল দুয়ার,

আমি জানি-বসন্ত, আমার আনন্দের ঋতু

.                                 হয়েছে অতিক্রান্ত

ডানা কাটা … কীই-বা করতে পারি

.                                  আমি পরিশ্রান্ত।

কিন্তু যাইনি ভুলে হৃদয়ের কথা

বিন্দু বিন্দু করে আমার নিজস্ব সিন্ধুতে

.                      জমা হচ্ছে সংগীতের প্রবাল

আমার সমুদ্রতলে বেজে যাচ্ছে

.                    গহন অতলে সুর হামেহাল।

আমারও আসবে সুদিন

ভাঙব খাঁচা-দিলখোলা এক প্রান্তরে

গাইব আমি গান

.              সুর জ্বলে যায় অন্তরে।

সহিষ্ণু বৃক্ষ এক —

আমার পত্রালিতে ঝলমল করে

.                            সূর্যের সবুজ দর্পণ,

অবরুদ্ধ হব —

.                নিষ্পেষিত হবে আমার অন্তর

তবু করব না আমি আত্মসমর্পণ।

আফগানদুহিতা আমি

শিকড় আমার অনেক গভীরে প্রোথিত

ক্রমাগত ক্রন্দনই আমার নসিব

কেঁদে যাব নিয়ত।

 




 

শাকিলা আজিজ্জাদা

একটি পালক
আমার স্বপ্ন ঠিক যেভাবে
তোমার পায়ের শব্দ শোনে, সেই যে যখন তুমি
পা টিপে টিপে ভেতরে আসো
তুমি বেড়ালছানার মত ঢুকে যাও
চাদরের নিচে
তোমার চোখ আমায় নিতে থাকে
জেগে অথবা ঘুমিয়ে
তুমি আমার ঘুমের রেশমগুলো কোলে তুলে নাও
আর সেই মুহূর্তে যখন তোমার হাতদুটোর
আমার কাঁধে জড়িয়ে যাওয়ার কথা
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো
বিছানায়
আর আধোঘুমে আধো জাগরণে
যখন আমার স্বপ্নরা
প্রায় শেষ
আমি তুমিময় হতে থাকি
পূর্ণ হতে থাকি আবার

 



One thought on “অনুবাদ কবিতা: আফগানিস্তানের নারী কবির কবিতা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>