Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,sonali r golpo

অণুগল্প: মনু সংহিতা । সোনালি

Reading Time: 2 minutes

হরসুন্দরী দরজার দিকে তাকিয়েই বুঝলেন, এরা আটঘাট বেঁধেই এসেছে। ছেলের বয়েস বিশ পেরিয়েছে। বিয়ে দিয়েছেন পাল্টি ঘর দেখে বহুদিন। ষেটের কোলে নাতি নাতনিদের মুখ দেখে গিনি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন ফি বার। বৌমা এর মধ্যে নেই। তিনি জানেন। গতকাল অবধি হরসুন্দরী এই সংসারের গিন্নি ছিলেন। কর্তার অর্থের জোরে এ সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাচ্ছল্য দুইই ছিল। তাঁর একমাত্র সহধর্মিণী হরসুন্দরীর কথাতেই এ বাড়ির লোকজন চলেছে এত কাল।

গত রাতে কর্তা দেহ রেখেছে। বয়েস ষাট পেরিয়েছে অনেক দিন,  ভরা সংসার, এ যাওয়া খুব অকস্মাৎ কিছুও নয়। গত এক সপ্তাহ ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন সান্যাল মশয়। গিন্নি দুঃখ পেলেও খুব ভেঙে পড়েননি তাই। কিন্তু এবার হরসুন্দরী দুঃখ পেলেন।

ছেলে তাঁর সম্পত্তি আর প্রতিপত্তি দুইই একসাথে দখল নেবার ইচ্ছায় আছে। বাপ অসুস্থ হওয়া মাত্রই, সে কোথায় দলিল দস্তাবেজ, সিন্দুকের চাবি দাও, এ সব বলতে শুরু করেছিল। হরসুন্দরী শক্ত মানুষ। কড়া কথায় থামিয়ে দিয়েছিলেন তাকে।বলেছিলেন, বাপের সেবাযত্ন করো। এখন এইসব ভাবতে হবে না।

নেশায় আচ্ছন্ন চোখ তুলে একদৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে চলে গেছে একমাত্র সন্তান। বাপ চোখ বুজতেই সে এসে হুংকার দিয়ে গেছে অন্দরমহলে। এখন যে সে বাড়ির কর্তা এবং তার কথাই এবাড়িতে শেষ কথা, সেটা বাড়ির ভেতর নানা ভাবে জানিয়ে গেছে সে বারে বারে। ভোর রাতে তার ছোটপিসি, হরসুন্দরীর ষোলো বছরের ছোট ননদ এসে জানিয়েছিল,   বৌদি চাবি ছোড়ানি সব এবার দখল ছাড়ো। জানো তো, মেয়েমানুষ   বাল্যে পিতের বশ, মাঝখানে সোয়ামির হাতের পুতুল, আর শেষে ছেলের হাত তোলা।


আরো পড়ুন: সোনালির গল্প জগন্নাথ : আমার অনিয়মের ঈশ্বর

হরসুন্দরী ননদকে হাতে করে মানুষ করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। তার বিদ্যেবুদ্ধির বহর তিনি জানেন। এত মনুর বিধান আওড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। ভাইপো শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠিয়েছে নিশ্চিত। আর ভাইপো এখন সম্পত্তির মালিক, কাজেই পিসি তাকে হাতে রাখতে ব্যস্ত। কড়া ধমক দিয়ে ননদকে ভাগিয়ে দিয়ে, শেষকৃত্যের সব ব্যবস্থা করছিলেন হরসুন্দরী।

পড়াশোনা না করা  থাকলেও, স্বাভাবিক সাংসারিক বোধ আর ব্যক্তিত্বের জোরেই এত বছর সংসারের ওঠানামা সামলে কচি বউ থেকে পাকা গিন্নি হয়েছেন মহিলা। সেই ভরসাতেই কাজ করে চলেছিলেন। ভাবছিলেন সামলে নেয়া যাবে সব।

এখন এত মেয়েবউদের নিজের দরজায় নতুন শাড়ি,  সিঁদুর আলতার পাতা, কুলোডালা হাতে নিয়ে ভিড় করে আসতে দেখে বুঝলেন, একমাত্র সন্তানটি একটি স্বার্থপর পুরুষ মাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মনুষ্যত্ব চাপা পড়ে গেছে মনু সংহিতার নীচে।

মেয়েদের পিছনে লেঠেলদের ও দেখা যাচ্ছে। ছেলে প্রস্তুত হয়েই এদের পাঠিয়েছে। সে অবিলম্বে  সম্পত্তির কর্তা  হয়ে যাবে বিনা বাধায়। হরসুন্দরী চান বা না চান, এরা স্বামীর সাথে তাঁকে এক চিতায় তুলে জ্বালিয়ে দেবেই আজ। ছেলে ধন্য ধন্য করে জানাবে সমাজপতি আর জ্ঞাতিগুষ্টিকে, তার মা জননী, পুণ্যবতী,   সতী হয়েছেন।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>