| 19 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

সৌরভ শইকীয়ার একগুচ্ছ অসমিয়া কবিতার বাংলা অনুবাদ 

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

এক সময় অসমের নাম ‘কামরূপ’ ছিল। আরও প্রচীনকালে কামরূপ ছিল ‘প্রাগজ্যোতিষ’ নামে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্য দ্বারা অসম বেষ্টিত এবং অসম সহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অসমের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য অসম বিখ্যাত। অসমিয়াদের প্রধান উৎসব হলো বিহু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে। বিহু তিনটি- ব’হাগ (রঙালি) বিহু, মাঘ (ভোগালী) বিহু আর কাতি (কঙালি) বিহু। অসমীয়া সাহিত্য অন্য সমস্ত ভাষার মতো অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্য অন্য বিষয়ক গ্রন্থে পূর্ণ। অসমীয়া সাহিত্য ভাষাটির বর্তমানের সাহিত্য সম্ভার ছাড়াও এর ক্রমবিবর্তনের সময়ে সৃষ্টি হওয়া পুরানো অসংখ্য সাহিত্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ, যে ধারার আরম্ভ ৯ম-১০ম শতকের চর্যাপদ থেকে আরম্ভ হয়েছিল বলে ধরা হয়। অজিৎ বরুয়া, অনন্ত কন্দলী,অনিরুদ্ধ কায়স্থ, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, আনন্দরাম বরুয়া , ইমরান শাহ, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, ভোলানাথ দাস, মফিজুদ্দিন আহমদ হাজারিকা, মহেন্দ্র বরা, মাধবদেব, রবীন্দ্র সরকার, রমাকান্ত চৌধুরী, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, স্নেহ দেবী, হরিবর বিপ্র, হীরেন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি আছেন। এই সময়ে অসমীয়াতে কি রকম কবিতা লেখা হচ্ছে কারা লিখছেন, এই সময়ের কবি সৌরভ শইকীয়া কবিতা নিয়েই আজকের আযোজন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক বাসুদেব দাস।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Sourav Saikiaসৌরভ শইকীয়া-জন্ম ১৯৬৯। সমসাময়িক আধুনিক অসমিয়া কাব্য সাহিত্যের একটি সমাদৃত নাম। ‘প্রান্তিক’এর পাতায় প্রথম আত্মপ্রকাশ। আত্মপ্রকাশ মাত্র বৃহত্তর পাঠক সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ইংরেজি থেকে শুরু করে সংবিধান স্বীকৃত প্রায় সব ভারতীয় ভাষায় কবিতা অনূদিত হয়েছে। প্রকাশিত কাব্য সংকলন নয়টি।

জীবনে বেশি প্রভাব মায়ের। পিতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মাচারী। রাষ্ট্রীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অনেক কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। সার্ক সাহিত্য উৎসবে আমন্ত্রিত। ২০১০ সনে ভারত ভবন,ভূপালে অনুষ্ঠিত ‘কবি ভারতী’অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। সম্প্রতি গোয়ায় অনুষ্ঠিত North East and Western Poetry Festival এ যোগদান করেন।Penguin India-র সংকলন ‘The Dancing Earth’এ কবিতা সন্নিবিষ্ট। তাছাড়া ‘Indian Literature’ সমকালীন ভারতীয়সাহিত্য, the SARAC journal ‘Beyond Borders’ এবংবিভিন্ন English Literary Journal এ প্রকাশিত হয়েছে একগুচ্ছ রুচিপূর্ণ মননশীল কবিতা।


 
কাকুর গাড়ি
 
কাকু গাড়ি চালাচ্ছে।
হাঁটু গেড়ে মেঝেতে ছেঁচড়ে ভর দুপুরবেলা কাকু গাড়ি চালাচ্ছে।
ও কাকু কেউ কি বাড়িতে নেই?দিদিমা কোথায় গিয়েছে
কে বলছি বলতো,এখান থেকে দেখছি
তোমার একটুখানি নম্র আঙ্গুলে তৈরি সাদা গাড়িটা
ছোট কাকুর সিগারেটের পেকেট দিয়ে নাকি
কাকু কাকু কাকু…
 
কাকুর সুন্দর গাড়ি দেখে নিপুর হিংসা,যা প্রায়ই নেবার জন্য সে যত্ন করে
কিন্তু…ভুউউউ ভোমরার ভুন ভুন হর্ন বাজিয়ে মিংমাঙে যাবে এই কাকুর গাড়ি
‘ঐয়াও রূপালী’
আমার দীর্ঘ পদুলিতে এবং দীর্ঘ উলুধ্বনি দিয়ে এই আমার কাকুর গাড়ি
কাকুর উকুলি মুকুলি,কুকুলি গাড়ি আদৌ দৌ ফুলের পাপড়ি
কাকুর কী কী গাড়ি একটা ছেড়ে আরেকটা খেলে
কাকুর গাড়ি সোনা পিশে সরষের
হেই হেই খালি গাড়ি ,আসুন আসুন ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে উঠুন
এটা কাঠাল পাতার সেতু
ঐগুলি সন্ধ্যের হিঙ্গুল বর্ণের অতিথি দেখ পাহাড়ের ঘারে এসে বসে
 
গোগামুখ গোগামুখ
কাকুর গাড়ি বাঁক নেয় সাপেখাঁতী সেতুতে
ঘটাং ঘটাং ঘন্টাপরা স্টপেজে হেঁচে কুল কিনারা পায় না কাকুর গাড়ি শিঙিয়া বাটমারী
রাস্তা বন্ধ।দুর্বল সেতু।গাড়ি ডান দিকে ঘোরাবে
তিন নং উপপথ লাওকোঠ দিয়ে নেমে যায় কাকুর গাড়ি
যার ঠোঁটই ইঞ্জিন দুই দাঁতের ফাঁক দিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না
সেতুর নিচের জলেও আরও একটি গাড়ি কাকুর গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে
কাকু মুখ ভ্যাঙচায়
এই এই সাইড সাইড। তাজিক গ্রামে যাব ,নিজের মালের প্রতি দৃষ্টি রাখবেন,হাত-মাথা
বাইরে বের করবেন না,
আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়
কামানের পেট্রোল পাম্পে গর্জন মুখর চল্লিশ কাকুর গাড়ি
তেল শেষ।ফুল ট্যাঙ্কি ভরাবে…টাকু টাকু টাকু
দীর্ঘ গলা খাঁকারি মেরে বুড়ো মানুষের গতিতে কাকুর গাড়ি
পেটে মানুষ ফুটবোর্ডে কেবিনে,এমনকি রেলিঙেও ঝুলে হলৌ বাঁদর হয়ে
উড়ে যাবে উড়ে যাবে কাকুর গাড়ি মামার বাড়ির সামনে কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাবে
দুই দেশোয়ালির খৈনির গরম ভাপে নেমে যাই নেমে যাই যামিনী এই যামিনী
শুক্রবারের হাটের নেপালি মেয়ে,মুরগির খাঁচা রজনীগন্ধা ঘাম এবং সাইকেলের
স্রোত ভেদ করে করে
কাকুর গাড়ি যায় উড়ে সেলিমপুর সেলিমপুর
ছাগলীর দল এবং পায়ে হাঁটা মাঠ অতিক্রম করে করে টেলিফোনের খুঁটি পেছনে দৌড়ায়
চাবাগান এবং টিনের চালাগুলির সামান্তরাল হয়ে সোণারুর নিচে নিচে
ক্রমশ পোষ না মানা কাকুর গাড়ি চলে যায়
কাকুর গাড়ি উড়ে যায়
কাকুর গাড়ি শোঁ শোঁ শব্দ করে পেখম ধরে
এক ঝাঁক তুফানের পাখি হয়ে কাকুর গাড়ি
কাকুর গাড়ি তুফান
কাকুর গাড়ি
কাকু
 
এভাবেই ছয় চাকার গাড়ি সূর্যাস্তের দিকে চলে যায়
এভাবেই চলে যায় এভাবেই
ভরা চৈত্রে ঘেমে-নেয়ে কাকুর গাড়ি
কাকুর গাড়ি উঠল সেতুতে,গাড়ি সেতুর মাঝখানে পৌছেছে
তখনই –বমম।
ছয় টুকরো।ছয় টুকরো।হয়ে গেল ছয় টুকরো
মানুষ উড়ে গেল জ্বলে গেল ভয়াবহ বিস্ফোরণ
থানা দৌড়াচ্ছে কনভয় দৌড়াচ্ছে
দৌড়াচ্ছে গ্রাম,মাঠ গাছ-পালা নলবন আর বাঁশবন
চাঙ থেকে নেমে একজন লাঠি হাতে বৃদ্ধাও।
 
মিংমাং যেতে পারল না কাকুর গাড়ি
উঁচু মাটিতে বিশ্রাম নেয় না কাকুর গাড়ি
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল তার মামার বাড়ি যাব দুই হাতে খাব
কাকু কাকু কাকু
ফোঁপাচ্ছ নাকি,আমি কে বলছি বলতো
আর এই স্বপ্নেরও শেষ।
 
 
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
 
 
 
তোমার জীবন্ত চোখজোড়া
 
 
নিঁখুত আইলাইনারে নীল রেখা টানা
তুমি?
অল্প যেন লজ্জ্বা করে
চোখ নীচে নামালে…কেঁপে গেল
আমি পড়লাম তোমার চোখে রাশি রাশি রক্তিম হাসি
আমি ছিঁড়লাম তোমার চোখে হাজার হাজার তারার পাপড়ি
 
তুমি??
তোমার নীলাভ প্রায় কুঞ্চিত কেশদামের নীচে
এটা কোন সরোবর
গান গাইছে তোমার চোখজোড়া
পাতা খসাচ্ছে তোমার চোখজোড়া
কিন্তু,কী সুন্দর সেই চাহনির কালো তারা
চোখের পাতা খুলে গেল নিশ্চয়
রূপালি রেখার ক্ষীণ দ্বিতীয়া
তোমার চোখদুটি
তোমার চোখদুটি…হঠাৎ,
ইস।
 
এইমাত্র আমি দেখলাম –
কামাখ্যা পাহাড়ের বাঁকা গুলঞ্চের নীচে
অবাক হয়ে তুমি
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছ।
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
কাঁচের চুড়ির কাহিনি চুড়িওয়ালার সাজে যখন মহাদেব
 
এক এক করে সবার চূড়ি পরা হওয়ার পরে
রুনু-ঝুনু করে স্বপ্নের মতো সেদিন সবার শেষে এল গৌরী।
 
অপূর্ব নক্সা কাটা চমৎকার চুড়ির বাক্সে
চুড়িওয়ালা গৌরীর সামনে তুলে ধরল
আর গৌরীও হাতে ঢুকিয়ে ঢূকিয়ে দেখে
সেসব পরীক্ষা করতে লাগল
কিন্তু,ভীষণ অথন্তর ঘটল
হাতে কোনো জোড়াই ঢুকল না গৌরীর
যে জোড়াই পরতে চায় মট করে ভেঙ্গে যায়
দক্ষ নারীরা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তখন গাইতে লাগল-
ফুলের মতো কোমল গৌরী তুলোর মতো হাত
ও চুড়িওয়ালা ও চুড়িওয়ালা ভাঙ্গা চুড়ির বেহাল হাট
সঙ্গে সঙ্গে চুড়িওলা উত্তর দেয়–
আমার চুড়ি নয় ঠুনকো ভালো মানুষের ঝি
সবার হাতে একই পরালাম তখন ভাঙল কি?
চুড়ি ভাঙ্গার কারণ জানার জন্য মেয়েরা তখন
উবুড় হয়ে পড়ল
চুড়িওয়ালা বলতে লাগল-গৌরী নিশ্চয় তার স্বামীর মনে
দুঃখ দিয়েছে। সেইজন্যই এই দশা
হে ভগবান!কী হবে এখন
গৌরী বলুক,আজই স্বামীগৃহে ফিরে যাবে
হাতে নিজে নিজেই এসে চুড়ি ঢুকবে।
 
অতপর গৌরী চুড়িওয়ালাকে চিনতে পারল
তিন সত্যি করে বলল –যাব,যাব,যাব
‘পুরুষের কল্যাণের জন্য
সমস্ত সধবা স্ত্রীকে হাতে স্বর্ণ আভরণ পরিধান করতেই হয়’
এই বলে পলাশ গাছের কাছে
চুড়িওয়ালা হঠাৎ বাতাসে অদৃশ্য হয়ে গেল
চুড়ি পরার ইচ্ছা পূর্ণ হল পার্বতীর
দেশে চুড়ি বালার প্রচলন হল।
কীভাবে হল?
সে গল্প তোমাকে পরে বলব।
 
 

আরো পড়ুন: অসমিয়া কবি অর্চনা পূজারী’র অনুবাদ কবিতা

 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
 
সৌরভের মৃত্যু সংবাদ
 
বসে থাকার জন্য মৃত্যু ঘটেছে
একটা ফুলে বসে দুলতে থাকার জন্য সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
ভোমরা উড়িয়ে দেওয়ার জন্য রামধেনু চুরি করার জন্য
ইঞ্চি ইঞ্চি আকাশের যুদ্ধে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
প্রশ্ন করার ফলে,অন্ধকারের উচ্চতায়
মর্মরিত পাতায় কেঁপে কেঁপে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
সৌরভ মরেছে
একা উজানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য
মিট মিট জোনাকি পোকার সঙ্গে বাঁশবনে ঘর তৈরি করে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
 
একশো শতাংশ মৃত্যু।
ডাস্টবিনে পচে মরল বলে নিশ্চিত হয়েছে জন্তুগুলি
দুই মোষের বাজিতে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
উত্তাল নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পারে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
অজানা আততায়ীর হাতে সৌরভ নিহত হয়েছে
 
একটুকরো উজ্জ্বল নির্জনতায় সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
স্বর্ণতরুর হলদে সরবত খেয়ে সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
জ্যোৎস্নার বন্যায় সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
চুম্বনে বিষ চেটে
কোকিলকে শিমুল বলে ভুল করে জালে পড়েছে
একটি পাহাড়ি পাথর একটি ছোট গ্রামের মায়ায় সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে
সৌরভ মরেছে
সৌরভ মরেছে
রূপোলি,পাগল ঢলের মতো নেচে নেচে আসে এই খবর
কিসে হেনেছে ছুরি বাতাস হাসছে বাতাস হাসছে
মাইলের পরে মাইল অনন্তে সৌরভ হারিয়ে গেছে
ফুল নয়,তুফান লিখেছে
সত্যিই সৌরভের মৃত্যু ঘটেছে।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
মুক্ত নক্ষত্র
 
কবিতা লেখার চেষ্টা না করাই ভালো।
 
তিনি বলেছেন-
কবি হওয়ার বাসনা না থাকা
ভালো।অক্ষরের নামে একটা অক্ষর সাজানোর জন্য
কাগজের নামে একটুকরো কাগজ ছেঁড়ার জন্য
শূন্যের মতো শূন্য এঁকে এঁকে
মূল্যবান সময় নষ্ট না করাই ভালো
জ্বলন্ত গোধূলির মোমটা নিভিয়ে দেবার জন্য
কষ্ট না করাই ভালো
 
বলছেন,আর বলেই যাচ্ছেন তিনি –
গাছ থেকে গাছে বাড়ি থেকে বাড়িতে যেখানে সেখানে
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলি জ্বলে উঠছে
 
কিছুই লিখ না,না লেখাই ভালো
তোমার কালিগুলি তুমি
নষ্ট করছ।
 
 
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
শিমূল ফুটেছে
 
টকটকে লাল সূর্য
সিঁদূরের স্রোত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে
 
শিমূল ফুটেছে।
হ্যাঁ,দিশাঙের সিঁথিতে লাল নৌকা ভাসছে
আর কতটা ভাটিতে ঘাগর ঘাট?ঢোল শিমূল আর কোকিল
কুউ-কুউ ফাগুন এই প্রথম ডেকেছে আমতলার কল্পনা ডানা মেলেছে
আমি যেন তোমার গ্রামে পশ্চিমের বাতাসে ঘুরে বেড়ানো সেই বাতাসের সঙ্গে
শিমূলফুলের দুপুরগুলি দেখিয়ে দেখিয়ে তুমি যেন ঘুরে বেড়াচ্ছ অন্য
আকুলতায়
আমাকে চুল আঁচড়ে নেবার জন্য অনুরোধ করছ
আমি এই অনুরোধ রাখিনি,তুমি অভিমান করেছ
আমাকে শিমূল পাগল বলেছ
 
শিমূল ফুটেছে
তোমার পরীক্ষার একমাসও বাকি নেই
তবু তোমার পড়াশোনা নেই,শিমূলের ডালে ডালে
তুমিই হিসেব করেছ কতটা শালিক বসেছে,কতজন কোলাহল করছে
কটা ফুল নিচে খসে পড়েছে,থপ করে একটা শব্দ হয়েছে
বাতাসে আবেগ খসে পড়লে এভাবে শব্দ হবে কি
তোমার বুকেও শব্দ।ছিটকে পড়েছে,পুরো শিমূল তলা লাল…
আগুন লাগল বনে।তোমার মনেও লেগেছে বোধহয়
তুমি বলছ,একজন নিরুদ্দিষ্ট কবির কথা।শহর শিকার করেছে তাকে
আসছে নাকি,পাহাড়টা এখনও সাজিয়ে রেখেছে ঝর্ণাটা
সে আসছে ওয়াটার কালার ঘোড়ায় চড়ে।একটি রহস্য।মানুষ দেখা
না পাওয়া।
অনেক কথা।বুঝেছ।
শিমূল ফুটেছে।
তোমাদের সেতুটা কেউ উড়িয়ে দিয়েছে
স্ফুলিঙ্গের মতো জিপসি দৌড়াচ্ছে মানুষগুলিকে ধরে নিচ্ছে হয়রানি করছে
অথচ আসল অপরাধী নির্বিঘ্নে পালিয়ে…
শিমূল ফুটেছে।
আমি খুব আবেগিক হয়ে পড়েছি।তোমার এরকম হয় কি তোমার গ্রামের মাথায়
শিমূল ফোটে কি,তুমি একা এভাবে বেরিয়ে আস কি ভাবনায় বেড়ানোর জন্য?
 
ঢেউ
বসন্ত নেমেছে নদী হয়ে
চল,নদী পার হয়ে জোরে হেসে উঠি
হারমতীর বাজারে বেদনাগুলি কিনি গিয়ে
কোকিলের ডাকগুলি গলিয়ে ফেলি চল মধুরতার চূড়ায় চূড়ায়
একবাটি আপঙে রং দেখব আজ,শোন
আমি তুলনা করব কে বেশি লাল দিসাঙের শিমূল না আমাদের এখানকার…
 
শিমূল ফুটেছে
আমার কলম নিজে নিজে লাল হয়ে উঠেছে
শিমূল ফুটেছে
তোমার জানালা পশ্চিমের বাতাস ভেঙেছে।
 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত