| 20 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

সৈয়দ রুম্মানের দীর্ঘ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সক্রাটিস যেদিন মারা গিয়েছিলেন সেদিন একজন ভিক্ষুক দাঁড়িয়েছিলো 

 

সক্রাটিস যেদিন মারা গিয়েছিলেন সেদিন তার জন্য একজন ভিক্ষুক দাঁড়িয়েছিলো। তার হতে ছিলো একটি লাঠি। সেও আবার ভাঙা!  লাঠিটিকে জোড়া লাগানোর তার সে কী প্রাণপণ প্রচেষ্টা। লাঠির ঠিক মাঝামাঝি একটি শেকড় গজিয়েছিলো। শেকড়ের মাঝ বরাবর আবার ছিলো একটি সুড়ঙ্গ। সে পথে কিছুকাল আগেও তিনি স্বর্গের টিকেট বিলি করেছেন। অথচ তিনি এক আজন্ম কপর্দকশূন্য।

লোকে তাকে ডাকতো ইজারা মেসিয়া। কেউ কেউ আবার তাকে ডাকতো ফকির কাকু, কেউ কেউ বাবু। তিনি দাড় বাওয়া মাঝি হয়ে পাড়ি দিয়েছেন সময়। আর যখনই কারো মুখে স্যার শুনতেন তিনি ভাবতেন মানুষগুলো কতো বোকা!

ওই বোকা মানুষগুলো এসেছিলো পাহাড় ডিঙিয়ে। তারপর তারা কিছুদূর ভবানন্দনদী চীরে চালিয়েছে বৈঠা। চারপাশে যখন দেখে বিরান মাঠ, তখন থেকেই তারা খনিজের খোঁজে নামে পড়শীর বাড়ি। তারপর তারা ঢুকে পড়ে সৌর-পরিক্রমায়, সেখান থেকে আর ফেরেনি!

তবে তাদের থেকে সক্রাটিসের মায়ের গর্ভে কথা বলে ওঠে একটি শিশু। বোকা মানুষগুলো দল বেঁধে সমর্পিত হয়। সেখান থেকেই সে ক্রমবর্ধমান শিশু একটি মহীরুহের নিচে বিছিয়ে দেয় কয়েকটি ধারাপাত। কয়েকজন বোকা মানুষের বিরোধের বিপরীতে সেখানে একটি বৃহৎ মাকড়শা বাঁধিয়া দিলো ছাউনি-বাড়ি ; তার পেটে শিশুটি একদিন হয়ে ওঠে অন্য শিশুদের পিতা। সে তখন সক্রাটিস!

অমসৃণ পথ তাঁকে না ছাড়ে না লোকালয় ডাকে! তবু পথ পেরোলেই বিনিময় করেন দিন-ঘড়ি রেখে দিয়ে রাত। আঙুলের ভাঁজে বসিয়ে দেন মাথার করাত। এইসব কসরতেই একদিন দেখা দিয়েছিলেন শাদা শাদা শ্মশ্রুতে তাপস ভিক্ষুক। যদিও তিনিই স্বয়ং সপ্তর্শী, তিনি কালপুরুষ।

যতবার সক্রাটিস খুলেছিলেন চোখ, ভিক্ষুক  খানাতল্লাসে বাণী বিদ্যা…ব্যাধির শিকস্তি তুলে আবদ্ধ ভুবনকে দেন বিহঙ্গের ডানা…কী আলোর বানভাসি হতে উত্তর-পূর্ব শিশুরা উন্মুখ! ভিক্ষুক বাড়িয়ে দেন আপন পিরান; সহাস্যে নতমুখি চিরায়ত তাপস ধীমান।

সক্রাটিস পেরিয়ে যান তাহার সময়। ধ্যান ভাঙা সারস উড়িয়ে নেয় মেঘের জঞ্জাল। জলবায়ু আঁৎকে ওঠে লুপ্তপ্রায় সিংহাসন দেখে। বোকারা বসিয়ে দেয় সে সূর্যের জঠরে কবচ; কপট কৌলীন্যে বদ্ধ বোধের কপাট! কৃতঘ্ন ভুবনগঙ্গা মেকি তহুরার আধার!

 

মনন মৃত্যু রুখে; তবুও জহর দখল নেয় ধ্যানি বুকে! সক্রাটিস বোধিবৃক্ষে তাপস ভিক্ষুক রেখে নির্মোহে ছুটিয়ে দেন না-ফেরার বায়ূ-শূন্য-যান! ধূলোচিত্রে কালগর্ভে পড়ে থাকে স্যাঁতস্যাঁতে বুভুক্ষু আখ্যান।

যে যায় যায় না সে, যে যায় আসে না সে—ঘুরঘুর ঘুরে দ্যোতি প্রতীক্ষার আলোকবর্ষে….

খুঁজে খুঁজে সক্রাটিস ভিক্ষুক গড়েন দল ত্রস্ত অম্বরে। সক্রাটিস মারা যায় বংশপরম্পরায়; ধারাপাতের ভিক্ষুকেরা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নিরুদ্দেশ মেঘের পাড়ায়!

আর…বোকারা চিরকালই স্বর্গের দ্বারে খাবি খায়…!

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত