কিংবদন্তী স্টেফি গ্রাফ
স্টেফি গ্রাফ পশ্চিম জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সাবেক জার্মান পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি একজন পেশাদার টেনিস তারকা হয়ে ওঠেন। শক্তিশালী শটের জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। গ্রাফ তার পুরো ক্যারিয়ারে ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতেছেন।
১৯৮৮ সালে তিনি গোল্ডেন স্লামসহ একই বছর অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জেতেন। ১৯৯৯ সালে গ্রাফ টেনিস থেকে অবসর নেন এবং ২০০১ সালে টেনিসের আরেক কিংবদন্তি আন্দ্রে আগাসির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
প্রাথমিক জীবন
১৯৬৯ সালের ১৪ জুন স্টেফি গ্রাফ পশ্চিম জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পিটার ও মা হেইডি উভয়েই টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। যখন গ্রাফের বয়স মাত্র ৩ বছর, তখন তার মা-বাবা তার হাতে টেনিস র্যাকেট তুলে দেন এবং ব্যাট চালানো প্র্যাকটিস করান। যখন তার বয়স ৪ বছর, তখন তিনি সর্বপ্রথম কোর্টে টেনিস প্র্যাকটিস করেন। যখন স্টেফি গ্রাফের বয়স মাত্র ৬ বছর, তখন তিনি জুনিয়র টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেন।
তার বাবা পিটার কোচ হিসেবে তাকে টেনিসের প্রশিক্ষণ দেন। সেসময় গ্রাফ শীর্ষ প্রতিভাবান শিশু টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি পান। মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৮২ সালে গ্রাফ জুনিয়র পর্যায়ে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন। এরপর ফ্লোরিডা ও জার্মানির আয়োজনে স্টেফি গ্রাফ অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনুর্ধ ১৮ চ্যাম্পিয়নশিপসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জয় করেন।
স্টেফি গ্রাফের পেশাদার ক্যারিয়ারের বর্ণনা
১৯৮২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্টেফি গ্রাফ পেশাদার টেনিস খেলা শুরু করেন। তিনি তার ক্যারিয়ারে একক পর্যায়ে ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম একক শিরোপা জিতেছেন। ১৯৬৮ সাল থেকে শুরু হয় টেনিসের উন্মুক্ত যুগ। সেসময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত স্টেফি গ্রাফের জেতা ২২টি একক প্রধান শিরোপা নারী টেনিসের ইতিহাসে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মার্গারেট কোর্টের ২৪টি শিরোপা ও সেরেনা উইলিয়ামসের ২৩টি শিরোপা জয়ের রেকর্ড।
১৯৮৮ সালে তিনি নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা হয়ে ওঠেন। সেবছর তিনি একক পর্যায়ে ৪টি গ্র্যান্ড স্লামসহ গোল্ডেন স্লাম জয় করেন এবং একই বছরে তিনি অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তিনিই একমাত্র টেনিস খেলোয়াড়, যিনি প্রতিটি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট অন্তত ৪ বার জিতেছেন। উইমেনস টেনিস এসোসিয়েশনের র্যাংকিংয়ে স্টেফি গ্রাফ সর্বমোট ৩৭৭ সপ্তাহ জুড়ে প্রথম স্থানে ছিলেন।
যা যেকোনো নারী ও পুরুষ টেনিস খেলোয়াড়ের চেয়ে দীর্ঘসময় প্রথম স্থানে থাকার রেকর্ড। এছাড়াও তিনি ১০৭টি একক শিরোপা জিতেছেন, যা মেয়েদের টেনিসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের তালিকায় তৃতীয় রেকর্ড। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ১৬৭টি একক শিরোপা এবং ক্রিস এভার্ট এর ১৫৭টি একক শিরোপা জিতে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। মার্গারেট কোর্ট ও স্টেফি গ্রাফ টেনিসের ইতিহাসের দুইজন নারী খেলোয়াড়, যারা ৫ বার একই ক্যালেন্ডার বছরে ৩ বার করে গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতেছেন।
স্টেফি গ্রাফের টেনিস খেলার অসাধারণ স্টাইলগুলো যেমন, অসাধারণ ফুটওয়ার্ক ও বেসলাইনে থেকে তার শক্তিশালী আক্রমণাত্মক শট দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। বলা হয়ে থাকে, আধুনিক শৈল্পিক টেনিসের আবিষ্কারক স্টেফি গ্রাফ। বর্তমানে অনেক টেনিস তারকা গ্রাফের খেলার স্টাইলগুলো অনুকরণ করার চেষ্টা করে। স্টেফি গ্রাফের অন্যান্য বিখ্যাত অর্জনগুলোর মধ্যে, তিনি ৬টি একক ফরাসি ওপেন শিরোপা, উইম্বলডনে ৭টি একক শিরোপা, ৪টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা এবং ৫টি একক ইউএস ওপেন শিরোপা জিতেছেন।
১৯৮৭ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকে ১৯৯০ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন পর্যন্ত স্টেফি গ্রাফ একক পর্যায়ে ১৩টি প্রধান শিরোপার ফাইনাল খেলেছিলেন, যার মধ্যে তিনি ৯টি জিতেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে ১৯৮৯ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সময় পর্যন্ত ৫টি প্রধান টুর্নামেন্ট জিতেছেন। ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ ক্যালেন্ডার বছরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ইউএস ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনের ৮টি প্রধান টুর্নামেন্টের ৭টিতেই বিজয়ী হয়েছেন। সর্বমোট তিনি ৩১টি প্রধান শিরোপার ফাইনাল খেলেছেন।
অনেক টেনিস বিশেষজ্ঞের মতে স্টেফি গ্রাফ সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়। ১৯৯৯ সালে টেনিস কিংবদন্তি বিলি জিন কিং বলেছেন, “নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা নারী টেনিস তারকা স্টেফি গ্রাফ”। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এসোসিয়েটেড প্রেস দ্বারা গঠিত এক বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিংশ শতাব্দীর সেরা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে স্টেফি গ্রাফকে আখ্যায়িত করেন। টেনিস রাইটার স্টিভ ফ্লিঙ্ক তার ‘বিংশ শতাব্দীর সেরা টেনিস ম্যাচগুলো’ (The Greatest Tennis Matches of the Twentieth Century) নামক বইয়ে লিখেছেন,
বিংশ শতাব্দীর সেরা নারী টেনিস খেলোয়াড় স্টেফি গ্রাফ।
২০১২ সালে টেনিস চ্যানেল সর্বকালের সেরা ১০০ জন টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকা প্রকাশ করে। সেই ১০০ জনের তালিকার মধ্যে গ্রাফকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত করা হয়। স্টেফি গ্রাফের স্বদেশী টেনিস কিংবদন্তি বরিস বেকার বলেন যে, জার্মানিতে টেনিস খেলাকে জনপ্রিয় করে তুলতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন স্টেফি গ্রাফ। বর্তমানে জার্মানিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে টেনিস অন্যতম। ১৯৯৯ সালে স্টেফি গ্রাফ টেনিস থেকে অবসর নেন। সেসময় তিনি ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত স্টেফি গ্রাফ রেসিং ড্রাইভার মাইকেল বার্টেলসের সঙ্গে প্রেম করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে ফরাসি ওপেনের পর তিনি অন্যতম বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে আগাসির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান।
২০০১ সালের ২২ অক্টোবর স্টেফি গ্রাফ ও আন্দ্রে আগাসি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে এই যুগলের ২টি সন্তান রয়েছে। প্রথমটি ছেলে সন্তান জাদেন গিল ২০০১ সালে জন্মগ্রহণ করে এবং দ্বিতীয়টি মেয়ে সন্তান জাজ এলে ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করে।