ফুল, অশ্রু, প্রেম – ৩১ নারীর কবিতা (পর্ব -২) । মুম রহমান
অদ্ভুত (peculiar) শব্দটি স্টিভি স্মিথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন। এই শব্দটি দিয়ে ইংরেজ নারী কবি ও উপন্যাসিক স্টিভ স্মিথকেও (১৯০২-১৯৭১) ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথম বই ‘আ গুড টাই ওয়াজ হ্যাড বাই অল’ (১৯৩৭) দিয়েই তিনি সবার নজর কাড়েন। তার এই বইয়ের নামটিই প্রবাদের মতো হয়ে যায়। তার কবিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুব তীব্র, কখনো বা শ্লেষ পূর্ণ, কখনো মৃত্যু চিন্তায় ভরপুর। তবে তার বলার ভঙ্গিটি বরাবরই রসময়। মৃত্যু চিন্তা, রোগ, শোক বরাবরই তার জীবন সঙ্গী ছিলো। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার যক্ষা রোগ ধরা পড়ে। সেই সময় ‘যক্ষা মানেই রক্ষা নেই’। যাহোক তিন বছর কেন্টের এক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করে তিনি প্রাণে বেঁচে আসেন। মৃত্যু ভয় আর বাবা-মাকে ছেড়ে থাকার দুঃসহ সময়ের স্মৃতি পার না-হতেই তার ১৬ বছর বয়সেই মা চলে যান মৃত্যুর দেশে। বাকী জীবন স্টিভি হতাশা, আতঙ্ক আর বেদনায় কাটিয়েছেন। তবে কখনো আত্মহত্যার কথা ভাবেননি, বরং গল্প-কবিতার মধ্যে নিজেকে খুঁজে নেন। হাগ হোয়াইটমোর তার জীবনীকে কেন্দ্র করেই ‘স্টিভি’ নামের বিখ্যাত মঞ্চ নাটক লেখেন। পরবর্তীতে এটি নিয়ে চলচ্চিত্রও হয়েছে যেখানে গে্লন্ডা জ্যাকসন মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
জঙ্গল স্বামী
প্রিয়তমা ইভালিন, আমি প্রায়শই তোমার কথা মনে করি
এই ভ্যাপসা জঙ্গলে বন্দুক হাতে বেরিয়ে পড়ি
গতকাল আমি একটা জলহস্তি মেরেছি
তোমার জন্য আমি এর মাপ নিয়েছি কিন্তু তাড়াহুড়ায় হারিয়ে ফেলেছি
এইখানে পান করা ভালো ব্যাপার নয়
ইয়ে তুমি জানো, আমি এ সব ছাড়িয়া দিয়াছি প্রিয়া।
আগামীকাল আমি একা অনেকদূরে যাবো
জঙ্গলের ভেতরে। সেখানটা খুব ধূসর
তবে উপরে তাকালে সবুজ
কেবল মাঝে সাঝে যখন একটা গাছ পড়ে যায়
সূর্য আচমকা উঁকি মারার সুযোগ পায়, সেটা খুবই অভিভূত করে।
তুমি কখনোই জঙ্গলের পুষ্করুনিতে যেতে চাইবে না
গরম সূর্যের দিকে, সেটা বোকামির কাজ ছাড়া আর কিছুই হবে না
কারণ সেখানে সদাই এনাকোন্ডায় পূর্ণ, ইভালিন, রুগ্ন নয় তারা
আমি বলবো। তাই এখন আর কথা নয়, ভালোবাসা নাও, তোমার প্রিয় স্বামী উইলফ্রেড।
আমার হৃদয় ছুটে যায়
আমার হৃদয় ছুটে যায় আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেমে
যে আমাকে মৃত্যু আর প্রতিকার দিয়েছে
সকল জীবিত প্রাণই এসে স্থির হয় মৃত্যুতে
তার তরেই গিলে ফেলে সব কার্যক্রম
আর তাদের দেয় না কিছুই, যা কিছু তারা চেয়েছিলো সব সময় যদিও যখন তারা বেঁচে ছিলো এমনটা ভাবেনি কিছুই।
আমার হৃদয় পরিপূর্ণ
আমার হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে ছিলো কোমল বৃষ্টিধারাতেই,
আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুলতে অভ্যস্ত ছিলাম এমন করেই,
যুদ্ধ কিংবা মৃত্যু নিয়ে আমি কোনদিন ভাবিনি কখনো,
নিজের নিঃশ্বাস নিতে পারাতেই আমি খুশি ছিলাম অন্তত।
জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।