Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

কিংশুক

Reading Time: 3 minutes
কিংশুক। এনজিও। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত তরুণ তরুণী মাঝবয়সীরা পেটের তাগিদে কাজ করে। তারা তাদের কাজ করে সকাল সন্ধ্যা। মাস শেষের বেতনে কারোই পোষায় না। তবু তারা বছর বছর ধরে এখানেই কাজ করে। জনাদশেক সার্বক্ষণিক কর্মচারী, বিভিন্ন পদ পদবী। ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, পিয়ন, ক্লিনার ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠানর ম্যানেজার আলমগীর সাহেবকে ধীরস্থির মনে হয়। কম কথা বলেন, মাঝে মাঝে মাথা নাড়েন। ভাবসাবে বড়সাহেব।কেউ তেমন একটা পাত্তা দেয় না। অল্পবয়স থেকেই ডায়াবেটিসের রোগী। অধঃস্তনরা কোন সমস্যা জানাতে তার কাছে যেতে চায় না। উনি আসলে ম্যানেজারের কাজটা কখনো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি।কর্মচারীরা বিরক্ত হয়ে বলে ‘প্রতিবন্ধি‘।
ক্যাশিয়ার নিজামউদ্দিন চাকুরীর পাশাপাশি রাজনীতিও করে। নির্বাচনের সিজনে ভোটারদের টাকা বিলি-বন্টনের দায়িত্ব সততার সাথে পালন করে। বাড়তি ভালোকিছু আয় রোজগার হয়। হাসি হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলে। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীর সুখ আনন্দের সার্বক্ষণিক সঙ্গী, অভিভাবক। গণেশ, সুভাষ অফিসের হালকা কাজকর্মের মধ্যে সময় কাটায়। কারো সাথে ওদের বিশেষ সম্পর্ক নেই, কোন বিবাদ বিরোধও নেই।
কম্পিউটার অপারেটর সুফিয়া আক্তার কাজকর্মে বেশ চটপটে। আগে অন্য জায়গায় চাকুরী করতো। সেখানে এক বিবাহিত হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ভদ্রলোকের নাম লক্ষ্মণ, এক সন্তানের জনক। তারপর তাকে বিয়ে করে আগের চাকুরী ছেড়ে ‘কিংশুক’-এ যোগ দেয়। লক্ষ্মণ নিজেকে ইব্রাহিম হিসাবে সুফিয়া আক্তারের স্বামী পরিচয় দিয়ে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে। সুফিয়া স্বামী সংসারে সুখে আছে এমনটাই মনে হয়। আড়ালে আবডালে কেউ কেউ সমালোচনা করে। কেউ কেউ আবার সুফিয়া আক্তারের বিবাহজনিত ঘটনার প্রশংসায় মুখর।’ প্রতিবন্ধি’ ম্যানেজার আলমগীর সাহেব বলেন আমাদের সুফিয়া একটা উত্তম কাজ করেছে। একজন হিন্দুকে নও-মুসলিম বানিয়ে জান্নাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বছর ঘুরতেই বিভিন্ন কানাঘুষা হতে থাকে। সুফিয়া আক্তারের ধর্মান্তরিত স্বামী আবার আগের স্ত্রী-পুত্রের কাছে ফিরে গেছে। কম্পিউটার অপারেটর সুফিয়া তার পারিবারিক বিষয়ে কারো সাথে কথা বলতে চায় না। নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সবার কাছে পরিষ্কার হয় ওর প্রেম বিবাহ পরবর্তী সংসার আর নেই। সবাই সহকর্মীর দুঃসময়ে সহানুভূতি সহমর্মিতা জানায়, পরামর্শ দেয়। সে লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দেয়। মামলায় মোহরানা ও খোরপোশ বাবদ মাঝারি অংকের ক্ষতিপূরণ শেষে লক্ষ্মণ সুফিয়ার বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।
একাকী জীবনে সুফিয়া আক্তার আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু একাকীত্ব কাটে না। বুকটা যন্ত্রণার ভার বইতে পারে না। অতীতের ভুল, বর্তমানের শরীরী আবেগ, নিঃসঙ্গতা আর ভবিষ্যতের ভাবনা ওকে নতুন মরদ খুঁজে নিতে প্রলুব্ধ করে। সুফিয়া দেখতে মন্দ নয়। মাঝারি উচ্চতা, গায়ের রঙ ফর্সা, গোলগাল চেহারা। কোন কোন পুরুষের চোখে পড়ে যায়। ভালো লাগে; সেও কিছুটা উৎসাহ নিয়ে আগায়। সব আবার শূন্য হয়ে যায়। বাদ সাধে অমুসলিম ছেলের সাথে পুরানো প্রেম ও বিয়ে। নতুন পাণি-প্রার্থিরা বিবাহবন্ধন নয়, শুধুই মধু খেতে চায়।
হালিম অল্পবয়স থেকেই কিংশুকে ফুট-ফরমাশ খাটে। এখন অফিসের পিয়ন, সুপুরুষ, জোয়ান মরদ। সম্প্রতি বিয়ে করেছে নিজের পছন্দ আর পরিবারের সম্মতিতে। বউও অল্পবয়সী, দেখতে নাদুশনুদুশ, বাপের বাড়ির অবস্থা ভালো। হালিমের সারাদিন কাজকর্মে খুশি খুশি ভাব। ম্যানেজার ছাড়া অফিসের সবাই তাকে পছন্দ করে। এরমধ্যে কাতার প্রবাসী এক প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে কাছে ডাকে। সে এই ডাকের অর্থ বুঝে নেয়, বেসামাল হয়ে পড়ে।
সুফিয়া আক্তারের জীবনে নতুন নাগর জুটে যায়। পাত্র অবিবাহিত মুসলমান, ব্যবসাপাতি করে। কাউকে না জানিয়ে কোন আয়োজন ছাড়াই বেশ দক্ষতার সাথে সুফিয়া তাকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে। অনেক রসালো কথায় কিংশুকের ছোট অফিস জমে ওঠে। সবাই এই উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করে, দো’আ আশীর্বাদ হয়। গণেশ, সুভাষ, ক্লিনার ফাতেমা সকলে একবাক্যে অফিসের সহকর্মী সুফিয়ার স্বামীর গুনগান করে। হালিম আনন্দ উল্লাসে গলাছেড়ে গান গায়। নিজামউদ্দিন মুখটিপে হাসতে হাসতে আওয়াজ দেয়, পাত্র তার ঘনিষ্ট, তার দলের লোক।
সুসংবাদের বার্তা আসতে থাকে। হালিমের বউ সন্তান সম্ভবা, অতঃপর সুফিয়া।
এরই মাঝে বিপর্যয় নেমে আসে ফাতেমার সংসারে। রিকশাওয়ালা স্বামী ফাতেমাকে না জানিয়ে আবার বিয়ে করে বসে। দশ বছরের মেয়ে আর ছয় বছরের ছেলে নিয়ে ফাতেমার কপাল পোড়ে। ক্যাশিয়ার নিজাম সান্ত্বনা দেয়; ‘প্রতিবন্ধি’ ম্যানেজার আলমগীর সাহেব বিরক্ত হয়। ফাতেমাসহ প্রতিষ্ঠানের সবাইকে মন দিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিতে থাকে। আচমকা উপরের নির্দেশনামা জারী হয়, ফান্ড বন্ধ, এনজিও কার্যক্রম স্থগিত। জনাদশেক স্বল্পবেতনভূক নারী পুরুষের চোখেমুখে অন্ধকার নেমে আসে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>